মেন্সট্রুয়াল ছুটি চেয়ে রাষ্ট্রের কাছে আবেদন

মেন্সট্রুয়াল লিভ চালুর পেছনে স্পেনের একটি মহৎ বার্তা রয়েছে— নারীর জীবনে পিরিয়ডকে ঘিরে নানা কুসংস্কার এবং অন্ধ বিশ্বাসকে ভেঙ্গে ফেলার পথ করে দেওয়া। এই পথে নামতে হবে বাংলাদেশকেও।

আইরিন সুলতানাআইরিন সুলতানা
Published : 29 May 2023, 11:58 AM
Updated : 29 May 2023, 11:58 AM

আজকে বয়সে পরিণত নারীটি তার কিশোরী বেলায় পিরিয়ডে তীব্র ব্যথাতেও পরিবারে শত রাখঢাকের কথা মনে করতে পারবেন। অতিরিক্ত রক্তপাত হলে ‘এমন তো সবারই হয়’ শুনে শুনেই বড় হয়েছেন কত নারী। এভাবেই তো পরিবার আর সমাজ নারীকে সহনশীল হতে শিক্ষা দেয়। 

কন্যা সন্তান যত আদরেরই হোক না কেন, তার পিরিয়ডে তলপেটে-কোমরে দুমড়ানো-মোচড়ানো ব্যথা আর বাঁধ ভাঙ্গা রক্তপাতের পরও চিকিৎসক দেখানোতে গাফিলতি  হয় পরিবার থেকেই। বিয়ের পরে ঠিক হয়ে যাবে, বাচ্চা হলে ঠিক হয়ে যাবে—  চিকিৎসার চেয়ে এসব মন্ত্রণা দিতে চিকিৎসকরাও কম যান না। এভাবে একদিন বিয়ে করলে, একটা বাচ্চা হলে প্রতি মাসে তলপেটের অস্বস্তির যন্ত্রণা থেকে মুক্তি মিলবে ভেবে ভেবে বড় হয়েছে আজকের কত কত নারী।

বড় হয়ে তাদের অনেকেই জেনেছেন, এর মধ্যে কারো গুরুতর অ্যানিমিয়া আছে, কারো সন্তান হবে না, কারো এন্ডোমেট্রিওসিস হয়েছে, কারো জরায়ু অথবা ডিম্বাশয়ে টিউমার রয়েছে। মেডিকেল হিস্ট্রি নোট করতে গিয়ে জানা যাচ্ছে, বছরের পর বছর ধরে মাসিক নিয়ে শারীরিক সমস্যা সয়ে সয়ে হরেক রোগ জায়গা করেছে শরীরে।

পিরিয়ড নিয়ে এখন যদিও কিছু কথা বলা যায়। স্যানিটারি প্যাড নিয়ে রাখঢাক কমেছে। পেটে ব্যথা হলে পরিবারের বাকিরাও জানে। কিন্তু কর্মক্ষেত্র কি জানে মাসিকে কোমরের চিনচিন নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেয়ারে বসে কাজ করতে গিয়ে শরীর কেমন ভেঙেচুরে যায়? অফিস কি জানে একেকবার হেভি ফ্লো হওয়ার মুহূর্তে মিটিংয়ে মনোযোগ ধরে রাখার বাধ্যবাধকতায় কেমন অস্বস্তি লাগে নারী কর্মীর? প্রতিবার পিরিয়ডের প্রথম দু-তিন দিন অফিসে গেলে পেছনে কাপড়ে দাগ লেগে যাওয়ার ভয় কীভাবে তাড়া করে এমনকি উচ্চপদস্থ নারী কর্মকর্তাকেও?  

