বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের জন্য গঠিত কমিটিতে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী যে পাঁচজন জন প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন, তিনি তাঁদের একজন। ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার লিগ্যাল এইড কমিটির একজন সদস্য ছিলেন তিনি।
Published : 19 Nov 2023, 04:51 PM
“রাজনীতি ত্যাগের জন্য, ভোগ বা বিত্ত-বৈভব তৈরির জন্য নয়—তা বাবাকে অনুসরণ করতে দেখেছি। রাজনীতি-সমাজসেবা করতে গিয়ে বাবার সম্পত্তি কমেছে, বাড়েনি; সম্পত্তি বিক্রি করেছেন। বর্তমান সময়ে জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচিত হবার পরপরেই রাজউকের একটি প্লট পাওয়ায় জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বাবার নামে রাজউকের কোনো প্লট ছিল না কিংবা রাজধানীতে অন্য কোনো জায়গায় সম্পত্তিও ছিলো না। বাবাকে যখন বলতাম, পেশাগত কারণে আমাদের তো ঢাকায় থাকতে হবে, জায়গা কেনা প্রয়োজন; তখন তিনি বলতেন, ‘আমি কৃষকের ছেলে, লেখাপড়া শিখে দিনাজপুর শহরে বাড়ি করেছি, তোমাদের লেখাপড়া শিখিয়েছি, যদি পারো তোমরা তোমাদের টাকায় ঢাকায় বাড়ি করিও'।" (দৈনিক ইত্তেফাক, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২০)।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম তাঁর বাবা এম. আব্দুর রহিম সম্পর্কে যে স্মৃতিচারণ করেছেন, সেখানে সততা ও আদর্শের প্রতি তাঁর স্থির থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। ইনায়েতুর রহিম জানাচ্ছেন, তাঁর বাবা খুব দৃঢ়চেতা ও স্পষ্টভাষী মানুষ ছিলেন। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বা কৌশলী কথা না বলে যে কোনো বিষয়ে তাঁর মতামত স্পষ্ট করে সরাসরি প্রকাশ করতেন। তাঁর চারিত্রিক দৃঢ়তা ও স্পষ্টতার কারণেই হয়তো বঙ্গবন্ধু তাঁর সমবয়সী এবং বয়সে ছোট সহকর্মী স্বল্প যে কয়জন ব্যক্তিকে ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করতেন, আব্দুর রহিম ছিলেন তাঁদের একজন।
বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের জন্য গঠিত কমিটিতে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী যে পাঁচজন জন প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন, আব্দুর রহিম তাঁদের একজন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অন্যদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার লিগ্যাল এইড কমিটির একজন সদস্য ছিলেন এম. আব্দুর রহিম। তাঁর জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে সদ্য স্বাধীন দেশে ১৯৭২ সালের ৬ জানুয়ারি। ওইদিন দিনাজপুরের মহারাজা গিরিজানাথ হাই স্কুলে মুক্তিযোদ্ধা ট্রানজিট ক্যাম্পে ভয়াবহ মাইন বিস্ফোরণে পাঁচ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা নিহত হন। তখন এম. আব্দুর রহিমের নেতৃত্বে নিরলসভাবে উদ্ধার কাজ পরিচালনা করা হয়। আব্দুর রহিম পরবর্তী জীবনে দিনাজপুরে চাঞ্চল্যকর কিশোরী ইয়াসমিন ধর্ষণ ও হত্যা মামলার ন্যায়বিচার নিশ্চিতে আইনজীবী হিসেবে জোরালো ভূমিকা রাখেন।
জন্ম ও শিক্ষা: শহীদ মিনার নির্মাণের ‘অপরাধে’ কলেজ থেকে বহিষ্কার
এম. আব্দুর রহিম ১৯২৭ সালের ২১ নভেম্বর দিনাজপুর সদর উপজেলার শংকরপুর ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। বাবা মো. ইসমাইল সরকার ও মা দরজ বিবি।
ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি বাবা ইসমাইল সরকারের আগ্রহের কারণে মাদ্রাসা শিক্ষায় শুরু হয় আব্দুর রহিমের প্রথম পাঠ। ১৯৪২ সালে জুনিয়র পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে রাজশাহী সরকারি মাদ্রাসা হতে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। এরপর ১৯৫০ সালে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হন রাজশাহী কলেজে। ১৯৫২ সালে রাজশাহী কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থায় ভাষা আন্দোলনে সম্পৃক্ত হন এবং মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে ছাত্র গণআন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। রাজশাহী কলেজে প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণে জড়িত থাকার অপরাধে তাঁকে কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর তিনি রংপুর কারমাইকেল কলেজে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি রাজশাহী কলেজ থেকে বি.এ পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৫৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এল.এল.বি ডিগ্রি অর্জন করেন।
রাজনীতি ও কর্মজীবন: আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার লিগ্যাল এইড কমিটির সদস্য
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন পাস করার পর ১৯৬০ সালে দিনাজপুরে আইন পেশা শুরু করেন এম. আবদুর রহিম। ছাত্র অবস্থায় তিন পাকিস্তানবিরোধী স্বাধিকার আন্দোলনে যুক্ত হন। যুক্তফ্রন্টের একজন কর্মী হিসেবে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনী প্রচারাভিযানে অংশ নেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অন্যান্যের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার লিগ্যাল এইড কমিটির একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন এম. আব্দুর রহিম।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তিনি দিনাজপুর সদর ও চিরিরবন্দর থানার আংশিক এলাকা নিয়ে গঠিত দিনাজপুর-৭ (প্রাদেশিক পরিষদ ২৯) আসন থেকে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই আসনে মোট ভোটার: ছিলো ১ লাখ ১৭ হাজার ৫১২ জন। এম. আব্দুর রহিম পান ৫২ হাজার ৭১২ ভোট। (বাংলাদেশের নির্বাচনি ব্যবস্থা ও ফলাফল, ঐতিহ্য/২০২৩, পৃষ্ঠা ২৯২)।
মুক্তিযুদ্ধ: মুজিবনগর সরকারের প্রতিনিধি
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এম. আব্দুর রহিমের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে তৎকালীন পাকিস্তানি সেনা শাসক সামরিক ট্রাইব্যুনালে বিচার করে তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছিল।
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বৃহত্তর দিনাজপুর অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এম. আব্দুর রহিম। ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত দিনাজপুর হানাদারমুক্ত ছিল। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী দিনাজপুর আক্রমণ করলে এম. আব্দুর রহিমকে আহ্বায়ক করে দিনাজপুরে ‘মুক্তিযুদ্ধ সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করা হয়। এরপর তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পতিরাম, রায়গঞ্জ, কালিয়াগঞ্জ, বালুরঘাট, গঙ্গারামপুরসহ বিভিন্ন এলাকার শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া মানুষের পাশে দাঁড়ান।
১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠিত হলে সমগ্র দেশে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য ১১টি বেসামরিক জোনে ভাগ করা হয়। মুজিবনগর সরকার এম আব্দুর রহিমকে পশ্চিমাঞ্চলীয় জোন-১ এর জোনাল চেয়ারম্যান নিযুক্ত করে। শরণার্থী শিবিরের সার্বিক ব্যবস্থাপনা, ইয়ুথ ক্যাম্প পরিচালনা, মুক্তিযোদ্ধাদের রিক্রুটমেন্ট, প্রশিক্ষণ, অস্ত্র সংগ্রহ এবং ভারত সরকারের সাথে যোগাযোগের দায়িত্ব ছিল তাঁর ওপর।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি তৎকালীন মুজিবনগর সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী এবং তৎকালীন কংগ্রেস নেতা ও ভারতের পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীর সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেন।
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে ইচ্ছুকদের সামরিক প্রশিক্ষণের লক্ষ্যে মুজিবনগর সরকার জুন মাসে ‘যুব শিবির নিয়ন্ত্রণ পরিষদ’ গঠন করে। এম. আব্দুর রহিমের পরিচালনায় সীমান্তের কাছাকাছি ১২টি যুব-অভ্যর্থনা শিবির ছিল। তাঁর সাংগঠনিক পরিচালনায় পশ্চিমাঞ্চলে বিভিন্ন অভ্যর্থনা শিবির ও প্রশিক্ষণ ক্যাম্প গড়ে ওঠে। উল্লেখ্য, তাঁর প্রশাসনিক জোনের অধীনে ১২২টি রিলিফ ক্যাম্প, ১২টি যুব অভ্যর্থনা শিবির, ৬টি মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পসহ ১টি মুক্তিযোদ্ধা বাছাই ক্যাম্প ছিল।
বৃহত্তর দিনাজপুর ও বগুড়ার জোনাল কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এম. আব্দুর রহিমকে প্রশাসনিক সহযোগিতার জন্য কর্মকর্তা ও দপ্তর কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়। জোনের কার্যক্রম পরিচালনায় অর্থ, ত্রাণ, স্বাস্থ্য, প্রচার, ও শিক্ষা উপ-কমিটিও গঠিত হয়। প্রশাসনিক কর্মকর্তা ছিলেন দিনাজপুরের এডিসি এম. এ. আবুল কাশেম। অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রউফ এবং জেলা আনসার অ্যাডজুটেন্ট শরিফুল হক। দপ্তর সচিব ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা হুমায়ুন কবির।
জোনাল কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসেবে এম. আব্দুর রহিমের দায়িত্ব ছিল যৌথ বাহিনী থেকে ক্রমশ মুক্তাঞ্চলের প্রশাসনিক ক্ষমতা গ্রহণ করা। এর পরিপ্রেক্ষিতে পঞ্চগড় শত্রুমুক্ত হলে প্রশাসনিক দায়িত্ব গ্রহণের জন্য এম. আব্দুর রহিম ১২ ডিসেম্বর পঞ্চগড়ে গমন করেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন দিনাজপুরের ডিসি ও পুলিশ সুপার। পরের দিন ১৩ ডিসেম্বর ঠাকুরগাঁওয়ে গিয়ে তিনি প্রশাসনিক দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু ১৪ ডিসেম্বর দিনাজপুর হানাদারমুক্ত হলেও তিনি প্রবেশ করতে পারেননি। কারণ যৌথ বাহিনীর সৈন্যরা ১৪ ডিসেম্বর গঙ্গারামপুর থেকে দিনাজপুরে প্রবেশ করলে ঘুঘুডাঙ্গায় মাইন বিস্ফোরণে দুটি ট্রাক উড়ে গিয়ে শতাধিক সৈন্য হতাহত হন। যুদ্ধের শেষ দিকে পাকিস্তানি বাহিনী বিভিন্ন রাস্তায় ব্যাপক মাইন পুঁতে রেখেছিল।
দিনাজপুর সরকারি সিটি কলেজের অধ্যক্ষ মোজাম্মেল বিশ্বাস জানাচ্ছেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এম. আব্দুর রহিম মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করার প্রস্তুতির ব্যবস্থাপনায়, শরণার্থীদের আবাসন, খাদ্যসহ নানা সমস্যা সমাধানে সীমান্তবর্তী ক্যাম্প থেকে ক্যাম্পে বিরামহীন ছুটে বেড়িয়েছেন। সচেষ্ট ছিলেন আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা ও শহীদদের দাফন ও সৎকারে। এ সময় যুদ্ধশিবির গড়ে তোলা এবং প্রশিক্ষণের আয়োজন ছিল তাঁর অন্যতম দায়িত্ব। বিপুল শরণার্থীর দেখাশোনা এবং মুক্তিযুদ্ধে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাপনা সমন্বয়ের জন্য সীমান্তের দাউদপুরের ফকিরগঞ্জ হাটে তিনি ‘জয়বাংলা অফিস’ স্থাপন করেন। (মোজাম্মেল বিশ্বাস, দৈনিক ইত্তেফাক, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১)।
গিরিজানাথ হাইস্কুল ট্র্যাজেডি
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি ১৭ ডিসেম্বর সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে পশ্চিমাঞ্চলীয় জোন-১ এর চেয়ারম্যান হিসেবে বগুড়া জেলার প্রশাসনিক দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ১৮ ডিসেম্বর সকাল ১১টায় দিনাজপুর গোর-এ শহীদ ময়দানে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। এ সময় মিত্রবাহিনীর এই অঞ্চলের অধিনায়ক ব্রিগেডিয়ার ফরিদ ভাট্টি ও কর্নেল শমসের সিংয়ের নেতৃত্বে একটি চৌকস দল তাঁকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। স্বাধীনতার পর তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত বৃহত্তর দিনাজপুর (দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়সহ) অঞ্চল পুনর্গঠনে আত্মনিয়োগ করেন এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সদ্য স্বাধীন দেশে ১৯৭২ সালের ৬ জানুয়ারি মহারাজা গিরিজানাথ হাইস্কুলে মুক্তিযোদ্ধা ট্রানজিট ক্যাম্পে ভয়াবহ মাইন বিস্ফোরণে সাত শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা নিহত হন। সে সময় এম. আব্দুর রহিম- এর নেতৃত্বে নিরলসভাবে উদ্ধার কাজ পরিচালনা করা হয়। আহত ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সংগৃহীত নামের তালিকা নিয়ে এম আব্দুর রহিমের চেষ্টায় মহারাজা গিরিজানাথ হাই স্কুলের মাঠে একটি স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয় ২০০০ সালের ৬ জানুয়ারি।
এম. আব্দুর রহিম মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন অকুতোভয় সৈনিক। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ২০১৮ সালে তাঁকে স্বাধীনতা পদকে (মরণোত্তর) ভূষিত করে।
স্বাধীন দেশে: জীবনের শেষদিন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সঙ্গে
বিজ্ঞ আইনজীবী ও জনদরদী রাজনীতিবিদ এম. আব্দুর রহিম সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি, তখন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন এম. আব্দুর রহিম। এছাড়া তিনি দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং উপদেষ্টামন্ডলির সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। এই খ্যাতিমান আইনীজীবী দিনাজপুর জেলা আইনজীবী সমিতিরও সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭২ সালে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি হিসেবে দিল্লীতে সর্বভারতীয় কংগ্রেসে যোগদান করেন। ১৯৭৪ সালে মস্কোয় অনুষ্ঠিত বিশ্ব শান্তি সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এম. আব্দুর রহিম।
১৯৭৮ সালে কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত বিশ্ব রেডক্রস সোসাইটি কর্তৃক আয়োজিত মানবাধিকার বিষয়ে এক সম্মেলনে যোগদান করেন।
মাঝে কিছুদিন ছিলেন বাকশালে। পঁচাত্তর পরবর্তী সামরিক শাসকদের কোন প্রলোভনই তাঁকে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক আদর্শ থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। ৭৫ পরবর্তীতে বেগম জোহরা তাজউদ্দিনকে আহ্বায়ক করে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ গঠন করা হলে তিনি আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এবং পরবর্তীতে দীর্ঘদিন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু শহীদ হওয়ার পর তাঁর নেতৃত্বে দিনাজপুর জেলায় আওয়ামী লীগ সংগঠিত হয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে মর্মান্তিকভাবে হত্যা ও ৭ নভেম্বর জাতীয় ৪ নেতাকে কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যার পরবর্তী সামরিক শাসকদের কোন প্রলোভনই তাকে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক আদর্শ থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। এমন আদর্শবান, সৎ, নিরহংকারী, নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন রাজনীতিবিদের সংখ্যা খুব বেশি নেই। এম. আব্দুর রহিম ১৯৯১ সালে দিনাজপুর সদর আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি দীর্ঘদিন দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগ ও দিনাজপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এবং সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৩, ১৯৭৯, ১৯৮৬ এবং ১৯৮৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি অংশ নেননি। তবে আইন পেশা ও রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৯১ সালে বাকশালের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে তিনি পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দিনাজপুর-৩ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সংসদ সংদস্য নির্বাচিত হন। ওই আসনে মোট ভোটার ছিলো ১ লাখ ৮৮ হাজার ৮১ জন। আব্দুর রহিম পান ৪৪ হাজার ৭৮৪ (৩৭.৭৭ শতাংশ) ভোট।
১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দিনাজপুর-৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়ে হেরে যান। ওই আসনে ভোটার ছিলো ১ লাখ ৯৩ হাজার ৩০৫ জন। এম. আব্দুর রহিম পান ৪৯ হাজার ৮৫৭ (৩২.৭৪ শতাংশ) ভোট। এখানে বিজয়ী হন বিএনপির খুরশীদ জাহান হক। তিনি পান ৫১ হাজার ৮০২ (৩৪.০২ শতাংশ) ভোট।
২০০১ সালের নির্বাচনেও তিনি দিনাজপুর-৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান। তখন ওই আসনের ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৩৭ হাজার ৬৬৭। আব্দুর রহিম পেয়েছিলেন ৮০ হাজার ৮১৪ (৪০.৭৪ শতাংশ) ভোট। এবারও বিজয়ী হন বিএনপির খুরশীদ জাহান হক। তিনি পান ১ লাখ ২ হাজার ৬৪০ (৫১.৭৭ শতাংশ) ভোট। (বাংলাদেশের নির্বাচনি ব্যবস্থা ও ফলাফল, ঐতিহ্য/২০২৩, পৃষ্ঠা ৬১০)।
চাঞ্চল্যকর ইয়াসমিন হত্যা মামলার আলোচিত আইনজীবী
১৯৯৫ সালে চাঞ্চল্যকর কিশোরী ইয়াসমিন ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে গড়ে ওঠা আন্দোলনে আইনজীবী এম. আব্দুর রহিমের সাহসী ভূমিকা ও বলিষ্ঠতা তাঁকে দিনাজপুরের গণমানুষের কাছে আরও গ্রহণযোগ্য করে তোলে। তিনি ইয়াসমিন হত্যা ও ধর্ষণ মামলা নিরলস পরিশ্রম এবং নিবিড়ভাবে তদারকি করেন। তার ফলে দোষীদের বিচারের কাঠগড়ায় সোপর্দ করার মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।
১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ২১ বছর পর সরকার গঠনের সুযোগ পেলে ১৯৯৭ সালের ৩১ অগাস্ট রংপুর বিশেষ আদালতে ইয়াসমিন হত্যা মামলার সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে দোষী প্রমাণিত পুলিশের এএসআই মইনুল হোসেন, কনস্টেবল আব্দুস সাত্তার ও পিকআপ চালক অমৃত লাল বর্মনের মৃত্যুদণ্ড হয়।
ইয়াসমিন হত্যা
প্রসঙ্গত, ১৯৯৫ সালের ২৩ অগাস্ট দিবাগত রাতে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া একটি বাসে করে দিনাজপুরের দশমাইল মোড় এলাকায় নামেন ইয়াসমিন আক্তার নামে এক কিশোরী। তাঁর বয়স তখন আনুমানিক ১৬ বছর। তিনি রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডি এলাকার একটি বাড়িতে গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ করতেন। ঢাকা থেকে ঠাকুরগাঁগামী একটি বাসে চড়েছিলেন তিনি। দিনাজপুরের দশমাইল মোড় এলাকায় একটি পানের দোকানের সামনে সেই কিশোরী অপেক্ষা করছিলেন দিনাজপুরগামী বাসের জন্য। সে সময় টহল পুলিশের একটি ভ্যান সেখানে হাজির হয়। স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি মেয়েটিকে পরামর্শ দেয় যে পুলিশের গাড়িতে করে দিনাজপুর শহরে যেতে। কিন্তু পুলিশের ভ্যানে করে সেই কিশোরী দিনাজপুর শহরে যেতে রাজি ছিলেন না। তখন পুলিশ সদস্যরা বলেন যে এতো রাতে তার সেখানে একা থাকা নিরাপদ নয়। পুলিশের সেই ভ্যানে ছিলেন একজন এএসআই এবং দুজন কনস্টেবল। শেষ পর্যন্ত খানিকটা অনিচ্ছা সত্ত্বেও কিশোরীটি পুলিশের ভ্যানে ওঠেন। এরপর দিন সকালে কিশোরীটির মৃতদেহ পাওয়া পাওয়া যায় গোবিন্দপুর নামক জায়গায়।
