‘‘আমি বলতে চাই, সরকারের এরকম মিথ্যা প্রোপাগান্ডায় কাজ হবে না, মিথ্যা দিয়ে সরকারের শেষ রক্ষা হবে না,” বলেন তিনি।
Published : 15 Dec 2023, 08:09 PM
ক্ষমতাসীনদের ‘স্বৈরাচারের চেয়েও ভয়ঙ্কর’ আখ্যা দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান।
তার কথায়, ‘‘আজকের সরকারের এমন অবস্থা হয়ে গেছে যে তাদের মিথ্যাচার তারা নিজেরাও বিশ্বাস করতে চায় না। তারা ভাবছে যে, বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে তারা এত জনপ্রিয় যে তারা নির্বাচন … এগুলো পরোয়া করে না… ‘ক্ষমতায় আছি, কিসের নির্বাচন?’ একদলীয় সরকার নির্বাচন লাগে কেন, দরকারটা কী? তারা দলের মধ্যে কিছু সিট ভাগাভাগি করছে… আপনারা দেখছেন।
‘‘সমস্যা হচ্ছে যে, একটি সরকার যখন তারা গণতন্ত্রের ভান করে তখন কিন্তু সেটা স্বৈরাচারের চেয়েও বেশি ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। এটাই বাস্তবতা।”
শুক্রবার বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের এক আলোচনা সভায় সরকারের ‘একতরফা নির্বাচনের’ প্রসঙ্গ টেনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মঈন খান বলেন, ‘‘সরকার নিজেদের একটা গণতান্ত্রিক সরকার বলে পরিচয় দেয়। তারা অভিযোগ করে, বিএনপি নাকি সন্ত্রাসী দল। একসময় তারা জুজুর ভয় দেখিয়ে বিশ্বের গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে বিভ্রান্ত করেছিল। তবে গল্প আছে না- বাঘ এসেছে, বাঘ এসেছে গল্পের মতো… মিথ্যা দিয়ে যদি একজন লোককে বারবার বিভ্রান্ত করা হয়, যখন সত্যিকার বাঘ আসে কিন্তু সে বিভ্রান্ত হয় না… সে মনে করে আসলে বাঘ আসে না। আজকের সরকারের পরিস্থিতি অনেকটা সেরকম।
‘‘আমি বলতে চাই, সরকারের এরকম মিথ্যা প্রোপাগান্ডায় কাজ হবে না, মিথ্যা দিয়ে সরকারের শেষ রক্ষা হবে না।”
‘গণতন্ত্র আজ মৃত’
আবদুল মঈন খান বলেন, ‘‘একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষ নিজেদের জীবন দিয়েছেন, নিজের রক্ত ঢেলে দিয়েছেন কেন। একটি মাত্র উদ্দেশ্য, তার নাম হচ্ছে গণতন্ত্র। এদেশের মানুষ বুঝেছিল পাকিস্তানের অবকাঠামোর মধ্যে কখনো গণতন্ত্র থাকতে পারে না। এটার প্রমাণ এখনো আপনারা দেখতে পারবেন।
“কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস, বাংলাদেশে আজকে ৫২ বছর পরে এসে আমরা দেখতে পারছি যে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র মৃত। এ থেকে কঠিন সত্য কী হতে পারে?”
