যুগসন্ধিক্ষণে সংবাদমাধ্যম ও সরকারের দায়িত্ব

কামরুল হাসান বাদলকামরুল হাসান বাদল
Published : 1 Oct 2021, 03:30 PM
Updated : 1 Oct 2021, 03:30 PM

অনিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল বন্ধের বিষয়ে হাই কোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের মতো নিবন্ধিত এবং দেশের শীর্ষস্থানীয় নিউজ পোর্টালকে দেড় ঘণ্টার বেশি সময় বন্ধ রাখল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি ঘটেছে ২৮ সেপ্টেম্বর বিকাল পৌনে ৫টার দিকে। এসময় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাঠকরা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ওয়েবসাইটে ঢুকতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন। অনেক ব্রাউজারে নোটিস দেওয়া হয়– ওয়েবসাইটটি 'ব্লক' করা হয়েছে। ওই একই সময়ে আরও কিছু নিউজ পোর্টালেও একই সমস্যা হয়। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে এই অচলাবস্থা চলে। যোগাযাগ করা হলে বিটিআরসির ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, 'হাই কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী নিবন্ধিত ছাড়া সব নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।' (সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)

হাই কোর্ট গত ১৪ সেপ্টেম্বর দেওয়া এক আদেশে দেশে অনিবন্ধিত অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলো ১ সপ্তাহের মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দেয়। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যানকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ সংক্রান্ত সম্পূরক আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এ আদেশ দেয়। আদালত সে আবেদনের শুনানির পর বিটিআরসির চেয়ারম্যান ও প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যানকে সাত দিনের মধ্যে অনিবন্ধিত, অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে প্রতিবেদন দিতে বলেন।'

কোভিড-১৯ মহামারীর অভিঘাতে অনেক কিছুই পাল্টে গেছে বিশ্বের। দেশে দেশে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য বেড়েছে, বেড়েছে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্যও। কোটি কোটি মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। অনেক দেশ ভ্যাকসিনের সংস্থান করবে কী জনগণের জন্য খাদ্যসংস্থানও করতে পারছে না।

বাংলাদেশ গত এক দশকে যে উন্নয়ন করেছে এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ বৃদ্ধি করছে তাতে মহামারীর সংকট ভালোভাবেই মোকাবিলা করতে পেরেছে। বর্তমান সরকার খাদ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রেখে এবং যেকোনো উপায়ে ভ্যাকসিনের সংস্থান করে মহামারী মোকাবিলায় যে সাফল্য ও সক্ষমতা দেখিয়েছে তা প্রশংসাযোগ্য।

মহামারী অনেককিছু বদলে দিয়েছে তার মধ্যে বিপণন ব্যবস্থা ও সংবাদমাধ্যম হচ্ছে অন্যতম। মহামারীর কারণে দেশে দেশে লকডাউনে থাকায় এই দুটি ক্ষেত্রে পরিবর্তন ঘটেছে দ্রুত। যেমন অনলাইন নিউজ ও অনলাইন শপিং, মহামারীর আগের বাস্তবতা আর পরের বাস্তবতায় আকাশ-পাতাল পার্থক্য। কোভিড পরিস্থিতি মানুষকে অনলাইন শপিংয়ে অতিরিক্ত নির্ভরশীল করে তুলেছে। এই সুযোগে অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও অনলাইন শপিংয়ে অনেক প্রতিষ্ঠান যুক্ত হয়েছে। অবশ্য কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম নিয়ে মামলা-মোকদ্দমাও চলছে। তবে গত পৌনে দু বছরে বিশ্বের নামি-দামি প্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইনে বিপুল অঙ্কের ব্যবসা করেছে। এটা স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। প্রয়োজনই নানা ক্ষেত্র তৈরি করে নেয়। সমস্যা, সমাধানের পথও বাতলে দেয়।

একটি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "ইন্টারনেট আর স্মার্টফোনের ব্যাপক প্রসার গত কয়েক বছরে আমাদের জীবনযাপনের ধারায় ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। আমাদের সামাজিকতা, আমাদের উৎসব, আমাদের বিনোদন—কোনোটিই আর আগের মতো নেই। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ আর ইউটিউব—আমাদের জীবনকে বদলে দিচ্ছে দ্রুত। আগের মতো এই পরিবর্তন আর শুধু উচ্চবিত্ত আর উচ্চ–মধ্যবিত্তদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। একেবারে নিম্নবিত্তদের মধ্যে না এলেও নিম্ন-মধ্যবিত্তদের একটি বড় অংশ এখন জীবনযাত্রায় বেশ ডিজিটাল! এত দ্রুত পরিবর্তন হওয়া ভালো, না খারাপ—তা নিয়ে বিতর্ক আছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, পৃথিবীর অন্য যেকোনো সমাজের মতো আমাদের এখানেও এই পরিবর্তন ঘটছে, আর দিন দিন এই পরিবর্তনের গতি বাড়বে বই কমবে না।

অনলাইন কেনাকাটার যে ধারা ধীরে ধীরে তৈরি হচ্ছে, তা অনেক বেশি টেকসই। এর প্রধান কারণ, দেশে অনলাইন শপিং যতটা না শহরের মানুষের কাছে আকর্ষণীয়, তার চেয়ে বেশি টানে গ্রামগঞ্জের মানুষদের। ব্যাপারটা একটু অদ্ভুত হলেও বাস্তব। বাংলাদেশে যেকোনো বড় শহরে বড় মার্কেটের সংখ্যা অগণিত। শহরের নাগরিকদের নাগালের মধ্যেই বেশির ভাগ জিনিস কিনতে পাওয়া যায়। অন্যদিকে থানা বা ইউনিয়ন সদরে অনেক পণ্য কিনতে পাওয়া যায় না। কিন্তু এসব এলাকায় প্রচুর ক্রেতা আছেন, তাদের ক্রয়ক্ষমতাও আছে (দেশে প্রতিবছর বিদেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকার রেমিট্যান্স আসে, আর সেগুলোর বেশির ভাগ গ্রাম আর ছোট শহরে যায়)। গ্রামীণ এই বাজার দেশে অনলাইন শপিংয়ের সবচেয়ে বড় ভিত্তি হতে পারে। এখনই দেখা যাচ্ছে, দেশে অনলাইন শপিংয়ের ৫০ শতাংশের বেশি অর্ডার আসে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বড় বিভাগীয় শহরগুলোর বাইরে থেকে।"

মহামারী বাণিজ্যের এই নতুন দুয়ার উন্মোচিত করলেও তার অভিঘাতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত খাত হচ্ছে সংবাদপত্র বা সংবাদমাধ্যম। দীর্ঘ এই মহামারীকাল ওলট-পালট করে দিয়েছে সংবাদপত্র জগৎকে। বিশ্বের বহু দেশের অনেক জনপ্রিয় পত্রিকা বন্ধ হয়ে গেছে আর অধিকাংশ সংবাদমাধ্যম রুগ্ন হয়ে গেছে। অবস্থা এমন যে, আর কয়েকমাস মহামারী স্থায়ী হলে বন্ধ হয়ে যাবে আরও অনেক প্রতিষ্ঠান। এটা শুধু বাংলাদেশের বেলায় ঘটছে বা ঘটবে তা নয়, বিশ্বের প্রায় সব দেশেরই চিত্র এটি।

প্রযুক্তির অগ্রগতিতে সংবাদমাধ্যমে পরিবর্তনের হাওয়া লেগেই গিয়েছিল, মহামারী সে পরিবর্তনকে দ্রুত সামনে নিয়ে এসেছে। সংবাদমাধ্যমে পত্রিকার প্রিন্টভার্সনের জমানা ছোট হয়ে আসছিল ধীরে ধীরে। তার স্থান দখল করে নিচ্ছিল অনলাইন সংবাদমাধ্যম। পত্রিকা পড়ার অভ্যাস দিনে দিনে কমে আসছিল বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের কাছে। অতি প্রযুক্তিনির্ভরশীলতা তাদের অভ্যাস পাল্টে দিচ্ছিল। কাগজ পড়ার চেয়ে তাদের কাছে ল্যাপটপ বা মোবাইলে অনলাইনে পড়ে নেওয়া সহজ হয়ে উঠছিল।

এই যুগ সৃষ্টিকারী প্রযুক্তি হলো ইন্টারনেট। এই প্রযুক্তি খুব কম সময়ের মধ্যে তথ্যপ্রবাহের ক্ষেত্রে নাটকীয় পরিবর্তন এনেছে। যতটুকু জানা যায়, ১৯৯৬ সালের ৪ জুন ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক (আইএসএন) নামের একটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশকে প্রথমবারের মত 'অনলাইন' ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত করে। বাংলাদেশ ইন্টারনেটের জগতে প্রবেশ করার পর থেকে ই-মেইল, ইন্টারনেট, ফ্যাক্স এবং ওয়েব ব্রাউজিং অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। গত শতকের নব্বই দশকের গোড়ার দিকে বাংলাদেশে যখন প্রথম কম্পিউটার চালু হয় তখন সংবাদপত্রে ইন্টারনেট প্রযুক্তির কথা কেউ চিন্তা করেছে কিনা জানি না। ১৯৯৬ এর মাঝামাঝি বাংলাদেশ যখন ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত হয় তখন ঢাকার দু'একটি পত্রিকা ইন্টারনেট ব্যবহার শুরু করে। ১৯৯৭ সালের শেষদিক থেকে কয়েকটি পত্রিকা তাদের ওয়েবসাইটের প্রচলন শুরু করে। মোটামুটি একুশ শতকের শুরু থেকে ব্যাপক হারে সংবাদপত্রগুলো তাদের ওয়েবসাইট সংস্করণ চালু করে। অনলাইন সংবাদপত্রকে ওয়েব সংবাদপত্রও বলে। এ সংবাদপত্র ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব তথা ইন্টারনেটে উপস্থাপন করা হয়। সেটা কোনো প্রিন্ট, অডিও কিংবা ভিজুয়াল সংস্করণের ওয়েবসাইট সংস্করণ হতে পারে কিংবা সম্পুর্ণ পৃথক একটি সংবাদভিত্তিক ওয়েবসাইটও হতে পারে।

অনলাইন পত্রিকার প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে দুর্যোগ নেমে আসতে থাকে সংবাদমাধ্যমের প্রিন্ট ভার্সনে। মহামারী শুরুর দিকে অনেকে পত্রিকা পড়তে বা পত্রিকা স্পর্শ করতে ভয় পেয়েছে সংক্রমণের ভীতিতে। যে কারণে অনেক পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ থাকে। পরে ভীতি কেটে গেলেও কোনো পত্রিকা আর পূর্বের মতো পূর্ণাঙ্গ কলেবরে বের হয়নি। বিজ্ঞাপননির্ভর দৈনিকগুলো ক্ষতি কমাতে পৃষ্ঠাসংখ্যা কমিয়ে দেয়। বলাবাহুল্য, মহামারীতে সকল সেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বিজ্ঞাপন খাতে আয় শূন্যের কোটায় নেমে আসে। এতে কয়েকবছর ধরে চলে আসা সংবাদপত্রের সংকট আরও চরম আকার ধারণ করে। আরও অনেক পত্রিকা তাদের কর্মীসংখ্যা কমিয়ে ফেলে, বেতন কর্তন করে এবং কর্মী ছাঁটাই করে। এতে অনেক সংবাদকর্মীর জীবনে গভীর দুর্দশা নেমে আসে। পরিস্থিতি বিবেচনায় সাংবাদিক ইউনিয়নের পক্ষেও জোরালো ভূমিকা পালন করা কঠিন হয়ে পড়ে। অনেক পত্রিকা ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিকদের বেতন ভাতা আটকে যায়। কোভিডের আগে থেকেই অনেক টেলিভিশন চ্যানেল ও পত্রিকা কর্তৃপক্ষ তাদের কর্মীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করত না। মহামারী সেসব ক্ষেত্রে আরও বড় সংকট তৈরি করে দেয়। সরকারের পক্ষ থেকে নতুন রোয়েদাদ ঘোষিত হলেও তা বাস্তবায়নে সরকারের তৎপরতা সন্তোষজনক মনে হয়নি। কিন্তু পাশাপাশি নতুন টিভি ও পত্রিকার ডিক্লারেশন অব্যাহতভাবে চলতে থাকে। সরকারি বিজ্ঞাপন প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও চরম অনিয়ম চলতে থাকে। যে পত্রিকা সাংবাদিকদের বেতন-ভাতা নিয়মিত পরিশোধ করে তাদের সরকারি বিজ্ঞাপন পেতে বেগ পেতে হয় অথচ আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকা ঠিকই বিজ্ঞাপন হাতিয়ে নেয়। অবশ্য অতিসম্প্রতি তথ্যমন্ত্রীর পদক্ষেপের কারণে আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকার তালিকা হচ্ছে এবং তাদের ডিক্লারেশন বাতিল হচ্ছে। এটি নিঃসন্দেহে শুভ উদ্যোগ। এতে প্রকৃত সংবাদপত্র লাভবান হবে। এই প্রক্রিয়া চলমান থাকা উচিত বলে মনে করেন সংবাদপত্রসেবীরা।

অন্যদিকে দ্রুত বর্ধনশীল ইন্টারনেটভিত্তিক সংবাদপত্র অর্থাৎ অনলাইন পত্রিকার ক্ষেত্রে সরকারি নীতিমালা না থাকায় এ ক্ষেত্রে চরম বিশৃঙ্খল অবস্থা চলছে। যার যেমন খুশি তেমন করে অনলাইন পত্রিকা চালু করছে। এগুলো অনেকটা 'ওয়ানম্যান শো'-এর মতো। নিজেই সম্পাদক, নিজেই রিপোর্টার, নিজেই সহসম্পাদক। নিজের ঘরে বসে শুধু মোবাইল ফোন বা একটি কম্পিউটার ব্যবহার করে অনেকে সম্পাদক বা সাংবাদিক হয়ে যাচ্ছেন। কোনোধরনের জবাবদিহিতার মধ্যে না থেকে অন্য পোর্টালের নিউজ কপি-পেস্ট করে চালিয়ে যাচ্ছে বছরের পর বছর। কোনো কোনো উপজেলাতেই এমন পোর্টালের সংখ্যা দুই শ থেকে আড়াই শ। খোঁজ নিলে সারা দেশে এই সংখ্যা লক্ষাধিক ছাড়িয়ে যাবে। সংবাদপত্র জগতের বা প্রকৃত সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় ক্ষতি করছে এরা। এদের অপ-সাংবাদিকতার কারণে সাংবাদিক পেশাটিই বিতর্কিত হয়ে পড়ছে। দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথম চট্টগ্রাম সফরে এসে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে মতবিনিময় সভায় তথ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, 'শুধু বাংলাদেশ নয়, সমগ্র পৃথিবীতে অনলাইন মিডিয়ার ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটেছে। এটি বন্ধ করা ঠিক নয়। কিন্তু যাতে সঠিকভাবে নিয়মনীতির মধ্যে চলে সে কাজটি করা হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য।' তবে অনেকে 'ঘরে বসে' অনলাইন নিউজ পোর্টাল চালু করছেন বলেও মন্তব্য করেছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

