ঝড়- ঝঞ্ঝার কারণে সুভদ্রাকে এ পর্যন্ত প্রায় আটবার উদ্বাস্তু হতে হয়েছে। এই নিদারুণ যন্ত্রণার কোনো ফায়সালা কি করতে পারবে বাকু সম্মেলন?
Published : 11 Nov 2024, 04:41 AM
পাবলিক পরিসরে ‘মহাভারতকে’ অনেকে ‘পৌরাণিক মহাকাব্যও’ বলেন। পঞ্চপাণ্ডব, দ্রৌপদী, কৃষ্ণ, অহল্যা, দ্রোণ, কর্ণ, কুন্তী নামগুলো গ্রামজনপদে বেশ শোনা যায়। মহাভারতেরই এক চরিত্র সুভদ্রা। দ্বারকার এই রাজকন্যা কৃষ্ণ ও বলরামের বোন। পঞ্চপাণ্ডবদের এক ভাই অর্জুনকে বিয়ে করেছিলেন। সুভদ্রা-অর্জুনের পুত্র অভিমন্যু। সব নামেরই নানামুখী অর্থ থাকে। মানুষ বা গ্রাম, পাহাড় বা নদী সকল নামের ক্ষেত্রেই যা সত্য। সুভদ্রা নামের বহু অর্থ অভিধানে পাওয়া যায়। সুমঙ্গল, সৌভাগ্যবান, অপূর্ব, শুভ বা গৌরবময়।
সুন্দরবনের কলবাড়ির জেলে পাড়ায় ‘বাস’ করেন আরেক সুভদ্রা। ‘বসবাস’ শব্দটি এখানে যুতসই হচ্ছে না। বাক্যবিন্যাসের মুখস্থ স্বভাবের কারণে হয়তো ব্যবহার করে ফেলেছি। কারণ ‘বসবাসের’ সঙ্গে স্থানাস্তর, বসতিস্থাপন এবং শ্রেণিসম্পর্কের ঐতিহাসিকতা জড়িত। এসব বিবেচনায় সুন্দরবনের সুভদ্রার বর্তমান ‘বসতি’ কোনোঅর্থেই ‘বসবাসযোগ্য’ কোনো অঞ্চল নয়। এলাকাটি পশ্চিম সুন্দরবনের চুনা নদীর ধারে এক ভাংচুর উপকূল। নোনা জোয়ারে তলিয়ে যাওয়া এবং আবার ভাটায় ভেসে ওঠা নোনাকাদার তীর। সুভদ্রার মতো বাগদী পরিবারের কিছু মানুষের থাকার ‘জায়গা’ হয়েছে এখানে। আসলে এটিও যুতসই নয়, ওই একই মুখস্থ বাক্যবিন্যাস। কারণ জায়গা হওয়ার কিছু নাই, এছাড়া এতটুকুনই কেবল মাটি। আর চারধার জুড়ে কেবল নোনা পানি।
কেন চারধারে নোনাপানি? না, উপকূল বলে কেবল নদী-খাল নয়। তারচেয়ে বেশি পানি জমিয়ে রাখে চিংড়ি ও কাঁকড়া ঘের। কেন এত চিংড়ি আর কাঁকড়া ঘের? না, সুভদ্রারা আয়েশ করে ‘চিংড়ির মালাইকারি’ বা ‘চিংড়ি ফ্রাই’ খাবেন বলে এসব ঘের গড়ে ওঠেনি। ধনী লোকেরা খাবে বলে এসব ঘের তৈরি হয়েছে। কেবল ধনীরা খাবে বলেই কি এসব ঘের তৈরি হয়? না, প্রবল মুনাফা আর অসম করপোরেট বাজার চাঙ্গা রাখতেই এসব বাণিজ্যিক প্রকল্প তৈরি হয়েছে।
