“সংশ্লিষ্টদের বক্তব্যসহ প্রতিবেদন পাওয়ার পর ব্যবস্থা নিতে আমরা তা নির্বাচন কমিশনে পাঠাব।”
Published : 06 Nov 2023, 09:41 PM
জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে আগে লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের উপনির্বাচনে একটি কেন্দ্রে ‘জাল ভোটের ভিডিও’ ছড়িয়ে পড়ার পর রিটার্নিং কর্মকর্তার নির্দেশে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ সফিকুর রহমানকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
সোমবার রাত পৌনে ১০টার দিকে উপ-নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কুমিল্লা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ফরহাদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
যে কেন্দ্রে এই ঘটনাটি গটেছে, তার সব ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য ও সংশ্লিষ্ট অন্যদের বক্তব্য নিতেও বলেছেন তিনি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার, অন্য নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশন সচিব, লক্ষ্মীপুরের ডিসি, পুলিশ সুপারও ও আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর জেলা প্রধানদেরও এই আদেশের অনুলিপি পাঠানো হয়েছে।
জানতে চাইলে ফরহাদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার আগে এ নিয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্টদের বক্তব্যসহ প্রতিবেদন পাওয়ার পর ব্যবস্থা নিতে আমরা তা নির্বাচন কমিশনে পাঠাব।”
এ অনিয়মের বিষয়ে সোমবার নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলতে রাজি হননি নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম। রাতেও ফোন করলে সাড়া দেননি তিনি।
ভাইরাল ভিডিওতে কী আছে
এ কে এম শাহজাহান কামালের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া আসনটিতে উপনির্বাচনে রোববার ভোট হয়।
পরদিন একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে একজনকে ৫৭ সেকেন্ড নৌকা মার্কায় ৪৩টি ভোট দিতে দেখা যায়।
এতে দেখা যায়, যিনি ভোট দিয়েছেন, তাকে সহযোগিতা করেছেন আরেক জন কর্মী। দুইজনের গলাতেই ছিল নৌকা প্রতীকের ব্যাজ।
যে তরুণ এই কাজ করেছেন, তার চেহারা স্পষ্ট। তাকে আজাদ হোসেন বলে শনাক্ত করেছেন স্থানীয়রা। তিনি লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন। সম্প্রতি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাকে বহিষ্কার করে জেলা ছাত্রলীগ। তবে তাকে সদর উপজেলা দিঘলী ইউনিয়নের দক্ষিণ খাগুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকার এজেন্ট করা হয়।
ভাইরাল হওয়া অন্য একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, বিজয়ী প্রার্থী গোলাম ফারুককে ফুল দিচ্ছেন আজাদ।
তবে এসব বিষয়ে দুই জনের কারও বক্তব্য জানতে পারেনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। তারা কেউ ফোন ধরেননি।
ভোটের দিনই ছিল অনিয়মের অভিযোগ
গত ৩০ সেপ্টেম্বর একেএম শাহজাহান কামাল মারা গেলে ৪ অক্টোবর আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে ৫ নভেম্বর এই আসনটির পাশাপাশি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে ভোটের তারিখ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
নিরুত্তাপ এই নির্বাচনের দুপুরে লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে জাতীয় পার্টি ও জাকের প্রার্থীর প্রার্থী অনিয়মের অভিযোগ এনে ভোট বর্জন করেন।
লাঙ্গল প্রতীকের রাকিব হোসেন দুপুর দেড়টার দিকে সাংবাদিকদের বলেন, “৯০ ভাগ কেন্দ্র থেকে আমার এজেন্ট বের করে দিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন।… তারা জাল ভোট দিচ্ছে। সকাল থেকে ভোট কেন্দ্রগুলো ভোটার শূন্য, অথচ ভেতরে গিয়ে দেখা যায় ভোট পড়েছে। তাহলে এসব ভোট কারা দিচ্ছে?”
বেলা ২টার দিকে সংবাদ সস্মেলন করে জাকের পার্টির শামছুল করিম খোকন বলেন, “শুরু থেকে প্রশাসন আমাদের সুষ্ঠু ভোটের আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু এখন প্রশাসন নীরব।”
রিটার্নিং কর্মকর্তা সে সময় বলেছিলেন, “একজন প্রার্থী আমাদের কাছে মৌখিক অভিযোগ করেছেন। সে বিষয়টি আমরা দেখছি। আমরা অনেক কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করেছি। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ রয়েছে।”
ভোট শেষে জানানো হয়, নৌকা প্রতীক নিয়ে গোলাম ফারুক পেয়েছেন ১ লাখ ২০ হাজার ৫৯৯ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী লাঙ্গলের রাকিব হোসেন পেয়েছেন ৩ হাজার ৮৪৬ ভোট। গোলাপ ফুল নিয়ে ভোট সামছুল করিম খোকন পেয়েছেন ২ হাজার ১২৬ ভোট।