‘নতুন জোট নিয়ে’ ভোটে যাচ্ছেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির দুই নেতা

এদের মধ্যে আহসান হাবিবের বাড়ি টাঙ্গাইলে আর ফখরুল ইসলামের বাড়ি ঝালকাঠিতে। তারা মনে করেন, ভোট বর্জন কোনো আন্দোলনের অংশ হতে পারে না।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Nov 2023, 02:42 PM
Updated : 15 Nov 2023, 02:42 PM

বিএনপি আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণায় অবস্থানে অটল থাকলেও দলটির নির্বাহী কমিটি দুই সদস্য ‘নতুন জোট করে’ ভোটে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। নিবন্ধন না থাকায় তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়াবেন।

আগামী ৭ জানুয়ারি ভোটের তারিখ জানিয়ে তফসিল ঘোষণার দিন বুধবার বিকালে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের অদূরে মালিবাগের একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে এই ঘোষণা দেন খন্দকার আহসান হাবিব ও এ কে এম ফখরুল ইসলাম নামে দুই নেতা।

এদের মধ্যে আহসান হাবিবের বাড়ি টাঙ্গাইলে আর ফখরুল ইসলামের বাড়ি ঝালকাঠিতে। দ্বিতীয় জন মানবতাবিরোধী অপরাধী বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায় ফাঁস মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। তিনি বিএনপি নেতার হয়ে আদালতে আইনি লড়াই করেছিলেন।

নতুন এই জোটে বিএনপির বর্তমান ও সাবেক ১২৫ জন নেতা রয়েছেন বলেও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। তবে নেতাদের নামের তালিকা কোনো তালিকা দেওয়া হয়নি।

কে কোন আসনে প্রার্থী হবেন, এমন ঘোষণাও দেওয়া হয় সংবাদ সম্মেলনে।

এর কিছুক্ষণ পর পেশায় আইনজীবী আহসান হাবিব ও ফখরুল ইসলামকে বহিষ্কার করে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠায় বিএনপি।

বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা সংবাদ সম্মেলন করার কয়েক ঘণ্টা পর জাতির উদ্দেশে ভাষণে তফসিল ঘোষণা করে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আহ্বান জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সুযোগ রেখেছেন।

এর পরপর সংবাদ সম্মেলন করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তফসিলকে স্বাগত জানিয়েছেন। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে মিছিল বের করে। 

অন্যদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, এই তফসিল তারা মানেন না, ‘দেশে কোনো নির্বাচন হবে না।’

‘ভোট বর্জন অধিকার হতে পারে না’ 

বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলন ও নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে আহসান হাবিব বলেন, “বর্তমান সংবিধানের কাঠামোর মধ্যে দ্বাদশ সংসদীয় নির্বাচন হতেই হবে। নির্বাচন বর্জন একটি দলের অধিকার হতে পারে না।”

নির্বাচন প্রতিহত করার জন্য আন্দোলনের ডাক দেওয়াকে ‘অনৈতিক ও সন্ত্রাসবাদকে উৎসাহিত করার শামিল’ মনে করেন বলেও জানান তিনি।

বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা আরও বলেন, “পরিস্থিতি যে রকমই হোক না কেন, নির্বাচন প্রতিহত করার আন্দোলনের ডাক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অন্তরায়।”

বিএনপি আন্দোলনে নেমেছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে। একই দাবিতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করেও আন্দোলনে গিয়েছিল দলটি। একই পথে ছিল তাদের শরিকরাও।

সে সময় ব্যাপক সহিংসতার মধ্য দিয়ে ৫ জানুয়ারি ভোট হয়েছিল। তার আগেই অবশ্য দেড়শরও বেশি আসনে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গিয়েছিলেন।

২০১৮ সালের ডিসেম্বরের একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ভোটে আসে তার জোটকে নিয়েই। তবে সেই নির্বাচনে আগের রাতে ভোট হয়ে যাওয়ার অভিযোগ এনে আবার নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ফেরে, যে সরকার ব্যবস্থাকে উচ্চ আদালত অসাংবিধানিক ঘোষণা করে ২০১১ সালেই। ওই বছরই জাতীয় সংসদ নির্বাচিত সরকারের অধীনে ভোটের ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনে।

খন্দকার আহসান হাবিব বলেন, “আমরা মনে করি, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা আমাদের সাংবিধানিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। আমরা আগামী নির্বাচনে অংশ নেব। আমার সঙ্গে আরো অনেকে এই নির্বাচনে এই স্বতন্ত্র মঞ্চে অংশ নেবেন।”

এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও আমরা কোনো নিবন্ধিত দল বা জোটের সঙ্গে জোটবদ্ধ হব না।”

তাদের এই ঘোষণায় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ হলো কি না, এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “এই বিষয়ে আমি বলব, দলের গঠনতন্ত্রে এমন কোনো দিক-নির্দেশনা আছে বলে আমার জানা নেই।”

কে কোন আসনে লড়বেন 

আহসান হাবিব জানান, তিনি টাঙ্গাইল-৫ আসনে এবং বিএনপির নির্বাহী কমিটির বহিষ্কৃত নেতা ফখরুল ইসলাম ঝালকাঠি-২ আসনে ভোটে অংশ নেবেন।

হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সাবেক ট্রাস্টি স্বপন সরকার রাজবাড়ী-১ আসনে এবং ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মনিরুল ইসলাম মিন্টু টাঙ্গাইল-৮ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

সংবাদ সম্মেলনে এই দুই জনও উপস্থিত ছিলেন।

আহসান হাবিব বলেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে দুর্বল বা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১২তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে দেওয়া যাবে না। সেজন্য জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থী মনোনীত করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা সমুচিত, তাতে করে সুষ্ঠু নির্বাচনে অনেক যোগ্য প্রার্থী ক্ষমতাসীনদের পরাজিত করে সংসদে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে এবং একটি প্রাণবন্ত সংসদ জাতি ফিরে পাবে।” 

খালেদার ওপর নিপীড়নের অভিযোগ 

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করা হয়, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ওপর সরকারের নিপীড়ন-নির্যাতন চালাচ্ছে। 

বলা হয়, “বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি নির্মম আচরণের কারণে আমাদের অন্তরে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। জাতিসংঘ বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা করাতে বর্তমান সরকারকে অনুরোধ করেছে। আমরা তার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি করছি এবং সরকারকে তা বিবেচনার আহ্বান রাখছি।”