দশম ওয়েজবোর্ড গঠন, সাংবাদিকদের আবাসনের ব্যবস্থা এবং কল্যাণ তহবিলে ১০ কোটি টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।
Published : 02 Nov 2023, 03:23 PM
সমাবেশকে ঘিরে পুলিশ ও সাংবাদিকদের ওপর হামলার জবাব বিএনপিকে দিতে হবে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, "যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে অমানবিক এবং ন্যাক্কারজনক। এত অমানবিক আচরণ এটা একটা রাজনৈতিক দলের হয় না।"
এগুলো আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তুলে ধরে তাদের আসল চেহারা সামনে নিয়ে আসতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বানও জানান তিনি।
সাম্প্রতিক হামলা ও সহিংসতার ঘটনায় চুপ থাকায় তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও সংগঠন এবং সুশীল সমাজের কঠোর সমালোচনা করেন।
বৃহস্পতিবার ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশের সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
সরকারপ্রধান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, "আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো সামান্য কিছু হলেই বিবৃতি দেয়। এখন তারা কোথায়? আমাদের দেশের সুশীল বাবুরা কোথায়? শুধু আওয়ামী লীগে কিছু হলেই বড় করে দেখায়? মানবাধিকার সংগঠনগুলো চুপ কেন? এদের বিবেক বলে কিছু নেই?
“আওয়ামী লীগের পান থেকে চুন খসলেই তাদের কণ্ঠে অনেক জোর দেখা যায়। এখন বিড়ালের মতো মিউ মিউ করলেও তো দেখতাম। তাও তো দেখা যাচ্ছে না। ফিলিস্তিনে যেভাবে হাসপাতালে হামলা হয়েছে, এখানেও। জানি না তারা এই শিক্ষাটা ইহুদিদের থেকে পেয়েছে কি না।"
প্রধান অতিথির বক্তব্য সাংবাদিকদের কল্যাণে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে দশম ওয়েজ বোর্ড গঠনের ঘোষণাসহ বেশ কিছু প্রতিশ্রুতির আশ্বাসও দেন তিনি।
সাংবাদিকদের আবাসনের ব্যবস্থা করা, কল্যাণ তহবিলে ১০ কোটি টাকা দেওয়ার ঘোষণার পাশাপাশি বিএনপি-জামায়েতের হামলায় ক্ষতিগ্রস্থ সাংবাদিকদের সহযোগিতার আশ্বাসও দেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, "পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সেখানে আমাদের নির্দেশনা ছিল একেবারে দূরত্বে থাকা, যাতে কোন মতে মানুষের ক্ষতি করতে না পারে। সেখানে যেভাবে সাংবাদিকদের উপর নির্যাতন চালানো হয়েছে এটা অমানবিক।
“সাংবাদিকদের মাটিতে ফেলে পেটানো হল, আমার মনে হয় বাংলাদেশে এই ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা আর দেখা যায়নি। যেভাবে সাংবাদিক পেটানো হয়েছে এবং তাদের উপর অত্যাচার করা হয়েছে। এটা কেন করা হল সেই প্রশ্নের জবাব বিএনপিকে দিতে হবে।”
তিনি বলেন, “আমি সাংবাদিকদের বলব, এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং দায়িত্বপালনকালে আপনাদের ওপর যারা আক্রমণ করেছে তাদের আসল চরিত্র আন্তর্জাতিকভাবে আপনাদের তুলে ধরা উচিত।”
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, "প্রকৃতপক্ষে আন্দোলন সংগ্রাম আমরাও করেছি, বাংলাদেশে আন্দোলনের নামে যে রকম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করা হয়, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। ২৮ অক্টোবর সমাবেশ করতে চেয়েছে বিএনপি, অন্যান্য আরও অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দল। আমরা কিন্তু বাধা দেইনি, তারা কথা দিয়েছিল শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করবে। কিন্তু দেখা গেল যে শান্তিপূর্ণ না। তারা সেখানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছে।’
“পুলিশকে মাটিতে ফেলে শুধু পেটানো না, বেহুশ হয়ে গেছে তারপরও মারা হচ্ছে। ঢিল মারছে, প্রশ্ন হচ্ছে তারা আসছে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে এত ইট পাথর কোথায় পেল। এই যে কোপানো হল, সেগুলো তারা কোথায় পেল? তবে তাদের উদ্দেশ্যটাই ছিল আগাগোড়া খুবই খারাপ ।”
অগ্নিসন্ত্রাস, জ্বালাও-পোড়াও বিএনপি-জামায়াতের চরিত্র উল্লেখ করে তিনি বলেন, "আপনাদের মনে আছে, ২০১৩/১৪/১৫ এর জ্বালাও-পোড়াও। আগুন সন্ত্রাস তারা করেছিল নির্বাচন ঠেকানোর জন্য কিন্তু সেই নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি, তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।
