Published : 23 Aug 2017, 03:56 PM
আদালতের রায় নিয়ে রাজনীতি হওয়ার কথা নয়। এটা প্রত্যাশিত নয়, অনাকাঙ্ক্ষিতও বটে। কিন্তু আমাদের দেশ সব সম্ভবের দেশ। এখানে সব হয়, হতে পারে। আমরা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছি। অসম্ভব সম্ভব করেছি। দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা, কারও দানে পাওয়া নয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর এক ভাষণে বলেছিলেন:
"বাংলাদেশ যেমন অনেক দেশপ্রেমিক জন্ম দিয়েছে, তেমনি কিছু বিশ্বাসঘাতকেরও জন্ম দিয়েছে।"
প্রশ্ন হল, দেশপ্রেমিক কিংবা বিশ্বাসঘাতক কি কারও গায়ে লেখা থাকে? সেটি নয়। কারও কার্যকলাপ দিয়েই তা বোঝা যায়। বিশ্বাসঘাতকরা কখনও কখনও দেশপ্রেমিকের ছদ্মবেশ ধারণ করে না তা-ও নয়। যেমন খোন্দকার মোশতাক আহমেদ। বঙ্গবন্ধুর আশেপাশেই থাকতেন। ১৯৭৫এর ১৫ আগস্ট সকালের আগে কেউ ভাবতে পেরেছিলেন বঙ্গবন্ধুর খুনিদের তালিকায় তার নাম থাকবে? অথবা এটা কি ভাবা গিয়েছিল যে, স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুকে ঘাতকের বুলেটে জীবন দিতে হবে?
ভাবা না গেলেও তা হয়েছে। বাংলাদেশে তা সম্ভব হয়েছে। আদালতের রায় সবার শিরোধার্য হওয়ার কথা। কিন্তু কখনও কখনও ব্যতিক্রম হয়। যেমন হয়েছিল যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায়ের ক্ষেত্রে।
এখন সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে দেশে দ্বন্দ্বাত্মক অবস্থা তৈরি হয়েছে। সাংবিধানিক ও আইনি বিতর্ক প্রতিদিনের রাজনৈতিক ইস্যু হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এটা নিয়ে পাল্টপাল্টি বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে উত্তেজনা জিইয়ে রাখা বা বাড়িয়ে তোলার চেষ্টা করছে। নির্বাহী ও বিচার বিভাগের এই দ্বন্দ্ব দেশকে কোন পরিণতির দিকে নিয়ে যাবে তা আমরা জানি না। শুধু দেখছি এই রায় একটি বড় 'রাজনীতি'র বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ থেকে কোন পক্ষ কীভাবে বেরিয়ে আসবে সেটা বোঝা যাচ্ছে না। পানি কেবল ঘোলা হচ্ছে। ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে যারা পারদর্শী তারা কি চুপচাপ বসে থাকবে? নাহ, তারা বসে নেই।
ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে রাজনীতির মাঠ যখন গরম– দেশের রাজনীতির প্রধান দুই প্রতিপক্ষ, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি যখন রায়ের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বাগযুদ্ধ শুরু করছে– তখন প্রধান বিচারপতি আদালতে ভিন্ন এক মামলার শুনানির সময় পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তাঁর স্বাধীন চিন্তার প্রকাশ ঘটালেন নাকি সমালোচনাকারীদের হুমকি দিলেন সে প্রশ্ন তোলা যেতে পারে।
রায় নিয়ে সরকার ও আওয়ামী লীগ প্রথমে হতচকিত হয়ে নীরব থাকলেও পরে রায়বিরোধী অবস্থান নিয়েছে। সরকারপক্ষের কারও কারও বক্তব্য-প্রতিক্রিয়া সংযত, পরিমিতিবোধের পরিচয়বাহী। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং সাবেক আইনমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল মতিন খসরু এই দলে। আবার অনেকের বক্তব্য অসংযত– মনোভাব যুদ্ধংদেহী। এই গ্রুপে দেখা যাচ্ছে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে। নরম-গরম পথে চলাই হয়তো সরকারের নীতি।
পরিস্থিতি নতুন মাত্রা পায় প্রধান বিচারপতি 'পাকিস্তান প্রসঙ্গ' উল্লেখ করার পর। তাঁর এই বক্তব্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ভালোভাবে নেননি। এক সভায় তিনি বলেছেন:
"সব সহ্য করা যায়, কিন্তু পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা করলে সেটা আমরা কিছুতেই সহ্য করতে পারব না।"
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যুদ্ধ করে পাকিস্তানকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। পাকিস্তান একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র। এর সঙ্গে তুলনা করা কেন? তাঁর বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট যে, সরকার প্রধান বিচারপতির বিদায় চাইছে। কিন্তু সেটা কীভাবে সম্ভব সেটাই এখন ভাবা ও দেখার বিষয়।
রায়ের যারা বিরোধিতা করছেন তাদের মূল বক্তব্য হল, এ রায়ে পর্যবেক্ষণ হিসেবে যেসব বিষয় আনা হয়েছে সেগুলো মামলার মূল বিষয়বস্তু থেকে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক। আবার যারা পক্ষে (বিএনপি বাদে, কারণ বিএনপি লাফাচ্ছে না বুঝে, তাদের আনন্দ আওয়ামী লীগকে বেকায়দায় দেখে) তারা পর্যবেক্ষণটি দেখছেন ইতিবাচকভাবে। তারা 'সত্য উচ্চারণ' ও 'সাহসী' ভূমিকার জন্য প্রধান বিচারপতির বন্দনা করছেন। কিন্তু আমরা সবাই কি জানি প্রধান বিচারপতি কী 'সত্য' উচ্চারণ করেছেন এবং কী 'সাহসী' ভূমিকা রেখেছেন?
প্রধান বিচারপতি রায়ে লিখেছেন:
"কোনো একক ব্যক্তি নিয়ে অথবা তার দ্বারা কোনো জাতি-দেশ গঠিত হয়নি।"
হ্যাঁ, জাতি-দেশ গঠনের পেছনে লাখো-কোটি মানুষের নানা মাত্রার অবদান থাকে। কিন্তু একক ব্যক্তি হয়ে ওঠেন ঐক্যের প্রতীক। একজনই বলতে পারেন, 'আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি', কিংবা 'রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দেবো, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ'। একজনই বলেন, 'এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম'।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি আছে। এই বিপক্ষ শক্তি মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান স্বীকার করতে চান না। প্রধান বিচারপতির বক্তব্য এদের উৎসাহিত করেছে। এই রায়ের সূত্র ধরে কেউ যদি বায়না ধরে যে, যেহেতু একক ব্যক্তি দ্বারা জাতি-দেশ গঠিত হয়নি সেহেতু সংবিধান থেকে 'জাতির পিতা' বাদ দিতে হবে তখন কী করবেন বা বলবেন বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা? এই হল তাঁর সত্য উচ্চারণ ও সাহসী ভূমিকা, যা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তি আলগা করে দেওয়ার পথ তৈরি করেছে!
বিচারপতি সিনহার সত্য ও সাহসের মধ্যে স্ববিরোধিতাও রয়েছে। তিনি এক জায়গায় যে যুক্তি দিচ্ছেন অন্য জায়গায় তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করেননি। যেমন, সামরিক শাসনামলের সমালোচনা করে তিনি বলছেন:
"ক্ষমতালোভীরা দুবার আমাদের রাষ্ট্রকে 'ব্যানানা রিপাবলিকে' পরিণত করেছিল, যেখানে ক্ষমতালোভীরা তাদের অবৈধ ক্ষমতাকে বৈধতা দেওয়ার জন্য জনগণকে পণ্যরূপে দেখেছে, ধোঁকা দিয়েছে। তারা জনগণের ক্ষমতায়ন করেনি, অপব্যবহার করেছে। তার নানা রকম ধোঁকাবাজির আশ্রয় নিয়েছে। কখনও ভোটের নামে, কখনও জোরপূর্বক নির্বাচনের মাধ্যমে, কখনও নির্বাচন না করে। এর সবটাই করা হয়েছে তাদের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে। আর এর মধ্য দিয়েই সুস্থধারার রাজনীতি পুরোপুরি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। এসব অগণতান্ত্রিক শাসনামলের নোংরা রাজনীতি চর্চা আমাদের সার্বিক জনরাজনীতির মারাত্মক ক্ষতি করেছে।"
তাঁর এই পর্যবেক্ষণ যদি সঠিক হয়, তাহলে তিনি যখন বলেন, 'এমন একটি পঙ্গু সমাজে আমরা আছি, যেখানে ভালো মানুষ আর ভালো স্বপ্ন দেখে না, কিন্তু খারাপ লোকেরা আরও লুটপাটের জন্য বেপরোয়া'– এটা তো সামরিক শাসনের 'লিগাসি' হিসেবেই দেখতে হবে, তাই নয় কি? কিন্তু বিচারপতি সিনহা তা দেখেননি।
বিএনপি যে এত খুশি, রায়টিতে যে তারা স্বাগত জানাচ্ছে, তারা কি ভালো করে পড়ে দেখেছে? রায়ের এই অংশের সঙ্গে কি তারা সহমত পোষণ করে? যদি করে তাহলে প্রশ্ন হল, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে, ধোঁকাবাজির রাজনীতির প্রবর্তক হয়ে আজ এত বড় গলায় কথা বলছে কোন নীতি-নৈতিকতা মান্য করে?
পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে:
"ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দাম্ভিকতা দেখানোর ক্ষেত্রে বাধা দেওয়ার মতো কোনো নজরদারি বা তদারককারী প্রতিষ্ঠান নেই। এমন প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষারও ব্যবস্থা নেই। নির্বাহী বিভাগ দাম্ভিক নিয়ন্ত্রণহীন হওয়ায় আমলাতন্ত্র কখনও দক্ষতা অর্জনে সচেষ্ট হবে না।"
প্রশ্ন হল, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দাম্ভিকতা দেখানোর ক্ষেত্রে বাধা দেওয়ার মতো নজরদারি বা তদারককারী প্রতিষ্ঠান কীভাবে গড়ে উঠবে? তদারককারী নিজেই যদি ক্ষমতার অপব্যবহার করে, দাম্ভিকতা দেখায়?
পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে:
"এখন রাজনীতি মুক্ত নয়। এটি বাণিজ্যিক বিষয়। আর অর্থ রাজনীতি পরিচালনা করে। আর সেটাই তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ করে দেয়। এখন মেধা নয়, ক্ষমতাই সব জনপ্রতিষ্ঠানের নিয়মতন্ত্রকারী।"
ধরে নিলাম প্রধান বিচারপতি এখানে নির্মোহ সত্য উচ্চারণ করেছেন– প্রশ্ন হচ্ছে, রাজনীতির বিকল্প কী? অথবা রাজনীতিকে মুক্ত করার পথই-বা কী? প্রধান বিচারপতির কাছে কোনো দাওয়াই আছে? সব জায়গায় যদি মেধার ঘাটতি তাহলে বিচার বিভাগের অবস্থা কী? বিচার বিভাগে কি সব মেধাবীদের সমাহার ঘটেছে?
প্রধান বিচারপতি ধান ভানতে শীবের গীত গাওয়ার মতো কত কথাই না বলেছেন। এগুলো সভা-সেমিনারে বললে হাততালি পাওয়া যায়। রাজনৈতিক নেতারা প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য অনেক মুখরোচক কথা বলে থাকেন। প্রধান বিচারপতির কাছ থেকে কি তেমন কথামালা প্রত্যাশিত? তিনি পর্যবেক্ষণে বলছেন:
"অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা ও প্রতিরোধের স্পৃহার মাধ্যমে আমরা সামরিক শাসনের থাবা থেকে মুক্ত হয়েছি। কিন্তু পরাজিত হয়েছি স্বাধীন রাষ্ট্রে। এমনকি স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরও আমরা আমাদের একটি জনপ্রতিষ্ঠানও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পারিনি। কোথাও আমাদের ভারসাম্য নেই। তদারককারী নেই। আর এ কারণেই সুবিধাভোগীরা ক্ষমতার অপব্যবহারে উৎসাহিত হন এবং যত্রতত্র ক্ষমতার অপব্যবহারের ধৃষ্টতা দেখান। রাষ্ট্রক্ষমতার যা রাজনৈতিক ক্ষমতার আরেক রূপ, সাম্প্রতিক সময়ে তা গুটিকয়েক মানুষের একচ্ছত্র বিষয়ে পরিণত করেছে। ক্ষমতা কেন্দ্রীভূতকরণের আত্মঘাতী প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে। ক্ষমতার লিপ্সা মহামারির মতো, যা একবার ধরলে তা দ্রুত সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই, এটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ও উদ্দেশ্য ছিল না। আমাদের পূর্বপুরুষেরা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছিলেন, কোনো ক্ষমতাধর দৈত্যের জন্য নয়।"
এখানে 'দৈত্য' শব্দটির ব্যবহার কি খুব জরুরি ছিল? দেশের রাজনীতি বর্তমান অবস্থায় একদিনে এসে পৌঁছায়নি। তাহলে সব দায় বর্তমানের কাঁধে চাপানো কতটুকু সমীচীন? সামরিক একনায়ক 'দৈত্য'দের খেদমত কি বিচারপতিরা করেননি? প্রধান বিচারপতির সব আক্রোশ রাজনীতিবিদদের প্রতি, বিশেষ করে বর্তমান ক্ষমতাসীনদের প্রতি? কেন?
