“অন্যথায় ভোটের হার ১৫ শতাংশের বেশি হত না,” বলেন তিনি।
Published : 04 Jul 2024, 09:11 PM
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে প্রার্থী না দেওয়ায় ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটের হার কিছুটা বেড়েছে বলে মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) নির্বাহী সদস্য আহসান এইচ মনসুর।
পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের এই নির্বাহী পরিচালক মনে করেন, অধিকাংশ প্রার্থী দলীয় প্রতীকে ভোট করলে এবার ১৫ শতাংশের বেশি ভোট পড়ত না।
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সুজন আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
সুজনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থীদের তথ্যের বিশ্লেষণ উপস্থাপন এবং নির্বাচন-মূল্যায়ন তুলে ধরতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে চেয়ারম্যান পদে ভোট করার সুযোগ থাকলেও ভোটকে আরো বেশি অংশগ্রহণমূলক দেখানোর কৌশলে স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বা মনোনয়ন দেয়নি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ফলে আওয়ামী লীগ নেতারা নির্বাচন করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে।
অন্যদিকে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও অর্ধশতাধিক উপজেলায় তাদেরও নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।
সব মিলিয়ে এবারের নির্বাচনের অধিকাংশ প্রার্থী ভোটে লড়েছেন নির্দলীয় প্রার্থী হিসেবে। তারপরও ভোট পড়েছে গত দেড় দশকের মধ্যে সবেচেয় কম।
এবারের নির্বাচনের প্রথম ধাপে ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ, দ্বিতীয় ধাপে ৩৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ, তৃতীয় ধাপে ৩৬ দশমিক ২৪ শতাংশ, চতুর্থ ধাপে ৩৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ এবং পঞ্চম ধাপে ৪২ দশমিক ৫৯ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে। সব মিলিয়ে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট পড়েছে গড়ে ৩৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, “নির্দলীয় ভিত্তিতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় নির্বাচনে ভোটের হার কিছুটা বেড়েছে। অন্যথায় ভোটের হার ১৫ শতাংশের বেশি হত না।
“আমি মনে করি, স্থানীয় নির্বাচন নির্দলীয় ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হলে প্রার্থীর জনপ্রিয়তা প্রমাণের সুযোগ থাকে এবং প্রার্থীর সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক তৈরি হয়।”
তিনি বলেন, “যেভাবেই হোক উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এখন সরকারের কাজ হবে এই পরিষদকে শক্তিশালী করা। এ জন্য এর আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং কেন্দ্রীয় শাসনের পরিবর্তে বিকেন্দ্রীকরণ করা দরকার। এমন একটি ব্যবস্থা দাঁড় করাতে হবে যে দলের প্রার্থীই চেয়ারম্যান থাকুন না কেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিষদে বরাদ্দ চলে যাবে।”
সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। তিনি বলেন, গত ৮ মে ২০২৪ থেকে ৯ জুন ২০২৪ পর্যন্ত মোট পাঁচটি ধাপে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হয়।
ঘোষিত তফসিল অনুয়ায়ী সর্বমোট ৪৭৯টি উপজেলার নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন কারণে কয়েকটি উপজেলার নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। স্থগিত উপজেলাগুলো বাদ দিলে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ১৮৮৯ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
৪৭০ জন বিজয়ী চেয়ারম্যানের মধ্যে ১০৩ জনের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর, ১৬৫ জনের স্নাতক, ৮৩ জনের এইচএসসি এবং ৫১ জনের এসএসসি। প্রার্থীদের মধ্যে এসএসসির নিচে রয়েছেন ৬৭ জন।
দিলীপ বলেন, প্রার্থীদের মধ্যে সিংহভাগই উচ্চ শিক্ষিত হলেও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ পদের জন্য উল্লেখ্যযোগ্য সংখ্যক প্রার্থী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি অতিক্রম করেননি।
সংবাদ সম্মেলনে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয় সুজনের পক্ষ থেকে।
• নির্বাচন ব্যবস্থাকে পরিশুদ্ধ করা এবং স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য রাজনৈতিক সংস্কার।
• নির্বাচনি ব্যবস্থার সংস্কারের লক্ষ্যে নির্বাচনকালীন সরকারের ভূমিকা নির্ধারণের বিষয়ে ঐকমত্যে আসা।
• আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তন।
• সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান, জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয়করণমুক্ত করা।
• সাংবিধানিক আকাঙ্ক্ষার আলোকে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের আইনসমূহ সংশোধন করা এবং প্রতিষ্ঠানসমূহকে স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়া।
• স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনগুলো নির্দলীয় ভিত্তিতে সংসদীয় পদ্ধতিতে করা।
• উপজেলা পরিষদের উপদেষ্টার পদ থেকে সংসদ সদস্যদের অব্যাহতি দেওয়া।
• উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য জামানতের টাকা আগের মতো দশ হাজার ও পাঁচ হাজার টাকা করা।
• জেলা পরিষদ নির্বাচন মৌলিক গণতন্ত্রের আদলে না করে সাধারণ ভোটারদের প্রত্যক্ষ ভোটে আয়োজন করা।
• সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি একীভূত আইন (আমব্রেলা অ্যাক্ট) করা; একসাথে সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনের আয়োজন করা।
অন্যদের মধ্যে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, জাতীয় কমিটির সদস্য একরাম হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন।