শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র মো. সাহাবুদ্দিন পাননি-মানবজমিন পত্রিকার একটি ম্যাগাজিনে এই কথা ছাপার পর তুমুল প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।
Published : 21 Oct 2024, 05:28 PM
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র না পাওয়ার বিষয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন একটি সংবাদমাধ্যমকে যে বক্তব্য দিয়েছে, তাকে ‘বিশেষ উদ্দেশ্য প্রণোদিত’ বলে দাবি করেছেন বিএনপি নেতা ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন।
দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার একটি ম্যাগাজিনে সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর এক প্রতিবেদেন বিষয়টি উঠে আসার পর তুমুল আলোচনার মধ্যে সোমবার সুপ্রিম কোর্টে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি।
তিনি বলেন, “রাষ্ট্রপতি জাতির উদ্দেশে ভাষণে বলেছেন, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। তার এ ভাষণ সারাদেশের মানুষ শুনেছে। রাষ্ট্রপতি নিজে প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টাদের শপথ পড়িয়েছেন। এখন তিনি বলছেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগের দালিলিক প্রমাণ নেই।
“আমি বলব, রাষ্ট্রপতি সরকার গঠনের দুই মাস পরে বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে একথা বলেছেন। রাষ্ট্রপতি অসত্য বলেছেন।”
তুমুল গণ আন্দোলনের মুখে গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা ভারতে উড়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বিএনপি, সে সময়ের নিষিদ্ধ জামায়াত, হেফাজতে ইসলাম এবং আরও কয়েকটি দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে বলেছিলেন, শেখ হাসিনা দেশত্যাগের আগে পদত্যাগ করেছেন।
সেই রাতেই জাতির উদ্দেশে ভাষণে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনও বলেন, তিনি পদত্যাগপত্র পেয়েছেন। তিন দিন পর মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে শপথ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার।
কয়েকদিন পর শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ হয় একটি বিদেশি সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, তার মা পদত্যাগের সুযোগ পাননি। পরে ফাঁস হওয়া টেলিফোনালাপেও শেখ হাসিনাকে একই কথা বলতে শোনা যায়।
এরই মধ্যে শেখ হাসিনাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত জুলাই ও অগাস্টে সংঘাতে প্রাণহানিকে ‘গণহত্যা’ ধরে এই বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে মানবজমিন পত্রিকার রাজনৈতিক ম্যাগাজিন ‘জনতার চোখ’ এর প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ‘উনি তো কিছুই বলে গেলেন না...’ পত্রিকাটির সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর লেখা প্রকাশিত হয় ১৯ অক্টোবর।
সেখানে মানবজমিন সম্পাদক লিখেছেন, “প্রশ্ন উঠেছে প্রধানমন্ত্রী যদি পদত্যাগ করে থাকেন তাহলে সেটা গেল কোথায়? কারও কাছে এই প্রশ্নের জবাব নেই। ‘তিন সপ্তাহ ধরে অনুসন্ধান চালিয়েছি। খোঁজ নিয়েছি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগেও। যেখানটায় প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র থাকার কথা। কোথাও নেই।”
শেষপর্যন্ত বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির মুখোমুখি হন মতিউর রহমান চৌধুরী। তিনি প্রশ্ন রাখেন, “আপনার কাছে কি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্রটা আছে?”
রাষ্ট্রপতি তাকে বলেন, “আমি শুনেছি তিনি পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু আমার কাছে কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। বহু চেষ্টা করেও আমি ব্যর্থ হয়েছি। তিনি হয়তো সময় পাননি।”
তবে শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র না পেলেও নতুন সরকারের আইনি বৈধতা নিয়ে কোনো সংকট নেই বলেও রাষ্ট্রপতি মন্তব্য করেছেন বলে জানিয়েছেন মতিউর রহমান চৌধুরী।
“বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের আগে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে বৈধতা নেওয়া হয়েছে।তাই পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা যদি পদত্যাগ নাও করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতার কোনো সংকট নেই।”
এই লেখা প্রকাশ হওয়ার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের দাবি করছে। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল দাবি করেছেন, রাষ্ট্রপতি ‘শপথ ভঙ্গ করেছেন।’
এ কারণে রাষ্ট্রপতির এই পদে থাকার যোগ্যতা আছে কিনা ‘সে সম্পর্কে প্রশ্ন আসে’ বলেও মন্তব্য করেছেন আইন উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, , "আপনার যদি শারীরিক বা মানসিক সক্ষমতা না থাকে বা আপনি যদি গুরুতর অসদাচারণ করেন, তখন রাষ্ট্রপতি হিসেবে আর ওই পদে থাকতে পারেন কিনা সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার স্কোপ আমাদের সংবিধানে আছে।"
সংবিধানের প্রথম পরিচ্ছেদের ৫৩ (১) ধারায় বলা হয়েছে, শারীরিক বা মানসিক অসামর্থ্যের কারণে রাষ্ট্রপতিকে পদ থেকে অপসারণ করা যাবে। তবে সেজন্য সংসদের দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন হয়।
তবে রাষ্ট্রপতির অপসারণ বিষয়ে সংবিধানে যে অভিশংসনের কথা লেখা আছে, সেটি এখন কার্যকর নয় এই কারণে যে সংসদ এখন কার্যকর নয়।
বিএনপি নেতা জয়নুল আবেদীন অবশ্য অপসারণের প্রসঙ্গে যেতে চাননি। তিনি বলেন, “যেহেতু রাষ্ট্রপতির পদে থেকে তিনি ‘অসত্য’ কথা বলেছেন, তাই দেশের মানুষ মনে করেন তার পদত্যাগ করা উচিত।”
আরও পড়ুন:
'উৎখাত হওয়ায় পদত্যাগপত্রের ভূমিকা নেই'
রাষ্ট্রপতি ‘মিথ্যা' বলেছেন, পদে থাকার যোগ্যতা নিয়ে ভাবতে হবে: আইন উপদেষ্টা