বিএনপি নেতারা দলীয় কার্যালয়ে ঢোকেননি, সেটি কার্যত ফাঁকা এখন।
Published : 28 Oct 2023, 07:04 PM
ঢাকার নয়াপল্টনের চারপাশ ঘিরে সংঘর্ষের পর বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হলে সেখানে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শেষে পুরো এলাকা ফাঁকা হয়ে গেছে; নেতাকর্মীরা অলিগলি দিয়ে বিভিন্ন পথে চলে গেছেন, যাওয়ার সময় তাদের ছোঁড়া ইটপাটকেলে পুরো সড়ক ছেয়ে গেছে।
শনিবার দুপুরে সমাবেশ স্থলের কাছে টিয়ার গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দ ছড়াতে শুরু করলে সমাবেশের কাজ বন্ধ করা হয়। পরে সংঘর্ষ মাত্রা ছড়ালে সমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়। কর্মীরা মঞ্চের মধ্যে ঘিরে রাখেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল আলমগীরসহ শতাধিক নেতাদের। টিয়ার গ্যাসের ঝাঁজ বাড়তে থাকলে মির্জা ফখরুল হ্যান্ড মাইকে হরতালের ঘোষণা দেন।
এরপর অন্য নেতাকর্মীরা জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিরাপত্তা দিয়ে মঞ্চ থেকে নামিয়ে আনেন। ধোঁয়ায় চারিদিক ছেয়ে গেলে তাদের সমাবেশস্থল ছেড়ে যেতে দেখা যায়। দলীয় কার্যালয়ে না গিয়ে তারা নিরাপদ আশ্রয়ে গেছেন বলে বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন। ঘটনার পর থেকে কার্যালয় এখন কার্যত ফাঁকা।
বিকাল পৌনে তিনটার দিকে কাকরাইল ও ফকিরাপুল থেকে পুলিশ নয়াপল্টনের দিকে এগোতে থাকে। তখন নেতাকর্মীদের বড় অংশ বিভিন্ন গলি দিয়ে সমাবেশস্থল ত্যাগ করেন। তবে অনেকে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় জড়িয়ে যান। এলোপাথারি ইট পাটকেল ছুঁড়তে থাকেন পুলিশের দিকে। পুলিশও লাঠিচার্জ করে। আহতদের কয়েকজন প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য দলীয় কার্যালয়ে আশ্রয় নেন।
বিকাল ৪টার মধ্যেই পুরো নয়া পল্টন, নাইটিঙ্গেল ও কাকরাইল এলাকা খালি হয়ে যায়। পুরো সড়ক ইটপাটকেলে ছেয়ে যায়।
সমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর দলীয় কার্যালয়ে নেতারা ঢোকেননি। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, আহত কয়েকজন কর্মী ব্রিফিং কক্ষের টেবিলে শুয়ে আছেন। অন্য কয়েকজন কর্মী তাদের সেবা শুশ্রষা করছেন। কার্যালয়ে মহিলা দলের ১০/১২ জন নেতাকর্মী রয়েছে।
কার্যালয়ের ভেতরে থাকা মহিলা দলের জেবুন্নেসা বলেন, ‘‘কাঁদুনে গ্যাসের ধোঁয়ায় আমরা এখানে আশ্রয় নিয়েছি। বাইরে যেতে পারছি না। আমারে একটু পার কইরা দেবেন ভাই ।”
আহত কয়েকজন কর্মীর দাবি, তারা কাকরাইল মোড়ে পুলিশের ছঁড়ড়া গুলিতে আহত হয়েছেন। পরে সহকর্মীরা ধরাধরি করে তাদেরকে কার্যালয়ে নিয়ে আসে।
সমাবেশ পণ্ডের আধা ঘণ্টা আগে থেকে কাকরাইলে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ছোঁড়ে। সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়ে সংঘর্ষে জড়িতদের পিছু হটতে বাধ্য করে। এসময় নয়া পল্টনে সমাবেশ স্থলে থাকা নেতাকর্মীরা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। রাস্তায় বসে নেতাদের বক্তব্য শুনতে থাকা নেতাকর্মীদের বড় অংশ দাঁড়িয়ে যান।