বিএনপির এ নেতা বলেন, “সরকার বলছে যে, তারা গণতন্ত্র দিয়েছে। এটা কোন একদলীয় গণতন্ত্র- সেটা আমি জানি না…আজকে থেকে ৭০/৮০ বছর আগে রাশিয়া যখন ইউএসএসআর (সোভিয়েত ইউনিয়ন) ছিল, সেই ইউএসএসআরের গণতন্ত্র, নাকি নর্থ কোরিয়ার গণতন্ত্র….সেই কথাটি এই সরকার উপলব্ধি করতে পারছে না।
“উপলব্ধি করার কথাও না, যখন কেউ অন্ধ হয়ে যায় তখন কিন্তু হুঁশ থাকে না। আজকে সরকারের সেই হুঁশ নাই। এই হুঁশ না থাকার কারণে আজকে তারা কাল্পনিক গণতন্ত্রের একটি ফানুস তৈরি করেছে, সেটা ১৮ কোটি মানুষের কাছে সামনে তুলে ধরছে।”
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘‘আগামীকাল বিজয় দিবস, এর পরদিন প্রার্থী প্রত্যাহারের শেষ দিন…তারপরে ১৮ তারিখ প্রতীক বরাদ্দ। আচ্ছা ভোট কি হবে? সবাই জানে, ভোট হচ্ছে না। সবাই জানে, এটা একটা বানরের পিঠে ভাগাভাগির মতো।
“জাতীয় পার্টির মূল নেতা কথা বলেন না। আগের যিনি মূল নেতা ছিলেন উনাকে প্রধানমন্ত্রী ডেকে পাঠিয়েছিলেন। উনি গেছেন, রাজি হননি। তার (রওশন এরশাদ) দাঁড়াবারও শক্তি নাই। তাকে দিয়ে কী কাজ? তার মানে ন্যাংড়া-কানা যাই হোক কাজে লাগবে…।’’
মান্না বলেন, “মানুষ কি ভোট দিতে যাবে? না যাবে না। নিজেদের কর্মী-টর্মী যা আছে, তাদের সবাইকে বসিয়ে রাখবে, ভোট কেন্দ্র সাজাবে দেশজুড়ে, কেন্দ্রে কর্মীদের বসিয়ে রাখবে… সকালে নাস্তা দেবে, দুপুরের খাবার একবারের জায়গায় তিনবার দেবে… যে কেউ আসলে যাতে দেখানো যায় কত মানুষ।
“যারা যারা এখানে বলছেন নির্বাচন ঠেকাতে হবে? এখানে তো নির্বাচনই হচ্ছে না। যেখানে কোনো প্রার্থী নেই, মানুষ ভোট দিতে যাচ্ছে না… এটাও বানরের ওই লঙ্কা যাওয়ার পিঠা ভাগাভাড়ির মতো হচ্ছে… সেজন্য খোদ প্রধানমন্ত্রীেই বলছেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী থাকবার পরেও স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকতে হবে।”
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘‘দেখেন সরকার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে আর মামলা দিয়েছে বিএনপির মহাসচিবসহ আমরা যারা মঞ্চে ছিলাম তাদের বিরুদ্ধে। এখন তারা (সরকার) বিএনপির নেতাদের হাত-পা বেঁধে বলে কি না নির্বাচন করেন।
“আসলে সরকার চায় না বিএনপি নির্বাচনে মাঠে থাকুন। সেজন্য তারা ২৮ অক্টোবর নীলনকশার ঘটনা ঘটিয়েছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের এখনও যদি ছেড়ে-টেরে দিয়ে নির্বাচন করে উনারা ১০টি আসনের বেশি সিটও পাবে না। অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপিই জয়ী হবে ইনশাল্লাহ, তাদের খুঁজে পাওয়া যাবে না।”
জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে বিএনপির চিকিৎসক সংগঠন ‘ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাব’র উদ্যোগে ‘মহান বিজয় দিবস, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা এবং বর্তমান প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক এ আলোচনা সভা হয়।
ড্যাব সভাপতি অধ্যাপক হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক এ কে এম আজিজুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক লুৎফর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের রিয়াজুল ইসলাম রিজু, ড্যাবের এম এ সেলিম, জহিরুল ইসলাম শাকিল, রফিকুল কবির লাবু, মোস্তাক রহিম স্বপন, শহীদুল আলম, মোসাদ্দেক হোসেন বিশ্বাস, শহীদ হাসান, মো. সিরাজুল ইসলাম, পারভেজ রেজা কাকন, সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম।