Published : 20 Jul 2020, 08:41 PM
নভেল করোনাভাইরাস যখন হানা দেয় তখন চিকিৎসা বিজ্ঞান পার্সোনালাইজ মেডিসিনের স্বপ্নের ডানায় উড়ছিল। কোভিড আক্রমণে ধরাশায়ী হলেও মুখ থুবড়ে না পড়ে গতিমুখ চালিত রাখে মলিকিউলার (জেনেটিক) সলিউশন পেতে। সাংহাই ল্যাবরেটরি দশ দিনের মাথায় ৩০ হাজার নিউক্লিওটাইডের আরএনএ মলিকিউলের জিন-রহস্য উন্মোচন করল। জার্মানি, হংকংয়ের অ্যাকাডেমিক ল্যাবরেটরিগুলো সার্স ভাইরাসের জিন নাড়াচাড়া করে প্রস্তুত ছিল। জার্মানির চারিটি ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি সাত দিনের মধ্যেই আরটি-পিসিআর ডায়াগনোস্টিট টেস্টের প্রটোকল জমা দিল। ডব্লিউএইচও ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে পৃথিবীর ১৫৯ ল্যাবরেটরিতে ২ লাখ ৫০ হাজার টেস্ট প্রেরণ করল। মলিকিউলার ডায়াগনোস্টিক পদ্ধতির মধ্যে পিসিআর পরীক্ষা সবচেয়ে প্রচলিত।
কোনও দেশই জানে না মোট কত মানুষ কোভিড ১৯ এ আক্রান্ত। পরীক্ষা ব্যতিরেকে কোনো তথ্য আমরা দিতে পারব না। কেবল সঠিক সংখ্যার ল্যাবরেটরি পরীক্ষার মাধ্যমেই মোট সংক্রমণের সঠিক সংখ্যার কাছাকাছি সংখ্যা নির্ণয় করা সম্ভব। প্যানডেমিকের বিস্তারের মাত্রা নির্ণয়ের জন্য টেস্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্যানডেমিক নিয়ন্ত্রণের স্তম্ভই টেস্ট। প্যানডেমিক নিয়ন্ত্রণে আনার পদক্ষেপ নিতে, পদক্ষেপগুলির সঠিকতা মূল্যায়নে, ক্লিনিকাল মেথডে ফলাফলের যথার্থতা মূল্যায়নের জন্য প্রয়োজন টেস্টের সঠিক পরিসংখ্যান।
কোভিড ১৯ আক্রান্ত নির্ণয়ে টেস্ট পদ্ধতি
কোভিড ১৯ আক্রান্ত ব্যক্তি চিহ্নিতকরণে তিন ধরনের পরীক্ষা পদ্ধতির উল্লেখ করা যায়-
নিউক্লিক এসিড টেস্ট যা ভাইরাল আরএনএ শনাক্ত করে (আরটি-পিসিআর পরীক্ষা)।
অ্যান্টিজেন টেস্ট যা ভাইরাল অ্যান্টিজেন শনাক্ত করে।
অ্যান্টিবডি টেস্ট যা শরীরের ভিতরে ভাইরাসের বিপরীতে তৈরি অ্যান্টিবডি শনাক্ত করে।
অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি শনাক্তকরণে র্যাপিড ডায়াগনোস্টিক টেস্ট, অ্যালাইজা টেস্ট ও কেমিলুমিনিসেন্স টেস্ট পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। এর বাইরেও সম্পূর্ণ জিনোম সিকুয়েন্সিং এবং তার মাধ্যমে ভ্যারিয়েন্ট চিহ্নিত করা যায়।
আরটি-পিসিআর: সর্বোচ্চ সেনসিটিভ এবং সুনির্দিষ্ট ডায়াগনোস্টিক পরীক্ষা যা গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে গণ্য হয়। এই পরীক্ষা পদ্ধতি দক্ষতা নির্ভর, সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল। তবে কিছুটা ব্যয়বহুল হলেও কার্টিজ বেজড আরটি-পিসিআর পদ্ধতি দ্রুত ও সহজ পদ্ধতি। কোভিড সংক্রমণের আগেই দেশে দুইশত'র বেশি র্যাপিড আরটি-পিসিআর মেশিন ছিল। এপ্রিল মাসে এফডিএ অনুমোদিত কিট উদ্ভাবন হয়েছে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এবং ইউনিসেফ ও ডব্লিউএইচও কর্তৃক সমস্ত উৎপাদন ক্রয়ের ফলে সেই কিট দেশে আনা সম্ভব হয়নি।
অ্যান্টিজেন টেস্ট: ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত করে। ভাইরাল সংক্রমণ নির্ণয়ের জন্য (যেমন NS1 ডেঙ্গু জ্বরে ০-৭ দিনের মধ্যে) এটি আমাদের প্রথম পছন্দ ছিল। অনেকগুলো অ্যান্টিজেন শনাক্তকরণ কিট এফডিএ এবং অন্যান্য দেশের কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে অনুমোদন দিয়েছে। নির্ভুলতার মাত্রায় কিটগুলো এখন পর্যন্ত আরটি-পিসিআরের সমতুল্য তবে সেনসিটিভিটিতে পিছিয়ে আছে। অ্যান্টিজেন শনাক্তকরণে তিনটি পদ্ধতি বাংলাদেশে প্রচলিত আছে। তার মধ্যে র্যাপিড ডায়াগনস্টিক টেস্ট পদ্ধতি সহজ, দ্রুত ও সাশ্রয়ী।
অ্যান্টিবডি টেস্ট: সক্রিয় কোভিড সংক্রমণ নির্ণয়ে ব্যবহার খুবই সীমিত। উপসর্গ আসার ১৪-২৫ দিনের মধ্যে অ্যান্টিবডি টেস্টের সেনসিটিভিটি ৯০ শতাংশের উপর অর্জন করে। এর ফলে ক্লিনিকাল সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও সংক্রমণ প্রতিরোধে (টেস্টিং, ট্র্যাকিং ও ট্রেসিং TTT) তেমন কার্যকর ভূমিকা রাখছে না। দেরিতে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে আসা আরটি-পিসিআর নেগেটিভ রোগীদের জন্য অ্যান্টিবডি টেস্ট ব্যবহৃত হতে পারে। কনভ্যালসেন্ট থেরাপি প্রদানের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। প্লাজমা কনভালসেন্স ও সেরো প্রিভিলেন্স জানার জন্য অ্যান্টিবডি টেস্টের অনুমোদন দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন। শত শত প্রস্তুতকারক কোম্পানি তাদের কিট বাজারজাতকরণের দৌড়ে আছে। তাই কোন কিট ব্যবহার করব সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে যেন আমরা প্রতারিত না হই। আরও মনে রাখা দরকার, শরীরে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি ইমিউনিটির নিশ্চয়তা প্রদান করে না।
বাংলাদেশে কোভিড ১৯ টেস্টের চিত্র এবং দৈনিক কয়টি টেস্ট হওয়া উচিত
আইইডিসিআর শুরু থেকে কর্তৃত্ব ও দৃঢ়তার সাথে কোভিড ১৯ আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করলেও তাদের একক কর্তৃত্বপরায়নতা ও সীমিত টেস্ট সংখ্যার জন্য প্যানডেমিক প্রতিরোধে সম্মিলিত প্রস্তুতি গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করে। অবিশ্বাস্য হলেও সরকারি হস্তেক্ষেপে দক্ষ টেকনোলজিস্ট, জনবল ও অবকাঠামোবিহীন অবস্থা থেকে দেশের ৬৮ টা ল্যাবরেটরিতে কয়েকশ পরীক্ষা থেকে প্রতিদিন ১৫ হাজার টেস্টে উন্নীত করতে সক্ষম হয়। আরটি-পিসিআর পরীক্ষার দুরূহ অংশ এক্সট্রাকশন। বাংলাদেশে যে টেস্ট কিটটি দিয়ে পরীক্ষা শুরু হয় সেটিতে দ্রুত ও সহজ এক্সট্রাকশন পদ্ধতি সংযোগ হওয়ায় এভাবে এত দ্রুত ল্যাবরেটরি সম্প্রসারণ করা সম্ভব হয়েছে। তবে এখনও রিপোর্ট প্রদানে পাঁচ থেকে পনের দিন সময় লাগছে। তার ফলে করোনাভাইরাস পরীক্ষার মূল উদ্দেশ্য দ্রুত রোগী শনাক্ত করে আইসোলেশন ও কন্ট্যাক্ট ট্রেসিংয়ের মাধ্যমে সংক্রমণ প্রতিরোধ করা নিস্ফল হয়ে যাচ্ছে। সার্বিকভাবে ভাইরাল ট্র্যান্সপোর্ট মিডিয়ায় সংগ্রহ করা নমুনা দুই-তিন ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় তিনদিন পর্যন্ত পরীক্ষার উপযুক্ত থাকে। জমে থাকা নমুনার পরীক্ষা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। এছাড়া প্রকৃতপক্ষে এটা সেই দিনের আক্রান্ত মানুষের পরিসংখ্যানও নয়। প্রতিদিনের ব্রিফিংয়ে শুধু পঞ্চাশজন বা তার নিচের মৃত্যু সংখ্যা জানছি। কোভিডের মত উপসর্গ নিয়ে যাদের মৃত্যুর খবর আসছে তারা কোন রোগে মারা যাচ্ছেন? বাসায় যাদের মৃত্যু হচ্ছে তারা কোন রোগে মারা যাচ্ছেন?
