Published : 01 Apr 2022, 06:35 PM
ভিক্টোরিয়া ন্যুল্যান্ডকে নিয়ে অর্থাৎ ভিক্টোরিয়া জেইন ন্যুল্যান্ডকে নিয়ে খুব বেশি কিছু লিখে ফেলেছি কি! মনে হয় না। একালে ইংরেজিতে যা লেখা যায় বাংলায় কলোনিয়াল হ্যাংওভারজনিত 'লাজুক ভদ্রতাবোধের' কারণে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তা লেখা যায় না। লিখতে পারলে বরং ভাল হত, আমরাও ইংরেজিভাষীদের কাতারে সামিল হয়ে যেতে পারতাম। আমাদের মত উপনিবিষ্ট 'আধুনিক'দের কূটনৈতিক ভদ্রতাবোধ কিছু রক্ষা করতেই হয়! ন্যুল্যান্ড সম্প্রতি কষ্ট স্বীকার করে বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন; ভারতেও ঘুরে গেছেন।
'স্যাংশন' নামের পাশার দান উল্টে গেছে বলে তার কূটনৈতিক দৌড়ঝাঁপে বোঝা যাচ্ছে। বাংলাদেশকে তিনি বোঝাতে এসেছিলেন, কেন ইউক্রেইনের পাশে দাঁড়ানো উচিত। আর ভারতকে বোঝাতে গিয়েছিলেন, সস্তা দরে এবং রুবলে রাশিয়ার তেল কেনা একদম ঠিক নয়। কাউকে তিনি বোঝাতে পেরেছেন বলে মনে হয় না। ভারত বলে দিয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেইন কারও পক্ষে তারা প্রকাশ্যে অবস্থান নেবে না, আর কম দরে তেল কেনা তার জাতীয় স্বার্থের জন্য জরুরি। দৃশ্যত এ উপমহাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের 'ভদ্র কূটনৈতিক চাপ' কাজে দিল না। মার্কিন রাজনৈতিক সমাজে 'কূটনৈতিক ভদ্রতা' বলতে কিছু আর অবশিষ্ট নেই।
সিনেমা-ফিকশনে-কবিতায় 'ভদ্রতাবোধ' না থাকলেও চলে, বরং সেখানে অশিষ্ট-অভদ্র-ভালগার শব্দপ্রয়োগ পোস্টমডার্ন ওপেননেসের দ্যোতক! এটা এক ধরনের সাবলীলতা, জড়তাহীন বোলচাল; অতএব নমস্য। বিশ্বাস না হয় তো রবার্ট প্যারি-র 'দ্য মেস দ্যাট ন্যুল্যান্ড মেইড' শিরোনামে 'কনসোর্টিয়াম নিউজ'- এর বিশেষ লেখাটি পড়ে দেখুন। লেখাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছে ২০১৫ সালের ১৩ জুলাই; ২০২২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি লেখাটি পুনর্প্রকাশিত হয়েছে। এ লেখার ভেতরেই ইউক্রেইনে তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সাথে টোরিয়া ন্যুল্যান্ডের ফোনালাপের অডিও ক্লিপ ফাঁস করা হয়েছে। অতএব বলা যায়, তার (ন্যুল্যান্ড) সম্পর্কে অতিরিক্ত কিছু বলা হয়নি; যা বলা হয়েছে তা কূটনৈতিক আচরণসিদ্ধ। ন্যুল্যান্ড লাতিন জাদুবাস্তবতার অংশ- শুধু চিলির কবি নিকানোর পাররার প্রতিকবিতার পরিভাষা ব্যবহার করা করিনি, যাতে অনেককিছু করতে বারণ করা হয়েছে।
কী লিখেছেন রবার্ট প্যারি?
Victoria Nuland engineered Ukraine's "regime change" in early 2014 without weighing the likely chaos and consequences. … the obvious folly of the Obama administration's Ukraine policy has come into focus even for many who tried to ignore the facts, or what you might call "the mess that Victoria Nuland made."… . Assistant Secretary of State for European Affairs "Toria" Nuland was the "mastermind" behind the Feb. 22, 2014 "regime change" in Ukraine, plotting the overthrow of the democratically elected government of President Viktor Yanukovych while convincing the ever-gullible U.S. mainstream media that the coup wasn't really a coup but a victory for "democracy."
ন্যুল্যান্ড বিষয়ক কথকতা স্পষ্ট ও পরিষ্কার। তার নিও-কনজারভেটিভ উল্লাসের নর্তন ইউক্রেইনের লোকজন দেখেছে, বিশ্ববাসীও দেখেছে। এখন ডেমোক্র্যাটিক পার্টি নিও-কনজারভেটিভ বা নিও-কনদের বড় আশ্রয়স্থল।
ন্যুল্যান্ডের প্রসঙ্গ আপাতত দূরে থাক। এ অবকাশে আরো অধিকতর বাস্তব অথচ পরাবাস্তব প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলা যাক। প্রথমে ফিফা, তারপরে উয়েফা রুশ ফুটবলারদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করল। তারপর ইন্টারন্যাশনাল স্ক্যাটিং ইউনিয়ন রুশ অ্যাথলিটদের উপর একক ও দলগত সব ইভেন্টে অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা জারি করল। তারপর ইন্টারন্যাশনাল প্যারালিম্পিক কমিটি সব রুশ ও বেলারুশ অ্যাথলিটদের উপর আসন্ন উইন্টার প্যারালিম্পিকস- এ অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা জারি করল। এরপর ঘটল এক জাদুবাস্তব ঘটনা-
ফেডারেশন ইন্টারন্যাশনাল ফেলাইন (FIFe) বলেছে, রাশিয়ায় লালিত-পালিত-বিকশিত কোনো বিড়াল আন্তর্জাতিক কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবে না। কারণ, রাশিয়া ইউক্রেইনে 'হামলা' চালিয়েছে। তারপর দ্য ইউরোপিয়ান ট্রি অব দ্য ইয়ার প্রতিযোগিতা রাশিয়ার 'তুর্গেনেভ' নামের ১৯৮ বছর বয়স্ক একটি ওক গাছকে এ বছরের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে দেবে না বলেছে। ইউক্রেইনে রাশিয়ার 'আগ্রাসন'- এর অভিযোগে দ্য ইউরোপিয়ান ট্রি অব দ্য ইয়ার (ইটিওয়াই) কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দস্তয়েভ্স্কির বই পড়ানোর ওপর ইতালির এক স্কুল/ইনস্টিটিউট নিষেধাজ্ঞা জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, পরে সমালোচনার মুখে প্রত্যাহার করেছে। কার্যত নিষেধাজ্ঞার ভূতগ্রস্ততা (হিস্টিরিয়া বা মৃগীরোগ, বায়ুরোগ বিশেষ) পশ্চিমাদের পেয়ে বসেছে।
নিষেধাজ্ঞার আরো খবর আছে: রাশিয়ান ফুটবল টিমকে ভিডিও গেইমেও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ইউক্রেইনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে ৮ মার্চ ইউএস ইএ স্পোর্টস কম্পানি ঘোষণা করেছে, 'ফিফা ২২' প্লেয়ারর্স- এ ভিডিও গেইমে কোনো রাশিয়ান টিমকে অংশ নিতে দেওয়া হবে না। ইউজাররা ভিডিও গেমে রুশ জাতীয় দল বা সিএসকেএ মস্কো বা লোকোমোটিভ মস্কো এবং স্পার্তাক মস্কো পরিচয়ে কোনো দলকে কাজে লাগাতে পারবে না।
