Published : 14 Jun 2020, 03:29 PM
মোহাম্মদ নাসিম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের এক যোদ্ধার নাম। তার পিতা জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর মতোই রাজনীতির দুঃসময়ে তিনি কখনই পিছু হটেননি। নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে রাজপথে থেকেছেন, জেল জুলুম অত্যাচার সহ্য করেছেন কিন্তু মুহূর্তের জন্যও নেতৃত্বের সাথে বেইমানি করেননি। এই অসম্ভব সাহসী মোহাম্মদ নাসিমের প্রস্থান বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি এবং ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্য একটি কান্নার দিন।
গত বছরের শুরুতে বড় ভাই সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের অকাল মৃত্যুর পর যখন সব ছেড়ে পঁচিশ বছরের ইংল্যান্ডের পাট চুকিয়ে চিরদিনের মত ঢাকা চলে এলাম, তখন এক কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন হলাম। যাদের ভাবতাম আমাদের পরিবারের শুভাকাঙ্ক্ষী, বড় ভাই সৈয়দ আশরাফের ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহযাদ্ধা তাদের অনেকের কাছ থেকে সৌজন্যের হাসিটুকুও পাইনি। যদিও তখন আমি একজন নির্বাচিত সংসদ সদস্য, একটি ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান, অতি জনপ্রিয় সদ্যপ্রয়াত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বোন, কিন্তু তা সত্ত্বেও অপরিচিত মুখ হওয়ায় আর সাথে কোনো জাঁদরেল পিএস, এপিএস বা পিএ না থাকায় অনেক পাবলিক প্রোগ্রামে বা পার্টির প্রোগ্রামে যেয়ে ঠেলা ধাক্কায় পেরে উঠতাম না।
অনেকেই বলেছে – আপনাকে দিয়ে কিছু হবে না। শুধু যখন আমার নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে যাওয়ার সুযোগ পেতাম, নেত্রী যখন চোখে চোখ রেখে একটু হাসতেন, আশ্বস্ত হতাম। মনে হতো মাথার ওপর আপার ছায়াটি প্রবল শক্তি আর বিশ্বাসের পরম মমতায় জড়িয়ে আছে। একই সাথে আমার নির্বাচনী এলাকা কিশোরগঞ্জ সদর ও হোসেনপুরের সাধারণ জনগণের অকৃত্রিম ভালোবাসা আমাকে চলার শক্তি যোগাতো।
নয় মাস পরের কথায় আসি, নভেম্বর মাস চলে আসছে, ৩রা নভেম্বরে জাতীয় চার নেতার মৃত্যুবার্ষিকী। ভাবছি কি করব? এমনি এক ভাবনা থেকেই নাসিম ভাইকে ফোন করলাম আর আবদার করেই বললাম- নাসিম ভাই ৩রা নভেম্বর আপনার সাথে আপনার গাড়ীতে করে আমি যাব। এক কথায় রাজী হয়ে গেলেন। তারপর পরম মমতায় আর আপন বড় ভাইয়ের স্নেহে ৩রা নভেম্বর ২০১৯ ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত উনার পাশে বসে ৩২ নম্বরে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে বনানী গোরস্থানে গেলাম। টুকটাক অনেক কথা হলো, আশ্বস্ত করলেন রাজনীতির ব্যাপারে। নাসিম ভাই, আপনার অভাব পূরণ হবার নয়। দেশকে অনেক দিয়েছেন। আপনি ভালো থাকবেন পরপারে – প্রাণভরে আল্লাহর কাছে এই দোয়াই করি।