“বঙ্গবন্ধু ‘পোয়েট অব পলিটিক্স’ আর শেখ হাসিনা ‘ম্যাজিক অব পলিটিক্স’”, বলেন ওবায়দুল কাদের।
Published : 17 May 2024, 10:58 PM
বিদেশি শক্তির নামে ‘হুমকি, ধমকি’ না দিতে বিএনপিকে পরামর্শ দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, শেখ হাসিনা কোনো বিদেশি শক্তির পরোয়া করেন না।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ছয় বছর পর ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের স্মরণে শুক্রবার আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
আলোচনায় আওয়ামী লীগ নেতা শেখ হাসিনার ফেরা, তার নেতৃত্বে দেশের উন্নয়ন, আওয়ামী লীগকে নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সমালোচনা নিয়ে দীর্ঘ বক্তব্য রাখেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন একটি মন্তব্যের প্রসঙ্গে কাদের বলেন, “আমাদেরকে নাকি প্রতিবেশী দেশ নিয়ন্ত্রণ করে। ফখরুল সাহেব, শেখ হাসিনাকে কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
“আমাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করে মুক্তিযুদ্ধের রণধ্বণি ‘জয় বাংলা’র চেতনা, দেশি-বিদেশি কোনো শক্তি নয়। আমাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করে দেশের জনগণ, সংবিধান। এই সংবিধানের বাইরে আমরা যাব না।
“যত ষড়যন্ত্র করুক, বিদেশি শক্তির নামে হুমকি ধমকি দিতে পারেন। তিনি (শেখ হাসিনা) কোনো বিদেশি শক্তির পরোয়া করেন না, বাংলাদেশের জনগণকে পরোয়া করেন।”
শুক্রবার বিকালে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এই আলোচনা সভা হয়।
ওবায়দুল কাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে সদ্ভাব বজায় রাখার ওপরও জোর করেন। তিনি বলেন, “আমরা যেন নিজেদের শত্রু নিজেরা না হই। আপন ঘরে যার শত্রু, তাদের বাইরের শত্রুর দরকার হয় না।
“আজকে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার জীবন থেকে শিক্ষা নিতে হবে। সাহস আর সততায় বঙ্গবন্ধুর মতই হয়েছেন শেখ হাসিনা।”
‘লজ্জা করে না?’
বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার বিষয়ে দলের নেতাদের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে কাদের তুলে ধরেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সময়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ‘দুর্দশা’র কথা।
গত ২৮ অক্টোবর ‘পালিয়ে গিয়ে’ বিএনপি ‘বেসামাল হয়ে’ প্রতিনিয়ত আওয়ামী লীগকে আক্রমণ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমি তাদের বলতে চাই, মুক্তির কথা বলেন, লজ্জা করে না? জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য দলের ৬২ হাজার নেতাকে জেলে রেখেছিলেন। আপনাদের কতজন নেতা জেলে আছে?
“৩ হাজার আমাদের নেতাকর্মীর ও সরকারি অফিসারদের গুম করেছিলেন জিয়াউর রহমান।”
মির্জা ফখরুল ইতিহাস ভুলে গেছেন কি না, সেই প্রশ্ন তুলে কাদের বলেন, “কথায় কথায় আজকে বলেন, কারাগার। আমি কি মিথ্যা বলেছি? জিয়াউর রহমান কী করেছিল এর প্রমাণ আছে।
“জিয়াউর রহমান পঁচাত্তরের পর সামরিক বাহিনীর ১১শ অফিসারকে নাস্তা খেতে খেতে ফাঁসি দিয়েছিল।”
মুক্তিযুদ্ধের পর দালাল আইনে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদেরকে জিয়াউর রহমানের ছেড়ে দেওয়ার ইতিহাস তুলে ধরে তিনি বলেন, “অনেকে বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতাবিরোধীদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। এটা সত্যি নয়। ১১ হাজার স্বাধীনতাবিরোধী কারাগারে ছিল, জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে এদের মুক্তি দিয়েছিল। যার মধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত ছিল ৭১৩ জন।”
‘শেখ হাসিনাই সবচেয়ে সাহসী, সবচেয়ে বিচক্ষণ’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, “বাংলাদেশের গত ৪৪ বছরে সবচেয়ে সাহসী রাজনৈতিকের নাম শেখ হাসিনা, সবচেয়ে বিচক্ষণ নেতার নাম শেখ হাসিনা, সবচেয়ে দক্ষ প্রশাসকের নাম শেখ হাসিনা, সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতার নাম শেখ হাসিনা, সবচেয়ে সফল কূটনীতিকের নাম শেখ হাসিনা।
“তার প্রত্যাবর্তন দিবসকে আমি বলব ‘মুক্তিযুদ্ধের হারিয়ে যাওয়া মূল্যবোধের প্রত্যাবর্তন’। ১৭ মে ‘নিষিদ্ধ বঙ্গবন্ধুর’ প্রত্যাবর্তন, আদর্শের প্রত্যাবর্তন, আমাদের গণতন্ত্রের প্রত্যাবর্তন। তিনি সংগ্রাম করে গণতন্ত্রকে শৃঙ্খল মুক্ত করেছেন।”
শেখ হাসিনাকে ‘রাজনীতির জাদুকর’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “আজকে বাংলাদেশের উন্নয়ন দৃশ্যমান, তা শেখ হাসিনার ম্যাজিক। … তিনি বদলে যাওয়া বাংলাদেশের সাহসী পরিবর্তনের রূপকার। বঙ্গবন্ধু ‘পোয়েট অব পলিটিক্স’ আর শেখ হাসিনা ‘ম্যাজিক অব পলিটিক্স’।”
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনায় দলের কেন্দ্রীয় নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, জাহাঙ্গীর কবির নানক, হাছান মাহমুদ, মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দীপু মনি, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বেনজির আহমেদ, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী বক্তব্য রাখেন।
দলের নেতাদের বাইরে শহীদ বুদ্ধিজীবী আলতাফ মাহমুদের মেয়ে শাওন মাহমুদ, শহীদ বুদ্ধিজীবী এ এফ এম আবদুল আলীম চৌধুরীর মেয়ে নুজহাত চৌধুরীও এই আয়োজনে কথা বলেন।
আরও পড়ুন: