মিশেল ব্যাশেলে ১৫ অগাস্ট বাংলাদেশে ছিলেন। তিনি নিশ্চয়ই জেনেছেন, ৪৭ বছর আগের এই দিনে বাংলাদেশে যে নৃশংসতা ঘটেছিল, তার হোতাদের একজন যে এখন জাতিসংঘের সদর দপ্তরের দেশ যুক্তরাষ্ট্রেই অবস্থান করছে!
Published : 20 Aug 2022, 06:37 PM
টানা প্রায় ৬০ ঘণ্টা ছিলাম বরিশালের আগৈলঝাড়ার গৈলা গ্রামে। ১৬ অগাস্ট সকালে পদ্মা সেতু অতিক্রম করে ঢাকা থেকে গিয়েছি। ঢাকা ফিরেছি ১৮ অগাস্ট দুপুরে। সেতু অতিক্রমের সময় বার বার তাকিয়েছি দুই পাশের রেলিংয়ের নাট-বল্টুর দিকে- না, শত শত নাট-বল্টুর একটিও খুলে পড়েনি। সেতু চালুর প্রায় দুই মাস পরও এ গর্বের প্রকল্পে সবকিছু ঠিকভাবে চলছে। পথের দূরত্ব কমেছে, ফেরির বাধাও নেই। অথচ ২৬ জুন একটি নাট-বল্টু খুলে নেওয়ার পর লেখা ও বলা হয়েছিল- ‘হাত দিয়েই খোলা যাচ্ছে পদ্মা সেতুর নাট-বল্টু’, ‘প্রশ্ন উঠছে পদ্মা সেতুর গুণগত মান নিয়ে’। আর যিনি প্রথম নাট-বল্টু খোলার কৃতিত্ব দাবি করেছেন, তিনি ভিডিওচিত্রে বিদ্রুপের হাসি দিয়ে বলেন, ‘এই হলো আমাদের পদ্মা সেতু। আমাদের হাজার হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতু!’ সেতুটি ভেঙে পড়ল বলে- কিছু লোক এমন বাসনা পোষণ করেছে বৈকি। মতলববাজদের প্রচার এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে হাজির হয়ে বিশেষজ্ঞদের বলতে হয়- রেলিংয়ের নাট-বল্টুর সঙ্গে সেতু কতটা মজবুত ও টেকসই, সেটা নির্ভর করে না।
কিন্তু দুর্জনদের বোঝানো যে দায়!
বরিশালের গৈলা গ্রামে টানা ৬০ ঘণ্টা অবস্থানকালে এক মিনিটের জন্যও বিদ্যুৎ যায়নি, লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়নি। রাজধানী ঢাকা কিংবা আরও অনেক শহরে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের পর যা ‘বে-নজির’ বৈকি।
আরও অনেক বে-নজির ঘটনা এই বাংলাদেশেই ঘটেছে বিভিন্ন সময়ে। বাংলাদেশ যেন জাতিসংঘের সদস্য হতে না পারে, সে জন্য ন্যাপ নেতা আবদুল হামিদ খান ভাসানী চীনের নেতাদের কাছে আবেদন করেছিলেন। ১০ অগাস্ট (১৯৭২) জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে বাংলাদেশের সদস্যপদের আবেদন উঠলে চীন জানায়- ‘বাংলাদেশে ভারতীয় সৈন্য রয়েছে। পাকিস্তানের যুদ্ধবন্দিদেরও মুক্তি দেওয়া হয়নি। এ কারণে বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্য হতে পারে না।’
চীনের এ বক্তব্য ছিল ভিত্তিহীন। কারণ ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর কাছে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী নিঃশর্ত আত্মসমর্পনের তিন মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি সদস্য বাংলাদেশ ভূখণ্ড ত্যাগ করে গিয়েছিল। আর চীনের নেতৃত্ব তখনও জানে, এখনও জানে- ১৯৪৯ সাল থেকেই তাদের ভূখ-ের অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা তাইওয়ান নামে পরিচিত, সেখানে কর্তৃত্ব করছে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যরা। বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১০ মাস পাকিস্তানে বন্দিজীবন কাটিয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি প্রিয় স্বদেশে ফিরে আসার পথে দিল্লিতে স্বল্পসময় অবস্থানের সুযোগেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের অতি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সেরে নিয়েছিলেন। ওই দিন বিকেলে রেসকোর্স ময়দানের ভাষণে তিনি বলেন, “আমার সাথে দিল্লিতে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর আলাপ হয়েছে। আমি যখনই বলব, ভারতীয় সেনাবাহিনী তখনই দেশে ফেরত যাবে।”
