স্বর্ণ-রিজার্ভের বাধ্যবাধকতামুক্ত ফিয়াট ডলারকে যখন বিনিময়ের আন্তর্জাতিক একক করা হলো, তখন থেকে ডলারের মূল্য দিনরাত ওঠানামা করছে, অতিরিক্ত ডলার ছাপানো, নকল ডলার এবং আনুষঙ্গিক অন্য অনেক কারণে।
Published : 10 Apr 2023, 05:50 PM
সত্তর-আশির দশকে মাও সে তুংয়ের লাল বই পড়ার স্মৃতি যাদের মনে জাগরুক, তারা নিশ্চয়ই মনে করতে পারেন, সেই বইয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ‘কাগুজে বাঘ’ বলেছিলেন তিনি। এমন বাঘকে দেখতেই যা ভয়ঙ্কর দেখায়, আসলে এই বাঘ থেকে ভয়ের কিছু নেই। জল ছিটিয়ে দিলেই এমন ভয়ঙ্কর-দর্শন বাঘ চুপসে যায়।
এমন এক সময় ছিল, যখন নির্দিষ্ট পরিমাণ স্বর্ণ রিজার্ভ রেখে কাগজের টাকা ছাপা হতো। ১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট থেকে সেই বাধ্যবাধকতা আর নেই। এখন কাগজের টাকা ইচ্ছামতো ছাপানো যায়। এখনকার কাগুজে টাকা কাগুজে বাঘের মতোই। আমার এক বন্ধু যেমন বলে, আজকালকার টাকা পালং শাকের মতো, যত বেশিই মনে হোক, চুলায় দিয়ে ঢেকে দেবার কিছুক্ষণ পরেই দেখবেন, মজে এই একটুখানি হয়ে গেছে।
বাজারে যত টাকা প্রয়োজন, তার চেয়ে বেশি, অতিরিক্ত টাকা থাকা মুদ্রাস্ফীতির অন্যতম কারণ, যদিও একমাত্র কারণ নয়। কারণ যাই হোক, মুদ্রাস্ফীতির ফলে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়, টাকার দাম কমে যায়। টাকা কী? একটি বিশেষ সময়ের পণ্য আর সেবার মূল্য প্রকাশিত হয় টাকায়। যে পণ্য গতকাল ১ টাকায় কিনেছেন, আজ সেই পণ্য কিনতে যদি ১০ টাকা লাগে এবং সব পণ্যের ক্ষেত্রেই যদি এমন হয়, তবে বুঝতে হবে, মুদ্রাস্ফীতি চলছে।
নিউমার্কেটে আমি যে মুদি দোকান থেকে কেনাকাটা করি, তার মালিককে জিজ্ঞেস করেছিলাম: ‘ব্যাবসা কেমন চলছে?’ উত্তরে বললেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ! খুব ভালো চলছে। মাসের বাজার করতে আগে যার ৫,০০০ টাকা লাগতো, এখন তার ৮,০০০ টাকা লাগছে। আমার লাভ কিন্তু ইনশাল্লাহ আগের চেয়ে বেড়েছে!’ একই ভাবে করোনা মহামারী ও ইউক্রেন যুদ্ধে সারা পৃথিবীর ধনকুবের ও পুঁজিপতিদের সম্পদ দ্বিগুণ-ত্রিগুণ হয়ে গেছে। আপনার পকেট থেকে বের করা টাকায় বাড়বাড়ন্ত হয়েছে ওদের সম্পদ, তাতে সন্দেহ কী?
দরিদ্রকে বঞ্চনা, মধ্যবিত্তকে প্রবঞ্চনা এবং ধনীকে এই দুই কাজে প্রণোদনা এবং প্ররোচনা দেওয়া কেইনসীয় অর্থনীতি এবং বর্তমান যুগের যে কোনো সরকারের অন্যতম অপকর্ম। অর্থনীতিবিদ জন মেনার্ড কেইনস অর্থনৈতিক মন্দা কাটাতে সরকারকে টাকা ঢালতে বুদ্ধি দিয়েছিলেন, যেন মানুষ সেই টাকা নিয়ে কেনাকাটা করে আর ভোগ বাড়ায়। কেন এটাকে অপকর্ম বলছি? একদিকে আপনার সঞ্চয় কমে গিয়ে দেশের মূলধন কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে আপনার পকেটকাটা টাকার বেশির ভাগ বিদেশে পাচার হচ্ছে, দেশে পুনর্বিনিয়োগ হচ্ছে না। টাকা পুনর্বিনিয়োগ না হওয়া মানে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাচ্ছে না। কর্মসংস্থান না হওয়া মানে মানুষের ক্রমক্ষমতা কমে যাচ্ছে, যার ফলে টাকার হাতবদল কম হয়ে নতুন মূলধন গঠিত হচ্ছে না। বিদেশে পাচার হওয়া টাকার একটি অংশ কোনো অফশোর ব্যাংকে অলস পড়ে আছে, কিংবা দুবাইয়ের মতো এমন জায়গায় বিনিয়োগ হচ্ছে, যে বিনিয়োগ আগে পরে জলে যাবে।
বর্তমান অর্থব্যবস্থাকে যদি জলে নিমজ্জিত অদৃশ্য হিমশৈলের সঙ্গে তুলনা করা হয়, তবে কাগজের টাকা বা মুদ্রা হচ্ছে সেই হিমশৈলের দৃশ্যমান বা সাকার অংশ মাত্র। একটি হিমশৈলের কতটা অংশ দৃশ্যমান হতে পারে, পদার্থবিদ্যায় নিশ্চয়ই তার একটা হিসাব আছে, ঠিক যেভাবে একটি ভবন একশ তলা উঁচু করতে হলে তার ভিত্তি কতটা প্রসারিত ও গভীরগামী হতে হবে, তারও একটি হিসাব থাকে। হিমশৈলের দৃশ্যমান অংশ যদি কৃত্রিমভাবে দৈর্ঘে বা প্রস্থে বৃদ্ধি করা হয়, তবে জলে নিমজ্জিত অদৃশ্য ভিত্তির সমর্থন হারিয়ে চূড়াটা ভেঙে পড়ার কথা, ঠিক যেভাবে ভিত্তির প্রসারণ এবং গভীরগামিতাকে হিসেবের মধ্যে না নিয়ে ভবনের উচ্চতা অতিরিক্ত বৃদ্ধি করলে আকাশচুম্বি ভবনও হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ার কথা।
একটি নির্দিষ্ট অর্থব্যবস্থায় কাগজের টাকা বা মুদ্রার একটা কাম্য পরিমাণ থাকার কথা। অতিরিক্ত ছেপে ফেললে টাকার দাম কমে যায়, কারণ প্রথমত, সেই টাকা আর প্রকৃত লেনদেনভিত্তিক অর্থনীতির প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না এবং দ্বিতীয়ত, টাকার চাহিদার তুলনায় টাকার সরবরাহ যদি বেশি হয়, তবে সেক্ষেত্রেও টাকার ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়। বাজারে পণ্য সরবরাহ কম হলে পণ্যের দাম বাড়ার কথা। কিন্তু কাম্য পরিমাণের চেয়ে বেশি টাকা যদি বাজারে থাকে, তবে চাহিদা ও সরবরাহের স্বাভাবিক নিয়মে টাকার মূল্য স্থির হতে পারে না।
ধরা যাক, বাজারে রুটির সরবরাহ কমে গিয়ে যে রুটির আগে ১০ টাকা ছিল, সেটার দাম হয়ে গেলো দ্বিগুণ অর্থাৎ ২০ টাকা। যদি অন্যান্য অবস্থা অপরিবর্তিত থাকে, তবে মানুষ ভোগ কমিয়ে দেবে, রুটি কম বিক্রি হবে, মুদ্রার হাতবদলও কমে যাবে। এই পরিস্থিতিতে কোনো কারণে সরকার বাহাদুর যদি অতিরিক্ত টাকা ছেপে বাজারে ছড়িয়ে দেয় কোনো রিজার্ভ ছাড়াই, তবে নোটের উপর ২০ লেখা থাকলেও সেটার দাম ২০ টাকা হবে না, ধরা যাক, এর দাম হবে ১৫ টাকা বা ১০ টাকা। রুটিবিক্রেতা রুটি বিক্রি করে যে ২০ টাকা পাবে, সেটা দিয়ে সে ময়দা কিনতে গেলে আগের ২০ টাকার ময়দা কিন্তু সে পাবে না, হয়তো পাবে ১৫ বা ১০ টাকার ময়দা। রুটিবিক্রেতার তখন আক্কেল হবে এবং দ্বিতীয়বার সে রুটির দাম আরও বাড়িয়ে দেবে, কারণ তা না হল তাকে লোকসান গুনতে হবে। এভাবেই টাকার দাম কমে যাবে এবং জিনিসের দাম বেড়ে চলবে। এরই নাম ‘মুদ্রাস্ফীতি’।
ঠিক এই ব্যাপারটাই ঘটেছিল পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের শেষ পর্বে। স্বর্ণের অভাবে রোমান সম্রাটেরা ভেজাল মুদ্রা চালু করার করেছিল। ধরা যাক, মুদ্রার উপরে লেখা ছিল এক দিনার, কিন্তু তাতে স্বর্ণ ছিল এক দিনারে যতটুকু থাকার কথা তার চার ভাগের এক ভাগ। সম্রাটের পক্ষে এই ভেজাল মুদ্রা দিয়ে অল্প স্বর্ণে বহু সৈন্যের বেতন দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল বটে, কিন্তু মানুষ অল্পদিনেই বুঝে গিয়েছিল, ‘সেই রামও নাই, সেই অযোধ্যাও নাই’। সেই রোমও নাই, সেই দিনারও নাই। সম্রাটের এই অপকর্মের ফলে অর্থনীতি দুর্বল হয়ে কিছু দিনের মধ্যেই পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্য ধসে পড়েছিল। পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের সম্রাটেরা তাদের মুদ্রা বিজ্যান্ট-এ এই দুই নম্বরী করেননি বলে এই সাম্রাজ্য আরও হাজার বছর টিকেছিল।
কিন্তু কীভাবে জানা যাবে, কী পরিমাণ টাকা না ছাপলেই নয়? অন্যভাবে বললে, কোনো অর্থনীতিতে কাগজের টাকার কাম্য পরিমাণ কত, কিংবা কতটা কাগজের টাকা থাকা উচিত বাজারে, কীভাবে তা জানা যাবে? ইউরোপের পুনর্জাগরণের যুগে (১৫০০-১৬০০) অর্থনীতি যেভাবে ফুলেফেঁপে উঠছিল, সেই পরিমাণ স্বর্ণমুদ্রা বাজারে ছিল না। স্প্যানিশ-পর্তুগিজেরা আমেরিকায় গিয়ে প্রচুর পরিমাণ স্বর্ণ নিয়ে আসাতে এই সমস্যার অনেকটাই সমাধান হয়েছিল। আবার তিরিশের দশকে স্বর্ণরিজার্ভকে পাশ কাটিয়ে অতিরিক্ত ডলার ছাপানোতে ডলারের ক্রয়ক্ষমতা কমে মন্দার সৃষ্টি হয়েছিল। স্বর্ণ রিজার্ভ পুরোপুরি বাতিল করে সত্তরের দশক থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অতিরিক্ত ডলার ছাপানোতে সারা পৃথিবীতে মুদ্রস্ফীতির ঘোড়া লাগামহীন ছুটেই চলেছে।