আক্রান্ত ২১৫ টি দেশের মধ্যে কোভিড ১৯ এ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ ১৭ তম। অন্যদিকে প্রতি মিলিয়ন জনসংখ্যায় টেস্ট সংখ্যা গননায় বাংলাদেশ যৌথভাবে মেক্সিকোর সাথে সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে। আমাদের দেশের বিশেষজ্ঞরা প্রথম থেকেই বলে আসছেন প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম টেস্ট করা হচ্ছে। ডব্লিউএইচও এর ভাষ্যও তাই। ডব্লিউএইচও মনে করে প্রতিটি শনাক্তের বিপরীতে ১০ হতে ৩০টি টেস্ট করা প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে আমরা বেঞ্চমার্কের মাত্র ১৭-৫০ শতাংশ পূরণ করছি। ডব্লিউএইচও আরও মনে করে পরীক্ষাকৃত নমুনার মধ্যে পজেটিভ রেট থাকা উচিত ০৩-১২ শতাংশ। গত সাতদিনে আমাদের গড় পজেটিভ হার ২৩ শতাংশ। এই দু'টি পরিসংখ্যান বলছে, আমরা করণীয় টেস্ট সংখ্যা হতে বিপদজনক দূরত্বে অবস্থান করছি।
পরীক্ষায় ফিস নির্ধারণ ও বিদেশ গমণে কোভিড সনদের বাধ্যবাধকতা
যেখানে পরীক্ষা সম্প্রসারণের প্রয়োজন সরকার সেখানে পরীক্ষাকে সংকুচিত করছে। পরীক্ষার ফিস নির্ধারণের যুক্তি হিসেবে সরকার বলছে অপ্রয়োজনীয় টেস্ট নিরুৎসাহিত করতেই এই পদক্ষেপ। ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে যাদের টেস্ট করানোর সক্ষমতা ছিল তারা মনের দ্বিধা দূর করার জন্য ২০০ টাকা ব্যয়ে ৫০০০ টাকার টেস্ট করানোর নৈতিক অধিকার পেয়ে যাবে। দরিদ্র মানুষের জন্য ওই ২০০ টাকাই প্রতিবন্ধক হবে। সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়বে।
জমি বিক্রি করে অতিরিক্ত টাকায় টিকিট কিনে বিমানে ওঠার শেষ সময়ে জানছে- কোভিড পরীক্ষার সনদ লাগবে। স্বভাবতই প্রাইভেট ল্যাবে ধরনা দিয়ে দ্রুত টেস্ট করে দিতে কাকুতি-মিনতি করছে। নতুন ব্যবসার দ্বার খুলে গেছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উচিত আইপিএইচ বা নিপসমের মত প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিয়ে বোর্ডের মাধ্যমে সার্টিফিকেট প্রদান করা এবং দিনরাত চালু রেখে নিখরচায় এই সেবা প্রদান করা। এই প্রতিষ্ঠানগুলিকে সক্রিয় করতে হবে এবং দায়িত্ববোধের জায়গায় নিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে।
প্রয়োজনীয় বিপুল সংখ্যায় টেস্ট কীভাবে সম্ভব?
ডব্লিউএইচও নির্ধারিত বেঞ্চমার্কে পৌঁছাতে আমাদের প্রতিদিন ৩০ থেকে ৯০ হাজার টেস্ট করা প্রয়োজন। এই বিপুল পরিমাণ পরীক্ষা করার সামর্থ্য কি আমাদের আছে? টেকনিকাল ও সময় সংক্রান্ত বাধা ছাড়াও ব্যয়ের বিষয় রয়েছে। প্রতিটা আরটি-পিসিআর টেস্টের ব্যয় পাঁচ হাজার টাকা ধরলে প্রতিদিন জনগণের পকেট থেকে সাত কোটি টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে। আমাদের অবকাঠামোয় প্রয়োজন একটি দ্রুত, সহজলভ্য (সাশ্রয়ী) ও সহজ পদ্ধতির পরীক্ষা। র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট সেই স্থানটি অনেকাংশে পূরণ করতে পারবে। যথার্থতার মাত্রায় (specificity) বাজারজাত কিটসমূহ আরটি-পিসিআরের সমতুল্য হলেও সেনসিটিভিটিতে এখনও বাজারজাত কিটসমূহ পিছিয়ে আছে। এফডিএ এবং অনেক দেশের কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে অ্যান্টিজেন টেস্ট কিটের অনুমোদন দিয়েছে। দ্রুততম সময়ে একটি টেস্ট কিটকে অনুমোদন দিয়ে আমাদের ব্যাপকভাবে পরীক্ষা শুরু করা উচিত। সিদ্ধান্ত নিতে আমরা দেরি করে ফেলছি। জনপ্রতিনিধি, স্বেচ্ছাসেবক ও স্বাস্থসেবাকর্মীদের সাথে নিয়ে