Published : 16 Jan 2022, 11:46 AM
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বিশ্বের একজন প্রাজ্ঞ রাজনীতিক ও সফল রাষ্ট্রনেতা হিসেবে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অনন্য নজির সৃষ্টি করে চলেছেন। পাশাপাশি আশৈশব নিজের রাজনীতি-ঘনিষ্ঠ যাপিত জীবনের অভিজ্ঞতায় লেখালেখিতে এবং অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টি নিয়ে বঙ্গবন্ধুর তিনখানা মহাকাব্যিক আত্মজীবনী প্রকাশনায় ও চৌদ্দ খণ্ড গোয়েন্দা দলিলপত্র সম্পাদনায় ব্রতী হয়ে বাঙালি জাতির জ্ঞানভাণ্ডার চিরকালের সম্পদে সমৃদ্ধ করেছেন। এই ইতিহাসভিত্তিক জ্ঞান-সম্পদের নতুন সংযোজন তার সম্পাদনায় সদ্য প্রকাশিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মশতবর্ষ স্মারকগ্রন্থ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটির পক্ষে জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি কর্তৃক প্রকাশিত স্মারকগ্রন্থটি সম্পাদনায় তার নিরলস পরিশ্রম, প্রজ্ঞা এবং লেখকদের ক্রমাগত পরামর্শ প্রদানের কথা এক-দুইবার তার নিজের কাছ থেকে এবং প্রকাশনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের নিকট থেকে জেনে গ্রন্থটি পড়ার প্রতীক্ষায় ছিলাম। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী ও লেখক-সম্পাদক শেখ হাসিনার একজন গুণমুগ্ধ পাঠক হিসেবে স্মারকগ্রন্থটি পড়ে আমি যারপরনাই ঋদ্ধ হয়েছি। সেই সূত্রে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ স্মারকগ্রন্থ নিয়ে গণমাধ্যম পাঠকদের সঙ্গে আমার কিছু কথা বিনিময় করা একান্ত কর্তব্য বলে মনে করি। আমার এই সামান্য লেখাটির উদ্দেশ্য হলো দেশে-বিদেশে বাঙালির নতুন প্রজন্ম ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী বিশাল জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্মারকগ্রন্থটি সম্পর্কে কৌতুহল সৃষ্টি করা যাতে তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালি জাতির সংগ্রামমুখর রাজনৈতিক ইতিহাসের অনন্য দলিল– এই মহামূল্যবান আকর গ্রন্থটি পড়তে আগ্রহী হয়।
উল্লেখ করা একান্ত আবশ্যক যে, গত ১৬ই ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে স্মারকগ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়। বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও সম্মানীয় অতিথি ভারতের মহামান্য রাষ্ট্রপতি শ্রী রাম নাথ কোবিন্দ স্মারকগ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচনে অংশ নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বাঙালি জাতিকে গৌরবান্বিত করেছেন।
দুই.
এই স্মারকগ্রন্থটিতে ৫৭টি প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও স্মৃতিচারণমূলক লেখা গ্রথিত হয়েছে। মুদ্রিত হয়েছে জাতির পিতার জাতকঘর থেকে শৈশব-কৈশোর-যৌবন এবং বর্ণাঢ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক জীবন থেকে টুঙ্গিপাড়ার সমাধি পর্যন্ত ৬০টি ঐতিহাসিক আলোকচিত্র। গ্রন্থটিকে সম্পাদক শেখ হাসিনা– বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শিশুকাল; স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় তারুণ্যদৃপ্ত প্রতিবাদ ও মানবসেবা ভরপুর রাজনৈতিক জীবন; ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্বদান; বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামের পথে পথে দুঃসহ নির্যাতন ও দুঃখকষ্টকর কারাজীবন; বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফার সংগ্রাম; আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা; উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও বঙ্গবন্ধু উপাধি অর্জন; মুজিবের প্রিয় রেণুর প্রজ্ঞাময় পারিবারিক ও রাজনৈতিক ভূমিকা; ৭ই মার্চের পৃথিবী কাঁপানো ভাষণ থেকে ২৬শে মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে বাঙালি জাতিকে বাঁচাতে গ্রেফতারবরণ; বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান বন্ধুদেশ ভারতের সর্বাত্মক সহায়তা ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের বিশেষ ভূমিকা; মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানের নরকযন্ত্রণাদায়ক কারাগার থেকে ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি মুক্ত-স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন; দুনিয়ার বহু দেশের স্বীকৃতি আদায়ের কূটনৈতিক সাফল্য এবং নতুন বাংলাদেশ পুনর্গঠনের উদ্যোগ ইত্যাদি সকল বিষয়ে রাজনীতিক-কবি-লেখক-সাংবাদিকসহ বিশিষ্টজনদের লেখা দিয়ে নিপুণভাবে সাজিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর মহাজীবন ও বাংলাদেশের ঘটনাবহুল রাজনৈতিক ইতিহাস সম্বন্ধে আগ্রহী পাঠক-গবেষকগণের জন্যে এই গ্রন্থে রয়েছে বিপুল তথ্যের সমাহার ও বিশ্লেষণ। তাই, ৬৩১ পৃষ্ঠার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মশতবর্ষ স্মারকগ্রন্থ'-এর বিদগ্ধ লেখকবৃন্দ ও যোগ্য সম্পাদক শেখ হাসিনাকে আমি সশ্রদ্ধ অভিনন্দন, ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
তিন.
এই স্বল্প পরিসরে অতিসংক্ষেপে গ্রন্থভুক্ত কয়েকটি লেখা নিয়ে সামান্য কিছু কথা নিবেদন করতে চাই। প্রথমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও 'জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটি'র মাননীয় সভাপতি শেখ হাসিনা কর্তৃক লিখিত 'ভূমিকা'র কথা বলতে হয়। ছোট-ছোট আট পর্বে স্মারকগ্রন্থের অসামান্য ভূমিকায় শব্দচয়নে, ভাষার ছন্দময় সচলতায় ও হৃদয়স্পর্শী উপস্থাপনায় তিনি অপূর্ব নৈপুণ্যে ফুটিয়ে তুলেছেন বঙ্গবন্ধু ও বাঙালি জাতির দীর্ঘ সংগ্রামের অনুপম ইতিহাস। ভূমিকাটি পাঠ করলে মনে হয় গ্রন্থের ভিতরে প্রবেশের বুঝিবা প্রয়োজন নেই। প্রসঙ্গত লেখক শেখ হাসিনা ইতোপূর্বে তার রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থগুলোর শুরুতে যে কয়টি 'ভূমিকা' ও 'মুখবন্ধ' রচনা করেছেন– সেগুলোও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও সাহিত্যের প্রসাদগুণে সমৃদ্ধ।
স্মারকগ্রন্থের শুরুতে 'বঙ্গবন্ধু: আমার রাজনীতি ও সংসদ' শিরোনামে স্মৃতিচারণমূলক প্রথম লেখাটি বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রাবস্থায় ১৯৫৪ সালে ব্যবসায়ী পিতার গদিঘর থেকে ভৈরব রেলস্টেশন সংলগ্ন ভৈরব বাজারে যাবার পথে রাস্তার পাশে চাষ করা জমিতে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী জনসভায় তরুণ রাজনৈতিক নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের দোলায়িত ছন্দে আবিষ্ট হওয়া; ১৯৬৬ সালে বন্দি শেখ মুজিবকে কিশোরগঞ্জ রেলস্টেশনে সম্বর্ধনা প্রদান ও নেতার উপস্থিতিতে 'জ্বালাময়ী' বক্তৃতা দেয়া থেকে শুরু করে বঙ্গবন্ধুর মহান শিক্ষাকে ধারণ করে বাঙালির মুক্তিসংগ্রামে অংশগ্রহণ; স্বাধীনতা-উত্তরকালে সংসদে বিরোধী দলের প্রতি বঙ্গবন্ধুর বিশাল হৃদয়ের উদারতার কথা জানিয়ে নিজের রাজনৈতিক জীবনের পথ চলার প্রেরণাদায়ী নানান স্মৃতি মেলে ধরেছেন আমাদের সামনে। আহ্বান জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর জীবন-ভাবনা ও রাজনৈতিক দর্শন সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার। এমন সুন্দর স্মৃতিচারণা বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের রাজনীতির গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে নিশ্চয়ই ভাবতে শেখাবে।
লেখক শেখ হাসিনার '১৫ই আগস্ট ১৯৭৫' শীর্ষক নিবন্ধটি আমাদের যুগপৎ অশ্রুভারাক্রান্ত করে এবং পিতৃহত্যার প্রতিশোধ বা বিচারের দাবি ও যৌক্তিকতাকে প্রবল করে তোলে। ছোট নিবন্ধে বঙ্গবন্ধুর জন্মের সময়ে পরিবারের আনন্দঘন পরিবেশ; নানা শেখ আবদুল মজিদ কর্তৃক শিশুর জগৎজোড়া খ্যাতি অর্জন করার যোগ্য নাম দেয়া [শেখ মুজিবুর রহমান]; আর দুঃসহ জেল-জুলুম-অত্যাচার নিঃসঙ্কোচে মাথা পেতে নিয়ে প্রিয় মাতৃভূমি, বাংলা ভাষা ও বাংলার ভুখা-নাঙ্গা-শোষিত-বঞ্চিত মানুষকে ভালোবেসে তাদের জন্যে স্বাধীনতা এনে দেয়ার সংগ্রামমুখর ইতিহাস এবং ১৫ই আগস্টের অসহায় অন্ধকারে স্বাধীনতার মহান স্থপতি শেখ মুজিব, তার পরিবারবর্গ ও স্বজন হারানোর করুণ-নির্মম-নির্দয়তা বর্ণনা করেছেন বেদনাবিধুর কথকতায়। অন্যদিকে, সদ্য স্বাধীন দেশে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ও পরাজিত পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের অর্থে এবং পরামর্শে জাসদের বিস্তার, নৈরাজ্যকর ভূমিকা আর 'জৌলুসে ভাটা' পড়ার ব্যাখ্যা শেখ হাসিনার কলমে উঠে আসা ইতিহাসের প্রয়োজনে যথার্থ হয়েছে। পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্টের পরেও সামরিকজান্তা জিয়ার ছত্রছায়ায় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে তখনকার জাসদের অত্যাচার-নির্যাতনের ভুক্তভোগী ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে আমি নিজেই তার স্বাক্ষী।