“যেই নামে ডাকুন না কেন, সেই বাংলাদেশে আমাদের সম্প্রীতির সাথে বসবাস করতে হবে।”
Published : 13 Mar 2025, 01:19 AM
গণপরিষদ নয়, ‘সংসদেই সকল সংস্কারের ফয়সালা’ হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ।
বুধবার বারিধারা জামিয়া মাদানিয়া মাদ্রাসায় হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরের উদ্যোগে রাজনৈতিক দল ও নাগরিকদের সন্মানে আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সালাহ উদ্দিন বলেন, “যে সমস্ত বন্ধুরা বলছেন, যারা গণপরিষদের মাধ্যমে সংবিধান চান, আমি তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, আপনারা সংস্কার কমিশনের ব্যাপক সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। আপনাদের একজন প্রতিনিধি সেই সংস্কার কমিশনে সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
“সুতরাং আমরা অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো আমরাও ব্যাপক সংস্কার প্রস্তাব কমিশনগুলোতে দিয়েছি। আসুন সবাই মিলে একটি শক্তিশালী একটি জাতীয় সংসদ বিনির্মাণ করি যেখানে সকল সংস্কার প্রস্তাবগুলো আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত হবে এবং সেই সংবিধানকে আপনারা নতুন সংবিধান হিসেবে অভিহিত করুন আমাদের কোনো আপত্তি নাই।”
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র নেতাদের সামনে রেখে গঠিত নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি ‘সেকেন্ডে রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠা ও গণপরিষদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন সংবিধান রচনার সংকল্প তুলে ধরেছে, যা নিয়ে রাজনীতির অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে।
দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম মঙ্গলবার এক ইফতার অনুষ্ঠানে বলেছেন, দেশে একসঙ্গেই সংসদ ও গণপরিষদ নির্বাচন সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
“জুলাই সনদ কার্যকরের মাধ্যমে সংস্কারের রূপরেখা আমাদের সামনে স্পষ্ট হবে। আর নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমরা বলছি, একই সঙ্গে আইনসভা ও গণপরিষদ নির্বাচন করা সম্ভব। এর মাধ্যমে একটা নতুন সংবিধান ও গণতন্ত্রের পথে উত্তরণ ঘটানো যাবে।”
সেই প্রসঙ্গ ধরে বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন বলেন, “এই বাংলাদেশকে আপনারা যদি মনে করেন আপনাদের মত একটি রিপাবলিক হিসেবে নামকরণ করবেন সেটা আপনাদের রাজনীতি; দলীয় আকাঙ্ক্ষা থেকে আপনারা নামকরণ করতে পারেন। কিন্তু যেই নামে ডাকুন না কেন, সেই বাংলাদেশে আমাদের সম্প্রীতির সাথে বসবাস করতে হবে।”
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দিকে ইংগিত করে তিনি বলেন, “এই দেশ ফ্যাসিস্ট মুক্ত হয়েছে, কিন্তু ফ্যাসিবাদী কালচার, ফ্যাসিবাদী প্রচার, ফ্যাসিবাদের দোসরদের বাংলাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা বন্ধ হয়নি।
“আমরা যদি সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকি এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী যে জাতীয় ঐক্য গঠিত হয়েছে, এটা আমরা সবাই ঊর্ধ্বে তুলে ধরে আমাদের জীবনে এই ঐক্যকে যদি শক্তিতে রূপান্তরিত করে এই জাতিকে এগিয়ে নিতে চাই, তাহলে ইনশাল্লাহ আমরা কামিয়াব হব।”
তিনি বলেন, “আমরা এদেশের শতকরা ৯০-৯২ ভাগ মুসলমান। এই দেশের মুসলমানই সবচেয়ে নির্যাতিত ছিল ফ্যাসিস্ট হাসিনার সময়ে, এদেশের আলেম সমাজই সবচাইতে নির্যাতিত ছিল। সুতরাং আমাদেরকে লক্ষ্য রাখতে হবে ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী বাংলাদেশের সবাই হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান-মসুলমান সবার মধ্যে একটা একতা, সবাই যেন আমরা সিটিজেন হিসেবে এদেশে বসবাস করতে পারি।
“আমাদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কোনো বিঘ্ন যেন না ঘটে, কোনো শক্তি যেন আমাদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক বীজ বপণ না করে দিতে পারে। এদেশে যারা অমুসলিম, যারা সংখ্যালঘু হিসেবে পরিচিত তাদেরকে যেন আমরা সংখ্যালঘু না বলি।”
এই বিএনপি নেতা বলেন, “আমরা সাংবিধানিকভাবে সকল নাগরিককে যেন নাগরিকই বলি। সবাই যেন এদেশে সিটিজেন হিসেবে বসবাস করতে পারি। সেই রকম একটি আবহাওয়া-পরিবেশ আমাদেরকে নিশ্চিত করতে হবে।”
অন্যদের মধ্যে বিএনপির বরকত উল্লাহ বুলু, এনডিএমের ববি হাজ্জাজ, হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরের মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের নিয়ে ইফতারে অংশ নেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতারা।