Published : 16 Jun 2020, 02:11 PM
অপ্রতিরোধ্য করোনাভাইরাস এ মুহূর্তের সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয়। কেউ বলতে পারছে না করোনাভাইরাসের থাবা থেকে আমরা কবে মুক্ত হব। থমকে গেছে জীবনযাত্রা। অর্থনীতি, রাজনীতি, শিক্ষা-সংস্কৃতি সবই কোনো রকম টিকে আছে। প্রতিদিন বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। নতুন করে দেশে এলাকাভত্তিকি লকডাউন শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা করোনাভাইরাস পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে নেবে দীর্ঘসময়। একটি কার্যকরী ভ্যাকসিনের দিকে তাকিয়ে আছে পুরো বিশ্ব। করোনাভাইরাসের গতিবিধি এবং আমাদের সচেতনতা তথা আচরণের ভিত্তিতে বলা যায় এ দেশকে করোনাভাইরাস নিয়েই চলতে হবে লম্বা একটা সময়। আর তাই বর্তমানের এই পরিবর্তীত জীবনধারাকেই মেনে নিতে হবে। জীবিকার প্রয়োজনে কাজে যেতে হবে, কেননা জীবন এবং জীবিকা – এ দুটোই নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত। চিকিৎসা-বিজ্ঞানে বহুল প্রচলিত প্রবাদটি হলো 'Prevention is better than cure'। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সামাজিক প্রতিষেধকের চেয়ে বেশি কার্যকরী কোনো পন্থা এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। কিন্তু কোনোভাবেই সাধারণ মানুষকে বোঝানো যাচ্ছে না এ বিষয়টি।
স্বাস্থ্যখাতে এরই মধ্যে বাংলাদেশের অর্জন অনেকখানি। নির্ধারিত সময়ের আগেই MDG অর্জন করে বাংলাদেশ এখন SDG অর্জনের পথে। ইউনিভার্সাল হেলথ কেয়ার কাভারেজ চালুর প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। অথচ প্রাইমারি হেলথ কেয়ার এর গুরুত্বপূর্ণ উপাদানটি অনুপস্থিত। করোনাভাইরাস মহামারীর এই এ দুঃসময়ে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টের অভাব দেশে দারুণভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। বর্তমান সরকারের সময় অনেক ডাক্তার, নার্স, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ পেলেও হাসপাতালে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট নিয়োগের বিষয়টি ঝুলে আছে।
অন্যদিকে চিকিৎসাসেবায় চলছে তুঘলকি কাণ্ড। করোনাভাইরা পরস্থিতিতে এটি আরো প্রকট হয়ে উঠেছে। কোনো নিয়ম নীতি মেনে দেয়া হচ্ছে না চিকিৎসাসেবা। একরকম নিজের মনগড়া চিকিৎসা চলছে প্রায় সর্বত্র। গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টের অভাবেই এমনটি হচ্ছে। বেশিরভাগ দেশে এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা এবং নেপালেও চিকিৎসাসেবায় গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট কাজ করছে। আমরা এখনো র্পযন্ত স্বাস্থ্যসেবায় গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট নিয়োগ করতে পারিনি। আসলে চিকিৎসাসেবা বিষয়টি আমরা সঠিকভাবে সংজ্ঞায়িত করতে পারিনি, আর সে কারণে এটি আমাদের দেশে মারাত্মকভাবে অবহেলিত। এক্ষেত্রে আমরা শুধু বুঝি ডাক্তার আর নার্স – যারা প্রয়োজনীয় সেবা দিতে যথেষ্ট। এই ভ্রান্ত ধারণা নিয়েই চলছে স্বাস্থ্যসেবার তথাকথিত উন্নয়ন। গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টকে অবশ্যই এ প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
বাংলাদেশে নিবন্ধিত এবং অনিবন্ধিত ফার্মেসির সংখ্যা দুই লক্ষাধিক। অদক্ষ, অশিক্ষিত সেলসম্যান দিয়ে জীবন রক্ষাকারী ওষুধের বিক্রয়/বিতরণ চলছে অবাধে। নেই কোনো কার্যকরী নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। মানহীন, ভেজাল ওষুধ গ্রহণের মাধ্যমে যেমন বাড়ছে মানুষের দুর্ভোগ, তেমনি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে জনস্বাস্থ্য। একজন গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্টই কেবল চিকিৎসাসেবার মানকে নিশ্চিত করতে পারে। তাই চালুকৃত "মডেল ফার্মেসি" কনসেপ্ট প্রতিষ্ঠিত করার ব্যাপারে ওষুধ প্রশাসন এবং কেমিস্ট অ্যাসোসিয়েশনকে একযোগে কাজ করতে হবে। এটি প্রতিষ্ঠিত হলে আজ সমগ্র দেশে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সম্মুখ যোদ্ধা হিসেবে কাজ করতে পারত ফার্মাসিস্টরা – যা উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে পরিলক্ষিত হচ্ছে। প্রয়োজন অনুযায়ী দেশে প্রতিটি কমিউনিটিতে এক বা একাধিক কমিউনিটি ফার্মেসি স্থাপন করে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টের অধীনে চিকিৎসাসেবা দেয়া যেতে পারে। যেহেতু রোগীরা সবসময় ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে পারে না, তাই সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে একজন গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টের সাথে পরামর্শ সাপেক্ষে সমস্যার যথাযথ সমাধান করতে পারে। একজন সাধারণ সেলসম্যান বা বি-গ্রেড/সি-গ্রেড ফার্মাসিস্টের কাছ থেকে কোনো চিকিৎসা পরামর্শ গ্রহণ করা অত্যন্ত বিপজ্জনক, যা মৃত্যুও ডেকে আনতে পারে। আজ করোনার প্রভাবে দেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিপর্যস্ত। সাধারণ মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত। এ অবস্থায় করণীয় স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে জনগণ পুরোপুরি ওয়াকিবহাল না। অনেক ক্ষেত্রে সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে রোগীরা ডাক্তারের কাছে যেতেও পারছে না। এ অবস্থায় কমিউনিটি ফার্মাসিস্ট সচেতনতা তৈরি এবং সাধারণ চিকিৎসা সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারত।
বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশের সম্মান অর্জন করেছে। উন্নয়নের অনেকগুলো সূচক এখন ঊর্ধ্বমুখী তাই স্বাস্থ্যসেবাকেও এগিয়ে নিতে হবে। কর্মক্ষম দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরির লক্ষ্যে এবং যথাযথ ওষুধের ব্যবহার নিশ্চিতকরণে সকল হাসপাতালে গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্ট নিয়োগের কোনো বিকল্প নেই। অন্যদিকে কমিউনিটি ফার্মেসি চালুর মাধ্যমে ওষুধের অবাঞ্ছিত ব্যবহার বন্ধ করে সঠিক এবং কার্যকরী চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব যা সুস্থ জাতি গঠনে অপরিহার্য।