বেশিরভাগই বলবে, নারীর পিরিয়ডের দায় অফিস কেন নেবে? আসলে পরিবার ও সমাজের নারীর প্রতি যথাযথ সংবেদনশীল হতে আরও আরও সময় লাগবে। সময়ের এই দীর্ঘ পথ কমিয়ে আনতে পারে রাষ্ট্র। নারীর পিরিয়ড এক প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া, তাই এর দায় নারীর একার নয়। পারিবারিক ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বদল আনার যুদ্ধে নারীকে একা ঠেলে দেওয়া হবে অন্যায়। রাষ্ট্র কীভাবে  নারীস্বাস্থ্যে যত্নশীল হতে পারে তা বুঝতে ইউরোপ-আমেরিকার দিকে চোখ রাখা যাক। নারীস্বাস্থ্য নিয়ে হালে চিন্তা-ভাবনায় ভীষণ রকম ট্যাবু ভাঙ্গা পদক্ষেপ ধরা পড়ছে এসব জায়গায়।

উন্নত দেশগুলো শুধু অবকাঠামোর কারণেই উন্নত নয়। ওরা যখন নারীকে মাসিকের দিনে কর্মক্ষেত্রে ছুটি দেওয়ার আলাপ করে, তখন ওদের উন্নয়নকে উপলব্ধি করা যায়।

স্পেনে এই বছরের শুরুর দিকে পিরিয়ডে বাড়তি যন্ত্রণায় ভোগা কর্মজীবী নারীদের জন্য চালু হয়েছে ছুটি সুবিধা; একেবারে সরকারিভাবে আইন পাশ করা হয়েছে। পুরো ইউরোপে স্পেনই প্রথম সরকারিভাবে এ ধরনের ছুটি চালু করে নারীর প্রতি অনুভূতিশীল আচরণ দেখানোতে এগিয়ে গেল। স্পেনের আইনে এই সবেতন ছুটি শারীরিক সমস্যা অনুসারে তিন দিন পর্যন্ত নেওয়া যাবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে কেউ কেউ পাঁচদিন পর্যন্তও ছুটি পাবেন প্রতি মাসে।

বাংলাদেশ বাদে, মেনস্ট্রুয়াল লিভ নিয়ে  অনেক আগে থেকে আলোচনায় যোগ দিয়েছে বিশ্ব। জাপান, তাইওয়ান, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, জাম্বিয়া আরও  আগে থেকে মাসিকের দিনে কর্মক্ষেত্রে ছুটি দিচ্ছে। জাপানের শ্রম আইনে মাসিকের দিনে ছুটির ধারা যোগ হয়েছে ১৯৪৭ সালে; অর্থাৎ ৭৫ বছর পেরিয়েছে।

তারমানে মেন্সট্রুয়াল লিভ আলটপকা কোনো তত্ত্ব নয়। তবে এই চর্চা বাস্তবায়ন করার প্রক্রিয়ায় প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিযোগিতা, পুরুষতান্ত্রিক এমনকি নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গিও খটকা যোগ করছে। এই যেমন প্রতি মাসে সবেতন ছুটি দিলে কর্মক্ষেত্রে এর প্রভাব কেমন হবে পুরুষ সহকর্মীদের মাঝে? প্রতিমাসে ছুটি নিলে বছর শেষে নারীর কাজের মূল্যায়ন বাকিদের থেকে কম হবে, নারী অগ্রযাত্রায় পিরিয়ডে ছুটি আবার অন্তরায় হয়ে উঠবে না তো?  প্রতি মাসে পিরিয়ডে ছুটি নিলে নারী শারীরিকভাবে নিজেকে আরও দুর্বল প্রমাণ করবে না তো? ছুটি কি একদিন নাকি দুদিন নাকি তিনদিন পর্যন্ত অনুমোদন করা উচিত?

এসব বিতর্ক অবশ্য একদিক থেকে মেন্সট্রুয়াল লিভ ধারণাকে আরও খোলাসা করছে। নারীর এই দিনগুলোতে শারীরিক ও মানসিক ধকল, শরীরে আরও রোগের বাসা গড়ার কথা জানা যাচ্ছে বেশি করে; আগে যা গোপন ছিল; আগে যা সয়ে যেতে হত নারীকে।

মেন্সট্রুয়াল লিভ চালুর পেছনে স্পেনের একটি মহৎ বার্তা রয়েছে—  নারীর জীবনে পিরিয়ডকে ঘিরে নানা কুসংস্কার এবং অন্ধ বিশ্বাসকে ভেঙ্গে ফেলার পথ করে দেওয়া। এই পথে নামতে হবে বাংলাদেশকেও। শুধু স্যানিটারি ন্যাপকিন পৌঁছে দিলেই মাসিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত হয় না; মাসিক স্বাস্থ্যে অন্তর্ভুক্ত হোক মেন্সট্রুয়াল ছুটি।

নারীর শরীরে আগে থেকে আয়রন, ফলিক এসিড ঘাটতি থাকলে নারী যখন সন্তান ধারণের পরিকল্পনা করেন তখন বিপত্তি ঘটে। কিংবা যখন গর্ভবতী হন, তখন স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যায়। অথবা যদি সন্তান প্রসব করেন, তবে সন্তানের স্নায়ু অপরিণত থাকতে পারে, যা ভোগাবে আজীবন।

ঠিক এই কারণে যুক্তরাজ্য আটা অথবা চালে বাড়তি ফলিড এসিড যোগ করার পরিমাণ নিয়ে মত দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের খবরে বলছে, ”বিশ্বে ৮০টির বেশি দেশে আটায় ফলিক এসিড মেশানো হয়। অস্ট্রেলিয়ায় রুটিতে ফলিক এসিড মেশানোর পর নিউরাল টিউব ডিফেক্ট নিয়ে জন্মানো শিশুর হার ১৪ শতাংশ কমে গিয়েছিল।”

অনলাইনে একটি গবেষণাপত্রের শিরোনাম নজরে আসতেই থামলাম। ২০১৩ সালে মিডল-ইস্ট জার্নাল অফ সায়েন্টিফিক রিসার্চে প্রকাশ পাওয়া এই গবেষণায় বাংলাদেশে পোশাক কারখানার নারী কর্মীদের অ্যানিমিয়া নিয়ে কাজ হয়েছে। কাজ করেছেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ হেলথ সায়েন্সেস (বিইউএইচএস), ইউএনডিপি এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়জন। তারা ১০৬ জন নারী-পুরুষ কর্মীর উপর জরিপ চালায়, যাদের কর্মক্ষেত্র ছিল ঢাকার মিরপুর থানার আওতায়।  জরিপে ৭৭% নারীর রক্তাল্পতা পাওয়া যায়। রক্তাল্পতায় ভোগা নারীকর্মীদের অর্ধেকের সমস্যা মধ্যম মানের এবং ৮% নারীর রক্তাল্পতা সমস্যা গুরুতর।

দেশে রক্তশূন্য নারীর সংখ্যা কত সেই পরিসংখ্যান হলফ করে বলে ফেলা যাচ্ছে না। তবে অপুষ্টিতে ভোগা নারীর অল্পবিস্তর পরিসংখ্যান পাওয়া গেল।

২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি) জানায়, বাংলাদেশে মায়েদের এক-তৃতীয়াংশ অপুষ্টির শিকার। ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) তথ্য অনুসারে, দেশে মোট বিবাহিত নারীর অর্ধেকের কাছাকাছি অর্থ্যাৎ এক কোটি ৭০ লাখ বিবাহিত নারী অপুষ্টিতে ভুগছিলেন।      

পুষ্টির বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে ভিটামিনের চাহিদা পূরণ খুব জরুরি। আয়রন, ভিটামিন-১২, ফলিক এসিড বা ভিটামিট বি-৯এর অভাবে শরীরে রক্তশূন্যতা দেখা দেবে এবং ঘাটতি পূরণ না হলে বাড়বে স্বাস্থ্য জটিলতা। 

২০১১-১২ সালে ন্যাশনাল মাইক্রোনিউট্রিডেন্ট সার্ভেতে বলা হয়,  ৫০ শতাংশ অন্তঃসত্ত্বা নারীর রক্তস্বল্পতা আছে। ২০২২ সালে এক তথ্য বলছে,  আয়রন ও ফলিক এসিডের অভাবে মায়েদের প্রায় ৮০ ভাগ রক্তশূন্যতায় ভোগে।

নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই পুষ্টিকর খাদ্য জরুরি। কিন্তু সাবালিকা হওয়ার বয়স থেকে নারীর জন্য এই চাহিদার দিকে বিশেষ নজর রাখতে হয়। শরীর থেকে যেটুকু রক্ত বেরিয়ে যায় প্রতি মাসে তা পূরণ না করলে ধীরে ধীরে এই ঘাটতি বাড়তেই থাকে।

যুক্তরাজ্যে প্রতি ১০০ গ্রাম সাদা আটায় শূন্য দশমিক ২৫ গ্রাম ফলিক এসিড যোগ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিজ্ঞানী ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা অবশ্য এই মাত্রা আরও বাড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন। বাংলাদেশে সাদা আটা-ময়দা আর চিকন-সাদা চালের জনপ্রিয় হওয়ার দিনে এসব নিত্য খাবারে ফলিক এসিড যোগ করার কোনো আলাপ কোথাও শুনেছেন কি কেউ?

শুধু পিরিয়ড আর প্রজনন দিয়ে নারীকে নিয়ে ভাবলে কিন্তু হবে না। ১৬ কোটির বেশি জনসংখ্যার বাংলাদেশে নারী জনসংখ্যা ৮ কোটি ৩৩ লাখেরও বেশি। এর মধ্যে ৪০ পেরুনো নারী কত জন? ৫০ পেরোনো নারী কতজন? পরিসংখ্যান খুঁজে পাওয়া আবারও সহজ নয়। পরিবার, সমাজে, কর্মক্ষেত্রে নীরবে মেনোপজ নিয়ে যুঝে যাচ্ছে কত সংখ্যক নারী রাষ্ট্র কি রাখে সেই হিসাব? অথচ মেনোপজ বেলায় নারীর শারীরিক ও মানসিক দশা নিয়ে দিক নির্দেশক হতে পারে রাষ্ট্র। বাংলাদেশে হেলদুল না থাকলেও, যুক্তরাজ্য কিন্তু মেনোপজ বেলায় নারীর পাশে পাশে রয়েছে।

যুক্তরাজ্যে ৪৫ বছর বয়স থেকে হরমোন প্রতিস্থাপন থেরাপি (এইচআরটি) দেওয়া হয়, যাদের মেনোপজ উপসর্গ দেখা দিতে শুরু করেছে তাদের; এ চিকিৎসা চলতে পারে ৬৪ বছর বয়স পর্যন্ত। হরমোন প্রতিস্থাপন থেরাপির খরচ কমানো নিয়েও কাজ করছে যুক্তরাজ্য। প্রেসক্রিপশন প্রিপেমেন্ট সার্টিফিকেট (পিপিসি) নামে বিশেষ সাশ্রয়ী হেলথ কার্ড চালু করেছে তারা। এতে করে এইচআরটি সেবার খরচ কমবে, বিপরীতে পুরো ইংল্যান্ডে মেনোপজ বেলা চলছে এমন  প্রায় চার লাখ নারীকে এই সেবার আওতায় আনা যাবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর পনেরো হাজারের বেশি মানুষের স্তন ক্যানসার শনাক্ত হয়; এদের মধ্যে ৯৮% নারী, বাকি সংখ্যক পুরুষ। আরও একটি পরিসংখ্যানে জেনেছিলাম, বাংলাদেশে প্রতি বছর ১২ হাজারের কিছু বেশি নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়; মারা যায় সাত হাজার নারী।

ওদিকে আমেরিকা খসড়া নীতি করে ফেলেছে; তাতে প্রস্তাব করা হয়েছে ৪০ থেকে ৭৪ বছর বয়সী নারীদের প্রতি দুই বছর পর পর অবশ্যই ম্যামোগ্রাম পরীক্ষা করাতে হবে। এই প্রস্তাব নিয়ে খুব স্বাস্থ্যকর বিতর্ক চলছে এখন সেখানে; বিশেষজ্ঞদের কেউ বলছেন, ৩৫ থেকে ম্যামোগ্রাম করানো দরকার। আবার কেউ  বলছেন, দুই বছর অনেক লম্বা সময়; বরং প্রতি বছর একবার ম্যামোগ্রাম করে দেখা দরকার।

বাংলাদেশে নারীর স্তন ঢেকে রাখতে ওড়না পরা নিয়ে সমাজ যত তৎপর, নারী স্তনের স্বাস্থ্য নিয়ে ততটাই নিশ্চুপ। রাষ্ট্রীয়ভাবে সুস্পষ্ট কোনো পরিসংখ্যানও নেই স্তন ক্যান্সার নিয়ে।   

