“তাদেরই বেতনের টাকা দিয়ে তারা পেনশনে টাকা রাখবেন আর সরকার অর্ধেক দেবে….এটা তো এক ধরনের তামাশা করা”, বলেন বিএনপি নেতা।
Published : 03 Jul 2024, 06:15 PM
সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ স্কিমে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্দোলনকে ‘ন্যায়সঙ্গত’ বলেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বুধবার নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের কর্মবিরতি নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি এই মন্তব্য করেন।
বিএনপি নেতা বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা লেখাপড়া করেছি। ‘প্রত্যয়’ স্কিম করেছেন যে, তাদেরই বেতনের টাকা দিয়ে তারা পেনশনে টাকা রাখবেন আর সরকার অর্ধেক দেবে….এটা তো এক ধরনের তামাশা করা।”
শিক্ষা ও শিক্ষকের ওপরে সরকারের ‘আক্রোশ’ সবচেয়ে বেশি বলেও মন্তব্য করেন রিজভী। বলেন, “প্রশ্নপত্র ফাঁস… শিক্ষার মানের যে কি ধস নেমেছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
“এখন শিক্ষকদের যে ‘ন্যায্য পাওনা’, এখন প্রত্যয় স্কিমের নামে তারা সেটিকে কার্টেল করছে, কার্টেল করে তাদেরকে আরও অনাহারের দিকে, তাদেরকে আরও বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেওয়ারই একটা বন্দোবস্ত করছে।”
এতদিন কেবল সরকারি চাকরিজীবীরা পেনশন সুবিধা পেলেও গত অর্থবছর থেকে সরকার সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করে। আগামী অর্থবছর থেকে নিয়োগ পাওয়া সব সরকারি চাকুরেকেও এই পেনশনের আওতায় আনা হবে।
রাষ্ট্রায়ত্ত, স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ ইত্যাদি সংস্থায় নতুন নিয়োগ পাওয়া কর্মীদের জুলাই থেকে শুরু হওয়া নতুন অর্থবছরে এই পেনশন ব্যবস্থার অধীনে এসেছেন। তবে এতদিন যারা সরকারি পেনশনের অধীনে আছেন, তারা আগের মতেই পেনশন পাবেন।
নতুন ব্যবস্থায় প্রত্যয় স্কিমে চাকরিজীবীর মূল বেতনের ১০ শতাংশ বা ৫ হাজার টাকার মধ্যে যেটি কম সেটি তিনি দেবেন এবং বাকি টাকা দেবে সরকার।
এই ব্যবস্থায় ৬০ বছর বয়স হলে এই সংস্থার চাকুরেরাও এই পেনশন ব্যবস্থার অধীনে আসবেন, তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে সেটি হবে ৬৫ বছর।
পেনশনাররা আজীবন আর তাদের নমিনি ৭৫ বছর পর্যন্ত পেনশন পাবেন। তবে পেনশনার ৭৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকলে নমিনি কোনো টাকা পাবেন না।
সাধারণ মানুষের জন্য চারটি স্কিম রয়েছে, সেগুলোতে সর্বনিম্ন ১ হাজার থেকে মাসে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জমানোর সুযোগ আছে। একজন যত বেশি বছর বেশি টাকা জমা করবেন তার পেনশন তত বেশি হবে। হতদরিদ্রদের জন্য ১০০০ টাকার স্কিমে ৫০০ টাকা দেবে সরকার।
রিজভী বলেন, “যারা টাকা পাচার করেছে, ঋণ খেলাপি তাদের টাকা কেড়ে নিচ্ছেন না কেন? তাদের টাকা কেড়ে নিয়ে শিক্ষকদের ফুল পেনশনের ব্যবস্থা করতেন।
“শিক্ষকদের ফুল পেনশনের ব্যবস্থা করলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কোচিং সেন্টার ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে যেত না, তারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের সর্বক্ষণ পড়াতে পারতেন।”
বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রে যে ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হচ্ছে, তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে শিক্ষকদের পেনশন দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে বিএনপি নেতা বলেন, “আজকে লুটপাট করে শূন্য করে দিয়েছেন রাজকোষ; এখন শিক্ষকদের ‘ন্যায্য’ যে পাওনাটা, যেটাতেও আপনারা ভাগ বসাচ্ছেন। এটা সম্পূর্ণরূপে গণবিরোধী একটি নীতি।”
পতন হবেই
নাটোরে রাস্তা অবরোধ করে রাজশাহীগামী পাবনা ও বগুড়া বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ এনে রিজভী বলেন, “এক ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে।”
বাগেরহাটে পুলিশের বাধায় খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কর্মসূচি পালন করা যায়নি জানিয়ে তিনি বলেন, “সেই এলাকার এমপি শেখ হাসিনার এক আত্মীয়। সুতরাং বাগেরহাটে বিএনপির কোনো কর্মী ও ‘গণতন্ত্রকামী’ বিরোধী দলের কোনো কর্মী সেখানে কর্মসূচি করতে পারবে না।
“অর্থাৎ সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন জনপদ যেখানে প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় স্বজনরা আছেন সেখানে কেউ কোনো রাজনীতি করতে পারবেন না। এমন ‘জমিদারতন্ত্র’ চলছে, এমন বাকশালী ‘জমিদারতন্ত্রে’ আমরা বসবাস করছি।”
রিজভী বলেন, “প্রতিটি অপকর্মের দায় তাদেরকে নিতে হবে। কেউ কিন্তু তালিকার বাইরে থাকবেন না। যে সমস্ত পুলিশ কর্মকর্তারা, যে সমস্ত সন্ত্রাসীরা আজকে এই কাজ করছে কেউ কিন্তু তালিকার বাইরে থাকবে না।”
‘কেউ চিরদিন ক্ষমতায় থাকে না’- মন্তব্য করে বিএনপি নেতা বলেন, “যেভাবে দেশ বিক্রি চলছে, যেভাবে নিপীড়ন নির্যাতন চলছে, এবার একটি সার্বিক ও ব্যাপক জনগণের উত্থানের মধ্য দিয়ে এই সরকারের পতন হবে।”
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উননবী খান সোহেলও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।