এটা হেরে যাওয়া সংক্রান্ত মানসিক সংকটের বহিঃপ্রকাশ, তাতে সন্দেহ নেই। মনোযুদ্ধে পাশ্চাত্য পরাস্ত। কী এমন ঘটেছে যে, তাদের এমন বায়ুরোগ (হিস্টিরিয়া) পেয়ে বসেছে! লাতিন জাদুবাস্তব কাহিনী ছাড়া এর ব্যাখ্যা তৈরি করা অসম্ভব। এসব হচ্ছে 'হেরো পার্টির' তালগোল পাকানো আচরণ।
স্যাকার ব্লগে (thesaker.is) 'ওয়েস্টার্ন প্রগ্রেসিভস্ মাস্ট ডিমান্ড ৩.৫ মোর ইয়ার্স অব- নো, পারমানেন্ট- রাসোফোবিয়া!' শিরোনামের প্রবন্ধে (৬ মার্চ, ২০২২) রামিন মাজাহারি লিখেছেন-
''এই সমাধিফলক সেই ম্যাকার্থিরই। জোসেফ ম্যাকার্থির কবরের পাশে দাঁড়িয়ে আছি। ম্যাকার্থি, যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর ছিলেন, অন্ধ রুশবিরোধী ছিলেন, প্রায়-উন্মাদ অ্যান্টি-সোশ্যালিস্ট ছিলেন; আমেরিকার সেকেন্ড রেড স্কারের (১৯৪৭-১৯৫৭) প্রবর্তক ছিলেন, অগুনতি প্রাণের সংহারক ছিলেন, তীব্র মদ্যপ ছিলেন, মিলিটারি-ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্সের নিষ্ঠাবান প্রণোদক ছিলেন; তার নাম পলিটিকেল উইচ-হান্টের সমার্থক (এপোনিম) হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিজ শহর উইসকনসিনে তিনি এখন শায়িত। তাঁর কবরের পাশে দাঁড়িয়ে ফটো তোলার সুযোগ মিস করা যায় না।''
তিনি লিখেছেন, ''এক দিন আমি তার কবরের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। কবরটির পাশে কিছুক্ষণ দাঁড়ানোর সুযোগ হারাতে চাচ্ছিলাম না। এই লোকটি মিথ্যা, বানোয়াট কিচ্ছা ফেঁদে প্রগতিশীল বিভিন্ন আন্দোলন ও সংগঠনকে কলঙ্কিত করেছেন, ছিন্নভিন্ন করেছেন। অনেক আন্দোলন-সংগঠনকে তিনি ভয় দেখিয়ে ফেইক-লেফটিস্ট আন্দোলন-সংগঠনের তালিকায় নাম লেখাতে বাধ্য করেছেন। বিংশ শতকে আর কোনো মার্কিনী এমন কাজ করতে পারেননি। এমন লোকের সমাধির পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার সুযোগ কি হারানো যায়! ম্যাকার্থি এবং ম্যাকার্থিজমের উন্মাদনার সূত্রেই ২০১৭ সালে ফিরে যাওয়া যেতে পারে। অবিশ্বাস্য তবে সত্য; ডেমোক্র্যাটরা তখন জোর গলায় বলতে শুরু করেছিল, (২০১৬ সালের) প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটন হেরে গিয়েছিলেন রুশ ট্রল ফার্মগুলোর (বিটকেল প্রতিষ্ঠাগুলোর) কারণে। ওরাই এর জন্য দায়ী। তখন আমি একটি ব্যঙ্গরসাত্মক প্রবন্ধ লিখেছিলাম 'ইউএস প্রগ্রেসিভস্ মাস্ট ডিমান্ড ৩.৫ মোর ইয়ারস্ অব রাসোফোবিয়া!' শিরোনামে। লেখাটি ব্যঙ্গাত্মক হলেও বিষয়টাকে ডেমোক্র্যাটরা ততটা ব্যঙ্গরসাত্মক রাখেনি।
আমার লেখাটা হয়ত চটকদার (ফানি); কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে যে ধরনের রাসোফোবিয়া (রুশ-বিদ্বেষ) দেখা দিয়েছে, তার থেকে যে প্রচারণার উদ্ভব হয়েছে তার ভয়ঙ্কর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে ইউক্রেইনে। রুশ-বিদ্বেষকে এমন মাত্রায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে যে, রাশিয়ার বিষয়ে, ইউক্রেইন সংকটের বিষয়ে সব সমাজতাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষণের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে; ইউক্রেইনে এমন পরিস্থিতি দশক-কাল ধরেই তৈরি করা হয়েছে। রুশ-বিদ্বেষী চরম ডানপন্থী ইউক্রেনিয়দের ইন্ধনে ১৪ হাজার ইউক্রেইনি-রুশ নিহত হয়েছে; তাদের ওয়ালেটে সম্ভবত জোসেফ ম্যাকার্থির ছবি শোভা পায়। কূটনীতির পথ রুদ্ধ। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উপলক্ষ করে এই রুশবিদ্বেষ কী মাত্রায় পৌঁছেছিল তা দেখা গেছে। তারই ফলে লাখো রুশ সেনা এখন ইউক্রেইনের মাটিতে এবং রুশ অভিযানের জেরে 'থার্ড রেড স্কার' গোটা পাশ্চাত্যকে গ্রাস করেছে ডিজিটাল গতিতে।''
মাজাহারি বলেছেন, মার্কিন প্রগতিশীলরা যদি দেখতে না পায়- ''হাউ দেয়ার টলারেন্স অব থিংস লাইক দ্য ফেইক এক্সপ্লেনেশন অব হিলারি ক্লিনটন'স লস, অর দ্য নাইটলি রাসোফোবিয়া অব র্যাচেল ম্যাডো অন এমএসএনবিসি, হেলপড্ প্রভোক অ্যান অ্যান্টি-রাশিয়ান ক্লাইমেট, হুইচ গাটেড ইন্টারেস্ট ইন ডিপ্লোমেটিক এনগেইজমেন্ট অ্যান্ড থাস রেইজড্ দ্য ইনএভিটেবিলিটি অব আ মাশরুমিং অব দ্য ভায়োল্যান্স ইন ইউক্রেইন, দেন ইউ লাইকলি নিড টু গো দ্য লাইব্রেরি অ্যান্ড এনগেইজ ইন আ রাইগোরাস্ পার্সোনাল ডি-নাজিফিকেশন ক্যাম্পেইন অব ইওর ব্রেইন। … আই ওয়ান্ডার: হাউ উইল ওয়েস্টার্ন ফাউক্স-প্রগ্রেসিভ্স রিসিভ মাই ফটো অব দ্য কিং অব দ্য ব্ল্যাকলিস্ট?''
এখন রুশদের ব্ল্যাকলিস্টেড করা হচ্ছে- আকাশপথে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে, এয়ারওয়েভসে, দ্য হলস অব ডিপ্লোম্যাসিতে, ব্যাংকসমূহে, ফুটবল খেলার মাঠে, আন্টিদের ফেইসবুক পেইজে, এমনকি ডিজনি চ্যানেলে। 'আমি কি অ্যান্টি-হিস্টিরিয়া উস্কে দিচ্ছি আমেরিকানদের একথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে? তারা যে এখন নিজেদের ইতিহাসকে আবারো হিস্টেরিক্যালি অ্যান্ড ভায়োলেন্টলি যা কিছু রুশ তার বিরুদ্ধে নিয়ে যাচ্ছে একথা মনে করিয়ে দিয়ে?'
