Published : 30 Jul 2011, 01:09 AM
ছোটবেলা থেকে জেনে এসেছি, শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড, আর শিক্ষকরা হচ্ছেন সমাজ গড়ার কারিগর। বাবা ছিলেন গ্রামের হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক। সবাই হেডমাস্টার সাহেব বলে ডাকতেন। তাঁর বেতন মায়ের বেতনের চেয়ে কম ছিল। এ নিয়ে বাবার মনে আক্ষেপ ছিল না। কারণ সামাজিক মর্যাদা ছিল তাঁর। মানুষ সম্মান করত।
বাবা-মা চেয়েছিলেন ডাক্তার হই, কিন্তু হলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। ২০০২ সালে যখন শিক্ষকতা পেশায় যোগ দিই তখন আমার বেতনের স্কেল ছিল ৪,৩০০ টাকা। এখন সহযোগী অধ্যাপক। স্কেল ২৮,৭৫০ টাকা। প্রস্তাবিত নতুন বেতন কাঠামোতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বেতন দুধাপ নামিয়ে আনা এবং টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। তাতে এক ধরনের মনোবেদনা অনুভব করছি। ২০০২-২০১৫ এ সময়ের ব্যবধানে বেতন কাঠামোয় পরিবর্তন এলেও সরকার তথা রাষ্ট্রযন্ত্র শিক্ষকদের সঠিক মূল্যায়ন কখনও করেনি। বেতন কাঠামোয় অবমূল্যায়নের পাশাপাশি দেখছি, শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদাও হ্রাস পেয়েছে। দেশের অর্ডার অব প্রিসিডেন্সে শিক্ষকদের তাঁদের প্রাপ্য জায়গায় স্থান হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য একজন যুগ্ম সচিবের সমতুল্য সে কথা ভাবলে অবাক হই।
গত ডিসেম্বরে জার্মানির হ্যানোভারে গিয়েছিলাম একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করতে। সেখানে এক ভারতীয় অধ্যাপকের সঙ্গে কথা হল। আলাপচারিতার এক পর্যায়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম তাদের বেতন কাঠামোর কথা। এক ধরনের সন্তুষ্টি লক্ষ্য করলাম তার কথায়। আমাদের একজন অধ্যাপকের দ্বিগুণেরও বেশি বেতন পান তিনি। আরও খারাপ লাগল যখন জানতে পারি, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বেতনই হল সর্বনিম্ন!
মাসিক বেতনের স্লিপগুলো সাধারণত দেখি না আমি। এত কম বেতন! তার উপর গবেষণা ভাতা মাত্র ১,৫০০ টাকা। দেখলেই মনে হয় এক ধরনের প্রহসন। কিছুদিন আগেও বিদেশে থাকাকালীন বেতন পেতাম কানাডিয়ান ডলারে, বর্তমান মোট বেতনের ৮ গুণেরও বেশি। খরচ হলেও সেভিংস থাকত। বাবা-মাকে, এমনকি বন্ধুর বিশেষ প্রয়োজনে টাকা পাঠাতে পারতাম। কিন্তু এখন তা ভাবাই যায় না। আমি ও আমার স্ত্রী দুজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, তারপরও।
কানাডার ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটিতে পোস্ট ডক্টরাল গবেষণা করছিলাম আমি। স্ত্রীও ওখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। কানাডিয়ান এক্সপেরিয়েন্সড ক্লাস ক্যাটাগরিতে সহজেই ইমিগ্রেশন নেওয়ার সুযোগ থাকলেও তা নিইনি। সাধারণ জনগণের ট্যাক্সের টাকায় স্বল্প বেতনে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছিলাম, সে বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুটা অবদান রাখার তাগিদ অনুভব করে দেশের টানে ফিরে এসেছি।
একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হিসেবে আমি মনে করি আমার কাজ মূলত দুটি। শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ও গবেষণা করা। আগে পর পর দুমেয়াদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচিত সিন্ডিকেট সদস্য ছিলাম। তখন শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ও গবেষণার পাশাপাশি অন্যান্য দায়িত্বও পালন করতে হত। এখন প্রতিদিন সকালে বিভাগে যাই আর ক্যাম্পাসের বাসায় ফিরি প্রায়শই রাত ৯টার পর। গত নভেম্বরে দেশে ফেরার পর অধিকতর মনোনিবেশ করেছি শ্রেণিকক্ষে পাঠদান, বিভাগীয় গবেষণা, শিক্ষার্থীদের গবেষণা তত্ত্বাবধান ও অন্যান্য একাডেমিক কাজে। ছাত্রছাত্রীদের কতটুকু সামর্থ্য দিয়ে পড়াতে পারছি তা জানি না, তবে চেষ্টা করছি ভালোভাবে পাঠদান সম্পন্ন করতে। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেও এক ধরনের আগ্রহ অনুভব করছি।
বিকাল কিংবা সন্ধ্যার ক্লাসে ছাত্ররা এক এক জন আসে দূর-দূরান্ত থেকে। কেউ কেউ ক্লাস শেষে যায় টিউশনি করতে। তারপরও তাদের চেহারায় ক্লান্তি খুঁজে পাওয়া যায় না। বরং উৎসাহ থাকে সেখানে। কিছুদিন আগেও শিক্ষার্থীদের অফিস আওয়ার দিতে পারতাম না; কারণ বিভাগের আরও ৫ সহকর্মীদের মতো আমারও কোনো অফিসকক্ষ ছিল না। বর্তমানে ছোট একটি কক্ষে ৩ জন সহকর্মী শেয়ার করে বসছি। চেয়ারম্যানের কক্ষই যেন আমাদের সবার কক্ষ। চেয়ারম্যানের কক্ষে মিটিং থাকলে শিক্ষক লাউঞ্জে গিয়ে চা-কফি খাওয়া হয়।
এমনই একদিন আলাপচারিতায় অন্য বিভাগের এক সহকর্মী জানালেন, তাদের বিভাগে ৫ জন সহযোগী অধ্যাপকের কোনো কক্ষ নেই। এ রকম দৃশ্য আরও অনেক বিভাগেরই। সময়ের প্রয়োজনে নতুন নতুন বিভাগ সৃষ্টি করা হচ্ছে, বেশ ভালো কথা, কিন্তু বিভাগগুলোর জন্য পর্যাপ্ত রিসোর্স নিশ্চিত করা হচ্ছে কি? নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু পাঠদান ও গবেষণার জন্য তাদের সঠিক পরিবেশ নিশ্চিত করা হচ্ছে না। হতাশ হই যখন দেখি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য তেমন গবেষণা-বৃত্তি বা ফান্ড নেই, অথচ সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য রয়েছে। এক সময় এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারপ্রদত্ত উচ্চশিক্ষা বৃত্তি ছিল; এখন তাও নেই!
গবেষণা খাতে বাজেটে আশানুরূপ বরাদ্দ বাড়ে না। অবাক হই যখন দেখি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দকৃত ৪২৫ কোটি ৫০ লক্ষ টাকার মধ্যে গবেষণা খাতে বরাদ্দ মাত্র ৪ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা (মোট বাজেটের ১ দশমিক ০৬ শতাংশ)! গত বাজেটের তুলনায় এ বাজেটে বরাদ্দ কিছুটা বাড়লেও জ্ঞান বিনির্মাণে গবেষণা খাত বরাবরের মতো অবহেলিতই থেকে গেছে।
এর জন্য কি শুধু বিশ্ববিদ্যালয়কে দায়ী করব? আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের দায় থাকলেও এর জন্য বেশি দায়ী করব সরকারকে। জাতীয় বাজেটে শিক্ষায় বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা খাতে বরাদ্দের চিত্র খুবই হতাশাজনক। জাতীয় বাজেটে যেখানে শিক্ষাখাতে মোট বাজেটের ২০ শতাংশ বরাদ্দ করা দরকার সেখানে বরাদ্দ আছে মাত্র ১০.৭ শতাংশ। এ নিয়ে সরকারের শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়কেও আক্ষেপ করতে দেখেছি। সরকার কি কখনও ভেবে দেখেছে কেন আমাদের কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের শীর্ষ ৫০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে নেই?
আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও জাতীয় আন্দোলনগুলোতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য। পৃথিবীর অনেক নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়েরও এ ধরনের অর্জন রয়েছে কি না আমার জানা নেই। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসেবে খ্যাত এ বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দিন দিন পিছিয়ে পড়ছে। সাম্প্রতিক কিউএস ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিংয়ে আমরা প্রথম ৫০০ বিশ্ববিদ্যালয় তো দূরের কথা, ৭০০এর মধ্যেও নেই। যে সকল মানদণ্ডের ভিত্তিতে (একাডেমিক রেপুটেশন, এমপ্লোয়ার রেপুটেশন, ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত, সাইটেশন প্রতি ফ্যাকাল্টি, আন্তর্জাতিক ছাত্র অনুপাত, আন্তর্জাতিক শিক্ষক অনুপাত) র্যাঙ্কিং করা হয়, সেগুলোর উন্নয়নে আমাদের নজর নেই। ২০০৮ থেকে ২০১৪ সময়ে আমাদের সার্বিক অবস্থান পিছিয়েছে ২০০।
খুবই অবাক হই এ সময়েও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো অফিস অব ইন্টারন্যাশনাল নেই। সিন্ডিকেটে নির্বাচিত সদস্য থাকাকালে এ বিষয়ে তাগিদ দিয়েও কিছু করতে পারিনি। দিন দিন বিদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কমে গেছে। বিদেশি যারা আমাদের এখানে আসতে চায়, সরকারের আমলাতান্ত্রিক জটিলতার (মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে বেগ পেতে হয়) কারণে তারা এখানে না এসে চলে যায় প্রতিবেশি ভারতে। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, চীন-জাপানের কিছু শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে না পেরে চলে গেছে শান্তিনিকেতন ও বিশ্বভারতীতে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বিদেশি যে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক সমঝোতা স্মারক রয়েছে সেগুলোর অধিকাংশেরও তেমন কার্যকারিতা লক্ষ্য করছি না। অথচ এগুলো কার্যকর করা গেলে আমাদের বেশ কিছু ছাত্র-শিক্ষককে বিদেশে ফেলোশিপ দিয়ে পাঠানো ও যৌথ গবেষণা করা যেত। তৈরি হত নতুন সুযোগ ও বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অধিকতর পরিচয় করিয়ে দেওয়ার উপায়। মনে পড়ে, গবেষণা তহবিলে অর্থ যোগানের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ফান্ড গঠন ও নীতিমালা প্রণয়নে কাজ করেছিলাম। নিয়ম করে বছরে দুবার অর্থ সংগ্রহ করা হবে বলে নীতিগত সিদ্ধান্তও হয়েছিল আজ থেকে আড়াই বছর আগে। অথচ এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে নাকি আর কিছুই করা হয়ে ওঠেনি।
বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গবেষণা তহবিলে অর্থ যোগানের লক্ষ্যে অ্যালামনাইদের কাছে উন্মুক্ত আবেদন করে। এই তো সেদিন কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয় (যেখান থেকে আমি পোস্ট-ডক্টরাল গবেষণা করেছি) ২.৪ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেছে গবেষণা খাতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই বলে এখনও আমার কাছে চমৎকার ভাষায় ই-মেইল আসে বিশ্ববিদ্যালয় ফান্ডে অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য।
প্রায় ৫ বছর চীনে ছিলাম উচ্চশিক্ষার জন্য। দেখেছি চীন সরকার উচ্চশিক্ষায় কী ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে। গবেষণা খাতে বরাদ্দ ঢালাওভাবে হচ্ছে। এর ফলও এখন পাচ্ছে চীন। অতি সাম্প্রতিক ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিংএ চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সরব উপস্থিতি জাপানকেও পিছনে ফেলে দিয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলছিলাম। একটি হলের আবাসিক শিক্ষক ছিলাম। তখন প্রতি সপ্তাহে অন্তত একদিন হলেও ছাত্রদের কক্ষ পরিদর্শন করতাম। তাদের