জাতীয় পার্টির মহাসচিব এখন বলছেন, “স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে কোনোভাবে আপস হতে পারে না৷"
Published : 16 Dec 2022, 11:08 AM
জাতীয় পার্টির তিন যুগের পথচলায় বিভিন্ন সময়ে যুদ্ধাপরাধী আর স্বাধীনতাবিরোধীদের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করলেন দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।
শুক্রবার বিজয় দিবসের সকালে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধের বেদীতে ফুল দিয়ে একাত্তরের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির নেতারা।
পরে মুজিবুল হক চুন্নু সাংবাদিকদের বলেন, "দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে, এমনকি আমাদের দলেও বিভিন্ন সময়ে যুদ্ধাপরাধীরা স্থান পেয়ে গেছে৷ একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এটা আমার জন্য লজ্জার, দুঃখজনক। স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে কোনোভাবে আপস হতে পারে না৷"
সেনাপ্রধান থেকে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের পর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি গঠন করেন জাতীয় পার্টি।
জিয়াউর রহমান যেমন একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের এ দেশের রাজনীতেতে পুনর্বাসিত করেছিলেন, এরশাদও বিভিন্ন সময়ে স্বাধীনতাবিরোধীদের ঠাঁই দিয়েছেন দলে, দিয়েছেন মন্ত্রিত্ব।
সেই দলের বর্তমান মহাসচিব চুন্নু বলেন, “ভৌগোলিকভাবে একটি দেশ পেলেও এখনও মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের চেতনা বাস্তবায়িত হয়নি, যে আদর্শে দেশ স্বাধীন হয়েছিল, তার লেশমাত্র নেই৷ আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে গত ৩২ বছরে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি সরকার দেশকে সুশাসন দিতে পারেনি৷ দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে তারা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে৷"
তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সরকার দেশে দুর্নীতি দূর করার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। দেশে বেকার সমস্যা দূরীকরণে তাদের কোনো উদ্যোগ নেই৷ দেশের টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে, ব্যাংক লুট হচ্ছে৷ এ দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ, বিএনপিকে আর চায় না।”
তাদের বিতাড়িত করতে হবে: ইনু
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেছেন, যারা স্বাধীনতাবিরোধীদের দোসর, এ দেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকার তাদের নেই।
বিজয় দিবসের সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “পঁচাত্তরের পর যুদ্ধাপরাধী এবং তার দোসর রাজনীতির বিষবৃক্ষ বিএনপির মাঝে যে আপস রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে, এই রাজনীতিটা পরিত্যাগ করা উচিত। যারা এখনও বিএনপির সঙ্গে মিটমাটের কথা বলে, তারা কার্যত রাজাকারকে বাংলাদেশের রাজনীতি করার সুযোগ করে দিচ্ছে।
“কোনো মিটমাটের জায়গা নাই, আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একটাই সিদ্ধান্ত, যে কোনো মূল্যে রাজাকার সমর্থিত বিএনপি চক্রকে ক্ষমতার বাইরে রাখতে হবে, রাজনীতির অঙ্গন থেকে বিতাড়িত করতে হবে।”
সকাল সাড়ে ৮টার দিকে শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানান জাসদ নেতৃতৃন্দ। দলের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতারসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা এ সময় ইনুর সঙ্গে ছিলেন।
ইনু বলেন, “সাম্প্রতিককালে বিএনপি-জামাত চক্র সরাসরি সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার, জঙ্গি, সন্ত্রাসীদের সাজা বাতিল করার দাবি তুলেছে। আমার মনে হয় দীর্ঘদিন এরকম কথা আমি শুনিনি। প্রকাশ্যে যুদ্ধাপরাধীদের সাজা বাতিল করার কথা বলেছে। আর যারা সাজাপ্রাপ্ত তাদের আলেম নামে চালানোর চেষ্টা করেছে।
“বিএনপির এই বক্তব্যটা শুধু দুর্ভাগ্যজনকই না, সমগ্র আলেম সমাজকেও অপমানিত করছে। আজকে বিজয়ের মাসে আমাদের একটাই সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত, অনেক হয়েছে, অনেক সহ্য করেছি, বাংলাদেশে, আর রাজনৈতিক অঙ্গনে, যুদ্ধাপরাধীদের রাজনৈতিক কোনো দোসর, সে বিএনপি হোক, আর যাই হোক, তাদের রাজনীতি করতে দেওয়া উচিত না। এদেরকে বিতাড়িত করা উচিত।”