“ওদের মধ্যে কোনো মনুষত্ববোধ নেই। ওরা চুরি, লুণ্ঠন, দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন ছাড়া কিছুই জানে না,” অভিযোগ করেন তিনি।
Published : 02 Nov 2023, 10:08 PM
বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষ, সহিংসতার পর হরতাল-অবরোধে আগুনের ক্ষয়ক্ষতির প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “দেশবাসীর কাছেই জানতে চাই, তারা কোন বাংলাদেশ চায়- এই ধ্বংসস্তূপ নাকি উন্নত বাংলাদেশ।”
তিনি বলেন, এই সন্ত্রাসী, জঙ্গী, এ অমানুষগুলো-এদের সঙ্গে কারা থাকে আর তাদের সঙ্গে বসা? এই জানোয়ারদের সঙ্গে বসার কথা কারা বলে?
বৃহস্পতিবার একাদশ সংসদের শেষ অধিবেশনে সমাপনী বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। গত ২২ অক্টোবর এ সংসদের ২৫তম অধিবেশন শুরু হয়।
সংসদ নেতা শেখ হাসিনার অভিযোগ, “আমার কথা হচ্ছে জানোয়ারদেরও একটা ধর্ম আছে, ওদের সে ধর্মও নাই। ওদের মধ্যে কোনো মনুষত্ববোধ নেই। ওরা চুরি, লুণ্ঠন, দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন ছাড়া কিছুই জানে না।”
২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থা ছিল বলেই দেশ এগিয়ে গেছে। আর সেটাকেই ধ্বংস করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে, যোগ করেন তিনি।
“কাজেই দেশবাসীর কাছে আমি আহ্বান জানাই, তারা কোন বাংলাদেশ চায়। এই ধ্বংসস্তূপ? নাকি উন্নত বাংলাদেশ। তাদের জীবনমান যে উন্নতি হয়েছে সেটা ধরে রাখতে চান? সেটা ধরে রাখতে হলে একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে সেটা থাকবে।”
সাংবাদিকদের ওপর হামলার জবাব বিএনপিকে দিতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
জনগণই শক্তির উৎস উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, “আমার একমাত্র শক্তি বাংলাদেশের জনগণ। জনগণের শক্তি নিয়েই আমরা চলছি।
“জিয়াউর রহমান তো আমার বাবা মা ভাইবোন সব হত্যার সঙ্গে জড়িত। আর খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া তো আমাকে হত্যার চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগের ২১ হাজার নেতাকর্মী হত্যা করেছে। সাধারণ মানুষ, আজকে কোন অবস্থায় দেশকে নিতে চায়?”
শেখ হাসিনা বলেন, নৌকা মার্কা স্বাধীনতা দিয়েছে। নৌকা মার্কাই পারে উন্নত জীবন দিতে। এরা ধ্বংসই দিতে পারব। এরা স্বাধীনতাও চায় না, উন্নতিও চায় না।
বিএনপির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও দুর্বৃত্তপনা রুখে দিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশটাকে নিয়ে কেউ যেন খেলতে না পারে- এজন্য দেশবাসীর কাছে সহায়তা চাই। দেশবাসীকে বলবো অগ্নি সন্ত্রাস ও দুর্বৃত্তদের ধরিয়ে দিন।
“যে হাত দিয়ে গাড়ি পোড়াবে সেই হাত পুড়িয়ে দিন, তাহলে ওরা থামবে। তা না হলে ওরা থামবে না। এটা দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে করতে হবে। দেশের মানুষের সহযোগিতা পেলে এদের দুর্বৃত্তপনা কমানো যাবে। মানুষকে বলবো ভয়ের কিছু নেই। এরা মুষ্ঠিমেয়। এদের বিরুদ্ধে সকলকে এক হয়ে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি।“
বিএনপির চলমান আন্দোলনের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা থেকে শুরু করে সব ধরনের ব্যবস্থা যখন আমরা করে যাচ্ছি তখন কী দেখলাম? কথা নেই, বার্তা নেই- নির্বাচন হতে দেবে না। আর আমাকে পদত্যাগ করাবে, ক্ষমতা থেকে হটাবে।
“ঘোষণা দিয়ে ২৮ অক্টোবর বিএনপি যে তাণ্ডব করেছে সারা বাংলাদেশে; এই দৃশ্যগুলো সহ্য করা যায় না।“
সংসদে এ সময় প্রধানমন্ত্রী গত শনিবারের সহিংসতার একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করেন।
তিনি বলেন, “আমরা যখন দেশের মানুষকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। তখন বিএনপি জামাত জোট বার বার অগ্নি সন্ত্রাস, সংঘাত, মানুষ হত্যা, মামলা নানাভাবে মানুষকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছে। একদিকে আমরা দেশের জন্য কাজ করি, দেশের উন্নতি করি অন্যদিকে তারা ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। ধ্বংস করাটাও তাদের চরিত্র।
“২৮ তারিখে যেভাবে পুলিশকে ফেলে দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে। কোনো মানুষ এরকম করতে পারে? ২০১৩, ১৪ ও ২০১৫ সালে তারা একইভাবে করেছে। মাঝখানে একটু থেমেছিল তারপর আবার ভয়ংকর রূপ জাতি দেখছে।“
তাকে বিদেশে হত্যার চেষ্টা হয়েছে সেই অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বার বার আমার ওপর আঘাত হেনেছে। তারপরও আমি বেঁচে গেছি। এখনও বার বার আমার ওপর হামলা হচ্ছে। এমনকি দেশে না, বিদেশেও আমার ওপর হামলার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। আমি বিস্তারিত বলবা না। শুধু এইটুকুই জানিয়ে রাখলাম।
“আমি যখন বিদেশ যাই সেখানেও কিলার হায়ার করে আমাকে মারার চেষ্টা... সে চেষ্টাও ওই খালেদা জিয়ার ছেলে যেটা লন্ডনে বসে আছে। সেসহ তাদের যারা সন্ত্রাসী তারাই। তবে আমি কখনও এ ব্যাপারে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত না। জন্মালে তো মরতে হবে। কিন্তু যতক্ষণ শ্বাস আছে এদেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাব।”
সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাক, উন্নয়নের অগ্রগতি অব্যাহত থাকুক, অধিকার সুরক্ষিত থাকুক সেটা আমরা চাই।