Published : 27 Aug 2019, 07:34 PM
রোহিঙ্গারা যখন কাতারে কাতারে ঢুকছিল কি আবেগ আমাদের। আমি বিস্ময়ের সাথে দেখছিলাম মিডিয়াও তার জায়গা ধরে রাখতে পারে নি। বিশেষত টিভি মিডিয়ায় কয়েকজনের আচরণ দেখে মনে হয়েছিল আমরা যেন রোহিঙ্গাদের আগমনের জন্য সবুর করে বসে ছিলাম। সাধারণ মানুষ নামে পরিচিত কিছু অজ্ঞ মুর্খ ধর্মীয় জোশে এদের মেয়েদের বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে উঠেছিল। আর কেউ কেউ গান কবিতা লিখে সে কি আহাজারী!
দেশের শীর্ষ পর্যায়েও ছিলো সহানুভূতির ঢল। আমি বলছি না আমাদের অমানবিক হতে হবে। বরং তাদের জায়গা দিয়ে আমরা মানবিকতার পরিচয় দিয়েছি। কিন্তু কেউ একবারও ভাবলো না আমাদের একাত্তর আর মিয়ানমার খেদানো রোহিঙ্গা সমস্যা কি এক? কোন কোন টিভি চ্যানেলে কয়েকদিন ধরে শিবিরে ঘুরে তাদের নবজাতক সন্তান নিয়ে সে কি মহানুভবতা। এসব শিশু নিস্পাপ । তাদের কোন দোষ নাই। কিন্তু আমরা কি করলাম? আমরা এসব বাচ্চাদের নাম রাখতে চাইলাম 'জয় বাংলা'। কোথায় এখন সে সব অত্যুৎসাহী লোকজন?
রোহিঙ্গাদের আগমন আর আমাদের পালিয়ে যাওয়া এক না। আমরা গিয়েছিলাম আবার স্বাধীন দেশে ফিরে আসতে। আমাদের ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মত মহান নেতা। ছিলেন তাজউদ্দীন ও সৈয়দ নজরুল । আমরা খালি হাতে গেলেও আমাদের ট্রেনিং বা অস্ত্রের জোগাড় হয়েছিল। কারণ আমরা স্বাধীন দেশের জন্য মরিয়া হয়ে গিয়েছিলাম। এসব রোহিঙ্গারা কেবলই শরণার্থী। বদলে যাওয়া দুনিয়ায় এদের দায় কেউ নেবে না। মিয়ানমার এখন খেলছে। আর আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়ছি। সবার ওপর এসব রোহিঙ্গারা লেখাপড়া আর সব মিলিয়ে একেবারে অন্যধরণের। তারা আমাদের দেশে এসে আমাদের ওপর খবরাদারী করছে। গায়ে হাত তুলছে। ইচ্ছেমত পরিবেশ নষ্ট করছে। আবেগ এখন বেগ হয়ে গেছে তাই তাদের কিভাবে পাঠাবে তাই নিয়ে দেখলাম দুশ্চিন্তার শেষ নাই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা ও কাজে মিল আছে বলেই মানুষ তাকে পছন্দ করে। একসময় কত গল্প কত ধরনের বিরোধিতা- মনে হতে লাগলো খালেদা জিয়াই যেন এদেশের একমাত্র নারী নেতা। এমনও হয়েছিল তাকে একক মনে করে অনেক সুধীজনও সেদিকে গা ভাসিয়েছিলেন। আজ তারা যেমন আস্তাকুঁড়ে তেমনি খালেদা জিয়াও আছেন বিপাকে। শেখ হাসিনার উত্তরণ ও গৌরবের মূল নির্মাতা তার কাজ। এত কাজ যে একজন মানবী করতে পারেন তা তাকে না জানলে বিশ্বাস করা কঠিন। আমাদের মত দেশে সবকিছু সহজে করা যায় না। যতো মানুষ, ততো মত। রাজনীতি সমাজনীতি কোথাও কোন ঐক্যমত নাই। আছে বিরোধিতা আর সমালোচনা। তাকে যারা একদা নিন্দা আর বিরোধিতা করতেন তারা তলে তলে ঘোঁট পাকালেও ওপরে মুখে কুলুপ। এই কুলুপ এঁটে দিয়েছে শেখ হাসিনার অর্জিত গৌরব। বলছিলাম তিনি যা বলেন তাই করেন।
আজ দেখলাম তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছেন, পাশের দেশ মিয়ানমারের সাথে আমরা দুশমনি চাইনা। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখার ওপর জোর দিয়েছেন তিনি। তার কথা সোজা সাপটা। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে মানবিক কারণে। দশ লাখের মতো শরণার্থী আমাদের দেশের ওপর চেপে বসে আছে। এই মানবিকতা কত দিন দেখানো যাবে বা কবে এর সুরাহা হবে সে বিষয়ে তিনি অবশ্য কিছু বলেননি।