এ ঘটনা নিয়ে স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন সংগঠন বিচারের দাবিতে নানা প্রতিবাদ করতে থাকে। এ খবর ছড়িয়ে গেলে ক্ষোভে-বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে দিনাজপুর। বিভিন্ন সরকারি অফিসে ভাঙচুর চালিয়ে তছনছ করা হয়। দিনাজপুর শহরে কাস্টমস গুদামে মালামাল লুট করে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসেও আক্রমণ করা হয়। পরিস্থিতি এতোটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে দিনাজপুর শহরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) মোতায়েন করা হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে দিনাজপুর শহরে কারফিউ জারি করা হয়। কিন্তু এই কারফিউ আমলে নেয়নি সাধারণ মানুষ। কারফিউ উপেক্ষা করেই বিভিন্ন জায়গায় মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। পুলিশ মিছিলকারীদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে এবং তাতে সাতজন নিহত হয়। নিহত ইয়াসমিন আক্তারের গায়েবানা জানাজায় হাজার-হাজার মানুষ অংশ নেয়। সাধারণ মানুষের বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে দিনাজপুরের প্রশাসন কার্যত অচল পড়ে। এক পর্যায়ে অভিযুক্ত তিনজন পুলিশ সদস্যকে আটক করে রাখা হয়। পরিস্থিতি শান্ত করতে প্রশাসনের তরফ থেকে শহরে মাইকিং করে অভিযুক্ত পুলিশের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে তা জানানো হয়। (বিবিসি বাংলা, ২৩ অগাস্ট ২০২২)।
দিনাজপুরের সাংবাদিক ও লেখক চিত্ত ঘোষ জানান, সাধারণ মানুষের ওই স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন এম. আব্দুর রহিম। সেইসাথে এই ঘটনায় দায়ের করা মামলা যাতে সঠিকভাবে চলতে পারে এবং কোনোভাবে কেউ প্রভাবিত করতে না পারে, সেজন্য তিনি পুরো সময় মামলার তদারকি করেন। এমনকি মামলাটি দিনাজপুর থেকে রংপুরের বিশেষ আদালতে স্থানান্তর করা হলে মামলার প্রতি তারিখে তিনি রংপুরে চলে যেতেন।
ব্যক্তি ও লেখক আব্দুর রহিম
চিত্ত ঘোষ বলেন, একজন সৎ ও আদর্শবান রাজনীতিবিদ হিসেবে আব্দুর রহিম ছিলেন সর্বজনশ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব। দীর্ঘ রাজনৈতিক পথ পরিক্রমায় তিনি নেতৃত্বের আসনে থেকে দিনাজপুরের মানুষকে যুগিয়েছেন সাহস-অনুপ্রেরণা-উদ্দীপনা। জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য তাকে বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতায় আসীন স্বৈরাচার শাসকগোষ্ঠী দ্বারা নির্যাতনের শিকার ও কারাবরণ করতে হয়েছে। আদর্শ ও নীতিবোধকে অটুট-সমুজ্জ্বল রেখে রাজনীতিকে মানুষের সেবা-কল্যাণ আর মঙ্গলের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করে তিনি সমাজসেবায় ছিলেন একনিষ্ঠ।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এম বি আখতার স্মৃতিকথায় লিখেছেন, “চাচা (এম আব্দুর রহিম) বলতেন, ছাত্রলীগ কারও পকেটের সংগঠন নয়; কাজ করতে হবে, রাজনীতি করতে হবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ সামনে নিয়ে ছাত্রদের স্বার্থে। আর্থিক সহযোগিতা চাইলে বলতেন, বাপুরে আমিও চাই তোমাদের সহযোগিতা করতে; কিন্তু এত টাকা (২০-৫০ টাকাকেই তিনি বলতেন এত টাকা) তো জোগাড় করা মুশকিল, দেখি কী করতে পারি। রিকশায় বা বাসে করে দূরে কোথাও (যেমন, পাশের থানা বিরল, বোঁচাগঞ্জ, চিরিরবন্দর, পার্বতীপুর) যাওয়ার কথা বললেই বলতেন, ইনায়েতুর, মালেকের সাইকেল আছে; আর কয়েকটি জোগাড় করে ডাবল করে যাও। ট্রেনে যাও, রেল শ্রমিক নেতাদের বলে দেব। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের বলব, তোমাদের নাস্তা খাওয়াবে। হয়তো তিনি সেই টাকা দিতে পারতেন কিন্তু ছাত্ররা অর্থের কাছে কলুষিত হোক—এমনটি চাইতেন না বিধায় এ পরামর্শগুলো দিতেন। তিনি সব সময় পড়ালেখার পাশাপাশি সৎভাবে ছাত্র রাজনীতি করার কথা বলতেন। (দৈনিক যুগান্তর, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১)।