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানার শৈশব-কৈশোর ও তারুণ্যের খণ্ড-খণ্ড দুঃখ-সুখের স্মৃতিকথা; পিতার আলফা ইনস্যুরেন্সে চাকরিকালের আটপৌরে পারিবারিক সুখের সময়; জেল ফেরত পিতাকে কাছে পাওয়ার আনন্দ কিংবা দুঃসহ জেলজীবনের কথা জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধুর উক্তি: 'থাক সে সব কথা, তুই সহ্য করতে পারবি না'র মতো স্মৃতিচারণ আমাদের দুচোখ পানিতে ভরিয়ে দেয়। আবার, বড়ভাই শেখ কামালের নেতৃত্বে স্কুলছাত্রী শেখ রেহানার বাঙালি সংস্কৃতিবিরোধী বই বাতিলের আন্দোলনে যোগ দেওয়া, উনসত্তরে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির মিছিলে গগন-ফাটানো শ্লোগান, ১৯৭০-এর নির্বাচনের কাজে দায়িত্বপালন, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের দৃঢ় রাজনৈতিক ভূমিকা, একাত্তরের সন্ত্রস্ত স্মৃতি, ১০ই জানুয়ারি পিতাকে ফিরে পাওয়ার আনন্দ এবং মস্কোতে চিকিৎসাধীন পিতা মুজিবের আজীবনের 'হৃদয়ের ডাক্তার' বঙ্গমাতাকে নিয়ে রসিকতা ইত্যাদি কতই-না অম্ল-মধুর স্মৃতি শেখ রেহানার। তাদের দুইবোনকে ছেড়ে প্রিয়তম পিতা এত তাড়াতাড়ি চলে যাবেন এখনো তা ভাবতে পারেন না বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠাকন্যা শেখ রেহানা! পিতার দরাজ কণ্ঠ থেকে স্মৃতিতে ধারণ করা মহৎ নীতিকবিতা– 'পরহিংসা পরচর্চা না করিও মনে,/কভূ না করিও মন লোভ পরধনে'– এই দর্শন মেনে তিনি অন্তরে-বাহিরে মাতৃতুল্য বড়বোন প্রজ্ঞাময়ী রাজনীতিক-রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার চলার পথের নিত্যসঙ্গী হয়ে জাতির পিতার সোনার বাংলা গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করেছেন। বঙ্গবন্ধু পরিবারের সীমাহীন আত্মত্যাগের পাশাপাশি জাতির পিতার পবিত্র জীবন ও রক্তের সুযোগ্য উত্তরাধিকারী এই দুই বোনের কাছে আমাদের ঋণের সীমা নেই।
অগ্রগণ্য মননশীল লেখক ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক মফিদুল হকের 'পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধু: নিঃসঙ্গ লড়াই' শীর্ষক লেখাটি স্মারকগ্রন্থের একটি তাৎপর্যপূর্ণ নতুন সংযোজন। ১৯৭১-এ যার নামে ও প্রেরণায় দেশমাতৃকার মুক্তির জন্যে অকাতরে ধন-মান-প্রাণ উৎসর্গকারী বাংলার স্বাধীনতাকামী মানুষের কাছে অজানা ছিল তাদের প্রিয়নেতা বঙ্গবন্ধু মুজিব কোথায় আছেন, কেমন আছেন, বেঁচে আছেন কিনা! সেই অজানা ইতিহাসের কিছুটা আমরা পেয়েছি মফিদুল হকের এই লেখায়। গ্রীষ্মে পাকিস্তানের ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রার এলাকা লায়ালপুরের মিয়ানওয়ালি কারাগারের ফাঁসির সেলের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে অসহনীয় যাতনায় পিষ্ট হয়েও প্রহসনের বিচারকে নির্বিকারে পৃষ্ঠদেশ দেখিয়ে এবং মৃত্যুদণ্ডাদেশ ও খুঁড়ে-রাখা কবরের ভয় তুচ্ছ করে বাঙালির হাজার বছরের অহংকার ও মুক্তির মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর দৃঢ়চিত্ত ও শৌর্য-বীর্যের ইতিহাসের এই মর্মস্পর্শী খণ্ডাংশটুকু স্মারকগ্রন্থ থেকে পড়ে নেবার জন্যে পাঠকদের কাছে আকুতি জানাই।