এক-দুইদিনের মধ্যে আমরা যে কোনো হটস্পটের প্রত্যেকের পরীক্ষা করে ফেলতে পারব। ফলস নেগেটিভ কেসসমূহ চিহ্নিত করতে উপসর্গবাহী অ্যান্টিজেন টেস্ট নেগেটিভ ব্যক্তিদের নমুনা তাৎক্ষণিকভাবে সংগ্রহ করে আরটি-পিসিআর টেস্টের জন্য প্রেরণ করতে হবে। পরীক্ষার ভিত্তিতে আক্রান্ত ব্যক্তিকে আইসোলেশন, কার্যকর কনট্যাক্ট ট্রেসিং এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলন অবশ্যই কোভিড সংক্রমণ দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনবে।
অনেক দেশ করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে বিস্ময়কর সাফল্য দেখিয়েছে। তাদের সাফল্যের পিছনে যে সমস্ত কারণকে দেখানো হয়েছে তাতে ওই সমস্ত দেশের ডায়াগনোস্টিক ইন্ডাস্ট্রির নিজস্ব কোভিড ১৯ ডায়াগনোস্টিক কিট তৈরি ও ব্যাপক উৎপাদন করার ক্ষমতা (যেমন দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম) অনুল্লেখ্য থেকে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায় যুক্তরাষ্ট্রের বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ মার্চ মাসের আগে নিজস্ব কার্যকর কিট নিয়ে আসতে না পারা। আমরা কি পারি না কথার ফানুস না উড়িয়ে বিজ্ঞানের নীতিমালায় সত্যনিষ্ঠ থেকে নিজস্ব কিট উৎপাদন করতে? গণস্বাস্থ্য উদ্ভাবিত কিটটির মান উন্নয়নে আরও বিজ্ঞানভিত্তিক পদক্ষেপের প্রয়োজন ছিল। এক্ষেত্রে মিডিয়ায় যতটা সক্রিয়তা দেখা গেছে গবেষণাগারে ততটা ছিল না। আমরা কি পারি না জার্মানির চ্যারিটি ভাইরোলজি ইনস্টিটিউটের মত প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে? আমরা কি পারি না নিপসম, আইপিএইচকে জন হপকিন্সের মত প্রতিষ্ঠানের উচ্চতায় নিয়ে যেতে? কোভিড সংকটকালে জরুরী ব্যবস্থার সাথে সাথে দীর্ঘমেয়াদী প্রতিজ্ঞা পূরণেও হাত দিতে হবে।
দুঃসময়ে আমরা পরষ্পরকে অবিশ্বাস করি এবং দোষারোপ করি। এই কঠিন সংকটে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন স্বাস্থ্যসেবাকর্মী, রোগী, প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের সহমর্মিতা এবং ঐক্যবদ্ধতা। করোনায় স্ত্রীর মৃত্যুশোক সামলে নিয়ে নতুন স্বাস্থ্য সচিব গতানুগতিকভাবে নিজের পক্ষে সাফাই গেয়ে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে কাজ করা চিকিৎসকদের দিকেই আঙুল তুললেন, নসিহত দিলেন। যাদের অনুপ্রাণিত কাজ দিয়ে তিনি তার সাফল্যের জায়গাটা তৈরি করবেন সেখানেই হারালেন তার গ্রহণযোগ্যতা।
আত্মতৃপ্তি বা দম্ভের কোনো জায়গা নেই। পৃথিবীর দাম্ভিকতম মানুষটিও গতকাল গরুর গুমোই মুখে দিয়েছে। আমাদের বিনয়ী হতে হবে। মাথা নিচু করে শুনতে হবে। যেহেতু আমরা জানি না কীভাবে প্যানডেমিক মোকাবিলা করতে হয়, সবার টুকরো টুকরো জ্ঞানকে একত্রিত করতে হবে। শোনাটাই প্যানডেমিকের বড় কাজ। ব্যাপক কৌশলগত সমন্বয়, জনগণের বিপুল সম্পৃক্ততা এবং দৃঢ় সরকারি নেতৃত্ব ছাড়া ভয়াবহ সংক্রমণ ও মৃত্যুর আশংকা রোধ করা সম্ভব হবে না। বিরাজমান পরিস্থিতি ভয়াবহ অবনতির দিকে যাচ্ছে।
আমরা যদি টেস্ট (চোখ) বন্ধ করে বসে থাকি প্রলয় বন্ধ হবে না। জনগণের আস্থা অর্জনে, বহিঃবিশ্বে আস্থা অর্জনে, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সঠিক পরিসংখ্যান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কার্যকর ও সাশ্রয়ী টেস্ট ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। কোভিড ১৯ মোকাবিলা করতে হলে এই চ্যালেঞ্জ আমাদের নিতেই হবে।