বাস্তবে সেটাই ঘটেছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য, বাংলাদেশেরই একটি মহল এ নিয়ে অপপ্রচার চালায়, জনগণকে বিভ্রান্ত করে। এমনকি অন্য দেশকেও বাংলাদেশবিরোধী অবস্থান গ্রহণে প্ররোচনা দেয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। তার পরিবারের নারী-শিশুরাও হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন। কিন্তু ‘স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই’ কিংবা ‘বেডরুমেও এমনকি জীবনের নিরাপত্তা নেই’- এমন আহাজারি যাদের তাদের ১০ বছরের শিশু শেখ রাসেল, বাংলাদেশের সেরা অ্যাথলেট সদস্য বিবাহিত সুলতানা কামাল খুকী কিংবা দুই মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল ও শেখ জামালের ভোরবেলা হত্যার ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি দাবি করে না। এটাও লক্ষণীয় যে বাংলাদেশ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে থেকে মুক্ত হওয়ার স্বল্প সময়ের মধ্যেই শতাধিক দেশ থেকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মেলে। ব্যতিক্রম ছিল দুটি দেশ- সৌদি আরব ও চীন। তাদের স্বীকৃতি মেলে কেবল বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর। পাকিস্তানও ১৫ অগাস্ট সকালেই খুনি মোশতাক চক্রকে অভিনন্দন জানায়। আমাদের জানা আছে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে গণহত্যায় চীন ও যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করেছিল। জাতিসংঘে সমর্থন দিয়েছিল। সৌদি আরবও ছিল পাকিস্তানের সামরিক জান্তার পাশে। ১৯৭৩ সালে আলজিরিয়ায় জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু সে সময়ের সৌদি বাদশাহ ফয়সালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময়ে বাদশাহ বলেছিলেন- সৌদি আরবের স্বীকৃতি পেতে হলে ‘বাংলাদেশের নাম পরিবর্তন করে ইসলামিক রিপাবলিক অব বাংলাদেশ রাখতে হবে এবং অবিলম্বে পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দিদের মুক্তি দিতে হবে।’ উত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেন, “আপনাদের দেশের নামও তো ইসলামিক রিপাবলিক অব সৌদি আরব নয়। পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশের প্রাপ্য সম্পদ ফেরতদান, পাকিস্তানের নাগরিকদের বাংলাদেশ থেকে ফেরত নেওয়া, পাকিস্তানে অবস্থানকরা বাংলাদেশের নাগরিকদের ফেরত দেওয়া- এসব বিষয়ের মীমাংসা না করে বিনাশর্তে যুদ্ধবন্দি ফেরতদানের প্রশ্ন আসে না।” [বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ, এম এ ওয়াজেদ মিয়া, পৃষ্ঠা ১৬০]
আমাদের দুর্ভাগ্য, বঙ্গবন্ধু হত্যার কয়েক ঘণ্টা যেতে না যেতেই আওয়ামী লীগের কিছুসংখ্যক নেতা খুনিচক্রের সঙ্গে হাত মেলায় এবং মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়। আওয়ামী লীগের সাবেক দুই সভাপতি মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং মাওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশ খুনি মোশতাকের প্রতি অভিনন্দন বার্তা পাঠান। বিশেষ ব্যবস্থায় মওলানা ভাসানী সে সময়ের পিজি হাসপাতালে ভর্তি হন এবং তার সঙ্গে খুনিচক্রের প্রধান হোতা খন্দকার মোশতাকের সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা হয়। এ খবর সংবাদপত্রে যখন প্রকাশিত হয়, তখন আরেকটি খবরের শিরোনাম ছিল ‘কারফিউ পাস প্রদানের ব্যবস্থা’।
নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর সামরিক শাসন জারি, বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণ, কারফিউ, সকল ধরনের রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নেওয়া- আমাদের বুঝতে সমস্যা হয় না, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর কেমন ছিল বাংলাদেশ। আর এই নিষ্ঠুর স্বৈরশাসন নিশ্চিত করার জন্য খুনি মোশতাক সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে বেছে নেন সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত ব্যক্তিকে, নাম যার মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। বিচারপতি আবুসাদাত মোহাম্মদ সায়েম ‘বঙ্গভবনের শেষ দিনগুলি’ গ্রন্থে লিখেছেন- ‘অবশ্যই মিলিটারি মানে সেনাবাহিনী; আর মিলিটারি বা সেনাবাহিনীর শাসন মানে সেনাপ্রধানের নেতৃত্ব।’ [পৃষ্ঠা ২৯]
এই সেনাপ্রধান ছিলেন জিয়াউর রহমান, যার প্রতি মাওলানা ভাসানী সমর্থনের হাত বাড়িয়ে দিতে সময় নেননি। বাংলাদেশে এমন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রয়েছেন, যারা আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাকে অভিযুক্ত করেন এভাবে- তারা দলের প্রতিষ্ঠাতাকে মাওলানা ভাসানীকে যোগ্য সম্মান দেন না। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের অভিনন্দন জানাতে যিনি মুহূর্ত দেরি করেন না, তাকে সর্বদা মাথায় তুলে রাখার জন্য চামড়া গণ্ডারের চেয়েও পুরু হতে হয়। সম্ভবত আওয়ামী লীগের সেটা নেই।
‘বঙ্গবন্ধু হত্যকাণ্ড: প্রতিবাদের প্রথম বছর’ গ্রন্থ থেকে আমরা জানতে পারি, ১৯৭৫ সালের ১৫ নভেম্বর (জিয়াউর রহমানের তখন রাষ্ট্রক্ষমতায় নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব) জাসদের দুই শীর্ষ নেতা মেজর (অব.) এম এ জলিল এবং আসম আবদুর রব ‘বাকশাল ব্যতীত সকল প্রকাশ্য ও গোপন দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন গণতান্ত্রিক জাতীয় সরকার গঠনের’ আবেদন জানিয়েছেন। [পৃষ্ঠা ১২১]
আমাদের বুঝতে অসুবিধে হয় না যে ১৯৭১ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী জামায়াতে ইসলামী ও মুসলিম লীগ এবং সমাজতন্ত্র কায়েমের জন্য গলাকাটা রাজনীতিতে জড়িতদের নিয়েই জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছিল। কয়েকদিন পর ২৬ নভেম্বর কাজী জাফর আহমদের নেতৃত্বে ইউনাইটেড পিপলস পার্টির একটি প্রতিনিধিদল বঙ্গভবনে গিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেন, যাতে আওয়ামী-বাকশালীদের যে কোনো উপায়ে প্রতিরোধ করার আহ্বান জানান হয়। [পৃষ্ঠা ১৪৯]
কাজী জাফর আহমদ ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভার সদস্য এবং ১৯৮৯ সালে আরেক সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদের প্রধানমন্ত্রী পদে দায়িত্ব পালন করেন। খালেদা জিয়ার ‘জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী জোটেরও’ তিনি ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ নেতা।
১৯৭১ সালে কুখ্যাত আলবদর বাহিনীর প্রধান হোতা জামায়াতে ইসলামীর আমীর গোলাম আযমকে পাকিস্তান থেকে ফিরিয়ে এনে বাংলাদেশে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার সুযোগ করে দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। খালেদা জিয়ার আমলে তাকে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়। তার মন্ত্রিসভাতে স্থান হয় গণহত্যাকারী আলবদর বাহিনীর শীর্ষ দুই কমান্ডার মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মুজাহিদের।
