আত্মহত্যা একটি একক সিদ্ধান্ত হলেও আত্মহত্যার পেছনের কারণ সামাজিক ও রাজনৈতিক।
Published : 18 Mar 2024, 12:32 PM
গত এক সপ্তাহে ছয়টি আত্মহত্যার খবর দেখলাম। ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় একটি পরিবারের সদস্যদের সম্মিলিত আত্মহত্যা, এরপর উত্তরার কামারপাড়ায় মৌসুমি ও ইব্রাহীম নামক দুজন, চট্টগ্রামে সীতাকুণ্ডের এক ছাত্রলীগ নেতা, সংগীতশিল্পী সাদি মহম্মদ, সর্বশেষ ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার ফেইসবুকে পোস্ট দিয়ে আত্মহত্যা। এর আগে ২৫ ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসিতে ইসরায়েলি দূতাবাসের সামনে মার্কিন বিমান বাহিনীর সদস্য অ্যারন বুশনেলের নিজের গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার ঘটনা সারা বিশ্বে আলোচনায় এসেছে। আরও ঘটনা নিশ্চয়ই ঘটেছে, যেগুলো আমার চোখ এড়িয়ে গেছে। তবে যা জেনেছি, তাতেই আমার মনে হয়েছে অনেক। এত অল্প সময়ে এতগুলো মানুষের আত্মহত্যার ঘটনায় বিচলিত হয়ে জানার চেষ্টা করি বাংলাদেশে আত্মহত্যা নিয়ে কোনো সমীক্ষা আছে কিনা।
জানতে পারি, বাংলাদেশে সব মিলিয়ে কত মানুষ আত্মহত্যা করে তার কোনো পূর্ণাঙ্গ পরিসংখ্যান নেই। কিন্তু আমরা প্রায়শ আত্মহত্যার ঘটনা শুনছি, জানছি। বিশেষ করে প্রতি বছর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের পর ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আত্মহত্যার অনেক ঘটনা ঘটে।
বাংলাদেশ আইন দণ্ডবিধি ৩০৯ ধারা অনুযায়ী, আত্মহত্যার চেষ্টা ফৌজদারি অপরাধ যার শাস্তিস্বরূপ এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড হতে পারে। পক্ষান্তরে, কেউ যদি কাউকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা বা উস্কানি দেয়, বা আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেয়, তাহলে ওই ব্যক্তিকে দশ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড ভোগ করতে হবে। কিন্তু একটা সমাজ যদি এমন একটা রূপ নেয় যেখানে প্রত্যেকেই একে অপরকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিচ্ছে, সেখানে প্ররোচক হিসাবে কাকে চিহ্নিত করা হবে?
শুরুতে উল্লেখিত আত্মহত্যার ঘটনাগুলো প্রত্যেকটি ভিন্ন, কিন্তু আত্মহত্যা একটি সামাজিক বিষয়। আত্মহত্যাকে একক পদক্ষেপ হিসাবে ভাবার কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এটি আত্মহননকারীর সিদ্ধান্তকে নৈতিকতার দোহাই দিয়ে মহিমান্বিত করার সুযোগ তৈরি করে।
এ ব্যাপারে এমিল ডুর্খেইম আত্মহত্যার সামাজিক ব্যাখ্যা দেন। ডুর্খেইমের বক্তব্যটি আমি যেভাবে বুঝেছি— নীতি, সততা কোনো ব্যক্তিগত বিষয় নয় বরং এগুলো একটা সমাজে বসবাসকারী ব্যক্তিদের মধ্যকার পারস্পরিক আচরণবিধি। সমাজে বসবাসকারী ব্যক্তিদের মধ্যে একে অপরের সঙ্গে কীভাবে যুক্ততা তৈরি হয় সে প্রসঙ্গে ডুর্খেইম সংহতির কথা বলেন। তিনি দেখান কীভাবে একটা সমাজে সংহতি নির্মিত হয় ও কাজ করে। তিনি দুই ধরনের সংহতির কথা বলেন।
