“সন্দেহ সৃষ্টি হলে, বিভাজন সৃষ্টি হলে আমাদের এই অভ্যুত্থান বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে,” বলেন দলটির নেতা সাকি
Published : 04 Jan 2025, 05:46 PM
রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সন্দেহ বা বিভাজন সৃষ্টি হলে জুলাই অভ্যুত্থান বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে, এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে সতর্ক করেছে গণসংহতি আন্দোলন।
শনিবার দুপুরে এক গণসংলাপে দলটির প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি অভ্যুত্থানের আকাঙ্খা ও চেতনা ধারণ করে ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকুন এবং আগামী পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়ায় এই আকাঙ্খা যাতে বাস্তবায়িত হয়, তার জন্য সংগ্রাম অব্যাহত রাখুন।”
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে গণসংগতি আন্দোলনের এই নেতা বলেন, “আপনাদের কাজ এই সমস্ত প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, তাকে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করা।
“এমন কোনো ধারণা যাতে তৈরি না হয়, এমন কোনো অবস্থা যাতে তৈরি না হয়, যাতে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি হলে, বিভাজন সৃষ্টি হলে আমাদের এই অভ্যুত্থান বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে।”
রাষ্ট্রপতির অপসারণ, সংস্কার, নির্বাচন ও সম্প্রতি জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রকাশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সঙ্গে বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের মতভিন্নতা দেখা দেয়।
শেষ মুহূর্তে সরকার অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র তৈরির সিদ্ধান্ত দিলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সিদ্ধান্ত বদলায়।
আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণসংহতি আন্দোলেনের নেতা সাকি বলেন, “রাজনৈতিক শক্তিসমূহের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখা, আস্থা ধরে রাখা সেটা অন্তবর্তীকালীন সরকারের একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ।”
বিরাজনীতিকরণ বা কাউকে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টার ইতিহাস মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের জনগণ অভ্যুত্থান করে এই সমস্ত ষড়যন্ত্রমূলক রাজনীতির কবর রচনা করেছে। কাজেই এদেশে আর কোন ষড়যন্ত্রমূলক রাজনীতি বাস্তবায়ন হতে দেওয়া যাবে না।”
জুলাই আন্দোলনে আহতরা যদি রাস্তায় নেমে চিকিৎসা দাবি করেন, তাতে সরকার লজ্জিত ও বিব্রতকর হওয়া উচিত মন্তব্য করে সাকি বলেন, “আমরা অভ্যুত্থানের আহত সমস্ত যোদ্ধাদের অবিলম্বে চিকিৎসা নিশ্চিত করা, তাদের জীবনের দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষেত্রে এই রাষ্ট্রের যতটা সক্ষমতা আছে সবটা নিয়োগের আহ্বান জানাই। শহীদ পরিবারের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে, শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিতে হবে।”
‘মানুষ দ্রব্যমূল্যে নাকাল’
সাকি বলেন, “মানুষ দ্রব্যমূল্যে নাকাল। এই যে উর্ধ্বগতি এই উর্ধ্বগতি থামাতে হবে। মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নানাভাবে ব্যাহত হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নানা দিক থেকে অবনতি হচ্ছে।
“কেনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখনো মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিতে পারছে না। যাতে তারা জবাবদিহিতা করতে বাধ্য হয় আপনাদের (অন্তবর্তীকালীন সরকার) সেই ব্যবস্থা করতে হবে।”
‘আগামীর বাংলাদেশ হবে সার্বভৌম মর্যাদার’
সাকি বলেন, “এখনো বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে আমাদের নাগরিকদের গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। আমরা পরিস্কার জবাবদিহিতা চাই এবং সরকারের দিক থেকে উদ্যোগ চাই যে, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বার্থের ভিত্তিতে সমস্ত চুক্তি, সমস্ত সম্পর্ক যেন নবায়ন করা হয়।”
তিনি বলেন, “এই অভ্যুত্থান এই রায়ও দিয়েছে যে, আগামীর বাংলাদেশ হবে সার্বভৌম মর্যাদার বাংলাদেশ, দুনিয়ার বুকে মাথা উঁচু করে থাকার বাংলাদেশ।”
জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে গণসংহতি আন্দোলনের ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ শাথার যৌথ উদ্যোগে এই গণসংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
দক্ষিণের আহ্বায়ক আলিফ দেওয়ান ও উত্তরের আহ্বায়ক মনিরুল হুদা বাবনের সভাপতিত্বে গণসংলাপে বক্তব্য রাখেন- গণসংহতি আন্দোলনের নেতা আবুল হাসান রুবেল, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার জুলাই আন্দোলনের তরুণ কয়েকজন নেতা।