“হত্যা, খুন, গুম এগুলোই তারা খুব পারে। পুলিশ হাসপাতালে ঢুকে, হাসপাতালে তারা অত্যাচার করে, মানুষের উপর আক্রমণ, অ্যাম্বুলেন্স করে রোগী যাচ্ছে, সেই অ্যাম্বুলেন্সকে ধাওয়া দেওয়া, হামলা করা-এত অমানবিক আচরণ এটা একটা রাজনৈতিক দলের হয় না।"
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, "জাতির পিতা দেশে ফিরে যখন দেশের শাসন ভার হাতে নেন, স্বাধীন সার্বোভোম দেশ হিসেবে গড়ে তোলার সবরকম পদক্ষেপই তিনি গ্রহণ করেছিলেন। সেখানে সাংবাদিকদের কল্যাণে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নেন। সেই সংবিধানে ৪০ নম্বার অনুচ্ছেদে উল্লেখ ছিল, চিন্তা, বিবেক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সংবিধান বা রাষ্ট্র সর্বোচ্চ অধিকার দেবে। সর্বোচ্চ সুযোগ সৃষ্টি করে দেবে।
“সেই সাথে সাথে জাতির পিতা প্রিন্টং অ্যান্ড পাবলিকেশন অ্যাক্ট ১৯৭৩, নিউজ পেপার এমপ্লইজ অ্যাক্ট ১৯৭৪, প্রেস কাউন্সিল অ্যাক্ট ১৯৭৪, নিউজ পেপার অ্যাক্ট ১৯৭৫, চলচ্চিত্র সেন্সরবোর্ড অ্যাক্ট ১৯৭২- এই আইনগুলো করে দিয়ে যান। কারণ তিনি নিজেও রাজনৈতিক জীবনে, উনি যে চাকরি করেছেন সাংবাদিকতাতেও তিনি সংযুক্ত ছিলেন। সাংবাদিকতায় ছিলেন বলেই, আমি যখন আপনাদের মাঝে আসি আমি আপনাদের কাছে, এই দাবিটাই করি, আমি তো এই পরিবারেরই একজন।“
সরকারপ্রধান বলেন, "আমাদের দেশে এখন মানুষ যত না বেশি সংবাদপত্রের পরিমাণ অনেক বেশি। অনেক উন্নত দেশ, ধনী দেশেও মনে হয় এত সংবাদপত্র নাই। বর্তমানে আমাদের দেশে পত্রিকার সংখ্যা ৩ হাজার ২৪১টি, তথ্য মন্ত্রণালয়ের মিডিয়াভুক্ত ৭০৪টি, নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল ৩৮৭টি। কর্মসংস্থানটা, এটাই আমার লক্ষ্য।"
বাংলাদেশকে মুক্ত গণমাধ্যমের দেশে পরিণত করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, "আমরা সাংবাদিক কল্যাণকে অগ্রাধিকার দিয়েছি। সাংবাদিক সহায়তা কার্যক্রমকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য আমরা সাংবাদিক সহায়তা, ভাতা ও অনুদান নীতিমালা ২০১২ এবং বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট আইন ২০১৪ প্রণয়ন করে একটা ট্রাস্ট বোর্ড গঠন করে এবং সেই সাথে সাথে এটা পরিচালনার জন্য একটা সিড মানিও আমরা দিয়েছি।
"ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন, এটা তো মালিকদের দায়িত্ব। সেটা না করে যদি তারা এখন মামলা করে এটা খুব দুর্ভাগ্যজনক। যা হোক নবম ওয়েজবোর্ড করা হয়েছে, দশম ওয়েজবোর্ড করার প্রস্তুতি চলছে। দশম ওয়েজ বোর্ডের প্রস্তুতিটা হচ্ছে, আমরা নেব। ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকদেরও এই ওয়েজ বোর্ডের আওতায় নিয়ে আসার একটা পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।
“তাছাড়া আপনাদের কল্যাণে গণমাধ্যমকর্মী, চাকরির শর্তাবলী আইন প্রণয়নের চিন্তা ভাবনা আমাদের রয়েছে। সেই ব্যবস্থাটা আমরা নিচ্ছি। অবশ্য আপনাদেরই নানা রকম নানা মত, নানা পথের জন্য অনেক কিছু করতে গেলেও একটু সময় কালক্ষেপণ হয়ে যায়। নিজেরাই বিপদে পড়েন সেই দোষটা আমাদের দিলে চলবে না।"
শেখ হাসিনা বলেন, "আজ বাংলাদেশে সাংবাদিকতা পেশা হিসাবে উচ্চ মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। দেশের সকল টেলিভিশন চ্যানেল এখন অনেকটা সাশ্রয়ী হয়েছে। টেলিভিশন মালিকরা তাদের বলব, আগে স্যাটেলাইট ভাড়া করা হত বিদেশ থেকে। সেখানে বৈদেশিক মুদ্রায় ভাড়ার টাকা পরিশোধ করতে হত। আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১ উৎক্ষেপণ করেছি, সেই স্যাটেলাইটের মাধ্যমেই কিন্তু সবাই টেলিভিশন চালাচ্ছে, ভাড়াটাও কম- খুব বেশি না। এতবড় একটা সাশ্রয় করে দিলাম।
“মালিকরা কেন কল্যাণ ট্রাস্টের অনুদান দেয় না- সেটাই আমার প্রশ্ন। কয়েকজন দিয়েছে, বেশিরভাগই দেয়নি কিন্তু এটা হিসাব করা যায়।"
এ সময় সাংবাদিকদের সরকারি সুযোগ-সুবিধার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "একটা জমির আবেদন দিয়েছেন- আমি দেখব। জেলাভিত্তিক আবাসন প্রকল্প তৈরি করে দেব। সেখান থেকে আপনারা আবাসন যাতে পান, সে ব্যবস্থা করব।"
এদিন সকালে প্রেস ক্লাবে বিএফইউজে সভাপতি ওমর ফারুকের সভাপতিত্বে বিএফইউজের প্রতিনিধি সম্মেলন শুরু হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।