সমাবেশে বাধা না দেওয়া ‘আরেক শয়তানি’: ফখরুল

“জনসভা করতে বাধা দেয় না। কিন্তু যখনই বলব আমরা এখন বের হব, মিছিল করব, প্রতিবাদ করব, বিক্ষোভ করব, তখনই আটকে দেবে।”

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 March 2023, 10:11 AM
Updated : 19 March 2023, 10:11 AM

বিএনপির সাম্প্রতিক সমাবেশগুলোতে সরকারের তরফ থেকে কোনো বাধা না পেয়ে অনেকটাই অবাক দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার মতে এটা সরকারের ‘শয়তানি’।

বিএনপির কর্মসূচির দিন ‘শান্তি সমাবেশ’ নিয়ে আওয়ামী লীগের মাঠে নামার সমালোচনা করে তিনি এও বলেছেন, এই কর্মসূচি তাকে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষে মাঠে নামা ‘শান্তি কমিটির’ কথা স্মরণ করায়।

রোববার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনায় এসব কথা বলেন বিএনপি নেতা। বিলুপ্ত ২০ দলীয় জোটে বিএনপির শরিক জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার একাংশের আয়োজনে হয় এই আয়োজন।

ফখরুল বলেন, “দেখবেন আমাদেরকে আগের মত জনসভা করতে বাধা দেয় না। ওইটা আরেকটা শয়তানি। জনসভা করতে বাধা দেয় না। কিন্তু যখনই বলব আমরা এখন বের হব, মিছিল করব, প্রতিবাদ করব, বিক্ষোভ করব, তখনই আটকে দেবে।”

আওয়ামী লীগের ‘শান্তি সমাবেশ’ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এই শান্তি সমাবেশ দিলেই আমাদের তখনকার ‘শান্তি কমিটি’র কথা মনে পড়ে। ১৯৭১ সালে ‘শান্তি কমিটি’ পাকিস্তানিরা তৈরি করেছিল, যারা মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করত, গ্রেপ্তার করত।

“সেইভাবে তারা (আওয়ামী লীগ) প্রতারণা করছে, মানুষকে বোকা বানাচ্ছে। সমস্ত মানুষকে তারা মনে করছে যে, এরা সকলে বোকা, এরা কিছুই বোঝে না, যা বোঝাবো তাই বুঝবে।”

‘সময় কিন্তু বেশি বাকি নেই’

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে ‘হাতে সময় যে খুব কম’ সেটাও নেতা-কর্মীদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন ফখরুল।

তিনি বলেন, “আবার তারা পাঁয়তারা করছে… নির্বাচন করবে, দুনিয়াকে দেখাবে যে, ‘আমরা তো নির্বাচন দিয়েছি’। এবার এটা হবে না।

‘‘আমরা উঠে আসতে শুরু করেছি। এটাকে আরও জোরদার করতে হবে, বেগবান করতে হবে। এবার রুখে দাঁড়াতে হবে। আর চুপ করে থাকা যাবে না। জেগে উঠে আমার অধিকার আমাকে আদায় করে নিতে হবে। এ দেশের মানুষের অধিকার আদায় করে নিতে হবে।”

ফখরুল বলেন, “আমরা যে কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট চেয়েছি, সেই কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট দিতে হবে।

“আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারটা কেন চাচ্ছি? বিএনপিকে ক্ষমতায় বসানো জন্য? নো, জনগণের অধিকারটা ফিরিয়ে আনার জন্য। আমরা চাই, প্রত্যেকটা মানুষ তার অধিকার প্রয়োগ করুক, তার ভোট যাকে খুশি তাকে দেবে এবং সেখান থেকে একটা পার্লামেন্ট গঠন হবে।”

‘নির্বাচনের নামে সাজানো তামাশা’ আর নয়

বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে সব কিছু ‘এমনভাবে সাজিয়েছে’ যে ‘নির্বাচন নির্বাচন একটা খেলা বা তামাশা হবে’। সেই ‘তামাশায়’ তারাই আবার নির্বাচিত হয়ে আসবে।

তার ভাষায়, সরকারের সেই ‘সাজানো নির্বাচনী ফাঁদে’ জনগণ পা দেবে না। সরকারকে উদ্দেশ করে বলেন, “বারে বারে ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান, এবার সেটা হবে না।”

অবশ্য ফখরুল এও বলেছেন যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ ‘ভীত’। আর তাদের মনে ‘ভয় দেখে’ তিনি বিস্মিতও।

“আমি বাংলাদেশে ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখছি। আওয়ামী লীগ এমনভাবে ভয়-ভীতি ছড়িয়ে দিয়েছে, এমনকি যারা কথা বলত, তারাও এখন কথা বলে না।

“টক শোতে আর যায় না অনেকে, অনেকে পত্রিকায় লেখে না। কী জানি কোন শব্দটা লিখলে তাদের আবার ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা হবে! খুব কষ্ট হচ্ছে এজন্য যে, আমাদের দেশের মানুষ এত ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে গেল, এতো ভীতু হয়ে গেল!”

ফখরুল বলেন, “যারা সত্য কথা বলেন, তারা কেন সোচ্চার হচ্ছেন না, কেন তারা বলছেন না, তুমি (সরকার) অন্যায় করছ, জনগণের অধিকারকে তুমি কেড়ে নিয়েছ, একাত্তর সালে আমরা যে যুদ্ধ করেছিলাম, তার মূল বিষয়টা তুমি ধবংস করে দিয়েছ। তুমি একটা এনায়কতান্ত্রিক, স্বৈরাচারী, একটা কর্তৃত্ববাদী শাসন জনগণের ওপরে চাপিয়ে দিচ্ছ।”

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের দিন ‘পুলিশের অ্যাকশনের’ বিষয়ে ফখরুল বলেন, “পুলিশ দিয়ে আইনজীবীদের মেরে তাড়িয়ে দিল। একজনও আমি দেখলাম না তারা বলেছেন এটা অন্যায় হয়েছে। আমি দেখলাম না সেই তথাকথিত সুশীল সমাজ, যারা প্রতিবাদ করেছে।

“এরকম ভয় যদি থাকে, তাহলে এটা জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক।”

আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র সহ্য করতে পারে না, ভিন্নমতে বিশ্বাস করে না বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, “তারা মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না।”

জাগপার একাংশের সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমানের সভাপতিত্ব ও মহাসচিব এসএম শাহাদাতের সঞ্চালনায় আলোচনায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, এনডিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বিকল্পধারার একাংশের নুরুল আমিন বেপারী, গণদলের এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, ন্যাপের এমএম শাওন সাদেকীও বক্তব্য রাখেন।