”বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শ্লোগান দিয়ে একদল উচ্ছৃঙ্খল যুবক জোর করে এ ইফতার আয়োজন বন্ধ করে দেয়,” অভিযোগ দলটির।
Published : 08 Mar 2025, 11:45 PM
হট্টগোলের পর রাজধানীর পল্লবীতে জাতীয় পার্টির ঢাকা মহানগর উত্তরের ইফতার মাহফিল পণ্ড করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে একদল যুবকের বিরুদ্ধে।
জাতীয় পার্টির নেতাদের অভিযোগ, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শ্লোগান দিয়ে একদল উচ্ছৃঙ্খল যুবক জোর করে এ ইফতার আয়োজন বন্ধ করে দেয়।
শনিবার মিরপুরে পল্লবী থানা সংলগ্ন ২ নম্বর কমিউনিটি সেন্টারে জাতীয় পার্টির ঢাকা মহানগর উত্তর এই ইফতার অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল।
শনিবার রাতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের প্রেস সচিব খন্দকার দেলোয়ার জালালী এক বিবৃতিতে এ অভিযোগ করেন।
দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের ’বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের’ নামে ইফতারে বাধা দেওয়ায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়ে বর্তমান সরকার তাদের দলের সঙ্গে ’বৈষম্যমূলক আচরণ’ করছে বলে অভিযোগ করেন।
জাতীয় পার্টির দেলোয়ার জালালীর অভিযোগ, বিকাল ৪টার দিকে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মী ও স্থানীয় দুই শতাধিক রোজাদার ইফতারে অংশ নিতে পল্লবীর ওই কমিউনিটি সেন্টারে উপস্থিত হন।
“এসময় ৩০ থেকে ৪০ জন উচ্ছৃঙ্খল যুবক কমিউনিটি সেন্টারের সামনে উপস্থিত হয়ে অশালীন স্লোগান দিয়ে ইফতার অনুষ্ঠানের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে। এসময় রোজাদারদের গলাগাল দিয়ে হলরুম থেকে বের করে দেয়। এরপর থেকে হলরুম ও গেটের সামনে জড়ো হয়ে অশালীন ব্যাক্যে স্লোগান দেয় উচ্ছৃঙ্খল যুবকরা। ইফতার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে না পরে দুই শতাধিক রোজাদার ফিরে যান।”
তবে পল্লবী থানার ওসি নজরুল ইসলাম সেখানে গণ্ডগোল বা বিশৃঙ্খল কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলে দাবি করেন। আয়োজকদের পক্ষে কিছু ব্যক্তির সেখানে ইফতার করার তথ্য দেন।
তিনি বলেন, “যারা ইফতার পার্টির আয়োজন করেছিল তারা পুলিশের কাছ থেকে কোনো অনুমতি নেয়নি। স্থানীয় কিছু ছাত্র এবং জনতা আমার কাছে জানতে চেয়েছিলেন ওই ইফতার পার্টির কোনো অনুমতি আছে কি না। অনুমতি নাই বলে জানানোর পর তারা আয়োজকদের কাছে গিয়ে অনুমতি ছাড়া অনুষ্ঠানের ব্যাপারে কথা বলেন। তবে কোনো গণ্ডগোল বা বিশৃঙ্খলা হয়নি। এরপরেও আয়োজকদের পক্ষে কিছু লোক যথারীতি ইফতার করে চলে যান।"
ইফতারে বাধা দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে দেওয়া বিবৃতিতে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, “আমরা মাঠে ছিলাম, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়ে জাতীয় পার্টির দুইজন নেতা শহীদ হয়েছেন। অনেকেই মামলা ও হামলার শিকার হয়ে কারাবাস করেছেন। এছাড়া বিগত সরকারের সকল দুর্নীতি ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আমরা সোচ্চার ছিলাম।
“অথচ বর্তমান সরকার আমাদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করছে। মিছিল ও সমাবেশের ন্যায় অহিংস স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন যা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার, তা থেকে আমাদের বঞ্চিত করছে।”
তার অভিযোগ, “বিভিন্ন স্থানে আমাদের পার্টি অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে। প্রায় ক্ষেত্রেই পুলিশের সহযোগিতা চাওয়ার পরও পাওয়া যায়নি। এমনকি পরবর্তীতে থানায় জিডি করতে গেলেও দায়িত্বরত ব্যক্তিগণ তা গ্রহষে অনীহা প্রকাশ/ অস্বীকার করেছেন।
”বিভিন্ন স্থানে মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।”
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার অনেক আগেই নিরপেক্ষতা হারিয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “এই সরকারের প্রত্যক্ষ সহায়তায় একটি নতুন রাজনৈতিক দল সৃষ্টি হয়েছে। যারা সরকারের আনুকূল্যে নতুন দলটি ক্ষমতার জন্য ভোটের মাঠে লড়াই করতে চাইবে। এমন বাস্তবতায় পক্ষপাতদুষ্ট অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলাই বোকামী।
“দেশের বেশির ভাগ মানুষ এখন মনে করে এ সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এই সরকারের কোন নির্বাচনই বিশ্বাসযোগ্য হবে না, দেশ বিদেশে গ্রহণযোগ্য হবে না।”
বিবৃতিতে জিএম কাদের বলেন, “দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। প্রতিদিন এই অবস্থা আরো খারাপ হচ্ছে। সাধারণ মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা নেই। কাজের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না। বাড়ছে বেকারত্ব। এরই মধ্যে প্রতিদিনই নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে আকাশচুম্বী হচ্ছে। একারণেই, দেশে অভুক্ত ও অর্ধভুক্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে।
”ফলশ্রুতিতে রাজনীতির নামে ভাংচুর অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজের জন্য উশৃঙ্খল জনতার অভাব হয় না। সরকার ঘনিষ্ঠ মহল ভাবাদর্শের এ সকল জনতাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী বাধা দিচ্ছে না, অনেক ক্ষেত্রে পরোক্ষভাবে সহায়তা করছে বা করতে বাধ্য হচ্ছে। এই সুযোগে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী বাহিনী যে কাউকে আওয়ামী লীগ বা আওয়ামী লীগের দোসর ট্যাগ দিয়ে তার সহায় সম্পদ লুটপাট করতে পারছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে দেশে ‘মবক্রেসি বা মবতন্ত্র’ চলছে। “