ইডেনে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মারামারি, আহত ১০

কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে কলেজছাড়া করেছেন তাদের বিরোধী নেতা-কর্মীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Sept 2022, 01:41 PM
Updated : 25 Sept 2022, 01:41 PM

ঢাকার ইডেন মহিলা কলেজে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মারপিটে কলেজ শাখার সভাপতিসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।

কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে তাদের বিরোধী নেতাদের রেষারেষির জের ধরে দুই পক্ষ রোববার বিকালে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রীনিবাসের সামনে এই সংঘাতে জড়ায়।

শনিবার রাত থেকে উত্তেজনা চলায় পুলিশ গিয়ে আজিমপুরে কলেজটির সামনে অবস্থান নেয়। রোববার বিকালে মারামারি বাঁধলে মহিলা পুলিশ গিয়ে তা থামায় বলে লালবাগ থানার ওসি মোর্শেদ আলম জানিয়েছেন।

সংঘর্ষের জন্য উভয় পক্ষ পরস্পরকে দায়ী করেছে। ঘটনার তদন্তে একটি কমিটি গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

ক্যাম্পাসে সভাপতি তামান্না জেসমিন রীভা ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানার সমর্থকরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। সহ-সভাপতিদের সমর্থকরা এখন নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বলে পুলিশের ভাষ্য।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠনের দুই পক্ষের এমন মারামারি নিয়ে ইডেন কলেজ কর্তৃপক্ষের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সংঘর্ষের পর কলেজ ক্যাম্পাসে দেখা যায়নি ইডেন কলেজের অধ্যক্ষ সুপ্রিয়া ভট্টাচার্যকে। তার মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

এই ঘটনার শুরু সহ-সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌসের গত ২২ সেপ্টেম্বর সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকার নিয়ে। তিনি সভাপতি রীভা ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়ার বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে ‘সিট বাণিজ্য, চাঁদাবাজি’সহ নানা অভিযোগ তোলেন।

ছাত্রী নিবাসের শিক্ষার্থীরা জানান, তার জেরে শনিবার রাত ১১টার দিকে জান্নাতকে ছাত্রীনিবাস থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন রীভা ও রাজিয়ার অনুসারীরা। পরে তাকে একটি কক্ষে আটকে রেখে ‘হেনস্তা’ করা হয়। এ নিয়ে হট্টগোলের পর জান্নাতকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

এ ঘটনায় মধ্যরাতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের একাংশের বিক্ষোভে ইডেন কলেজ ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীরা রীভা ও রাজিয়াকে বহিষ্কারের দাবি তোলেন।

এ ঘটনায় মধ্যরাতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের একাংশের বিক্ষোভে ইডেন কলেজ ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীরা রীভা ও রাজিয়ার বহিষ্কারের দাবি জানান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রোববার দুপুরে জান্নাতের সমর্থকরা ছাত্রীনিবাসের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে। তাতে কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সুস্মিতা বাড়ৈসহ ২০-২৫ জন পদধারী নেত্রী উপস্থিত ছিলেন।

এর পাল্টায় বিকালে নিজেদের সমর্থকদের নিয়ে সভাপতি রীভা ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সংবাদ সম্মেলন করতে গেলে  জান্নাতের সমর্থকরা বাধা দেয়, তখন মারামারি বেঁধে যায়।

মারামারিতে অন্তত ১০ জনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলে।  সভাপতি রীভাও আহত হয়েছেন বলে তার সমর্থকদের দাবি। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলেও তার সমর্থকরা জানান।

সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পক্ষের দাবি, বিকালে সংবাদ সম্মেলন শুরুর পরই জান্নাতের সমর্থকরা সেখানে গিয়ে হট্টগোল শুরু করেন। তারা দাবি তোলেন, ভুক্তভোগী জান্নাতকে ছাড়া সংবাদ সম্মেলন করতে দেওয়া হবে না।

সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুপুরে যখন তারা সংবাদ সম্মেলন করেছে, আমরা কিন্তু কোনো বাধা দিইনি। কিন্তু বিকেলে আমাদের সংবাদ সম্মেলনে তারা পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছে। এতে আমাদের প্রেসিডেন্টসহ ৭ জন আহত হয়েছে।”

জান্নাতকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে তার সমর্থক আরেক সহসভাপতি সানজিদা পারভীন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, “তারা অভিযুক্ত হয়েও পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করতে চেয়েছে। আমরা সেখানে গিয়ে বলেছি, ভুক্তভোগীকে ছাড়া কীসের সংবাদ সম্মেলন? এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়। এতে আমাদের তিনজন আহত হয়েছে।”

মারামারির পর সহসভাপতি জান্নাতের সমর্থকদের ক্যাম্পাসে অবস্থান করে স্লোগান দিতে দেখা যায়। সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকের সমর্থকদের ক্যাম্পাসে দেখা যায়নি।

লালবাগ থানার ওসি মোর্শেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পুলিশ গত রাত থেকে কলেজের বাইরে অবস্থান করছিল। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া তো ভেতরে গিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে না পুলিশ। বিকেলে সংঘর্ষের সময় আমাদের মহিলা পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে।”

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ক্যাম্পাসে ভাইস-প্রেসিডেন্ট গ্রুপই অবস্থান করছে।”

ক্যাম্পাসে নিজেদের অবস্থান নিয়ে সহ-সভাপতি সানজিদা বলেন, “এই ক্যাম্পাসে নানা অপকর্মে যুক্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ছাত্রলীগের অধিকাংশ নেতা-কর্মী আর চাচ্ছে না। আমাদের ৪৮ জনের কমিটির মধ্যে মাত্র ৫-৬ জন তাদের পক্ষে আছে। আমরা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছি এবং অবিলম্বে তাদের পদত্যাগ দাবি করছি।”

এদিকে এ ঘটনায় আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি তিলোত্তমা শিকদার ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বেনজির হোসেন নিশি।