তিরিশের দশকে রাশিয়ায় ট্রটস্কি এবং ষাটের দশক থেকে অস্ট্রীয় ঘরানার অর্থনীতিবিদেরা বলে আসছেন, সরবরাহ বাড়ে না এমন একটি বস্তুকে রিজার্ভ হিসেবে ব্যবহার করে টাকা ছাপালে টাকার দাম বাড়বে এবং এমন একটি অর্থব্যবস্থা সমাজ ও রাষ্ট্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। রিজার্ভ জিনিসটা আসলে কী? আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, দর্জিরা পাজামা বা ফতুয়া বানানোর প্রয়োজনে মাপ নেবার সময় ‘গজ’ বা ‘মাপকাঠি’ ব্যবহার করে। গজের এক দিকে থাকে সেন্টিমিটার, আরেকদিকে থাকে ইঞ্চির মাপ। সেন্টিমিটার বা ইঞ্চি– এই দুইয়েরই মাপ স্থান-কাল-পাত্র নির্বিশেষে স্থির। ধরা যাক, দর্জি আপনার পাজামার মাপ নিল সেন্টিমিটারে, কিন্তু খাতায় মাপ লিখে রাখলো ইঞ্চিতে। অথবা, মাপ নিলো ইঞ্চিতে, লিখলও ইঞ্চিতে, কিন্তু গজটা প্ল্যাস্টিকে নয়, স্থিতিস্থাপক ইলাস্টিকে তৈরি। এই দুই ক্ষেত্রেই দর্জি খদ্দেরের মাপমতো পাজামা বানাতে সক্ষম হবে না। লোকসান দিতে দিতে বিরক্ত হয়ে অসহিষ্ণু খদ্দেররা অনতিবিলম্বে সেই দর্জিকে তার দোকান বন্ধ করতে বাধ্য করবে। এই দর্জি যে তার কাজ জানে না তা নয়, সমস্যা তার মাপের এককে।
স্বর্ণ যখন বিনিময়ের একক ছিল, সেই একক ছিল কমবেশি স্থির। পাউন্ড বা ডলার যখন স্বর্ণ রিজার্ভ রেখে ছাপা হতো, তখন সেটা স্বর্ণের মতো স্থির ছিল না বটে, কিন্তু এখনকার ডলারের তুলনায় স্থির ছিল। ১৯৭১ সালে স্বর্ণ-রিজার্ভের বাধ্যবাধকতামুক্ত ফিয়াট ডলারকে যখন বিনিময়ের আন্তর্জাতিক একক করা হলো, তখন থেকে ডলারের মূল্য দিনরাত ওঠানামা করছে, অতিরিক্ত ডলার ছাপানো, নকল ডলার এবং আনুসঙ্গিক অন্য অনেক কারণে। সব মিলিয়ে ডলার হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের দর্জির স্থিতিস্থাপক গজের মতো। ওই গজ দিয়েই পাজামার মাপ নেওয়া হচ্ছে, যার ফলে পাজামা যখন টাইট হবার দরকার, তখন ঢিলা হচ্ছে এবং যখন ঢিলা হবার দরকার, তখন টাইট হচ্ছে। সমস্যা হচ্ছে, এই পাজামাই আমাদের বাধ্য হয়ে পরতে হচ্ছে এবং আরও অনেকদিন ধরেই হয়তো পরতে হবে।
স্বর্ণরিজার্ভ রেখে টাকা ছাপানোর কথা বলা হয়, যাতে টাকার পরিমাণ অতিরিক্ত বাড়তে বা কমতে না পারে। স্বর্ণে জং ধরে না এবং স্বর্ণের উৎপাদন বাড়ে না বলে স্বর্ণের পরিমাণ অতিরিক্ত বাড়ে না। রূপা বা তামার এই দুটি গুন নেই বলে এই দুটি ধাতুকে রিজার্ভ হিসেবে ব্যবহার করা যায় না। স্বর্ণ বলে কোনো কথা নেই, অন্য যে কোনো ধাতু বা কোনো বস্তুরও যদি পরিমাণে সীমিত এবং অক্ষয় হবার গুন থাকে, তবে সেই বস্তুও টাকার রিজার্ভ হিসাবে ব্যবহৃত হতে পারে। বিট কয়েনকেও টাকার রিজার্ভ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে, কারণ চাইলেই বিট কয়েনের পরিমাণ বাড়ানো বা কমানো যায় না।