বাংলাদেশ সৃষ্টিতে ও বাঙালির রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক মুক্তির লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামের ক্রমাগত অগ্রযাত্রার ইতিহাস, দেশ ও মানুষের প্রতি ভালোবাসা এবং তার রাষ্ট্রদর্শন বোঝার জন্যে স্মারকগ্রন্থের প্রতিটি লেখাই নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। তবু কিছু লেখা বঙ্গবন্ধুর অন্তহীন ত্যাগ ও দেশভাবনা সম্পর্কে অজানা তথ্যের সন্ধান দিয়ে পাঠক-গবেষকদের মধ্যে নতুন অনুসন্ধিৎসার জন্ম দেবে বলে আমার বিশ্বাস। সেই ক্ষেত্রে মাননীয় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের রাজনৈতিক দর্শন ও বাংলাদেশের সংবিধান ১৯৭২'; সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের 'বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব'; এ বি এম খায়রুল হকের 'পাকিস্তানের সংবিধান ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব; সৈয়দ আবুল মকসুদের 'মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব'; আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, মানিক মিয়া ও ইত্তেফাক'; আসাদুজ্জামান নূরের 'বঙ্গবন্ধুর সংস্কৃতি ভাবনা'; নাসির উদ্দীন ইউসুফের 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সাংস্কৃতিক চেতনা ও বাংলাদেশ রাষ্ট্র; ইমদাদুল হক মিলনের 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কিশোরবেলা'; আনিসুল হকের 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা'; সিমিন হোসেন রিমির 'স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও জাতীয় চারনেতা' শিরোনামের লেখাগুলো বিশেষভাবে উল্লেখের দাবি রাখে এবং বৃহত্তর পরিসরে এগুলো নিয়ে আলোচনা করার ইচ্ছা রইল।
চার.
আমরা জানি, বাঙালির ভাষা আন্দোলন থেকে সকল রাজনৈতিক সংগ্রামের বস্তুনিষ্ঠ তথ্য, সঠিক ইতিহাস ও অমূল্য দলিল বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা, আমার দেখা নয়াচীন এবং পাকিস্তান সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট নিয়ে Secret Documents of Intelligence Branch on Father of the Nation Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman প্রকাশিত হওয়ায় আজ বাংলাদেশের ইতিহাসপাঠে, চর্চায় ও গবেষণায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করেছে। এ প্রসঙ্গে একটি বিষয় উল্লেখ করতেই হয় যে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মশতবর্ষ স্মারকগ্রন্থ'-এর ৫৭টি লেখার মধ্যে ৪০টিতে বঙ্গবন্ধুর তিনখানা মহাকাব্যিক আত্মজীবনীগ্রন্থ; শেখ হাসিনা সম্পাদিত Secret Documents… এবং তার [শেখ হাসিনা] রচিত গ্রন্থসমূহ সর্বাধিকবার রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এই কৃতিত্ব বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার। আমরা গর্বিত যে, একদিকে পিতা মুজিবের মতোই সকল জটিল-কুটিল ষড়যন্ত্র আর প্রতিনিয়ত মৃত্যুবাণ তুচ্ছ করে, দেশের মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন ও ভালোবাসায় অভিষিক্ত হয়ে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে উন্নত দেশের পথে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। অন্যদিকে রাষ্ট্র পরিচালনার সীমাহীন ব্যস্ততার মধ্যেও চলমান রেখেছেন তার শক্তিমান লেখনি। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ স্মারকগ্রন্থ সম্পাদনায় জ্ঞানপিপাসু শেখ হাসিনার তীক্ষ্ণ অনুসন্ধিৎসা, অক্লান্ত পরিশ্রম, অপরিসীম ধৈর্য্য, গভীর নিষ্ঠা এবং সযত্ন প্রয়াসে যুগপৎ বিস্মিত ও আলোড়িত হতে হয়। বাংলাদেশের রাজনীতির আগ্রহী পাঠক-গবেষক, তরুণ প্রজন্ম ও নাগরিক সমাজের জন্যে ইতিহাসের এই বিশাল তথ্য ও জ্ঞানভাণ্ডার উপহার দিয়ে লেখক-সম্পাদক শেখ হাসিনা আমাদের চিরঋণী ও কৃতজ্ঞতায় আবদ্ধ করলেন।