ভয়ংঙ্কর এবং মারাত্মক বায়ুরোগ পেয়ে বসেছে আমেরিকানদের, পাশ্চাত্যের লোকদের। বলতে হয়, 'আমি দুঃখিত কিশোর-তরুণদের জন্য, আমি দুঃখিত আনএডুকেটেড লোকদের জন্য এবং সেইসব লোকদের জন্য যারা এখন মুখে ফেনা তুলছেন এবং তাদের আঁকশি-কাঁটায় ধার দিচ্ছেন। ২০২২ সালে যদি জার্মানি নিয়ামকের আসনে বসে সবকিছুকে জুইয়্যিশ বলে নাকচ করতে থাকে তাহলে আমি চেঁচিয়ে বলব, হিটলার! হিটলার! হিটলার!; ম্যাকার্থিজম! ম্যাকার্থিজম! ম্যাকার্থিজম! বলার সাথে তার কোনো তফাত নেই। রুশ-বিদ্বেষ এমনই এক উন্মাদনায় পরিণত হয়েছে।'
"ওহে পাশ্চাত্যের প্রগতিশীলরা শোন: তোমাদের ভাবতে বাসনা হয় যে, পাশ্চাত্যের রক্ষণশীলরাই কেবল রক্ষণশীল ভাবনা ভাবে। তারাই জিঙ্গোইজম (উগ্র জাত্যাভিমান) বিষয়ক ভাবনার সময়, যুদ্ধ বিষয়ক ভাবনার সময় এবং কখনো ক্লান্তিকর ডি-ইগনোরেন্স ক্যাম্পেইন চালানোর সময় মাথা ঠাণ।ডা রাখবে; এ ব্যাপারে তাদের উপর ভরসা করা যায়। তোমাদের বলছি, তাদের (রক্ষণশীলদের) নয়, তারা অবশ্যই এ কাজ করার সামর্থ্য রাখে না; বরং তাদের (রক্ষণশীলদের) দমিত করা দরকার যুদ্ধের দিকে ধাবিত না হওয়ার জন্য এবং যা তাদের জন্য বিপুল মুনাফার বিষয় তার দিকে ধাবিত না হওয়ার জন্য। "
"রাশিয়া কেন যুদ্ধের পথ বেছে নিয়েছে? তার কারণ মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির রক্তপিপাসু মানসিকতা এবং তথাকথিত ইউরোপীয় সেন্টার-লেফট পার্টিগুলোর রক্তপিপাসু মানসিকতা, যুদ্ধোন্মাদনা। রাশিয়া জানে, যুক্তরাষ্ট্রে, পাশ্চাত্যে (তাদের রাজনীতির মূলধারায়) কোনো এন্টিওয়ার পার্টি আর অবশিষ্ট নেই, অনেকদিন ধরেই ছিল না। ঘৃণামূলক প্রচারণায় কেবল অযাচিত হিংসা ছড়ায়। কারণ আমেরিকায় রাসোফোবিয়া এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তাতে কেবল অযৌক্তিক সহিংসতার বিস্তার ঘটছে।"
"রাসোফোবিক ফাউক্স-এক্সপ্লানেশন'- এর পথ পাওয়া গেছে ফ্রান্সে। ফ্রান্সে এটাকে কাজে লাগানো হয়েছে ইয়েলো ভেস্টদের বিরুদ্ধে যে নিপীড়ণ চালানো হয়েছে তার যৌক্তিকতা প্রতিপন্ন করার জন্য। এক শতাব্দীর মধ্যে এমন নিপীড়ণ আর চালানো হয়নি। ইমানুয়েল ম্যাক্রো এ কাজ করতে গিয়ে রাশিয়ার দিকে আঙুল তুলেছেন! ফ্রে ও ইংলিশ মেইনস্ট্রিম মিডিয়ায় নিবন্ধাদিতে বলা হয়েছে, রাশিয়া অনলাইনে ফরাসি এ বিক্ষোভ কর্মসূচিতে ইন্ধন জুগিয়েছে।"
''আমার আনাড়িপনা সত্ত্বেও, অনভিজ্ঞতা সত্ত্বেও, ঊনবুদ্ধি সত্ত্বে আমি চাইনিজ সোশ্যালিজমের উপর বই লিখেছি, এবং যাকে আমি ইরানিয়ান ইসলামিক সোশ্যালিজম বলি তার উপর বই লিখেছি- একটা ঐতিহাসিক তাত্ত্বিক ফারাক ঘোচানোর জন্য, ব্যাখ্যা জোগানোর জন্য; এই জীবন্ত কালচারগুলোর বিষয়ে একটা ভিউ-পয়েন্ট তুলে ধরার জন্য। এসব সমাজেও মানুষ বাস করে এবং তারা প্রাণোচ্ছল মানুষ, তাদেরও