ডিএমপি কমিশনার বলছেন, ‘উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় জনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে’ তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
Published : 01 Nov 2024, 07:54 PM
রাজধানীর বিজয়নগরে জাতীয় পার্টির সমাবেশের ঘোষণা ঘিরে উত্তেজনার মধ্যে ওই এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ডিএমপি কমিশনার মো. মাইনুল হাসান স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় জনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে’ শনিবার বিজয়নগরের পাইওনিয়ার রোডের ৬৬ নম্বর ভবন, পাইওনিয়ার রোড, কাকরাইলসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় যে কোনো প্রকার সভা, সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা, বিক্ষোভ প্রদর্শন ইত্যাদি নিষিদ্ধ থাকবে।
বৃহস্পতিবার রাতে বিজয়নগরে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার পর জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ওই ঘটনার কিছুক্ষণ আগেই ফেইসবুকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ জাতীয় পার্টিকে উদ্দেশ্য করে লেখেন, “এবার এই জাতীয় বেইমানদের উৎখাত নিশ্চিত।”
এরপর শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন ডেকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, ওই কার্যালয়ের সামনে শনিবার তাদের যে সমাবেশের কর্মসূচি রয়েছে, তা চালু থাকবে।
কিন্তু ওই সমাবেশ ‘করতে দেওয়া হবে না বলে’পরে হুঁশিয়ারি দেয় বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ।
শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র, শ্রমিক, জনতা’র ব্যানারে এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা জাতীয় পার্টির নেতাদের গ্রেপ্তারের দাবিও তোলেন ।
তিনি বলেন, “আপনারা শুনেছেন, জাতীয় পার্টি আগামীকাল সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। আমাদের কাছে খবর আছে, তারা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আওয়ামী লীগ ক্যাডার বাহিনী নিয়ে এসে সমাবেশ করবে। আমরা বার বার আল্টিমেটাম দিচ্ছি, যেন ফ্যাসিবাদের দোসরদের নিষিদ্ধ করা হয়। তারা বিভিন্ন রূপে ফেরার চেষ্টা করছে।
“তাদের প্রতি বর্তমান সরকারের অবস্থান কী, আমরা তা জানতে চাই। ডিএমপি কমিশনার কীভাবে এই হত্যাকারীদের দোসরদের সমাবেশ করার অনুমতি দেয়, আমরা জানতে চাই।”
ডিএমপি সভা সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর জাতীয় পার্টির প্রতিক্রিয়া জানতে যোগাযোগ করা হলে দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চন্নু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা কিছুক্ষণ পর চেয়ারম্যান মহোদয়কে নিয়ে মিটিং করব বনানীর কার্যালয়ে। মিটিং শেষে আমাদের সিদ্ধান্ত বা প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।”
শেখ হাসিনার পতনের পর ইউনূস সরকার দায়িত্ব নেয়ার শপথ অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টি অংশগ্রহণ করার পর নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিভিন্ন দলের সঙ্গে আয়োজিত প্রধান উপদেষ্টার তিনটি সংলাপে অংশগ্রহণ করেছে। কিন্তু বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের আপত্তির পর ১৯ অক্টোবরের চতুর্থ দফার সংলাপে ডাক পায়নি জাতীয় পার্টি।
২০০৮ সাল থেকে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বা সমঝোতা করে মোট চারটি নির্বাচন করেছে। দলটির নেতারা কখনও মন্ত্রিত্ব নিয়ে সরকারের অংশীদার হয়েছেন, কখনও সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসেছে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জাতীয় পার্টি সমর্থন দিলেও সরকার পতনের পর জাতীয় পার্টি তার অতীতের কারণে হোঁচট খাচ্ছে।
এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ৭ অক্টোবর রাতে ফেইসবুক পোস্টে লেখেছিলেন, “স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টিকে সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হলে আমরা সেই আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ ও কঠোর বিরোধিতা করব।”
আরেকজন সমন্বয়ক মো. সারজিস আলম লিখেছিলেন, “জাতীয় পার্টির মতো মেরুদণ্ডহীন ‘ফ্যাসিস্টের দালালদেরকে’ প্রধান উপদেষ্টা কীভাবে আলোচনায় ডাকে?”
কিন্তু বারবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলে এসেছেন, তারা কোটা আন্দোলনে শুরু থেকে সমর্থন দিয়ে এসেছেন। আর বিগত নির্বাচনগুলোতে তার দল বাধ্য হয়ে অংশগ্রহণ করেছে।
জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়ায় হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমকে রংপুরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে জাতীয় পার্টি। এই ঘোষণার মধ্যেও সারজিস অবশ্য রংপুরে এক আয়োজনে অংশ নিয়েছেন।
পুরনো খবর
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা: যা বললেন জিএম কাদের