সিপিডির বক্তব্য সময়ের প্রতিনিধিত্ব করে না

বৈশ্বিক সংকটের প্রভাব কাটিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ প্রত্যাশা করে বাংলাদেশ। যা তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদনে পাওয়া যায়নি।

এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনএ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন
Published : 21 Oct 2022, 01:33 PM
Updated : 21 Oct 2022, 01:33 PM

করোনাভাইরাস মহামারী বদলে দিয়েছে পুরো পৃথিবীর চিত্র। সাথে নতুন করে যোগ হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের অনভিপ্রেত প্রেক্ষাপট। সব মিলিয়ে পুরো পৃথিবী পাড়ি দিচ্ছে এক কঠিন সময়। সবচেয়ে বড় ঝড়টা পড়েছে বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর। ক্রমাগত মুদ্রাস্ফীতির কারণে খাদ্যদ্রব্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আর জ্বালানি তেলের দাম অনেকটাই লাগামহীন। এ সব সমস্যার আঁচ পাওয়া যাচ্ছে বাংলাদেশেও। এটি মোটেও মিথ্যা নয়। তেমনি মিথ্যে নয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সজাগ দৃষ্টির ব্যাপারটিও। লক্ষ্য, সংকট নিরসনে উত্তরণের পথ।

ইতোমধ্যেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষকে মিতব্যয়ী হবার আহ্বান জানিয়েছেন। আহ্বান জানিয়েছেন, যত বেশিসম্ভব কৃষিপণ্য উৎপাদনে মনযোগী হতে। তিনি বারংবার সাবধান করে বলছেন, আগামী বছরে বিশ্বজুড়ে দুর্ভিক্ষ নেমে আসতে পারে।

এদিকে ২০ অক্টোবর ২০২২ তারিখে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) নিজেদের কার্যালয়ে সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে মিডিয়া ব্রিফিং করেছে। যদিও তাদের উদ্যোগকে অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণে সহায়ক মতবাদ ও যুক্তি এবং গবেষণা সংবলিত আয়োজন হিসাবে দেখার সুযোগ হয় না। ব্রিফিং দেখে মনে হলো, রোগ বর্ণনা করে বাংলাদেশের শাসকশ্রেণিকে এক হাত নেওয়ার চেষ্টা করা হলো।

সিপিডি তাদের এই আয়োজনের বিষয় নির্ধারণ করল, ‘বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার আভাস ও বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ উত্তরণ কোন পথে?’। অথচ কথিত এই ব্রিফিংয়ে ছিল না নতুন কোনো তথ্য-উপাত্ত। ঘুরে-ফিরে বাংলাদেশের সামনে থাকা ডলার সংকট, জ্বালানি সংকট, মূল্যস্ফীতি সংকট, খাদ্য সংকট, ইউক্রেইন সংকট, কোভিড ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট নিয়েই তারা আলোচনা করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগেই এ সব বিষয়ে কথা বলেছেন। দিয়েছেন দিক-নির্দেশনা।

অন্যদিকে সিপিডি খুব কৌশল করে জানান দিল, বাংলাদেশের এখন প্রয়োজন সুশাসন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা! অর্থাৎ জোর করে অহেতুক চাপ সৃষ্টির প্রচেষ্টা। তাদের সংস্থায় যদি বিশ্বমানের গবেষক কিংবা অর্থনীতিবিদ থাকেন, তবে বৈশ্বিক সমাধানের একটি জানালাও তো উন্মুক্ত করে বক্তব্য দিতে পারলেন না কেউ। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের বক্তব্যে নতুন কিছুই ছিল না। বরং মনে হয়েছে, বিশেষ একটি মুহূর্তে দেশের রাজনৈতিক শক্তির নামে অপশক্তি ‘বিএনপি’ যখন সামগ্রিক সংকট ঘনীভূত করতে আর গণতন্ত্রের ধোঁয়া তুলে দেশে সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছে, তখন বেসরকারি সংস্থা সিপিডির এমন আয়োজন যেন পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করতে চাইছে! মনে হয়েছে, সামগ্রিক সংকট নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে, এবং তা প্রমাণ করার চেষ্টায় তারা বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চাইছে।

এ প্রসঙ্গেই বাংলাদেশি দার্শনিক ঈশ্বরমিত্র বলে থাকেন, সিপিডিদের মতো সংস্থাগুলো চালায় নামধারী অর্থনীতিবিদেরা কিন্তু, অর্থনৈতিক জ্ঞান বিতরণ করে তারা সংকট উত্তরণে না গিয়ে রাজনৈতিক সংকটকে দরজায় আনে।

সংকট তো শুধু বাংলাদেশের না, পুরো বিশ্বের। ওই সংকট মোকাবিলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বাংলাদেশের মানুষ জানে, এই সংকট থেকেও বাংলাদেশ বেরিয়ে আসবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিক-নির্দেশনায়। এমন পরিস্থিতিতে সিপিডি-এর মতো প্রতিষ্ঠানের তথাকথিত গবেষণা আর বিবৃতি দেশের মানুষের মানসিক মনোবলকে ভেঙে দিতে পারে। জাতীয় ঐক্য ধরে রাখার শর্ত পূরণ করে না এহেন বক্তব্য। তাতে করে মাথাচাড়া দিতে পারে ওৎ পেঁতে থাকা সুশীল সমাজ। যারা দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালাচ্ছে, রাজনৈতিকভাবে উচ্চাভিলাষী হয়ে। যেখানে তৃতীয় শক্তি হয়ে তারা রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়। সিপিডি-এর গবেষণার ফলাফলকে পুঁজি করে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার সুযোগ নিতে পারে ক্ষমতার জন্য মরিয়া বিএনপির মতো রাজনৈতিক অপশক্তিও। যারা ৪৪ বছরে নিজেদেরকে রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করাতে পারেননি। সঙ্গত যুক্তিতে বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীকে সচেতন থেকে সিপিডির মতো সংস্থাগুলোকে এবং বিএনপির লক্ষ্যহীন লক্ষ্যকে স্বাগত না জানিয়ে স্পষ্ট করে ‘না’ উচ্চারণ করে বলতে হবে, তোমরা জনস্বার্থ সংরক্ষণ করার মানসে সামাজিক ও রাজনৈতিক ভুবনে থাকতে পারো, নচেৎ কথা বলারই অধিকার নেই তোমাদের।

সিপিডির বক্তব্য সময়ের প্রতিনিধিত্ব করে না। বৈশ্বিক সংকটের প্রভাব কাটিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ প্রত্যাশা করে বাংলাদেশ। যা তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদনে পাওয়া যায়নি।