বচন-বাচন আছে। সর্বোপরি 'টু কাউন্টার দ্য ইউজুয়াল মেইনস্ট্রিম ম্যাকার্থিইস্ট অ্যাটাকস্।' আমি 'ফ্রান্সেজ ইয়েলো ভেস্টস: ওয়েস্টার্ন রিপ্রেশন অব দ্য ওয়েস্ট'স বেস্ট ভ্যালুজ' বিষয়েও একটা বই প্রকাশ করতে যাচ্ছি। এ কাজ করতে গিয়ে আমি 'দানস্ লা তেতে দেস জিলে জোনস' (ইন দ্য হেড অব দ্য ইয়েলো ভেস্টস্) শিরোনামের বইটি পড়েছি; এ বইতে লেখকরা 'ইয়েলো ভেস্টস্' আন্দোলনে 'রাশিয়ার কুপ্রভাব' বিষয়ক যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ জুগিয়েছেন।''
বছর বিশেক আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস-কেন্দ্রিক 'দিয়াশলাই' নামে একটা লিটল ম্যাগাজিন বের হত। সেখানে 'রেড স্কার : মেমোরিজ অব দ্য আমেরিকান ইনকুইজিশন: অ্যান ওরাল হিস্টরি' বিষয়ে একটা প্রবন্ধ লিখেছিলাম। গ্রিফিন ফারিয়েল্লো'র বইটি ইতিহাসের বই বটে। তবে ৫৭৫ পৃষ্ঠার বইটির পুরোটাই সাক্ষাৎকারভিত্তিক, যাকে বলে ওরাল হিস্টরি। সেই প্রবন্ধ ছিল ম্যাকার্থিজমের ভূতগ্রস্ততা (হিস্টিরিয়া) বিষয়ে। তখন হলিউড টপ টেন শিরোনামে কালোতালিকা করে চার্লি চ্যাপলিনকেও হলিউডে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। রোজেনবার্গদের (জুলিয়াস রোজেনবার্গ ও ইথেল রোজেনবার্গ) কাহিনীও ওই সময়ের। যুক্তরাষ্ট্রে হিপ্পি জেনারেশন তৈরি হয়েছিল ম্যাকার্থিজমের ধাক্কায়। মার্কিনীরা তখন কেবল চোখে লাল দেখতো। সবকিছুতে কমিউনিস্ট খুঁজে পেত। ৯ মার্চ এবিসির অনুষ্ঠানে দর্শকসারি থেকে একজন রাশিয়াবিষয়ক প্রশ্ন করে পদাঘাতের শিকার হয়েছেন! ম্যাকার্থিজমের আরেক পর্ব শুরু হয়েছে ইউক্রেইন সংকট থেকে; এবার টার্গেট সোভিয়েত ইউনিয়ন নয় বরং রাশিয়া। রোগটা আগের মত একই সোভিয়েত বা সাবেক সোভিয়েত-বিরোধী হিস্টিরিয়া।
এসব ঘটছে রাশিয়া-ইউক্রেন চলমান বিরোধের কারণে। এর পেছনের কারণ যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো। মূলত সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙন-পরবর্তী ন্যাটোর পূর্বমুখী বিস্তার এর কারণ। যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো এবং রাশিয়ার মাঝখানে কাবাব মে হাড্ডি হয়ে পড়ে আছে ইউক্রেন, সেখানে এখন মার্কিন উস্কানিতে এবং প্রণোদনায় নব্যনাৎসী-অধ্যূষিত, জিঙ্গোয়িজম-তাড়িত উন্মাদনা কাজ করছে। নব্যনাৎসী, কন্ট্রা, দায়েশ তথা তাকফিরি জঙ্গি- এই হচ্ছে মার্কিন সাম্রাজ্যের পুষ্পরথের জৈব-রসায়ন বা সাইবার অর্গানিক কেমিস্ট্রি।
এখন ইউক্রেইনে চলছে রাশিয়ার 'স্পেশাল মিলিটারি অপারেশন' অথবা 'পুলিশ কমব্যাট অপারেশন'। এ-ই নিয়েই যত হুজ্জতি। তার বিপরীতে চলছে যুক্তরাষ্ট্র ও পাশ্চাত্যের ম্যাকার্থিজমের হিস্টিরিয়া-প্রসূত 'এনকাউন্টার অব দ্য থার্ড কাইন্ড'। তাতে কার কী হচ্ছে, কেমন হচ্ছে?
