বিজয় দিবস উপলক্ষে মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের বিজয় শোভাযাত্রা রূপ নিল সাকিব আল হাসানের নির্বাচনি প্রচার মিছিলে, শহরের রাস্তায় জনতার ঢল।
Published : 19 Dec 2023, 03:08 PM
সকাল থেকেই কেশব মোড়ের বাড়িটিতে লোকের আনাগোণা শুরু। মাগুরা শহরে আগ্রহের কেন্দ্রে এই তিন তলা বাড়ি। সাকিব আল হাসানের বাড়ি বলে কথা! সময়ের সঙ্গে লোকের ভিড় বাড়তে থাকল। বেলা ১১টার দিকে সাকিব বের হতেই শুরু হল ‘নৌকা’, ‘নৌকা’ স্লোগান। নেতা-কর্মীদের নিয়ে দ্রুতপায়ে হেঁটে তিনি এগিয়ে গেলেন নোমানি ময়দানের দিকে। মূল জমায়েত সেখানেই। ক্রমেই সেই মাঠ হয়ে উঠল লোকে লোকারণ্য। স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত চারপাশ।
মূল আয়োজন বিজয় দিবস উপলক্ষে মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের ‘বিজয় শোভাযাত্রা।’ তবে সেটি রূপ নিল মাগুরা-১ আসনের নৌকার প্রার্থী সাকিবের নির্বাচনি প্রচার মিছিলে।
প্রতীক বরাদ্দের পর সোমবার থেকেই প্রচার শুরু করেছেন সাকিব। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি সৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করে তিনি শুরু করেন প্রচারের আনুষ্ঠানিকতা। এরপর যান নিজের নির্বাচনি এলাকা শ্রীপুরে। মাগুরা শহরে তার নির্বাচনি প্রচার শুরু হল বিজয় শোভাযাত্রা দিয়ে।
বাড়ি থেকে বেরিয়ে শুরুতে জোর পদক্ষেপে এগিয়ে গেলেও একটা সময় মন্থর হয়ে যায় গতি। রাস্তায় জনতার জোয়ারে যে এগিয়ে যাওয়াই কঠিন! একটু পরপরই থামতে হচ্ছিল ক্রিকেটের মাঠ থেকে রাজনীতিতে আসা সাকিবকে।
গত ১৭ বছরে ক্রিকেট মাঠে সেঞ্চুরি করে তিনি ব্যাট উঁচিয়ে ধরেছেন অনেকবার, ৫ উইকেট নিয়ে দর্শকের উদ্দেশে উঁচিয়ে ধরেছেন বল। এবার শুরু হল তার রাজনীতির মাঠে হাত উঁচিয়ে ধরার পালা। রাস্তার দুপাশে জড়ো হওয়া মানুষের দিকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানালেন তিনি।
মিছিলে সামনের সারিতেই সাকিবের সঙ্গী ছিলেন দুই জাতীয় ক্রিকেটার পেসার রুবেল হোসেন ও বাঁহাতি স্পিনার নাজমুল ইসলাম অপু।
পথে যেতে যেতে একটি জায়গায় একটু থামলেন সাকিব। তাকে এক নজর কাছ থেকে দেখতে, একটু ছুঁয়ে দিতে, তার সঙ্গে সেলফি নিতে একরকম হামলে পড়ল উপস্থিত জনতা। সেখানে এক পর্যায়ে একজন প্রতিবন্ধী সমর্থকের সঙ্গে বসে কথা বলেন সাকিব, তার কথা শোনেন।
নোমানি ময়দানে জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা অপেক্ষায় ছিলেন আগে থেকেই। সাকিব সেখানে উপস্থিত হওয়ার পর লোকের ভিড়ও বাড়ত থাকে। নির্বাচনি এলাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মিছিলের পর মিছিল আসতে থাকে। ঢাক-ঢোল, ভুভুজেলা বাজিয়ে উৎসবের আবহে একেকটি মিছিল এসে জমায়েত হতে থাকে মাঠে। গগণবিদারী চিৎকারে স্লোগান তো ছিলই।
সেখানে ছোট্ট বক্তৃতায় সবার কাছে ভোট প্রার্থনা করেন সাকিব। জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি সেখানে বক্তৃতা করেন মাগুরা-২ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য, এবারও যিনি প্রার্থী, সাবেক যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী বীরেন শিকদার। বক্তৃতাপর্ব শেষে শুরু হয় বিশাল বিজয় শোভযাত্রা।
ক্রিকেটবিশ্বের নানা প্রান্তে বিভিন্ন মাঠে গ্যালারিতে সাকিবের নামে স্লোগান কতই তো উঠেছে। তবে এবার উঠল ভিন্ন আঙিনায়। স্লোগানের কথা আর সুরও তাই আলাদা।
আওয়ামী লীগ নেতা, মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্যা প্রার্থীর নামে তাই স্লোগান, ‘আমার ভাই তোমার ভাই, সাকিব ভাই সাকিব ভাই, সাকিব ভাইয়ের মার্কা নৌকা মার্কা’, ‘সাকিব ভাইয়ের সালাম নিন, নৌকা মার্কায় ভোট দিন’, ‘বঙ্গবন্ধুর নৌকা, আওয়ামী লীগের নৌকা, সাকিব ভাইয়ের নৌকা’, শোনা গেল এরকম বহু কিছু।
ক্রিকেট মাঠে এতদিন সেঞ্চুরি করে বা ৫ উইকেট নিয়ে সতীর্থদের উষ্ণ আলিঙ্গনে আবদ্ধ হয়েছেন সাকিব। এবার মিছিলে নেতা-কর্মী ও সমর্থকের ভিড়ে তার চিড়েচ্যাপ্টা হওয়ার দশা। কখনও কখনও ঠিকমত হাঁটতেও হিমশিম খাচ্ছিলেন। টানাটানি-ধাক্কাধাক্কি তো ছিলই।
পৌষের এই শীতল বাতাসেও ঘেমেনেয়ে একাকার সাকিব। এসবের মধ্যেও এক চিলতে হাসি মুখে ঝুলিয়ে রাখতে হচ্ছিল। হাত নাড়ছিলেন রাস্তার দুই ধারে জড়ো হওয়া মানুষের উদ্দেশে। রাজনীতির মাঠের ব্যাটিং-বোলিং যেমন হতে হয়!
মাগুরা শহরের বিভিন্ন প্রান্ত প্রদক্ষিণ করে শেষ হয় বিজয় শোভাযাত্রা। এরপর দুপুরে জেলা ডাকবাংলোয় একটি সভায় বসেন সাকিব।
ভোটের মাঠের নতুন খেলোয়াড় হলেও সাকিব ইতোমধ্যে রাজনীতিবিদদের মত কথা বলতে শুরু করেছেন।
সোমবার রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে নৌকা প্রতীক বুঝে নেওয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “মাগুরা থেকে এত কিছু পেয়েছি যে আর পাওয়ার কিছু নাই, এখন যদি দিতে পারি সেটা আমার ভালো লাগবে, যদি সুযোগ পাই আমার পক্ষে যতটা সম্ভব কাজ করব।
“আমাকে সুযোগ দেওয়া হলে, সমস্যা বুঝে সবার সঙ্গে কথা বলে, পরামর্শ নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মাগুরাকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাব।”
আরও পড়ুন
প্রতীক পেয়ে সাকিব বললেন, এবার ‘দেবার পালা’
নির্বাচনি আইনের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল: অনুসন্ধান কমিটিকে সাকিব
আচরণবিধি ভঙ্গ: সাকিবকে ডেকেছে অনুসন্ধান কমিটি