আন্তর্জাতিক ফোরাম ও দেশগুলো কথায় চিড়ে ভেজানোর চেষ্টা করছে বটে, বাস্তবে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা প্রভাবিত সরকার এতে টলেনি। তারা যে গায়ের জোরে চলে এটা নানা ভাবে স্পষ্ট। প্রধানমন্ত্রী অবশ্য একটা কথা জোর দিয়ে বলেছেন, আমরা শান্তি ও বন্ধুত্ব চাই বটে তবে হুমকি আসলে তা মোকাবেলার কাজ করা হবে সঠিক সময়ে। এটাই চাই আমরা। সরাসরি না হলেও নানাভাবে আমাদের চাপে রেখেছে মগের মুল্লুক। এটা চলতে দেয়া যায় না।
তারা এমন কোনও দেশ না যে তাদের ভয়ে দুনিয়া গুটিয়ে বসে আছে বা থাকবে। বরং ঠিকভাবে মোকাবেলা আর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে লবিং ঠিক রাখলে আমরাই জয়ী হবো। প্রধানমন্ত্রীকে প্রবাসী বাংলাদেশী হিসেবে একথা বলতে পারি, পৃথিবীর নানাপ্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশিরা দেশের পাশে দাঁড়াতে কখনো বিলম্ব করবে না। সাথে আছে ষোল কোটি জনগণ। মুক্তিযুদ্ধের দেশ কারো লাল চোখ বা হুমকিকে ভয় পায় না। বঙ্গবন্ধু কন্যা যা বলেন নিশ্চয়ই তা পালন করেন। হুমকির জবাব দিতে তো হবেই সাথে চাই আর কোন সমস্যা তৈরি করতে না পারার গ্যারান্টি। বাংলাদেশ অজেয় তাকে দাবানোর সাহস রাখে না কেউ।
তাই এখন আমাদের একটাই জিজ্ঞাসা এরা কি যাবে? যদি না যায় তাহলে বিকল্প কী? প্রতিকার কোথায়? আমরা খবরে দেখলাম ভারতও নাকি চাইছে তারা ফিরে যাক। তো ভারতের কথা কেন? আমরা কি ভারত বললে ফেরত দেব? না তারা বললে মিয়ানমার তাদের ফিরিয়ে নেবে? আসলে আন্তর্জাতিক রাজনীতির কূটচালে আমরা পড়ে গেছি ফাঁদে। হয়তো নিন্দুকদের কথাই ঠিক। যারা আমদের এটা ওটা দেবে বলে বশ করেছিল তারা এখন ভিন্ন কথা বলছে।
এদিকে ঘাড়ের কাছে চীন। তারা কি চায় সেটাও বুঝতে হবে। সবাই জানি মিয়ানমার কিন্তু বড় একরোখা সমাজের দেশ। দীর্ঘকাল সামরিক শাসন এদের মানুষদের বোধবুদ্ধিকে এমন ভাবে আঘাত করেছে তারা তাদের সেনাবাহিনীর বাইরে কিছু ভাবতেই পারে না। আমরা যুদ্ধ করতে চাইনা। করে লাভও নাই।
বাংলাদেশের নিরীহ জনগণ ভালোভাবে বাঁচার জন্য এ সমস্যার সমাধান চায়। কারণ এরা বংশ বিস্তারসহ এখন দেশের আনাচেকানাচে ছড়িয়ে পড়েছে। এদের রোখা না গেলে পরিবেশতো যাবেই দেশের উন্নয়নও যাবে রসাতলে। তা ছাড়া বছরের পর বছর তাদের কে খাওয়াবে? আবেগে তো পেট ভরবে না। জনগনের কষ্টের টাকায় রোহিঙ্গা পোষার রাজনীতি কবে শেষ হবে?
সবকিছুর একটা মেয়াদ থাকে। মেয়াদোত্তীর্ণ রোহিঙ্গারা কিন্তু বিষবৎ হতে বাধ্য। এটা জানার পরও সতের কোটি মানুষের দেশে তাদের পেলে পুষে আদরে রেখে মাদকের ব্যবসা, যৌনতা, পরিবেশ নিধনের ফল কি হবে সবাই বোঝেন। অচিরেই তাদের প্রত্যাবর্তন জরুরি। তা না হলে সময়ও ছেড়ে কথা বলবে না। খবরে দেখলাম- তারা বলছে যাবে না।
যাবে কেন? মোবাইল দিলেন, খাবার দিলেন, থাকতে দিলেন।বংশবিস্তার করার সুযোগ দিলেন। কেন যাবে? শোডাউন বলে দিচ্ছে না তাড়ালে তারা যাবে না।