আমাদের সমাজে আমরা মেনেই নিয়েছি— মেয়েদের তো একটু লো প্রেশার থাকবেই। যেন নারীকে শারীরিক ভাবে খানিক দুর্বল করে দেখাতে পারাতেই সমাজের পরিতৃপ্তি। মেনোপজের বয়সে নারীর শরীরে ও মনে শুরু হয় আরেক যুদ্ধ; সেও আরেক লুকোচুরি। কারণ মেনোপজ বলতেই নারীকে বাতিলের খাতায় ফেলতে চায় সংকীর্ণ সমাজ। নেই  কাউন্সেলিং, নেই একটু যত্ন, নেই চিকিৎসা। মেনোপজে যখন হুটহাট হটফ্ল্যাশ, তীব্র ঘাম হয়, অস্থিরতা হয় তখন কি কিছুই হয়নি এমন চেহারা ঝুলিয়ে রাখতে হবে নারীকে অফিসে? বাড়িতে? বন্ধুদের মাঝে? এবং এই রাষ্ট্রে? 

নারীস্বাস্থ্য নীতি নিয়ে কেন যত্নশীল হবে না বাংলাদেশ?  নারীর অধিকার নিশ্চিতে জাতীয় নারীস্বাস্থ্য নীতিমালা করা খুব জরুরি এখন। এমন নারীস্বাস্থ্য নীতিমালায় যা যা থাকা চাই -  

(১) ফলিড এসিড সমৃদ্ধ চাল-আটা বাজারজাত করা; চাল ও আটার প্যাকেটে অবশ্যই ফলিক এসিডের নির্ধারিত মাত্রা উল্লেখ থাকতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়/অধিদপ্তর নিয়মিত জরিপ করে দেখবে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আটা-ময়দা-চাল-পাউরুটিতে ফলিক এসিডের মাত্রা কেমন দেওয়া হচ্ছে বা আদৌ দেওয়া হয় কি না।
(২) অন্তত ৩৫ বছর বয়স থেকে ম্যামোগ্রাম করাতে জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। সরকারি নারী কর্মী-কর্মকর্তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা হিসেবে ম্যামোগ্রাম আবশ্যিকভাবে চালু করা। এতে করে রাষ্ট্রীয়ভাবে একটি উদাহরণ গড়ে উঠবে।
(৩) মেনোপজে হরমোন প্রতিস্থাপন থেরাপি নিয়ে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলা। টিভিতে সরকারি বিজ্ঞাপন দেখানো। কম খরচে হরমোন প্রতিস্থাপন থেরাপির সুযোগ করে দেওয়া।  
(৪) সরকারি ওয়েবসাইটে  স্তন ক্যান্সারে নারী-পুরুষ আক্রান্ত ও মৃত্যু সংখ্যা তুলে ধরা।
(৬) দেশে রক্তাল্পতায় ভোগা কিশোরী ও নারীর পরিসংখ্যান প্রকাশ করা।
(৭) দেশে ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সী নারী পরিসংখ্যান আলাদা করে নজরে আনা।   

ভোটের বছরে রাজনৈতিক দলগুলো নিশ্চয়ই ইশতেহারে নারী অধিকার বাস্তবায়নের কথা লিখবেন। সেখানে এবার মেন্সট্রুয়াল লিভ চালু করার ওয়াদাও আসুক প্রতিটি দল থেকে। বেসরকারি খাতে মেন্সট্রুয়াল লিভ সুবিধা চালু করতে নিশ্চয়ই নানা প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে হবে, তাই নিদর্শন হয়ে উঠতে সরকারি চাকরিতে নারী কর্মী-কর্মকর্তাদের জন্য অচিরেই শুরু হোক মেন্সট্রুয়াল লিভ সুবিধা।   

যথাবিহিত সম্মানপূর্বক বিনীত নিবেদন এই যে, এমন একটি নারীস্বাস্থ্য নীতিমালার সঙ্গে সঙ্গে সবেতন মেন্সট্রুয়াল ছুটির আবেদন রাষ্ট্রীয়ভাবে মঞ্জুর করে  বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থে স্মার্ট হয়ে উঠুক।