Published : 10 Jul 2023, 03:00 PM
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাংলাদেশে একটি ‘শান্তিপূর্ণ ও বিশ্বাসযোগ্য’ নির্বাচন চায় বলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে জানানো হয়েছে।
জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সংস্থাটির একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে সফর শুরু করার পরদিন সোমবার সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি। সেখানেই তিনি ইইউর ওই বার্তা্ দেন বলে মন্ত্রী পরে সাংবাদিকদের জানান।
গত দুটি নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে বিবাদের মধ্যে বিরোধী জোট আবার নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার দাবিতে ফিরে গেছে। তারা ‘সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন ‘ নামার ঘোষণাও দিচ্ছে।
তবে আওয়ামী লীগ সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের বিষয়ে অনড়। সরকার ও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ভোট সুষ্ঠু হবে।
এই বিবাদমান পরিস্থিতিতে অতীতের নানা সময়ের মত এবারও পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে নানা কথা বলছে। বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা দিলে দায়ী ও পরিবারের সদস্যদের ভিসা না দেওয়ার ঘোষণা এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে। তাদের মিত্র ইউরোপীয় ইউনিয়নও বলেছে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা।
নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণে রোববার দেশে এসেছে ইইউ এর নির্বাচন অনুসন্ধানী দল। তারা আগামী ২৩ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থান করে সরকার, রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশন, নিরাপত্তা কর্মকর্তা, সুশীল সমাজ এবং গণমাধ্যমের সঙ্গে বৈঠক করবে। তাদের পর্যবেক্ষণের পরিপ্রেক্ষিতেই নির্ধারণ হবে বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ইইউ পর্যবেক্ষক পাঠাবে কি পাঠাবে না।
ইইউ রাষ্ট্রদূত নির্বাচন নিয়ে কোনো উদ্বেগের কথা বলেছেন কি না, এ প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, “কোনো উদ্বেগের কথা তারা বলেননি। তারা ভালোটা আশা করছেন।
“কোনো খারাপ কিছু নিয়ে কোনো কথা বলেননি। বাংলাদেশে একটি শান্তিপূর্ণ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন হোক, এটাই তারা চেয়েছেন। বাংলাদেশের গণতন্ত্র আরও শক্তিশালী ও পরিপক্কতা অর্জন করুক, এটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।”
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাদের বলেন, “ইউরোপীয় ইউনিয়নে আমাদের বন্ধু দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের অগ্রগতি নিয়ে আমরা আলাপ করেছি। এতে চলমান বিশ্ব পরিস্থিতিও ছিল। একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, তাদের সেই কথাই বলেছি।”
তিনি জানান, জাতীয় নির্বাচনের সময় বর্তমান সরকারই নির্বাচনকালীন সরকার হিসেবে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করবে। ওই সময় সরকার শুধু দৈনন্দিন রুটিন কাজ করবে, কোনো নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্ত নেবে না বলে তিনি ইইউ রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছেন।
অন্য এক প্রশ্নে কাদের বলেন, “আমরা বলেছি তারা যদি পর্যবেক্ষক দিতে চায়, তাদের সুস্বাগত। তারা আসবেন, আমাদের অতিথি। যারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন, একজন কূটনীতিক নিজের আওতার মধ্য থেকে কাজ করবেন।
“পর্যবেক্ষকদের দায়িত্ব পালনেও ভিয়েনা কনভেনশনের নীতিমালা আছে। তারা সেই নীতিমালার মধ্যে দায়িত্ব পালন করবেন। এখানে আমাদের কোনো আপত্তি থাকার প্রশ্ন নেই। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা পর্যবেক্ষকরা সরেজমিনে দেখতে পাবেন, নির্বাচন কীভাবে হচ্ছে। এ নিয়ে বদানুবাদের কোনো সুযোগ থাকবে না।”
ভোটকেন্দ্র সিসিটিভির আওতায় আনার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছি কি না জানতে চাইলে কাদের বলেন, “বিস্তারিত কোনো আলোচনা হয়নি।”
বাংলাদেশে আসা ইইউ দলের সঙ্গে আগামী ১৫ জুলাই বৈঠক হবে বলেও জানান আওয়ামী লীগ নেতা। তিনি বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকার, পার্লামেন্টের বিলুপ্তি, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ এসব নিয়ে কোনো কথা হয়নি ইউরোপীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে। তবে সরকারের উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হয়েছে।”
বিএনপিকে নির্বাচনে আনার বিষয়ে কোনো কথা হয়েছে কি না, এ প্রশ্নে তিনি বলেন, “না, এ কথা আমরা কেন বলব? তারা কাকে কী অনুরোধ করবেন, এটা তাদের ব্যাপার।”
বিএনপির আন্দোলন নিয়ে আরেক প্রশ্নে কাদের বলেন, “আমরাও রাস্তায় আছি। তারা বিক্ষোভে আছে, আমরা শান্তি সমাবেশে আছি।”
চলতি মাসে আওয়ামী প্রতিনিধি দলের ভারত সফর নিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “নির্বাচনের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। আমার নেতৃত্বে একটি দল চার বছর আগে ভারতে গিয়েছিল। পরে রামমাধবের নেতৃত্বে ভারত থেকে একটি দল এসেছিল। এটি দলের সঙ্গে দলের আলোচনা।
“ভারতের প্রসঙ্গ এলেই আপনারা প্রশ্ন করেন। কিন্তু চীনের সঙ্গে প্রতি বছর সফর বিনিময় করি, তা তো বললেন না। এটি নিয়ে কোনো প্রশ্ন করেন না। চীন থেকেও ১৫ জন ঘুরে এসেছি। ভারতে তো যাবেন পাঁচ জন।”