সুভদ্রারা কালেভদ্রে এসব ঘেরে আধবেলা কি একবেলা কাজের সুযোগ পান। বরং এই রকমের প্রকল্পগুলো সুভদ্রাদের জন্য ‘অস্বস্তি’ ও ‘ভীতি’ জারি রাখছে। কারণ চিংড়ি ঘেরগুলো সুভদ্রাদের জীবনকে চুরমার করে দিয়েছে। চোখের সামনে জল্লাদের মতো একের পর এক বিলেন জমিনগুলো খুন করেছে। সাদামোটা, জটাইবালাম, ঘুনশি, নোনাখচি, বুড়ি মন্তেশ্বর, দাদখানি ধানগুলি হতো আগে এসব বিলেন জমিনে। আমন মওসুমে ধান কাটার সময়টা ছিল দারুণ ‘উপভোগ্য’। ওইসব ধান নিয়ে নানা বর্গের মানুষ, ইঁদুর কিংবা পাখিদের কত টানাটানি। তখনো কুয়াশার টুপটাপ নামত না, ভোরে খুন্তি-শাবল নিয়ে সুভদ্রারা ধানজমিনে চলে যেতেন। ফুলন্ত ধানছড়াসহ কেটে রাখা ধানস্তুপ নয়, সুভদ্রাদের নজর থাকত ইঁদুরের গর্তের দিকে। হেমন্তের সুতীব্র সকাল ঢাউস হয়ে উঠত ইঁদুর গুহা আবিষ্কারে। তারপর শুরু হতো গর্ত খনন। ইঁদুর গর্ত থেকে ধান ‘সংগ্রহ’ করেই দিন চলত সুভদ্র্রাদের। ছয় মাসের খোরাকি ধান আসত ইঁদুরের গর্ত থেকেই।
সুভদ্রারা খুব ভয় পেয়েছিলেন, যেন একটা নাখোশ যুদ্ধ নেমে এসেছিল বাগদী পাড়ায়। সরকার ইঁদুর-হত্যাকে ‘গর্বের যুদ্ধ’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিল। ইঁদুর মেরে যে যত লেজ জমা দেবে সরকারি অফিসে, তারে তত পয়সা দেবে মালিক। বাগদী পাড়াগুলো সন্ধ্যার আগেই আধপেটা খেয়ে সব কুপি নিভিয়ে দিত। কে যেন ভয় দেখিয়েছিল, বাগদীদের কোমরে দড়ি বেঁধে থানায় নেয়া হবে। নির্বাসন হবে কালাপানির দেশে। কারণ তারা ইঁদুরের গর্ত থেকে ধান কুড়িয়ে বাঁচে। ইঁদুরের বংশ-বিংশতির জন্য মান্নত করে। কুপি নেভানো বিদীর্ণ অন্ধকারে কালাপানির ঘষটানো ঘায়ের গল্প শোনাতেন সুভদ্রার পইদাদু। নিদান আন্ধারে চেহারাগুলো ঠাহর হতো না সুভদ্রার। কয়েকদিন পর ইঁদুর হত্যার বিশালসব সাইনবোর্ড বসেছিল তিন রাস্তার মোড়ে। লাল কালিতে বড় বড় করে লেখা ছিল, প্রতিবছর ইঁদুর কোটি কোটি কোটি কোটি টাকার ফসল নষ্ট করে। বাল্যশিক্ষা সুভদ্রারও পড়া ছিল। কিন্তু সুভদ্রারা এইসব সাইনবোর্ডের অর্থ বুঝতে পারতেন না। নষ্ট বলতে আসলে কী বোঝায়। কৃষকেরা ধান আবাদ করে। সেখান থেকে কিছু ঝরা ধান ইঁদুর তার গর্তে নিয়ে যায়। কিছু ইঁদুরের পেটে যায়, বাদবাকি ধান ইঁদুরের গর্ত থেকে বাগদীরা সংগ্রহ করে। তাহলে ‘নষ্ট’ বলতে আদতে কী বোঝায়?