বঙ্গবন্ধুর খুনি ফারুক রহমান দম্ভ করে বলেছিল, “বাংলাদেশ সরকারের ক্ষমতা থাকলে আমার বিচার করুক- আমিই মুজিবকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছি।” জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছেন প্রথম থেকেই। কূটনীতিক হিসেবে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার মতো ‘মহানুভবতা’ জিয়াউর রহমান দেখাতে পেরেছেন। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের প্রথমে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তি (প্রগশ) এবং পরে ফ্রিডম পার্টি গঠনে পূর্ণ সহযোগিতা-মদদ প্রদান করেন এইচ এম এরশাদ। ১৯৮৮ সালের ১৫ অক্টোবর প্রহসনের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে খুনি ফারুককে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ করে দেন এইচ এম এরশাদ। নির্বাচনের প্রাক্কালে ‘জাতির উদ্দেশ্যে’ তাকে বেতার-টিভিতে ভাষণের সুযোগ দেওয়া হয়, যা ছিল আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুর প্রতি বিদ্বেষে পূর্ণ। বঙ্গবন্ধুর খুনি বজলুল হুদাকে ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ অনুষ্ঠিত প্রহসনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (যে নির্বাচনে কোনো কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিত হতে দেখা যায়নি) জয়ী করে আনেন এইচ এম এরশাদ। এই নির্বাচনে আসম আবদুর রব জয়ী হয়ে জাতীয় সংসদে বিরোধীদলের নেতা নির্বাচিত হয়েছিলেন (এরশাদের পতনের সময় তিনিও জনতার রোষের ভয়ে পালিয়েছিলেন)। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত আরেক খুনি আবদুর রশীদকে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত প্রহসনের নির্বাচনে ‘বিজয়ী’ করে এনেছিলেন খালেদা জিয়া।
এই খুনিচক্র ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগ সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের পর শেখ হাসিনাকে বার বার হত্যার চেষ্টা করেছে। আত্মস্বীকৃত খুনিদের দল ফ্রিডম পার্টি ঘোষণা দিয়েই প্রকাশ করেছিল দৈনিক মিল্লাত নামের পত্রিকা। খালেদা জিয়ার শাসনামলেই ২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট (যখন তারেক রহমানের নেতৃত্বে হাওয়া ভবনের দাপট-দৌরাত্ম্য সকল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং রাষ্ট্রাচার তছনছ করে দিয়েছিল) শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের সকল কেন্দ্রীয় নেতা এবং শত শত কর্মীকে একসঙ্গে হত্যার জন্য বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে ভয়ঙ্কর গ্রেনেড হামলা পরিচালনা করেছিল। সে দিন প্রকাশ্য সমাবেশ, দলের কেন্দ্রীয় অফিসের প্রাঙ্গণে এ নিষ্ঠুর হামলা পরিচালনা করা হয় তারেক রহমানের সরাসরি তত্ত্বাবধানে। বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যরা ১৫ অগাস্ট (১৯৭৫) তাদের বাসভবনে নিরাপদ ছিলেন না। ২৯ বছর পর ২১ অগাস্ট (২০০৪) শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা তাদের কেন্দ্রিয় অফিস প্রাঙ্গণে নিরাপদ ছিলেন না।
যে সব ‘মানবাধিকারকর্মী’ পাঁচতারকা হোটেলে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, তারা কি আমাদের ইতিহাসের এই কালো অধ্যায়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্তদের বিষয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করেছেন? মিশেল ব্যাশেলে ১৫ অগাস্ট বাংলাদেশে ছিলেন। তিনি নিশ্চয়ই জেনেছেন, ৪৭ বছর আগের এই দিনে বাংলাদেশে যে নৃশংসতা ঘটেছিল, তার হোতাদের একজন যে এখন জাতিসংঘের সদর দপ্তরের দেশ যুক্তরাষ্ট্রেই অবস্থান করছে!