'অনুমোদনহীন' অনলাইন টেলিভিশন নিয়ে তিনি বলেন, 'দেশে প্রচুর অনলাইন টেলিভিশন হয়ে গেছে। যে কেউ অনুমোদন ছাড়া একটা অনলাইন টেলিভিশন খুলে ফেলবে সেটি হতে পারে না। অনলাইন টেলিভিশনের ক্যামেরা যখন সামনে ধরে তখন কেউ বুঝতে পারে না সেটা আসল না কি অনলাইন। প্রায় আড়াই বছর আগে তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন,' রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা হচ্ছে। নীতিমালার ভিত্তিতে যখন রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা হবে তখন ভুঁইফোড় অনলাইন বন্ধ হয়ে যাবে, কমে যাবে। অনলাইন টেলিভিশনকেও নিয়মের আওতায় আনা হবে।' তবে হতাশার সঙ্গে উল্লেখ করতে হচ্ছে যে, এ পর্যন্ত যতগুলো অনলাইন নিউজ পোর্টালকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে অনেকগুলোর কোনো অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে অনেক প্রতিষ্ঠিত, বস্তুনিষ্ঠ ও প্রকৃত অনলাইন পত্রিকা অনুমোদন পায়নি। অনেকে আবেদন জমা দেওয়ারও সুযোগ পাচ্ছে না।

পরিবর্তনের এই সময়ে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে আগে। সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার মান বজায় রাখার স্বার্থে অনলাইন পত্রিকার নীতিমালা প্রণয়ন এখন সময়ের দাবি। একটি অনলাইন পোর্টাল চালাতে গেলে কিছু শর্ত ও নিয়ম প্রবর্তন করা উচিত। সরকারি নীতিমালা মেনে বা শর্তপূরণ করে পত্রিকা প্রকাশে বাধ্য করা উচিত। নিজস্ব অফিস, আর্থিক সঙ্গতি, পেশাদার সম্পাদক ও সংবাদকর্মী আছে কিনা এবং তাদের নিয়মিত বেতন-ভাতা প্রদান করা হয় কিনা তা নিশ্চিত করা উচিত। প্রকৃত সাংবাদিকতার লক্ষ্য নিয়ে যারা এগিয়ে আসতে চায় তাদের মূল্যায়ন করা উচিৎ। কারা সাংবাদিকতা করতে চায় আর কারা সাংবাদিকতার আড়ালে চাঁদাবাজি বা অপসাংবাদিকতা করতে চায় তা উদঘাটন করা সরকারের পক্ষে কঠিন কাজ নয়। কাজটি যত দ্রুত করা যাবে ততই মঙ্গল হবে সংবাদপত্র জগতের সবার।

মহামারী কেটে গেলেও সংবাদপত্র অর্থাৎ প্রিন্ট ভার্সন আগের অবস্থান ফিরে পাবে না। ইন্টারনেটের কল্যাণে সংবাদমাধ্যম নতুন যুগে প্রবেশ করছে। মহামারী বরং পরিবর্তনটিকে দ্রুত করেছে। নতুন প্রযুক্তি নতুন আইডিয়ার জন্ম দেবে। সামনের দিনগুলো অধিকতর প্রযুক্তিনির্ভর হবে। একটি মোবাইল ফোন সমস্ত বিশ্বকে হাতের মুঠোয় এনে দেবে। সকালে এককাপ চা বা কফি হাতে একটি পত্রিকা পড়ার সনাতন অভ্যাস পাল্টে যাবে। কাগজের স্থান দখল করবে নেটজগৎ। টিভি সেটের সামনে বসে থেকে খবর, খেলা বা কোনো অনুষ্ঠান দেখার পুরনো অভ্যাসও পাল্টে যাবে। যুগের এই পরিবর্তনকে মেনে নিতে হবে, ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ দিয়ে দেখতে হবে। এই পরিবর্তন যাদের হাতে হবে তাদের হতে হবে আরও গতিশীল ও বিচক্ষণ।

কাজেই পরিবর্তনের এই সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বাংলাদেশে এই পরিবর্তন সাধিত হোক শিক্ষিত, মার্জিত, আধুনিক একটি প্রজন্মের দ্বারা। বিতর্কিত, নিন্দিত, চাঁদাবাজ কেউ যেন সাংবাদিকতা পেশাকে বিতর্কিত করতে না পারে সেদিকে শুরু থেকেই সতর্ক থাকা চাই।