এরা কারা যারা এমন নষ্ট-বিনষ্টের ভীষণ ভুল হিসাব করে। যারা কোনোদিন বিলেনজমিনে আসে না, যারা কোনোদিন ইঁদুরের গর্তের খোঁজ জানেনি, যারা কোনোদিন গৃহস্থের গোলা দেখেনি, কোনোদিন যারা বাগদীপাড়ায় ইঁদুরগর্তের কুড়ানো ধানের পিঠার স্বাদ নেয়নি। কিন্তু নিদারুণভাবে এরাই উৎপাদন, শ্রম এবং শ্রেণিসম্পর্কের নানান তত্ত্ব জারি রাখে। আর তা নিয়ে দুনিয়া হুমড়ি খায়। সুভদ্রাদের পাড়ায় যেবার ফুলপিসি মরল, সবাই জানল ইঁদুরের বিষ গিলেছিল ওই ‘পোয়াতি পিসি’। বিষ, ইঁদুর হত্যার রাষ্ট্রীয় নির্দেশ, সাইনবোর্ড, কানাঘুষা সব মিলিয়ে চোখের সামনে ইঁদুরের গর্তেরা নিখোঁজ হতে থাকল। এরপর দুম করে সব বিলেনজমিন গলা কেটে নোনাপানি জমিয়ে চিংড়িঘের করা হলো। আর কোনো গর্ত রইল না। না রইল আর কোনো ধান। সব গেল, কিন্তু ক্ষুধা গেল না। কারণ পেট রইল বাগদীপাড়ায় প্রতিজনের শরীরে। রাষ্ট্র কোনোদিন খোঁজ নিল না, কীভাবে বেঁচে রইল বাগদীরা সুন্দরবনের উপকূলে। এরপর প্রতিদিন গল্প উল্টাল-পাল্টাল। উথাল-পাথাল, আছাড়ি-পিছাড়ি সময়।
সুভদ্রার মা-বাবা কেন যে সুভদ্রা নামটি রেখেছিলেন, তা জানা যায় না। (এমন বিবৃতিও সঠিক নয়, কারণ নামকরণের কারণ অনুসন্ধানের জন্য যতখানি সবাক গবেষক হওয়া জরুরি তা হয়তো আমি নই, এ আমার একান্ত ব্যর্থতা)। যাহোক বাংলাদেশের সুন্দরবন উপকূলে গেলে কেবল সুভদ্রা নয়; খুঁজে পাওয়া যাবে নকুল, ভীম, অর্জুন, দ্রৌপদী, কৃষ্ণ, বলরাম, শকুনি, কর্ণ, কুন্তীদের। যেন দুনিয়ার বৃহত্তম বাদার কোলে এক নোনা মহাভারত। এই মহাভারত কোনো পৌরাণিক মহাকাব্য নয়। শীত কী বর্ষায় রাত তিনটায় এই মহাভারত শুরু হয়। ক্ষুধার পেটে জাল-নৌকা ঠেলে মাছ-কাঁকড়ার খোঁজে বাদাবনের খালে খালে। রাতভর জাল-বড়শি পেতে মাছ-কাঁকড়া যা মেলে তা বাজারে বেচে চাল-ডাল-নুন। তার বাপ-মাও এই করেছেন, তাদের মামা-বাবারাও তাই করেছেন, তার সন্তানেরাও তাই করছে। শৈশব থেকে এই আখ্যান সুভদ্রার মুখস্থ। কিন্তু মুখস্থ নয়, অন্য বিষয়। মাথাখারাপ ঝড়-বর্ষা আর দমবন্ধ দাবদাহ। বছর বছর ঘূর্ণিঝড়, এমনকি এক বছরে কয়েকবার। এমন গল্প তার দিদিমাও বলেনি, এমনকি মাও খুব একটা না। আর এই ঝড়-ঘূর্ণিতে সব তলিয়ে যায়। হয়তো এই কথাটাও যুতসই হলো না। কীইবা আছে সুভদ্রাদের, কিন্তু আছে যা যতটুকু, সব বেঘোরে হারায়। প্রতিটি ঘূর্ণিঝড় নিদারুণ সব দাগ রেখে যায়।
একসময় তারা খুলনার কয়রার হোগলা গ্রামে ছিলেন। গ্রামজুড়ে হোগলা হতো দেদার। মাদুর বুনত বহুজন। হোগলার খালে মিলত নানাপদের মাছ। নোনা জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে যায় হোগলা। বিয়ের পর সাতক্ষীরার শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের কলবাড়ি আসেন। ২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড় সিডরে লণ্ডভণ্ড সুন্দরবন উপকূল। পরিবারের একমাত্র মাছ ধরার নৌকাটি নিখোঁজ হয়। ২০০৯ ঘূর্ণিঝড় আইলায় তলিয়ে যায় কলবাড়ি। ৩০ পরিবারের সবাই উদ্বাস্তু হয়ে যায়। বহুদিনে পানি নামলে সুভদ্রাদের মতো ১৩ পরিবার আবার ফিরে আসে নোনাকাদার কলবাড়িতে। কারণ এখানে অধিষ্ঠান আছে মা বনবিবির এক প্রাচীন থান। বিশ্বাস হয়তো সব ঝড়-ঝঞ্জা থেকে বনবিবি আগলে রাখবেন তার সন্তানদের। এরপর একে একে ফণী, জাওয়াদ, বুলবুল, আমফান, মোখা, তেজ, হামুন, মিধিলি কিংবা রেমালে সর্বনাশা আঘাত সামলাতে হয়েছে। মিধিলিতে তাদের জাল-নৌকা ডুবে যায়, জাল ভেসে যাওয়াতে বহুদিন বন্ধ থাকে মাছ ধরা। পরে ঋণ-কর্জ করে আরেকটি জাল জোগাড় করেন। রেমালের সময় সুভদ্রা ও তার স্বামী গোপাল সানা সুন্দরবনের খালে ছিলেন, ঝড় থামলে বাড়ি ফিরে দেখেন ঘরের চাল উড়ে গেছে। ধরা মাছ পঁচে গেছে।
সুভদ্রা সানার সঙ্গে যখন আলাপ হয়, কলবাড়ি বাগদী পাড়ায়, নোনাকাদায় একের পর এক দাঁড়িয়েছিলেন বলরাম, কৃষ্ণ, নকুল, সহদেব, ভীম, দ্রৌপদী কিংবা অর্জুনেরা। প্রবল সব ঘূর্ণিঝড়, তীব্র লবণাক্ততা আর জলবায়ুর উল্টাপাল্টা আচরণে ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া বিশ্বের বৃহত্তম বাদাবনের কানায় দাঁড়িয়ে আমার মনে হয়েছিল আমি এক নিদারুণ বৈষম্যের মহাভারতের ময়দানে তলিয়ে যাচ্ছি। কাঠামোগত বৈষম্যের কারণে সুভদ্রারা গরিব ও প্রান্তিক। পাশাপাশি বহু দশাসই উন্নয়নের আঘাতেও রক্তাক্ত। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তৈরি হওয়া নয়া সংকটের ধরন এবং এর সঙ্গে চালিয়ে যাওয়া সুভদ্রাদের গল্প আমাদের সামনে এক ‘অস্বস্তিকর’ ও ‘অমানবিক’ মহাভারত হাজির করে। কারণ এই জলবায়ু সংকট সুভদ্রাদের বেঁচে থাকা নয়, টিকে থাকাকেই বারবার জটিল সব প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করাচ্ছে। আর এই অমীমাংসিত সংকট মোকাবেলার দায় কার? দায়িত্ব কার?
প্রমাণিত হয়েছে এই জলবায়ু সংকটের জন্য সুভদ্রা বা তার সমাজ বা তার দেশ দায়ী নয়। কিন্তু উত্তর-দক্ষিণ বিবাদ কিংবা বৈশ্বিক জলবায়ু দেনদরবার কোনোভাবেই কেন বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনের সুভদ্রাদের পাঠ করতে পারছে না? কেন সকল অস্বস্তিকর ও বিশৃঙ্খল দৃশ্য বারবার আড়াল করে ফেলা হচ্ছে? এইসব প্রশ্নের উত্তর খুব জরুরি। একের পর এক জলবায়ু সম্মেলনের নামে কার্বনের পাহাড় কিংবা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দুনিয়াকে কাহিল করে ফেলছে।