এসময় মঞ্চ থেকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মাইক নিয়ে তাদের শান্ত হতে বলেন। তিনি বলেন, ‘‘ওরা আমাদের মহাসমাবেশের লোক সমাগম দেখে মাথা খারাপ হয়ে গেছে। আমাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ পণ্ড করতে চায়। আপনারা শান্ত থাকুন, বক্তব্য শুনুন।”
এর ৫/৬ মিনিট পরই স্কাউট ভবনের কাছে পুলিশের ছোঁড়া কাঁদুনে গ্যাস এসে পড়ে। কিছু সময় পর তা কাকরাইল ও ফকিরাপুল মোড় থেকে পুলিশের ছোঁড়া কাঁদুনে গ্যাস মঞ্চের কাছে আসতে থাকে। একের পর এক সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দে পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। তখন নেতাকর্মীরা এদিক-ওদিক দৌড়াতে থাকেন। মঞ্চ একেবারে নেতা-কর্মী শূন্য হয়ে, সমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়।
এসময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ ও সেলিমা রহমানসহ নেতারা কাঁদুনে গ্যাসের ধোয়ার মধ্যে নেমে কর্মী পরিবেষ্টিত অবস্থায় চলে যান।
এরপর কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সারোয়ার ও সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানি, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল আহত হন বলে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।
নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির উদ্যোগে সরকার পদত্যাগের ‘এক দফা’ দাবিতে এ মহাসমাবেশ হয়। সকাল থেকে নয়া পল্টনের সড়ক মিছিলে মিছিলে সরব হয়ে উঠে। বেলা ১১টার মধ্যে পুরো এলাকায় জনসমুদ্রে পরিণত হয়। বেলা ১২টা ৫০ মিনিটে আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হয়।
মির্জা আব্বাসের সভাপতিত্বে ও উত্তরের সদস্য আমিনুল হক ও দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব লিটন মাহমুদের সঞ্চালনায় মহাসমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, ফরহাদ হালিম ডোনার, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সারোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব উন নবী খান সোহেল, হারুনুর রশীদ হারুন, কেন্দ্রীয় আবদুস সালাম আজাদ, মাহবুবে রহমান শামীম, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, বিলকিস আখতার জাহান শিরিন, মোস্তাক মিয়া, সাখাওয়াত হোসেন জীবন, শামা ওবায়েদ, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, মহিলা দলের মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, ছাত্র দলের সাইফ মাহমুদ জুয়েল বক্তব্য রাখেন।
মহাসমাবেশে বিএনপির আবদুল্লাহ আল নোমান, শাহজাহান ওমর, বরকত উল্লাহ বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আজম খান, জয়নাল আবেদীন, নিতাই রায় চৌধুরী, মিজানুর রহমান, ফজলুর রহমান, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, হাবিবুর রহমান হাবিব, আতাউর রহমান ঢালী, একরামুজ্জামান, মাহবুব উদ্দিন খোকন, হারুনুর রশিদ হারুন, আসাদুজ্জামান রিপন, কায়সার কামাল, রশিদুজ্জামান মিল্লাহ, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, মীর সরাফত আলী সপু, আজিজুল বারী হেলাল, নাসির উদ্দিন অসীম, শিরিন সুলতানা, সেলিম ভুঁইয়া, রিয়াজুল ইসলাম রিজু, রফিকুল ইসলাম, রাকিবুল ইসলাম বকুল, নাজিম উদ্দিন আলম, রেহানা আখতার রানু, নিলোফার চৌধুরী মনি, শাম্মী আখতার, তাবিথ আউয়াল, ইশরাক হোসেনসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।