সঙ্গে কথা বলতাম, সমস্যার কথা জানতাম। বেশ আন্তরিক সম্পর্ক ছিল ওদের সঙ্গে। কোনো কারণে একদিন না গেলে পরদিন দেখা হলে বলত, 'স্যার, গত দিন আপনার অপেক্ষায় ছিলাম। রুম, পরিস্কার করে রেখেছি।' আমি দেখেছি হলের ছাত্ররা কীভাবে গাদাগাদি করে কোনো কোনো ছোট কক্ষে (গণরুম নামে পরিচিত) ২০-২৫ জন একসঙ্গে থাকে। এ দৃশ্য আমাকে পীড়া দিত। একই সময়ে জানতে পারি অপর একটি হলের ছাত্ররা বারান্দায় ঘুমায়, মসজিদে থাকে। নিজেকে আর সংবরণ করতে না পেরে পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায় দৃষ্টি আকর্ষণ করে সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ নিতে বলি।
ওই হলের ছাত্ররা নাকি এখনও বারান্দায় ও মসজিদে ঘুমায়। মাঝে আড়াই বছর চলে গেল। নতুন হল নির্মাণ হলেও এখনও সমস্যার সমাধান হয়নি।
কিছুদিন আগে রেজিস্ট্রার বিল্ডিংএর সোনালী ব্যাংকের এটিএম বুথে টাকা তুলতে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। আমার পিছনে দাঁড়ানো দুজন প্রথম বর্ষের ছাত্রের সঙ্গে কথা হল। কোথায় থাক জিজ্ঞেস করলে ওরা জানাল হলে থাকে। একটু অবাক হয়ে বললাম, 'তোমরা প্রথম বর্ষেই হলে সিট পেয়েছ!' ওরা বলল, 'ফ্লোরে ৮ জন গাদাগাদি করে থাকি।' ওদের চেহারায় এক ধরনের বেদনার ছাপ লক্ষ্য করলাম। আমার মনটাও খারাপ হয়ে গেল। যে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমরা গর্ব করি, বহির্বিশ্বে প্রতিনিধিত্ব করি যেটির, সে বিশ্ববিদ্যালয় যথাযথ শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ দিতে পারছে না দেখে ভারাক্রান্ত হওয়াই তো স্বাভাবিক।
১ জুলাই ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। এ দিন আমাদের ছাত্র-শিক্ষকদের যেখানে আনন্দ ও গর্ব করার কথা সেখানে আমাদের শিক্ষক সমিতি দাবি আদায়ের জন্য সাধারণ সভা করেছে। তাতে অংশ নিয়ে যখন বাসায় ফিরছি, ভাবছিলাম এ দিনটির কথা মনে করেও সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ ঘোষণা আসতে পারত। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে পারতেন আমাদের আচার্য কিংবা সরকারপ্রধান। তাঁদের সঙ্গে হতে পারত মতবিনিময় সভা। গবেষণাকর্মের প্রদর্শনী। চীন ও কানাডায় খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে রাষ্ট্রপ্রধান কিংবা সরকারপ্রধানরা এসে একাত্মতা প্রকাশ করেন। গবেষণা, শিক্ষার উন্নয়ন, সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা জানতে চান। কখনও কখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বিশেষ আর্থিক বরাদ্দ দেন।
এবার বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে মনে হল এ প্রতিষ্ঠানের বয়স চুরানব্বই বছর হলেও, এমনকি জাতীয় আন্দোলনগুলোতে এখানকার শিক্ষার্থীরা সব সময় বিশেষ ভূমিকা পালন করলেও আমরা অবহেলিতই থেকে গেছি। এ বিশ্ববিদ্যালয় অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকেও সীমিত অর্থে স্বল্প বেতনে প্রতি বছর গ্র্যাজুয়েট বের করছে। চেষ্টা করছে এগিয়ে যেতে। এখানকার ছাত্র-শিক্ষক আমরা স্বপ্ন দেখি একদিন এ বিশ্ববিদ্যালয় হবে এ অঞ্চল তথা এশিয়ার সেরা একটি বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা দেখতে চাই আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশেষ স্থান করে নিচ্ছে।
প্রশ্ন জাগে, স্বপ্ন কি বাস্তবে ধরা দিবে? নাকি আমরা স্বপ্ন দেখব, স্বপ্ন দেখাব, কিন্তু স্বপ্ন বাস্তবায়ন করব না? শিক্ষকদের মান-মর্যাদা কমিয়ে, বেতন-ভাতা না বাড়িয়ে, গবেষণা খাতে যথাযথ বিনিয়োগ না করে, শিক্ষার্থীদের সুবিধাপ্রাপ্তি অনিশ্চিত রেখে এ স্বপ্ন আলোর সামনে আনা যাবে না। তৈরি হবে না সময়ের চাহিদায় দক্ষ জনসম্পদ। সর্বোপরি, জাতির মেরুদণ্ড থাকবে না সুস্থ।
সরকারকে বলব, জাতির মেরুদণ্ড ও সমাজ গড়ার কারিগরদের কথা গুরুত্ব দিয়ে ভাবুন এবং সে অনুযায়ী এখনই ব্যবস্থা নিন।