৩০ নভেম্বর থেকে ১৩ ডিসেম্বর এই সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইতে বসেছিল ২৮ তম জলবায়ু সম্মেলন, কপ-২৮। ২০০টি দেশের ৮৫ হাজার প্রতিনিধি ১৩ দিনে তহবিল, অর্থায়ন, অভিযোজন, প্রতিশ্রুত অঙ্গীকার বিষয়ে তর্ক, বাহাস ও আলাপ জারি রাখেন। কেবল শুরু থেকে নয়; বহুজাতিক কোম্পানি প্রতিনিধিদের বিশাল বহর পুরো সম্মেলনকেই সন্দেহ এবং তর্কের মরূদ্যানে ঠেলে দেয়। তেল কোম্পানি, কয়লা কোম্পানি, মাংস কোম্পানি, বীজ কোম্পানি কিংবা রাসায়নিক বিষ কোম্পানির লবিস্টরা ‘বনোয়াট কুতর্ক’ আর ‘মিথ্যা সমাধানের’ বিজ্ঞাপন দিয়ে পৃথিবীর বাঁচা-মরার প্রশ্নের সম্মেলনের গতিকে অযথাই বিনষ্ট করে। দুবাইয়ের পর আবারো আজারবাইজানের বাকুতে বসছে জলবায়ু সম্মেলনের ২৯তম আসর। বাকু সম্মেলন কি সুভদ্রাদের আখ্যান পাঠ করতে প্রস্তুত? বাকু সম্মেলনের একটা বড় জায়গা জুড়ে থাকবে জলবায়ু অর্থায়ন, তহবিল আর প্রযুক্তি তর্ক ও দেনদরবার। ঝড়- ঝঞ্ঝার কারণে সুভদ্রাকে এ পর্যন্ত প্রায় আটবার উদ্বাস্তু হতে হয়েছে। এই নিদারুণ যন্ত্রণার কোনো ফায়সালা কি করতে পারবে বাকু সম্মেলন? কেউ কি উত্তরের ধনী দেশদের বলবে না, ভোগবিলাসিতা কমাও। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার শূন্যকরণে বিশ্বনেতৃত্ব কি কোনো ভূমিকাই রাখবে না? নিওলিবারেল অত্যাচার ও অন্যায়কে প্রশ্ন করে কি দাঁড়াবে না নতুন প্রজন্ম?
সুভদ্রার মা-বাবা কোনোদিন তাদের কোনো খেলনা কিনে দিতে পারেননি। মায়ের আমলের স্মৃতি হিসেবে একটা পিতলের হাতা আর লোহার খুন্তি আছে তার। সবসময় এ দুটি জিনিস সঙ্গে রাখেন। মায়ের হাতের স্মৃতি। দক্ষিণের এক গরিব দেশের মহাগরিব সুভদ্রাদের স্মৃতি-বিস্মৃতির কি কোনো মূল্য আছে এই নিওলিবারেল ব্যবস্থায়? কিন্তু এই সুভদ্রারাই কিন্তু জান দিয়ে আগলে রাখছেন দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন। বিশ্বের এক বৃহত্তম কার্বন-সিংক। বৈশ্বিক জলবায়ু দেনদরবার সুভদ্রাদের অবদানকে স্বীকৃতি না দিক, কিন্তু কোনোভাবেই একে অস্বীকার করে নিম্নবর্গের জলবায়ু-সুরক্ষার সংগ্রামকে আড়াল করতে পারে না। এই আড়ালের রাজনীতি ক্ষমতার মেরুকরণকে প্রবলভাবে স্পষ্ট করে দেয় এবং শেষপর্যন্ত জনমনে ‘জলবায়ু সম্মেলন’গুলো আর কোনো আস্থা ও বিশ্বাস তৈরি করতে পারে না।
আমরা আশা করব বাকু জলবায়ু সম্মেলন জলবায়ু-ন্যায্যতা এবং মানবাধিকারের আয়নায় জলবায়ু-ডিসকোর্সের সামগ্রিক পরিসর উন্মুক্ত করবে। রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ জলবায়ু-ন্যায্যতার শিরদাঁড়া টানটান রাখবে। সুভদ্রাদের সামনে আলো ঝলমল আশার ফুল না ফুটুক, নিদারুণ দুর্দশা আর ভোগান্তির অবসান হোক। অন্যায় ভোগবিলাস আর নিওলিবারেল বাহাদুরিতে বিশ্বের বৃহত্তম বাদাবনের এক সংগ্রামমুখর মহাভারত ডুবে না যাক। সুভদ্রাদের নোনাকাদায় যুদ্ধ করে টিকে থাকার পরিসর সুরক্ষায় অন্ততপক্ষে অঙ্গীকার করুক বিশ্বনেতৃত্ব, এইটুকুই আপাতত চাওয়া বাকু জলবায়ু সম্মেলনের কাছে।