দ্য স্যাকার ব্লগে (thesaker.is) 'ওয়েস্টার্ন প্রগ্রেসিভস্ মাস্ট ডিমান্ড ৩.৫ মোর ইয়ার্স অব- নো, পারমানেন্ট- রাসোফোবিয়া!' শিরোনামের প্রবন্ধে (৬ মার্চ, ২০২২) রামিন মাজাহারি লিখেছেন-
Empires often follow the course of a Greek tragedy, bringing about precisely the fate that they sought to avoid. That certainly is the case with the American Empire as it dismantles itself in not-so-slow motion. … . Observers across the political spectrum are using phrases like "shooting themselves in their own foot" to describe U.S. diplomatic confrontation with Russia and allies alike. But nobody thought that The American Empire would self-destruct this fast. … . For more than a generation the most prominent U.S. diplomats have warned about what they thought would represent the ultimate external threat: an alliance of Russia and China dominating Eurasia. America's economic sanctions and military confrontation have driven these two countries together, and are driving other countries into their emerging Eurasian orbit. … . I thought that de-dollarization would be led by China and Russia moving to take control of their economies to avoid the kind of financial polarization that is imposing austerity on the United States.
কী দাঁড়াবে তাহলে ইউক্রেইন পরিস্থিতি? ৭ মার্চ রাশিয়ার জন্য ছিল বেশ সফলতার দিন। দিনে দিনে সফলতা আরো বাড়বে; খুব দ্রুত তার ডমিনো এফেক্ট হবে ইউক্রেইনের ডিফেন্স খাতে। এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে তাতে দ্য স্যাকারের ভাষায় বলা যায়-
১) ইউক্রেইন যুদ্ধে হেরে গেছে; তাকে ক্রমান্বয়ে নিরস্ত্র ও ডি-নাজিফাই (নাৎসিমুক্তকরণ) করা হবে
২) পাশ্চাত্য রাশিয়ার বিরুদ্ধে টোটাল ইনফরমেশনাল ও অর্থনৈতিক যুদ্ধ ঘোষণা করেছে এবং নিজের প্রপাগান্ডা নিজেরাই অনেকাংশে বিশ্বাস করছে, যা বিস্ময়কর রকমের বিপজ্জনক
৩) রাশিয়া যুদ্ধে হেরে যাবে বলে পাশ্চাত্যের লোকদের (প্রচারণার মাধ্যমে) বোকা বানানো হচ্ছে; কিন্তু যখন উল্টোটা ঘটবে লোকজন তাদের নিয়ে ব্যঙ্গ করবে
৪) যারা এ যুদ্ধের ফল উল্টে দিতে চায় তারা গাড্ডায় পড়বে; ন্যাটোর হদ্দ বোকাদের এবং ক্ষেত্রবিশেষে মার্কিন এলিটদের অবস্থা খুব করুণ হবে। তারা বিশ্বাস করতে পারে না যে, রাশিয়ার হাতে এ যুদ্ধ জয়ের সব উপকরণ আছে, এমনকি সামরিক উপকরণও আছে
দ্য স্যাকার পূর্বাভাস করেছে: ন্যাটো জানে, রাশিয়ার সাথে যুদ্ধে জেতা সম্ভব নয়। আবার তারা পরাজয় স্বীকার করে নিতেও রাজি নয়। ন্যাটোর পরাজয় মানে তো ন্যাটোর বিলুপ্তি। তাহলে কি শেষ পর্যন্ত ন্যাটো/ইইউ এ যুদ্ধে জড়াতে পারে? তখন রাশিয়া এবং ন্যাটো/ইইউ উভয়ের পক্ষ থেকে পারমাণবিক আক্রমণ ঘটতে পারে। এই কেয়ামত থামানোর জন্য পাশ্চাত্যে কি বুদ্ধিমান কেউ নেই!