নির্বাচনের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার ‘কখনও ডিসেম্বর, কখনও জুন’ এর বক্তব্য ‘জনগণ ও আন্তর্জাতিক মহল’ ভালোভাবে দেখছে না বলেও ভাষ্য তার।
Published : 13 Apr 2025, 10:36 PM
অনির্বাচিত সরকার কখনও নির্বাচিত সরকারের বিকল্প হতে পারে না মন্তব্য করে বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, এ কথা প্রতিদিনই বর্তমান অন্তর্বতী সরকারকে স্মরণ করিয়ে দেবেন তিনি।
রোববার বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য এ মন্তব্য করেন।
নির্বাচনের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার ’কখনও ডিসেম্বর, কখনও জুন’ এর বক্তব্য ‘জনগণ ও আন্তর্জাতিক মহল’ ভালোভাবে দেখছে না বলেও দাবি করেন তিনি।
সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘‘যখনই আমরা ডিসেম্বরের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা প্রতিশ্রুত নির্বাচনি রোডম্যাপের জন্য দাবি তুলি তখনই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উপদেষ্টাকে বক্তৃতা দিতে শোনা যায় যে, জনগণ না কি তাদেরকে পাঁচ বছরের জন্য চায়। এটি বলেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কয়েকদিন আগে।
”এরপর কাল (শনিবার) আমাদের ফরিদা আপা একজন উপদেষ্টা আমার সাথে খুবই ভালো সম্পর্ক। আমি যেজন্য তার সমালোচনা কম করতে চাই। তিনি বললেন, উনারা না কি নির্বাচিত হয়েছে। কীভাবে গণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে উনাদেরকে নির্বাচিত করেছে জনগণ।
”তাহলে এদেশে ইলেকশন কমিশন আছে কেন? রাস্তায় অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সরকার পরিবর্তন হয় সেটা অবশ্যই এদেশের মানুষের কামনা। কিন্তু এদেশের নির্বাচিত সরকারের বিকল্প তো আপনারা (অন্তবর্তীকালীন সরকার) হতে পারেন না, আপনারা অবশ্যই অনির্বাচিত। সেটা প্রতিদিনই আপনাদের স্মরণ করিয়ে দেওয়া হবে।”
দ্রুত নির্বাচনের দাবির কথা আবারও তুলে ধরে সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘‘আমরা বলতে চাই, আমরা যত তাড়াতাড়ি আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেতে চাই, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এদেশে ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই।
‘‘আমাদের সংবিধান সেটা আক্রান্ত হয়েছে সেই সংবিধানকে যথাযথ সংস্কারের মধ্য দিয়ে, অধিকতর সংস্কারের মধ্য দিয়ে, সংশোধনের মধ্য দিয়ে, রাষ্ট্র কাঠামো সংশোধনের মধ্য দিয়ে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক সংবিধান আমরা পেতে চাই।”
জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের জাতীয় প্রতিনিধি সম্মেলনের আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছিলেন বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন।
সম্মেলনে সংগঠনটি নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দেয়। দলের নাম দেওয়া হয় ‘ভাসানী জনশক্তি পার্টি’।
শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুকে চেয়ারম্যান ও আবু ইউসুফ সেলিমকে মহাসচিব করে ১২১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির নাম ঘোষণা করা হয়।
‘কাদেরকে আপনারা উৎসাহিত করছেন’
সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘‘আমাদের ভাই ওনার (উপদেষ্টা ফরিদা আখতার) স্বামী জনাব ফরহাদ মজহার সাহেব গত ২/৩ দিন আগে বক্তৃতা দিয়েছেন নির্বাচনের মাধ্যমে না কি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয় না, কেবল ভোটারদের একটা সামাজ্য প্রতিষ্ঠা হয়।
‘‘কী আর বলব? যে নির্বাচনের জন্য, যে ভোটাধিকারের জন্য, যে গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাবার জন্য, যে সাংবিধানিক অধিকার ফিরে পাবার জন্য দেশের হাজার মানুষ শহীদ হলেন, গণঅভ্যুত্থান হলে, ফ্যাসিবাদের পতন হল-সেই নির্বাচন সেই ভোটাধিকারকে আপনারা অস্বীকার করছেন। কাদেরকে আপনারা উৎসাহিত করছেন?”
তিনি বলেন, ‘‘আমাদের সাথে আপনারা (প্রধান উপদেষ্টা) কথা দিয়েছিলেন আপনাদের সমস্ত কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে ডিসেম্বরকে সামনে রেখে নির্বাচনের উদ্দেশ্যে। আমরা নির্বাচন কমিশনের সাথে বসেছি, কথা বলেছি। তাদের সমস্ত নির্বাচনি প্রস্তুতি আগামী জুন মাসের ভেতরে সমাপ্ত হবে। তারা জুনের পরে নির্বাচন দেওয়ার জন্য উগিব।
‘‘এখন সেই কথা যদি আমরা বলি, তাহলে গণতন্ত্রের পক্ষের জানি না কেন এদেশের সবাই এর সমর্থনে কথা বলতে উচ্চকিত হচ্ছেন না। আমাদের অনেক ধরনের অভিজ্ঞতা আছে। কিন্তু যারা ওয়ান ইলেভেন করেছেন তারাও অনেক রকমের কথা বলে বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতায় দুই বছর পর্যন্ত ছিলেন।”
‘আমরা ঘরপোড়া গরু’
সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘‘সেই ওয়ান ইলেভেনে মঈন-ফখরুদ্দিনের কথা (তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদ ও প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দিন আহমেদ) কথা আপনাদের মনে নেই? আমি বলতে চাই না সেই রকম কোনো পদক্ষেপ বর্তমানে দৃশ্যমান হচ্ছে। কিন্তু আমরা ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলেই ভয় পাই।
”বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য, সাংবিধানিক অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য, বৈষম্যহীন রাষ্ট্র এবং সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য তীব্র আকাঙ্খা থেকেই এক দফা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এদেশে গণতান্ত্রিক গণঅভ্যুত্থান, ছাত্র-জনতা গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করেছিল। কেউ যদি এটাকে বিপ্লব বলতে চায় তাহলে আমি দু:খ প্রকাশ করব। এটা একটা সামাজিক বিপ্লব নয়। অর্থনৈতিক-সামাজিক ব্যবস্থা পরিবর্তনের কোনো বিপ্লব হয়নি। গণতান্ত্রিক আকাঙ্খা থেকে গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাবার জন্য ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে একটি গণতান্ত্রিক ছাত্র গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছিল।”
নতুন দল ‘ভাসানী জনশক্তি পার্টি’র চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুর সভাপতিত্বে ও মহাসচিব আবু ইউসুফ সেলিমের সঞ্চালনায় সমাপনি অনুষ্ঠানে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় গণফ্রন্ট্রের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, গণদলের চেয়ারম্যান এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, জাগপার সহসভাপতি রাশেদ প্রধান গণমুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম লালা ও জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন বক্তব্য রাখেন।