Published : 06 Mar 2011, 10:33 PM
গত ২৫শে ফেব্রুয়ারী আয়ারল্যান্ডের সাথে প্রায় হেরে বসা এক ম্যাচ দুর্দান্তভাবে জিতে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা সমগ্র জাতিকে যে বিমল আনন্দ আর গর্ব করার মত উপলক্ষ এনে দিয়েছিল, এর ঠিক এক সপ্তাহ পরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে জঘন্যভাবে হেরে গোটা দেশকে করেছে বিষাদমলিন আর দুঃখভারাতুর। ঐ ১১জন ক্রিকেটারের সাথে আসলে আমরা ষোল কোটি জনগোষ্ঠির সকলেই হেরেছি, ক্রিকেটারদের অমার্জনীয় ব্যর্থতার ভার বহন করেছি সকলেই। ঘরের মাটিতে প্রথম বিশ্বকাপ নিয়ে আমাদের আবেগ যে আকাশে উঠেছিল, তা ধুলোয় নেমে আসতে বেশি সময় নেয়নি। স্বপ্ন হয়ে উঠেছে দুঃস্বপ্ন। আয়ারল্যান্ডের সাথে জয়ের সময় দেখেছি যিনি জীবনে ক্রিকেট দেখেন নি, তিনিও আনন্দে লাফিয়ে উঠছেন, জীবনে প্রথম খেলাটিকে ভালবাসছেন। যে ক্রিকেট নিয়ে আমরা এত মাতোয়ারা হয়ে ছিলাম, সেই ক্রিকেটই আমাদের দিল মৃতপুরীর অভিজ্ঞতা। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে নেমে এসেছিল শশ্মানভূমির নীরবতা, পুরো বাংলাদেশ তখন শোকে স্তব্ধ, লজ্জায় অবনত। অথচ সেদিন দুপুরেই খেলা শুরু হবার আগে দেখেছি মানুষ কী প্রচণ্ড আবেগ নিয়ে খেলা দেখতে যাচ্ছে। প্রায় প্রত্যেকের পরনে জাতীয়দলের লাল-সবুজ জার্সী, গালে-মুখে আঁকা বাঘের বা স্বদেশের ছবি, মাথায় ফেস্টুন, হাতে জাতীয় পতাকা। সমর্থকদের আবেগের পারদ এত দ্রুত নিচে নেমে এসেছে যে তা সাম্প্রতিক কালের ধস নামা শেয়ার বাজারকেও হার মানিয়েছে। মানুষ কেবল শোকগ্রস্থ হয়নি, তারা অপমানিত বোধ করেছে। যে খেলা গড়ানোর কথা রাত্রির মধ্যযামের কাছাকাছি না হলেও অনেকদূর পর্যন্ত, তা কিনা শেষ হয়ে গেল সন্ধ্যা নামার আগেই, ৫:১০ মিনিটে? ফ্লাড লাইটগুলো পর্যন্ত জ্বলে ওঠার সময় পায়নি, তার আগেই ম্যাচ শেষ!
ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে বাংলাদেশের ম্যাচটি দু'দলের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এবারের বিশ্বকাপের দু'টি গ্রুপের মাঝে অপেক্ষাকৃত কঠিন বি গ্রুপের এই ম্যাচ ছিল কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার টিকেটের মত। খেলায় হারজিত আছে সত্যি, হার হতেই পারে, তাই বলে এভাবে? তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে গেল বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন-আপ, নাকি তাসের ঘরও এত দ্রুততায় ভাঙ্গে না? মনে হল ব্যাটিং বলে আমাদের কিছু নেই, দশজন ব্যাটসম্যানের ভিতর একজনও দাঁড়াতে পারবে না, একটি জুটি গড়ে উঠবে না, একথা কি মানা যায়? এইতো সেদিন আয়ারল্যান্ডের কেভিন ও'ব্রায়েন দাঁড়িয়ে গেলেন। পুরনো শত্রু ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ছিনিয়ে আনলেন এক অবিশ্বাস্য জয়। তিনি যখন ক্রিজে এসেছিলেন তখন ১১১ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে আয়ারল্যান্ড ধুঁকছে, কেননা জয়ের জন্য তখনো প্রয়োজন ছিল অনতিক্রম্য ২১৭ রান। মাত্র ৬৩ বলে ১২৩ রানের, কী বলব, একটি টর্নেডো ইনিংস খেললেন, নাকি একটি আইরিশ রূপকথা লিখলেন ক্রিকেট ব্যাটে? ৩২৮ রানের পাহাড়ে চড়ে জয় ছিনিয়ে এনে তিনি হয়ে গেলেন জাতীয় বীর। দুঃখ যে আমাদের একজনও এই সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করতে পারলো না, না দেশের জন্য, না নিজের জন্য। ১৯৮৩'র বিশ্বকাপে নবাগত জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে কপিল দেবের মহাকাব্যিক হার না মানা ১৭৫ রানের ইনিংস তো তাকে ক্রিকেটের ইতিহাসেই অমর করে রেখেছে, হারতে হারতে বেঁচে গিয়েছিল ভারত আর পরবর্তীতে জয় করেছিল প্রুডেন্সিয়াল বিশ্বকাপ ট্রফি। কপিল ক্রিজে এসেছিল যখন ১৮ রানে শীর্ষ পাঁচ ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে ভারত রীতিমত কাঁপছিল। যুদ্ধক্ষেত্র যেমন বীর তৈরির সুযোগ করে দেয়, খেলাও তেমনি।
তাহলে আমাদের ক্রিকেটাররা কি কিছুই শেখে না? একজন আউট হলে কেন শোক মিছিলের মত বাকি সকলের ক্রিজে আসা-যাওয়ার মিছিল তৈরি হয়ে যায়? তাদের এত প্রাকটিস, এত গেম প্ল্যান, এত স্ট্রাটেজি কেন কোন কাজেই আসে না? ফার্স্ট বলের বিপরীতে খেলার আমাদের চিরন্তন দুর্বলতা নগ্নভাবে বেরিয়ে পড়ল। এই দুর্বলতা জানে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল, তারা সে স্ট্রাটেজিই নিয়েছিল। তাই বলে আমাদের ব্যাটসম্যানরা স্পিনও খেলতে পারবেনা? ৪ উইকেট নিয়ে সুলেমান বেন বাংলাদেশের লেজটা মুড়ে দিয়ে হয়ে যান ম্যাচের সেরা খেলোয়ার। শেষবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে সে দেশের মাটিতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইট ওয়াশ করেছিল বাংলাদেশ। সে দলটি অবশ্য ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বি টিম। পারিশ্রমিক নিয়ে বোর্ডের সাথে বিবাদ থাকায় প্রথম দলটি বিদ্রোহ ঘোষনা করেছিল। ক্ষিপ্ত বোর্ড তখন তাদের সবাইকে বহিষ্কার করে একটি বি টিম নির্বাচিত করেছিল। সে সুযোগে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাদেরই মাটিতে হারিয়ে বাংলাদেশ রচনা করেছিল ইতিহাস । একদা ক্রিকেট বিশ্বের পরাক্রমশালী দেশের জন্য তা ছিল ভয়ঙ্কর অপমানের। তারা তেতে ছিল তখন থেকেই। অপমানের প্রতিশোধ নেবার জন্য বিশ্বকাপের চেয়ে ভাল মঞ্চ আর কী হতে পারে, বিশেষ করে দু'দলই যখন পরবর্তী রাউন্ডে উত্তীর্ণ হবার জন্য মরীয়া, এবং বিভিন্ন হিসাব-নিকাশে ব্যস্ত? তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজও ভাবেনি এমন সহজে তারা জিতবে। তাদের অধিনায়ক ড্যারেন সামিও তাই বলেছেন সংবাদ সম্মেলনে। আসলে তারাও হতাশ, কেননা খেলাতো জমেই ওঠেনি। তের ওভার শেষ হবার আগেই ম্যাচ শেষ হলে কার ভাল লাগে? তখন জয়কে আর জয় বলে মনে হয়না, মনে হয় অনুদান বা দয়া। বাংলাদেশতো আসলে ম্যাচটি উপহারই দিয়ে এসেছে প্রতিপক্ষকে।
এখন আমাদেরকে নিয়ে ক্রিকেট বিশ্বে হাসাহাসি হবে, ধারাভাষ্যকাররা নেতিবাচক বিশেষনের ভাণ্ডার উজার করে দিবেন, বিশ্লেষকরা খুঁজতে থাকবেন তলানীর দিকের উদাহরণ। ৫৮ রানে অলআউট ছিল এবারের বিশ্বকাপের সর্বনিম্ম রান, আর সব মিলিয়ে বিশ্বকাপের চতুর্থ সর্বনিম্ম স্কোর। মিডিয়া ক্রিকেটারদের তুলোধুনো করবে। এই মিডিয়াই তাদের হিরো বানায়, ব্যর্থ হলে জিরো বানাতেও সময় নেয় না। না জানি বিরোধী দল এর মাঝে সরকারের দেশ পরিচালনার ব্যর্থতা আবিষ্কার না করে বসেন। ভারতে ক্রিকেটাররা যে দেবতার মত ভক্তি পায়, তার অনেকটা কারণ মিডিয়া, বাকীটা ভারতের ক্রিকেটারদের পারফরমেন্সের ধারাবাহিকতা, যে ধারাবাহিকতার মারাত্মক অভাব আমাদের ক্রিকেটারদের মধ্যে। সাম্প্রতিক কালের সাকিব আল হাসান ছাড়া আমরা একজনও আর্ন্তজাতিক মানের খেলোয়ার তৈরি করতে পারিনি, যারা নিজেদের সামর্থ্যেই কিংবদন্তীর ক্রিকেটার হবে।
রাজনীতিতে বিরক্ত, অর্থনীতিতে হতাশ, সামাজিক অবক্ষয়ে শঙ্কাগ্রস্থ আমাদের দুঃখপ্রপীড়িত জনগোষ্ঠির জন্য ক্রিকেট নিয়ে এসেছে মাতোয়ারা হবার দারুণ উপলক্ষ। সাম্প্রতিক সময়ে ভাল খেলে জাতীয় ক্রিকেট দল বেশ কয়েকবার সে উপলক্ষ এনে দিয়েছে সত্যি। আগের একটি লেখায় লিখেছিলাম, 'ক্রিকেট হয়ে উঠতে পারে আমাদের জাতীয় ঐক্যেরও প্রতীক।' সত্যিই তাই। ক্রিকেটকে ঘিরে আমরা এক জাতি, এক দেশ হয়েছি, এখানে কোন দল, মত, বিশ্বাসের পার্থক্য নেই। বিভিন্ন ক্ষেত্রে হারতে হারতে আমরা যখন জাতি হিসেবে আত্মবিশ্বাস প্রায় হারিয়ে বসেছি, তখন ক্রিকেটের জয় আমাদের জাগিয়ে তুলেছে, আমরা ফিরে পেতে শুরু করেছি আত্মবিশ্বাস। একথা ভুললে চলবেনা আমাদের ক্রিকেটাররা অপেক্ষাকৃত তরুণ, খেলার শৈলী তাদের করায়ত্ত হলেও মাথা অপরিপক্ক। ক্রিকেট যতখানি দক্ষতার খেলা, ততখানিই মাথার। আমার ধারণা অনেক খেলা আমরা হেরে যাই মাথা খাটানোর অভাবে। আর অনেক খেলা হারার আগেই হেরে বসি মনঃস্তাত্ত্বিক কারণে। ষোল কোটি মানুষের বিপুল প্রত্যাশা তাদের উপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করেছে সত্যি, যে চাপে তারা সেদিন ভেঙ্গে পড়ল। অধিনায়ক সাকিব আর উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ইমরুল কায়েস আউট হলেন বলটিকে ড্রাইভ করবেন না ব্লক করবেন – এই দোটানায়। তিনজন ব্যাটসম্যান আউট হলেন অফস্ট্যাম্পের বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে। ব্যাটিং বিপর্যয়ের অমন পরিস্থিতিতে কেউ তা করতে পারে ভাবা কষ্টকর। ক্রিকেট ধারাভাষ্যকাররা হাসবেন না কাঁদবেন ভেবে পাননি। তাই আমি মনে করি ফিজিওর পাশাপাশি আমাদের দলের মনঃস্তত্ত্ববিদ ও মেডিটিশন গুরুও প্রয়োজন, যেমন আছে টিম অস্ট্রেলিয়ার।
আমাদের সমর্থকদের আবেগ আমাদের রাজনীতির মতই দুই বিপরীত মেরুর ভিতর দোদুল্যমান। ঘড়ির পেণ্ডুলামের মতই তারা একপাশ থেকে দুলে অন্যপ্রান্তে চলে যায়, মাঝে স্থির হতে পারে না। আজ ভালবাসা তো, কাল তীব্র ঘৃণা, আজ অনুরাগ তো কাল বিরাগ। আয়ারল্যান্ডের সাথে জয়লাভের পর বগুড়ায় মুশফিক ও শফিউলের বাড়িতে মিষ্টি নিয়ে হাজির হয়েছিল শহরবাসী। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে হারার পর যশোহরে সাকিবের বাড়িতে ঢিল পড়েছে। দুটোই বাড়াবাড়ি। প্রথম খেলায় পুরো দেশ মেতে উঠেছিল আনন্দে, নেচে গেয়ে মধ্যরাত পর্যন্ত মাতোয়ারা হয়েছিল রাজধানীসহ সারা দেশ। আর ৪ঠা মার্চ ছিল শোকের মাতম, মহরমের মিছিল। পোস্টার ছেঁড়া, প্লাকার্ড পোড়ানো, ঢিল ছোঁড়া আর খেলোয়ারদের জুতা দেখানোর ক্ষিপ্ত পাগলামী । সে ঢিল গিয়ে পড়েছে অতিথিদলের বাসে, ভাগ্যিস আইসিসি ব্যাপারটিকে উড়িয়ে দিয়েছে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে, নইলে আমাদের খুঁত ধরতে ওস্তাদ বিদেশীদের নিয়ে বিপদে পড়তে হত, বাকী ম্যাচগুলোর ভাগ্য ঝুলে পড়তে পারত।
ক্রিকেট যেমন খলনায়ক বানায়, তেমনি নায়ক হবার উপলক্ষ তৈরি করে দেয়। সেদিন যেমন দিল কেভিন ও'ব্রায়েনকে। কপিল দেব বিশ্বের সেরা পেসারদের একজন, তাঁর অনেক কীর্তি। কিন্তু আর কোন কীর্তি না গড়লেও উনিশশ্ তিরাশির বিশ্বকাপের ঐ অতিমানবীয় ইনিংস তাকে ভারতবাসীর হৃদয়ে চিরঅমলিন করে রাখত। বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারানো ম্যাচে মোহাম্মদ আশরাফুলের ৮৯ রানের অপরাজিত ইনিংসটি রাতারাতি তাকে বিখ্যাত করে তুলেছিল। ১৯৯৬ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে নবাগত এক ব্যাটসম্যান পাকিস্তানের ত্রাতা হয়ে উইলোকে তলোয়ার বানিয়ে যুদ্ধ জয় করেছিলেন। সেই তরুণটির নাম ইনজামামুল হক, যিনি পরবর্তীকালে পাকিস্তানের পক্ষে অনেক রেকর্ড গড়েছেন। লাহোরে তার অদম্য ও দক্ষতাপূর্ণ ব্যাটিংয়ের কৃতিত্বে বাংলাদেশ টেস্টে পাকিস্তানকে হারানোর একটি সুবর্ণ সুযোগ হাতে পেয়েও হারিয়ে ফেলেছিল। সেদিন যখন বাংলাদেশের খেলায় স্বল্প রানে বেশ ক'টি উইকেটের পতন ঘটল, তখন মিডল বা লোয়ার অর্ডারে কারো না কারো দাঁড়িয়ে যাবার, নায়ক হবার সুবর্ণ সুযোগ ছিল। দুঃখজনক যে বার্ড ফ্লুতে আক্রান্ত মুরগিদের মত সেই যে মড়ক লাগল আর কোন ব্যাটসম্যানই দাঁড়াতে পারলনা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের একমাত্র স্ট্রাইক বোলার কেমার রোচকে একটু দেখে শুনে খেললেই হতো। আমাদের চিন্তাশূন্য ব্যাটসম্যানরা নির্ভর করেন রহংঃরহপঃ-এর উপর, তাই তারা না বুঝেই ব্যাট চালালেন আর ড্যারেন সামির সাদামাটা পেস ও সলোমন বেনের নির্বিষ স্পিনে কুপোকাত হলেন। বলা হয় সেদিনটি আমাদের ছিল না। তাই বলে অমনভাবে মাথা এগিয়ে দিয়ে আত্মহত্যার উৎসবে না নামলেও চলত।
আমাদের এখনো যেটুকু আশা তা নিভুনিভু প্রদীপের মত, অনেক জটিল ক্রিকেটীয় হিসেব-নিকেষের দীর্ঘ টানেলের শেষে টিমটিম হয়ে জ্বলছে। কাগজে-কলমে নেদারল্যান্ডসকে আমাদের হারানোর কথা। কিন্তু শেষ ম্যাচে আমাদের আত্মবিশ্বাস যেরূপ মারাত্মকভাবে টলে উঠেছে, তাতে কী হয় বলা যায় না। শক্তির বিচারে ইংল্যান্ড বা দক্ষিন আফ্রিকার সাথে আমাদের পেড়ে ওঠার কথা নয়। তবে এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় আহত বাঘের মত যদি গর্জে উঠতে পারে সাকিব বাহিনী তবে অঘটন ঘটতে পারে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে লজ্জাজনক হারের পর অনেককে ক্রুদ্ধ হয়ে বলতে শুনেছি আসলে বাঘ নয়, বেড়াল। আমরা বিশ্বাস করতে চাই আমরা বাঘই, ফিরে পেতে চাই লুপ্ত মর্যাদা। ক্রিকেটকে বলা হয় মহান অনিশ্চিতের খেলা। তারপরেও আমরা যা দেখি তা হল ভাল দলগুলোর বিজয়, দুর্বল দলগুলোর পরাজয়। ভিডিওর কল্যাণে প্রতিপক্ষের খেলোয়ারদের শক্তি, দুর্বলতা সবই এখন বিশ্লেষন করা যায়, হচ্ছেও। দলের শক্তি ও সম্ভাবনা, মাঠের কন্ডিশন, টসভাগ্য, খেলার গতি ইত্যাদির চুলচেরা বিশ্লেষন চলতে থাকে প্রতিমুহূর্তে। আছেন বিশেষজ্ঞগণ ও থিঙ্ক ট্যাঙ্ক। কিন্ত সবই বিফলে যাবে যদি প্রয়োগ করা না যায়, পরিস্থিতি বুঝে খেলার মত সামর্থ্য না থাকে। ধারাবাহিকতার অভাবে ক্রিকেট হয়ে উঠেছে সেই অতিকায় হাতি যা আমাদের একবার আনন্দের আকাশে তুলে ধরে আর পরমুহূর্তেই আছড়ে ফেলে মাটিতে। আমরা এই চক্র থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। যে ক্রিকেট নিয়ে আমরা আশায় বুক বেঁধেছি, তা ধরে রাখতে হবে ক্রিকেটার, ক্রিকেট সংগঠকদের। যে খেলাটি আমাদের গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছে, দিয়েছে গর্বিত হবার উপলক্ষ, তাকে সমর্থন দেয়া ও পরিপুষ্ট করার জাতীয় দায়িত্ব সরকারের। দর্শকদের আচরণও সংযত হওয়া প্রয়োজন, তারা যদি শেয়ার বাজারের মত না বুঝেই হুজুগে মাতেন আর ঝাঁপিয়ে পড়েন অবাস্তব প্রত্যাশার আগুনে, তবে পুড়তে হবে হতাশায়। সকল হতাশা কাটিয়ে সাকিব বাহিনী জয়ের ধারায় ফিরে আসুক এ প্রত্যাশা আমাদের সকলের!