“যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন না হলে দল ‘চিনাবাদাম’ খাবে না।…আপাতত আমরা আলহামদুলিল্লাহ বলতে থাকি। কিছুদিন দেখি। তারপর যা করিয়াছি অতীতে, ভবিষ্যতে তাই করিব।”
Published : 24 Oct 2024, 07:47 PM
প্রায় দুই যুগের জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা নিয়ে কটাক্ষ করে বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, “কিছু কিছু রাজনৈতিক দল আছে তাদের কর্মকাণ্ড দেখলে ক্ষমতায় আসছে।”
এই কথাটি যে জামায়াতকে ইঙ্গিত করেই বলেছেন, সেটিও গোপন রাখেননি তিনি।
“তাদের নাম নাই বা বললাম”, এই মন্তব্য করে পর মুহূর্তেই বিএনপি নেতা বলেন, “তারা নির্যাতিত নিঃসন্দেহে। তবে তারা এ দেশটা স্বাধীন করে নাই, আমরা করছি।”
বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘দেশে বর্তমান প্রেক্ষাপটে অন্তবর্তীকালীন সরকার ও রাজনৈতিক দলের করণীয়’ বিষয়ে এক আলোচনায় গয়েশ্বর এসব কথা বলেন।
অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত বিরতিতে যে সংলাপের আয়োজন করছে, তারও বিরোধিতা করেন বিএনপি নেতা।
তিনি বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শ নেওয়া এই সরকারের দায়িত্ব আছে বলে আমরা মনে হয় না। দেখি মাঝে মধ্যে কিছু লোক যায়... আসে। তারা একটু পুলকিত হয় যে, এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সাথে ছবি তোলে। আমাকে অনেকে জিজ্ঞাসা করে, ‘আপনার দেখার মতো অবস্থা হয় নাই?’ না দেখাই ভালো।”
যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন না হলে দল ‘চিনাবাদাম খাবে না’
‘যৌক্তিক সময়ের মধ্যে’ জাতীয় নির্বাচন না হলে বিএনপি আন্দোলনে যাবে, এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন গয়েশ্বর। বলেন, “আমরা কী চাই? একটা অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশের মালিক জনগণরা ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করে একটি সংসদ ও সরকার গঠন করবে।
“এটাই তো ‘বিপ্লবের’ মূল বক্তব্য। এই কারণে উনাদের মতো (অন্তবর্তীকালীন সরকারের) জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।”
নির্বাচন করার জন্য যতটুকু সময় দরকার তা বোঝেন জানিয়ে গয়েশ্বর বলেন, “সেই সময়টুকু আমরা দেব। সেই সময়টা অতিক্রান্ত হলে ‘জনগণনির্ভর’ বিএনপি জিয়াউর রহমানের দল তারেক রহমানের নেতৃত্বে অবশ্যই ঘরে বসে ‘চিনাবাদাম খাবে না’।
“আপাতত আমরা আলহামদুলিল্লাহ বলতে থাকি। কিছুদিন দেখি। তারপর যা করিয়াছি অতীতে, ভবিষ্যতে তাই করিব।”
গত ৮ অগাস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে শপথ নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন কবে- এই প্রশ্নে কোনো সময়সীমা দিচ্ছে না।
সংবিধানে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলা আছে। দৈব দুর্বিপাকে সেটি করা না গেলে আরও ৯০ দিন সময় নেওয়া যায়।
বিএনপি আন্দোলনে নামলে কোনো কিছুর পরোয়া করবে না- এমন সতর্কতা দিয়ে তিনি বলেন, “মৃত্যুর পরোয়ানা আমাদের কাছে বড় না। মরতে যখন প্রস্তুত আছি মারতে আমাদের কেউ পারবে না।
“প্রকৃত বাস্তবতায় যেটা করার সেটা ভবিষ্যতে করব।”
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলাগুলো কেন এখনও প্রত্যাহার হয়নি তা সে প্রশ্ন রেখে গয়েশ্বর বলেন, “সেজন্য বলছি, সরকার বদলে গেছে কিন্তু তুমি আমি একই আছি.. কাছে আর দূরে।”
দেশে যেন সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বানও জানান বিএনপির এই নেতা।
‘আফটার ইফেক্ট কী হবে?’
ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে অন্তর্বর্তী সরকার যে আদেশ দিয়েছে সে বিষয়েও প্রতিক্রিয়া জানান বিএনপি নেতা বলেন, “যাই করেন, আফটার ইফেক্ট কী হবে? কাজকে ঘৃণা করেন, জাতিকে নয়।
“জামায়াতের অনেক লোককে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে এবং অত্যাচারও করেছে। জামায়াত কিন্তু শেখ হাসিনার মত একজন ‘ফ্যাসিস্টকে’ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে নাই। করেছে?”
যারা এখনও বিভিন্ন সংগঠনের নামে অত্যাচার করছে, মানুষ খুন করছে, লুট করছে তারা ‘আরামেই আছে’ মন্তব্য করে বিএনপি নেতা বলেন, “তাদের ধরে ধরে বিচার করেন। অর্থাৎ, অন্যায় করলে তার পরিণাম কী হয়, দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।”
সরকার পতনের পর অনেক মানুষের সীমান্ত অতিক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলে গয়েশ্বর বলেন, “এতগুলো লোক দেশে-বিদেশে গেল, কার বদৌলতে? কে তাদেরকে পালাতে উৎসাহিত করেছে, সাহায্য করেছে এর জবাব কে দেবে?”
আয়োজক সংগঠন ‘জাগ্রত বাংলাদেশ’ এর সভাপতি জহিরুল ইসলাম কলিমের সভাপতিত্বে আলোচনায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, নির্বাহী কমিটির সদস্য আলমগীর হোসেন, জাগ্রত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোজাম্মেল হোসেন শাহীনও বক্তব্য রাখেন।