নির্বাচন কমিশন নিয়েও প্রধান বিচারপতি মতামত দিয়েছেন। বলেছেন:
"নির্বাচন কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হয়নি। জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিরপেক্ষভাবে এবং হস্তক্ষেপ ছাড়া স্বাধীনভাবে না করতে পারলে গণতন্ত্র বিকশিত হতে পারে না। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ছাড়া গ্রহণযোগ্য সংসদ প্রতিষ্ঠা হয় না।"
বচন হিসেবে এগুলো মধুর। জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিরপেক্ষভাবে, হস্তক্ষেপ ছাড়া করলেই গণতন্ত্র বিকশিত হবে। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন এসব শব্দের এখন বাজারমূল্য অনেক। গত নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেওয়ায় অনেকটা একতরফা নির্বাচন হয়েছে। ১৫৩ জন সংসদ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় গণতন্ত্রের কুলমান রক্ষিত হয়নি। নির্বাচনে যদি বিএনপি অংশগ্রহণ করত, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হত, তাহলে এখনকার চেয়ে সংসদ কি গুণেমানে সেরা হত? এখন যারা নির্বাচিত হয়েছেন তারা অথবা তাদের মতো কেউ-না-কেউ তো নির্বাচিত হয়ে আসতেন, তাই নয় কি? আমাদের গোস্বা হওয়ার কারণটা কি এই যে, বিএনপি সংসদে নেই আর আওয়ামী লীগ আরামসে রাজত্ব করছে? নাকি গণতন্ত্রের বিকাশ নেই বলে আমরা দুশ্চিন্তিত?
যদি নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাহলে মানুষ হয় বিএনপি, না-হয় আওয়ামী লীগ-মনোনীত প্রার্থীদেরই ভোট দেন। সৎ,বিদ্বান, ভালো মানুষ বলে পরিচিত কেউ কি নৌকা বা ধানের শীষ মার্কা ছাড়া ভোটে জিতে আসতে পারবেন? ড. কামাল হোসেন, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, খালেকুজ্জামান, জুনায়েদ সাকী, এদের মানুষ ভোট দেয় বা দেবে? মাহমুদুর রহমান মান্না নৌকা নিয়েও জিততে পারেননি।
বর্তমান সংসদকে 'অকার্যকর' ও 'অপরিপক্ক' উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি কতগুলো আইনি জটিলতার পথ তৈরি করলেন কি না সেটাও দেখার বিষয়। বর্তমান সংসদ রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচিত করেছেন। রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতিকে। এখন এসব কিছু নতুন করে প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে কি?
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন:
"আমি তো মনে করি ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায়টি বাংলাদেশের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ রায়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটি একটি ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী রায়। সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়ে প্রমাণ হয়েছে বর্তমান সরকার একটি একনায়কতান্ত্রিক সরকার। এই সরকার সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ভেঙ্গে দিয়েছে। সংসদকে অকার্যকর করে রেখেছে। কোনো একটি সভ্য দেশের আদালত যদি এই রায় দিতেন, তাহলে এতক্ষণে সরকার ক্ষমতা থেকে সরে যেত। এই রায়ের পর বর্তমান সরকারের ক্ষমতায় থাকা উচিত নয়।"
রায়ের পর আওয়ামী লীগের যদি ক্ষমতায় থাকা অনুচিত হয়, তাহলে বিএনপির রাজনীতিতে থাকা উচিত হয় কীভাবে? বিএনপির জনক দেশটা 'ব্যানানা রিপাবলিক' করেছেন, ধোঁকাবাজির রাজনীতি করেছেন বলে বিচারপতি সিনহা উল্লেখ করেছেন। আমাদের দেশে একটি প্রবাদ চালু আছে, 'পাগলের সুখ মনে মনে, পাতা টোকায় আর টাকা গোনে'। বিএনপির খুশি ও সুখ-সুখ ভাব দেখে এই প্রবাদের কথা মনে পড়ছে।
পাতা টুকিয়ে টাকা গোনার সুখ বিএনপির জন্য কতদিন স্থায়ী হয় সেটাই এখন দেখার বিষয়।