“এটা কোনো বিপ্লব ঘটেনি। একটা চরম ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটেছে। এ পতন নির্বাচনের মাধ্যমে ঘটতে পারত। আর ঘটলে যাদের আজকে পলায়ন করতে হয়েছে, তারা বেঁচে যেত।”
Published : 10 Nov 2024, 09:24 PM
ব্রিটিশ শাসনের নাগপাশ থেকে মুক্তির পর প্রায় আট দশক হতে চললেও ঔপনিবেশিক যুগ থেকে ‘রাষ্ট্রের চরিত্রগত কোনো পরিবর্তন’ দেখছেন না লেখক, প্রাবন্ধিক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
তিনি বলেছেন, “আজকে বাংলাদেশে আমরা উপনিবেশই দেখছি, ধনীদের উপনিবেশ।”
রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় বক্তব্য দিচ্ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের এই সাবেক অধ্যাপক।
বাসদ আহ্বায়ক আ ফ ম মাহবুবুল হকের সপ্তম মৃত্যুবাষিকী উপলক্ষে ‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে বামপন্থিদের ভূমিকা এবং করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে ‘আ ফ ম মাহবুবুল হক স্মৃতি সংসদ’।
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “ঔপনিবেশিক শাসকরা যেমন এদেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করত, দেশকে তারা নিজেদের দেশ মনে করত না… এখানে শাসন শোষণ চলবে, আজকে বাংলাদেশের ধনীরাও সেই কাজই করেন।
“তারাই মূলত সম্পদ পাচার করেন, ব্যাংক লুট করেন, লুণ্ঠন করেন এবং যতভাবে পারেন অর্থ সঞ্চয় করে সেটা বিদেশে পাচার করে দিচ্ছেন। কাজেই রাষ্ট্রের কোনো পরিবর্তন হয়নি, চরিত্রগতভাবে।”
তিনি বলেন, এক তরুণ লেখক লিখেছেন, বানর যদি মানুষের পোশাক পরে, তাহলে কি সে মানুষ হয়ে যায়? রাষ্ট্রতো ওই বানরই রয়ে গেছে। তার পোশাক বদল হয়েছে, কিন্তু রাষ্ট্রের কোনো বদল হয়নি।”
গত জুলাই-অগাস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসন অবসানকে ‘অভ্যুত্থান’ হিসেবে দেখলেও ‘বিপ্লব’ বলছেন না সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
তিনি বলেন, “এটা কোনো বিপ্লব ঘটেনি। একটা চরম ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটেছে। এ পতন নির্বাচনের মাধ্যমে ঘটতে পারত। আর ঘটলে যাদের আজকে পলায়ন করতে হয়েছে, তারা বেঁচে যেত।
“আবার একটা গণহত্যা এ দেশে হবে, আর সে গণহত্যা দেশীয় শাসকরা করবে, এটা অকল্পনীয় ছিল। এ দ্বারা কী প্রমাণিত হয়। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় শাসক বদল হয়েছে, কিন্তু শাসকের যে চরিত্র, সেটা বদল হয়নি। তারা আগের মতই ফ্যাসিবাদ রয়েছে।”
পুরো বিশ্বই এখন ‘চরম বিপদে’ আছে মন্তব্য করে এই শিক্ষক বলেন, “ফ্যাসিবাদ চতুর্দিকে আজকে আরও শক্তিশালী, আরও নিষ্ঠুর, আরও ভয়ংকর হয়েছে।
“আজকে ডেনাল্ড ট্রাম্পের যে বিজয়, সে বিজয়টা অপ্রত্যাশিত আমরা বলব, আমরা মনে করেছিলাম এটা ঘটবে না। কিন্তু সেটা ঘটল। একরকম একটা অপরাধী, চারটি মামলা তার কাঁধে ঝুলছে, দুটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছে, সেই রকম একটা নিকৃষ্ট মানুষ সে গণতন্ত্রের মডেল অ্যাব্রাহাম লিংকনের দেশ, সেইখানে নির্বাচিত হয়ে গেল!
“সিনেটে হাউজ অব রিপ্রেজেন্টিভে একচ্ছত্র, সে একদলীয় শাসন... যে এক দলীয় শাসন এখানে শেখ মুজিব চালু করতে চেয়েছিলেন, তার কন্যাও চালু করতে চেয়েছিলেন, সেই এক দলীয় শাসন এখন আমেরিকাতে চালু হতে যাচ্ছে।”
তার ভাষায়, এর অর্থ হচ্ছে, ফ্যাসিবাদ সারা পৃথিবী জুড়ে বিস্তৃত হচ্ছে, নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে।
“যেখানেই নির্বাচন হচ্ছে সেখানেই ফ্যাসিবাদিরা, প্রতিক্রয়াশীল নয়, রক্ষণশীল নয়, একেবারে সরাসরি ফ্যাসিবাদি, কণ্ঠরোধ করে, কোনো স্বাধীনতা দেয় না, বেকারদের টেনে নেয় ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের আশা দেয়, এরকম আমরা দেখছি।”
আ ফ ম মাহবুবুল হক স্মৃতি সংসদের আহ্বায়ক সাংবাদিক আবু সাঈদ খানের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ছিলেন প্রধান আলোচক।
বাসদ নেতা মহিন উদ্দিন চৌধুরী লিটনের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, সাংবাদিক সোহরাব হাসান, মাহবুব কামাল, শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদ এর সমন্বয়ক হারুনুর রশিদ ভুইয়া এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চার সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন আহমেদ নাসু আলোচনায় অংশ নেন।