হাসনাত আবদুল্লাহ ফেইসবুকে পোস্ট দিয়ে জাতীয় পার্টিকে উদ্দেশ করে লিখেছেন, “এবার এই জাতীয় বেইমানদের উৎখাত নিশ্চিত।”
Published : 31 Oct 2024, 08:28 PM
আওয়ামী লীগ সরকারে থাকার সময় সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের টানাপড়েনের মধ্যে ঢাকার বিজয়নগরের দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে একদল মানুষ।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে এই ঘটনার আগে আগে ফেইসবুকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ জাতীয় পার্টিকে উদ্দেশ করে লেখেন, “এবার এই জাতীয় বেইমানদের উৎখাত নিশ্চিত।”
ফায়ার সার্ভিসের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার রাশেদ বিন খালিদ জানান, সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে খবর পেয়ে সেখানে আগুন নেভানোর জন্য দুই ইউনিট পাঠানো হয়।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের সাথে তারা যা করছে, এ ঘটনা সারা দেশের মানুষ দেখতেছে। একদম প্রকাশ্যে, লাইভ চলতেছে ফেসবুকে-মিডিয়াগুলোতে। আমি আর কিছু বলতে চাচ্ছি না।”
রাত ৮টায় রমনা বিভাগের এডিসি জুয়েল রানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা এখানেই আছি। ছাত্র-জনতা এসে জাতীয় পার্টির অফিসে আগুন দিয়েছে। এখন আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে এখানে এখনো অনেক ছাত্র-জনতা ভিড় করে রয়েছে।”
জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এখানে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। আমরা এখানে আছি।”
হাসনাতের ফেইসবুক পোস্ট
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলার কিছুক্ষণের মধ্যে সন্ধ্যা ৭ টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ফেইসবুকে পোস্ট দিয়ে লেখেন, “জাতীয় বেইমান এই জাতীয় পার্টি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিজয়নগরে আমাদের ভাইদের পিটিয়েছে, অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিচ্ছে। এবার এই জাতীয় বেইমানদের উৎখাত নিশ্চিত।”
কিছুক্ষণ পর আরেকটি পোস্ট করে তিনি লেখেন, “রাজু ভাস্কর্য থেকে ৭.৩০ এ মিছিল নিয়ে আমরা বিজয়নগরে মুভ করব। জাতীয় বেইমানদের নিশ্চিহ্ন করতে হবে।”
এর পরে সেই পোস্ট এডিট করে প্রথমে সাড়ে ৯ টায়, এরপর সাড়ে ৮ টায় সময় নির্ধারণ করেন।
শেখ হাসিনার পতনের পর ইউনূস সরকার দায়িত্ব নেয়ার শপথ অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টি অংশগ্রহণ করার পর নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিভিন্ন দলের সঙ্গে আয়োজিত প্রধান উপদেষ্টার তিনটি সংলাপে অংশগ্রহণ করেছে। কিন্তু বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের আপত্তির পর ১৯ অক্টোবরের চতুর্থ দফার সংলাপে ডাক পায়নি জাতীয় পার্টি।
২০০৮ সাল থেকে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বা সমঝোতা করে মোট চারটি নির্বাচন করেছে। দলটির নেতারা কখনও মন্ত্রিত্ব নিয়ে সরকারের অংশীদার হয়েছেন, কখনও সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসেছে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জাতীয় পার্টি সমর্থন দিলেও সরকার পতনের পর জাতীয় পার্টি তার অতীতের কারণে হোঁচট খাচ্ছে।
এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ৭ অক্টোবর রাতে ফেইসবুক পোস্টে লেখেছিলেন, “স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টিকে সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হলে আমরা সেই আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ ও কঠোর বিরোধিতা করব।”
আরেকজন সমন্বয়ক মো. সারজিস আলম লিখেছিলেন, “জাতীয় পার্টির মতো মেরুদণ্ডহীন ‘ফ্যাসিস্টের দালালদেরকে’ প্রধান উপদেষ্টা কীভাবে আলোচনায় ডাকে?”
কিন্তু বারবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলে এসেছেন, তারা কোটা আন্দোলনে শুরু থেকে সমর্থন দিয়ে এসেছেন। আর বিগত নির্বাচনগুলোতে তার দল বাধ্য হয়ে অংশগ্রহণ করেছে।
জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়ায় হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমকে রংপুরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে জাতীয় পার্টি। এই ঘোষণার মধ্যেও সারজিস অবশ্য রংপুরে এক আয়োজনে অংশ নিয়েছেন।