স্বর্ণ এখানে ইঞ্চি বা সেন্টিমিটারের মতো একটি মাপমাত্র। ইঞ্চি বা সেন্টিমিটারের মাপ স্থির বলেই এগুলো অন্য জিনিস পরিমাপ করতে ব্যবহৃত হতে পারে। ইঞ্চি বা সেন্টিমিটারে ব্যক্তির শরীরের মাপ নিয়ে সেই মাপে পোশাক তৈরি করা হয়। কোনো রিজার্ভ ছাড়া টাকা ছাপানো আর মাপ না নিয়ে পোশাক তৈরির মধ্যে পার্থক্যটা কী? সেই পোশাক গায়ের মাপমতো হতেও পারে, আবার নাও হতে পারে। মাপমতো না হবার আশঙ্কাই বেশি। অস্ট্রীয় ধারার অর্থনীতিবিদদের মতে, ফিয়াট মানিও পৃথিবীর কোনো অর্থনীতির গায়ে ফিট হচ্ছে না। এর প্রভাব পড়ছে সারা পৃথিবীর রাজনীতি, সমাজ ও অর্থনীতিতে। যতটুকু অগ্রগতি এই তিন ক্ষেত্রে হওয়ার কথা ছিল, ততটুকু অগ্রগতি সত্তরের দশক থেকে হয়নি বলেই তাদের দাবি।
একটি জোকস বলে এই আর্থ-প্যাঁচালের ইতি টানা যাক। দোভাষিণী সঙ্গে নিয়ে এক বিদেশিনী গবেষিকা বর্ষাকালে বেড়াতে গিয়েছেন বাংলাদেশের হাওর অঞ্চলে। এক জায়গায় কোমড়জলে হাঁটতে গিয়ে শরীরের নিম্নপ্রদেশের অভ্যন্তরে ব্যথা অনুভব হওয়ায় চিৎকার করে উঠলেন গবেষিকা। স্বহস্তে কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে দোভাষিণী বের করে আনলেন একটি রক্তাক্ত চিনা জোঁক। ভয়ে নীল বিদেশিনী চিৎকার করে জানতে চাইলেন: ‘হোয়াট ইজ দিজ?’ ইংরেজি দুর্বল বলে কিংবা পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে জোঁকের ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘লিচ’ ভুলে গিয়ে দোভাষিণীর মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেলো: ‘ম্যাম, ইটস এ জোঁক!’ হতভম্ভ গবেষিকা ততোধিক জোরে চিৎকার করে বললেন: ‘হোয়াআট? ত্রি ইঞ্চেস গন, ব্লাড কেইম আউট, স্টিল ইটস এ জোক!’
মুদ্রাস্ফীতি কোনো জোক বা কৌতুক নয়, এই অর্থ অপকর্ম জোঁকের চেয়ে অনেক বেশি ভয়ঙ্কর। এই জোঁক কত ইঞ্চি ঢুকে, কতটা রক্ত চুষে নেয় ব্যক্তি, সমাজ আর একাধিক প্রজন্মের তার সঠিক হিসাব করা মুশকিল। তবে মুদ্রাষ্ফীতির ফলে যে সঞ্চয় কমে গিয়ে মূলধন সৃষ্টি হয় না এবং মূলধন সৃষ্টি না হলে বিনিয়োগ না হয়ে কর্মসংস্থান যে কমে যায়, এতে সন্দেহ করার কোনো অবকাশ নেই। অস্ট্রীয় ধারার অর্থনীতিবিদদের মতে, মুদ্রাস্ফীতির জোঁকের মুখে একমাত্র কার্যকর নুন হতে পারে স্বর্ণ বা বিটকয়েনের মতো অক্ষয় কোনো রিজার্ভ।