রাজনীতিকে মানুষের সেবা, কল্যাণ আর মঙ্গলের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করে তিনি সমাজ সেবায় ছিলেন একনিষ্ঠ। দিনাজপুর ডায়াবেটিক হাসপাতাল, চক্ষু হাসপাতাল, রেডক্রিসেন্ট হাসপাতালসহ নানা সেবামূলক প্রতিষ্ঠান এবং স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ ও হিন্দু উপাসনালয়সহ দিনাজপুরের সার্বিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে তিনি কাণ্ডারীর ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমির বোর্ড অব গভর্নরসের সদস্য এবং বার কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। জাতীয় অন্ধ কল্যাণ সমিতি, বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা সমিতি ও জাতীয় যক্ষ্মা নিরোধ সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।
তাঁর নামে দিনাজপুরে স্থাপিত ‘এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল’ মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সেবায় ২০১৭ সালে তৃতীয় স্থান এবং ২০১৮ সালে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে।
এম. আব্দুর রহিম তিনটি বই লিখেছিলেন বলে জানা যায়। এর মধ্যে পাকিস্তানের রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহারের নেতিবাচক দিক বিশ্লেষণ করে ১৯৭০ সালে প্রকাশিত ‘ধর্মের মুখোশ’ বইটি ওই সময়ে ব্যাপক সাড়া জাগায়। পরবর্তীতে তিনি লেখেন ‘পঞ্চম সংশোধনী ও দেশ কোন পথে’ এবং ‘বিসমিল্লাহর মাজেজা’ নামে আরও দুটি বই। তবে বইগুলো এখন পাওয়া যায় না।
পারিবারিক জীবন: সফল সন্তানদের গর্বিত পিতা
১৯৫৬ সালের ১৭ জুন নাজমা বেগমের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এম আব্দুর রহিম। তিনি দুই পুত্র এবং চার কন্যার জনক। বড় ছেলে এম ইনায়েতুর রহিম বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট-এর আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি এবং ছোট ছেলে ইকবালুর রহিম জাতীয় সংসদ সদস্য ও হুইপ। চার মেয়ে ডা. নাদিরা সুলতানা, ডা. নাসিমা সুলতানা, নাফিসা সুলতানা এবং নাজিলা সুলতানাসহ সন্তানরা শিক্ষা জীবন শেষে সকলে স্ব স্ব ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত।
অসুস্থতা ও মৃত্যু
এম. আব্দুর রহিম দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগ ছাড়াও সিওপিডি, ডায়াবেটিক, হাইপারটেনশন ও অ্যাকুইট হার্ট অ্যাটাকে ভুগছিলেন। দীর্ঘ পাঁচ মাস চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে ২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি তিনি দিনাজপুরে যান। ওইদিন তাঁকে বরণ করে নিয়ে দিনাজপুর বড় ময়দানে হাজার হাজার মানুষ সমবেত হয়। কিন্তু এর ছয় মাস পরে তিনি আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন।
২০১৬ সালের ২ অগাস্ট তাঁকে দিনাজপুর জিয়া হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্ট দিয়ে রাখা হয়। অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে ৯ অগাস্ট এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় নেয়া হয় এবং বারডেম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই ৪ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টার দিকে তিনি মারা যান।
পরদিন সকাল ১১টায় দিনাজপুরের শহীদ বড় ময়দানে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় নামাজে জানাজায় লাখো মানুষের সমাগম হয়। এর আগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে তাঁকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় জেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, দিনাজপুর প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠন। পরে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।
তিন দফা জানাজা শেষে তাঁর গ্রামের বাড়ি শংকরপুর ইউনিয়নের পাচকুর জালালপুর গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।