পুলিশ বলছে, আমান সেদিন কনস্টেবল আমিরুল হক পারভেজের ওপর হামলায় নেতৃত্ব দেন।
Published : 07 Nov 2023, 12:51 PM
বিএনপির সমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষের মধ্যে পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল হক পারভেজকে হত্যায় ‘নেতৃত্ব দেওয়ার’ অভিযোগে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমান উল্লাহ আমানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।
সোমবার বিকালে ঢাকার মহাখালী বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান মিন্টো রোডে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশে পুলিশের উপর বর্বরোচিত হামলায় পুলিশ সদস্য কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজ হত্যার ঘটনায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে হামলায় নেতৃত্ব দেন আমান।”
গত ২৮ অক্টোবর নয়া পল্টনে বিএনপির মহাসাবেশ চলাকালে কাকরাইলে পুলিশের সঙ্গে দলটির কর্মীদের সংঘর্ষ বাধে। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকায়। ওই সংঘর্ষের মধ্যে পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল হক পারভেজকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
এ ঘটনায় সেদিন রাতেই পল্টন থানায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ১৬৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন গোয়েন্দা পুলিশের মিরপুর বিভাগের এসআই মাসুক মিয়া। কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
সর্বশেষ গ্রেপ্তার ছাত্রদলের কেন্দ্ৰীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সদস্য সচিব। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি সেদিনের ঘটনার একটি বিবরণও দিয়েছেন বলে সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামানের ভাষ্য।
তিনি বলেন, “আমান বলেছেন, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে সমাবেশের দিন তিনি তার অনুসারীদের নিয়ে নয়া পল্টনে মঞ্চের পাশে অবস্থান নেস। মঞ্চে থাকা বিএনপি এবং ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশনা ছিল পুলিশের ওপর বর্বরোচিত ও নৃশংস হামলার মাধ্যমে পুলিশের মনোবল ভেঙে দিতে হবে। প্রয়োজনে এক বা একাধিক পুলিশ সদস্যকে হত্যার মাধ্যমে দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করা, যাতে করে একটি নতুন ইস্যুর সৃষ্টি হয়।"
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, সমাবেশে আসা বিএনপি কর্মীরা কাকরাইলে পুলিশের ওপর হামলা করলে সংঘর্ষের সূচনা হয়।
“সেই সুযোগে বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাদের নির্দেশে নয়া পল্টনে বিএনপির পার্টি অফিসের পাশে বিভিন্ন হোটেলের পাশের গলি দিয়ে ছাত্রদলের একটি বড় অংশ নিয়ে আমান পুলিশের ওপরে হামলা করার জন্য অগ্রসর হয়। সমাবেশকেন্দ্রিক দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের অবস্থান সম্পর্কে আগে থেকেই তাদের জানা ছিল।”
সিটিটিসি প্রধান বলেন, পল্টন টাওয়ারের সামনে গিয়ে ছাত্রদল কর্মীদের একটি অংশ কালভার্ট রোডের পশ্চিম প্রান্তে বিজয় নগর পানির ট্যাংকের দিকে যায়। অন্য অংশটি আমানের নেতৃত্বে কালভার্ট রোডের পূর্ব প্রান্তের দিকে অগ্রসর হয়।
"কালভার্ট রোডের পশ্চিম প্রান্তে পৌঁছানোর পরে ছাত্রদলের কর্মীরা সেখানে দায়িত্ব পালনরত পুলিশ সদস্যদের ওপরে অতর্কিত হামলা করে। কালভার্টের পশ্চিম প্রান্তে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের সাহায্য করার জন্য পূর্ব প্রান্তের পুলিশ সদস্যরা তখন কালভার্ট রোডের পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়। পশ্চিম দিকে আগত পুলিশ দলটির ওপর আমানের নেতৃত্বে ও নির্দেশনায় হামলা শুরু হয়।
“ছাত্রদলের ওই অংশটি আমানের নেতৃত্বে পুলিশের ওপর ইট- পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। আত্মরক্ষার জন্য পুলিশ সদস্যরা টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে ছাত্রদলের আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা করে।”
আসাদুজ্জামান বলেন, “জানমাল রক্ষা ও ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য পুলিশ সদস্যরা জীবনহানিকর মারণাস্ত্র ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকেন এবং সর্বোচ্চ সহনশীলতার পরিচয় দেন। এক পর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের একটি বড় অংশ কালভার্ট রোডের পূর্ব দিকে অবস্থিত ডিআর টাওয়ার ও আশেপাশের স্থাপনায় অবস্থান নেন।
“এ অবস্থায় আমানের নেতৃত্বে তার অনুসারীরা পুলিশ সদস্যদের হামলা করার জন্য ক্রমাগত ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। নিক্ষিপ ইটের আঘাতে পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজ রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে গেলে তাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে অত্যন্ত নৃশংসভাবে লাঠি দিয়ে ক্রমাগত আঘাত করতে থাকে।এক সময় কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজ জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন এবং রক্তাক্ত অবস্থায় নিথর দেহটি রাস্তায় পড়ে থাকে।”
মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য হামলাকারীরা কনস্টেবল পারভেজের নিথর দেহের ওপরও ‘বর্বরভাবে আঘাত করে যায়’ বলে জানান সিটিটিসি প্রধান।
আলোচিত এ মামলাটিতে আসামিদের মধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, রুহুল কবির রিজভী, নিপুণ রায়, আমিনুল হক, হাবিবুন নবী খান, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, এস এম জিলানী, শামসুজ্জামান দুদু, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, তাবিথ আউয়াল, রফিকুল ইসলাম মাহাতাব, ইকবাল হোসেন শ্যামল, ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক, রাশেদ ইকবাল খান, সাইফ মাহমুদ জুয়েল, কাজী রওনাকুল হক শ্রাবণসহ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা রয়েছেন।