Published : 21 Aug 2023, 07:33 PM
‘একতরফা’ নির্বাচনের জন্য সরকার দেশে ‘ভয়াবহ কিছু ঘটাতে’ নীল নকশা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, “আজকে এই সরকার পরিকল্পনা করছে যে- এদেশে ভয়াবহ কিছু ঘটিয়ে যাতে করে নির্বাচনে বিরোধী দলকে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করা যায়। যেমন করে অতীতে নির্বাচন করেছে, সেইভাবে আরেকটা নির্বাচন কীভাবে করে নেওয়া যায় সেই লক্ষ্যে তারা এগোচ্ছে।”
সোমবার দুপুরে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছিলেন ফখরুল।
আগামী ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি ঠিক করতে দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের নিয়ে যৌথ সভায় বসেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন তিনি।
অস্ত্রসহ ছাত্রদলের নেতাদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “আবার অতীতের মতো সেই একই কায়দায় তারা (সরকার) শুরু করেছে। আমাদের ছাত্রদলের নেতাদের হাতে অস্ত্র দিয়েছে। সেই অস্ত্রগুলো আপনারা দেখেছেন ছবিতে।
“এগুলো তাদের রেখে দেওয়া অনেক পুরনো অস্ত্র, সেগুলো হাতে ধরিয়ে দিয়ে ছবি-টবি তুলে পাঠিয়ে দিয়েছে। অর্থাৎ তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে তারা এই অস্ত্র ব্যবহার করবে, ব্যবহার করে তারা গোলযোগ সৃষ্টি করবে এবং বিএনপির ওপর দোষ চাপাবে।”
গণতন্ত্রের প্রশ্নে সরকার ‘দ্বিচারিতা’ করছে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, “একটা গণতান্ত্রিক দল (বিএনপি) তার ৪০ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, তার সর্বোচ্চ নেত্রী তিনি কারাগারে, আমাদের ভারপ্রাপ্ত নেতা তিনি নির্বাসিত প্রবাসে, ৬০০ মানুষকে গুম করা হয়েছে। এখানে গণতন্ত্রের কোনো চেহারা এর মধ্যে নেই।
“অথচ সারাক্ষণ তারা বলছেন- গণতন্ত্র, গণতন্ত্র। এই যে ডাবল স্ট্যান্ডার্ড। মানুষের কাছে কথা বলে এক রকম, কাজ করে আরেক রকম।”
‘অকার্যকর রাষ্ট্র বানিয়েছে’
‘বিএনপি দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে’- আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তিনি এজন্য বর্তমান সরকারকেই দায়ী করেন।
বর্তমান ঋণ খেলাপির তথ্য তুলে ধরে মির্জা ফখরুলের অভিযোগ বর্তমান সরকার শুধু রাজনৈতিকভাবে নয়, অর্থনৈতিকভাবেও দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।
তিনি বলেন, “ক্যাপিটাল গুডস- যেটা আমরা বলি মূলধনী যন্ত্রপাতি, এটা ইম্পোর্ট করার পরিমাণ সেটা আরও কমে গেছে। তার মানে বেসরকারি কোনো ইনভেস্টমেন্ট হচ্ছে না। একমাত্র মেগা প্রজেক্ট, মেট্রোরেল প্রজেক্ট, ফ্লাইওভার…এই আবার উদ্বোধন শুরু হয়েছে।
“এগুলো কার জন্য করা হচ্ছে? এটা সম্পূর্ণভাবে তাদের পকেট ভরার জন্য, জনগণের পকেট থেকে টাকা কেটে নিয়ে তারা এগুলো করছে। তারা বলছে যে, ‘আমরা করলাম’।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “টাকাটা ভাই জনগণের টাকা, কারও পৈত্রিক টাকা নয়। জনগণ ট্যাক্স দিয়েছে, সেই টাকা দিয়ে যতটুকু করছে। তার মধ্যে ৮০ শতাংশ চুরি করে খেয়ে ফেলেছে, বাকি ২০ পার্সেন্ট কোনো রকমে খাড়া করেছে।
‘‘এদেশের মানুষ এখন মুক্তি চায়, এই দেশের মানুষ তারা ভোট দিতে চায়, তারা জনগণের প্রতিনিধি চায়, নির্বাচিত করে সরকার তৈরি করতে চায় এবং দুই বেলা দুই মুঠো খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকতে চায়। সেইটা হচ্ছে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য এখন।”
এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সব দলকে নিয়ে বিএনপি রাজপথে আন্দোলন করছে বলেও জানান তিনি।
‘আমরা জনগণের সঙ্গে আছি’
আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের ভারত সফরের পর সেখানে গেছে জাতীয় পার্টিও। প্রতিবেশী দেশে তাদের দলের যাওয়ার পরিকল্পনা আছে কি না- এমন প্রশ্নে ফখরুল বলেন, বিএনপি এখনও এতটা দেউলিয়া হয়নি যে এত দূরে গিয়ে রাজনীতি করতে হবে।
জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজনীতি করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের সুস্পষ্ট সব ঘোষণা আছে।
“যাদের রাজনীতি নাই, যাদের জনগণের সাথে সম্পর্ক নাই, যারা জনগণের কাছে যেতেও পারে না, তারাই এই সমস্ত কথা বলে ফায়দা লোটার চেষ্টা করে। আমাদের খুব স্পষ্ট কথা যে, আমরা জনগণের সঙ্গে আছি, জনগণ ভোট চায়। সেই জন্য আমরা লড়াই করছি। সুতরাং কে ক্ষমতায় আসলে কী হবে না হবে- এসব চিন্তা করে যারা কিছু বলে, সেটার মধ্যে আমরা নাই।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এই ধরনের যে বিষয়টা (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ভারতের কূটনৈতিক বার্তা শিরোনাম) বলা হচ্ছে, এটার তো কোনো সূত্রই তো নাই। ভারতের সরকার কি বলেছে যে- ‘আমরা এটা করেছি’ বা আমেরিকান গভর্মেন্ট বলেছে কি এই ধরনের একটা চিঠি ইন্ডিয়া দিয়েছে? তাহলে এটাকে নিয়ে এত মাতামাতি করার কোনো কারণ আমি খুঁজে পাই না।
“এটা মিডিয়া হাইপ তারা তুলে ধরছে। জাস্ট এটাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য। এখন বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচন চায় এবং সেই নির্বাচনটা চায় একেবারে নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে। এই কারণে আজকে এটাকে ডাইভার্ট করে অন্য দিকে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।”
মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে যৌথ সভায় বিএনপির আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, রুহুল কবির রিজভী, মজিবুর রহমান সারোয়ার, আবদুস সালাম আজাদ, মীর সরাফত আলী সপু, মনির হোসেন ও আবদুস সাত্তার পাটোয়ারি উপস্থিত ছিলেন।
অঙ্গ সংগঠনের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, মুক্তিযোদ্ধা দলের ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, হেলেন জেরিন খান, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, উলামা দলের শাহ নেসারুল হক, জাসাসের হেলাল খান, জাকির হোসেন রোকন, মৎস্যজীবী দলের আব্দুর রহিম, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, মজিবুর রহমান, শ্রমিক দলের মঞ্জরুল ইসলাম মঞ্জু, ছাত্রদলের রাকিবুল ইসলাম রাকিব।