অনাধুনিক সমাজেবিশেষ করে যেসকল সমাজে মানুষের গতিশীলতা এতটা বিস্তৃত নয়, একই স্থানে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের বসবাস, সেখানকার মানুষের মধ্যে এক ধরনের সাদৃশ্য কাজ করে। একই ধর্ম, একই জীবন যাপনের ধরন, একই মূল্যবোধ, একই অভিজ্ঞতা, একইরকম পছন্দ-অপছন্দ। এসবের মধ্য দিয়ে ওই সমাজের লোকজনের মধ্যকার পারস্পরিক বন্ধন দৃঢ় হয়, যাকে ডুর্খেইম বলেন কালেক্টিভ কনশাসনেস বা সামষ্টিক চেতনা। উদাহরণস্বরূপ, ধর্ম এরকমই একটি প্রভাবক, যা ওই অঞ্চলের ওই ধর্মের মানুষের মধ্যে এক ধরনের সামষ্টিক চেতনা তৈরি করে। এই সামষ্টিক চেতনা দ্বারা ওই সমাজের ব্যক্তিদের মধ্যে সংহতি গড়ে ওঠে যাকে ডুর্খেইম নাম দেন যান্ত্রিক সংহতি (Mechanical Solidarity)।
অপরদিকে, আধুনিক গতিশীলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় সমাজে নানান রকম বৈচিত্র্য দেখা যায়— ভিন্ন ঈশ্বর, ভিন্ন যাপন, ভিন্ন শ্রেণি, ভিন্ন মূল্যবোধ, ভিন্ন অভিজ্ঞতা, ভিন্ন সংস্কৃতির অবস্থান দেখা যায়। একে অপরের সঙ্গে খুব একটা সাদৃশ্য দেখা যায় না। তাহলে এত ভিন্নতার মধ্যে সংহতি কীভাবে নির্মিত হতে পারে? ডুর্খেইম বলেন, আধুনিক সমাজে সংহতি নির্মিত হয় পারস্পরিক নির্ভরশীলতার মাধ্যমে, যেখানে সমাজের প্রত্যেকে একে অপরের কার্যকারিতার মাধ্যমে নির্ভরশীল হবে। অনেকটা মানুষের দেহের মতো, যেখানে প্রত্যেকটা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ওই দেহের সুষ্ঠু চলমান প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখে। তিনি এই সংহতির নাম দেন জৈব সংহতি (Organic Solidarity) যার মাধ্যমে পারস্পরিক ভিন্নতা সত্ত্বেও প্রত্যেকে নিজের মতো করে সমাজে ভূমিকা রাখবে।
কিন্তু সমস্যা হলো, এ ধরনের আধুনিক পুঁজিবাদী সমাজে ব্যক্তি-কেন্দ্রিকতা উদযাপিত হয়, অর্থাৎ ব্যক্তি কারও ওপর নির্ভরশীল নয়, সে সমাজ ও তার চারপাশ থেকে বিচ্ছিন্ন একক স্বাধীন সত্ত্বা। ব্যক্তি একক হয়ে ওঠার সমস্যা প্রবল হয়ে ওঠে যখন কিনা এইরূপ সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অসমতা, বৈষম্য রয়েছে। একজন নারী একজন পুরুষের চেয়ে কম সুযোগপ্রাপ্ত, আবার যে নারী অন্য ধর্মের বা জাতির তিনি আরও বিপন্ন, তেমনিভাবে প্রান্তিক জনজাতি, পরিচয়গত কারণে যারা নানান সামাজিক দূরত্বে অবস্থান করেন, তারা কি সকলে একই রকম স্বাধীন? তাই এরূপ অসাম্যপূর্ণ সমাজে মানুষে মানুষে সম্মিলন ঘটে বটে, কিন্তু সংহতি ঘটে না। তাই সমাজে ব্যক্তি কীভাবে অপরের সঙ্গে ব্যবহার করবে তার জন্য আইন বানানো হয়, আইন ভঙ্গ করলে শাস্তি হয়।
কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে, যে আইন বানানো হয় সকলের শান্তিময় সহাবস্থানের জন্য, সেই আইনই হয়ে উঠতে পারে শাসনের অস্ত্র। ইংরেজিতে আইনের এই দুটো রূপকে বলা হয় Rule of Law এবং অপরটি Rule by Law। প্রথমটিকে বাংলায় বলা চলে আইনের শাসন। বাংলাদেশ রাষ্ট্র তার সংবিধানে এই দেশের আইনকে Rule of Law বলে আখ্যা দিয়েছে। এই অনুযায়ী, এই দেশের আইনব্যবস্থা হবে সকলের জন্য সমান।
কিন্তু সংবিধান কি বাংলাদেশের বাস্তবতাকে প্রতিফলিত করে? এখানে আইনের নামে বে-আইন ঘটছে, ক্ষমতার আগুন আইনের হাতকে কাছেই আসতে দেয় না। লোকে আজকাল তাই ক্ষমতায় যেতে চায়। আর সেই ক্ষমতায় যাওয়ার প্রক্রিয়াটাও থাকে ক্রমাগত আইন ভাঙার প্রক্রিয়া। তাই বলা চলে, এখানে যে আইন কাঠামো বিদ্যমান তা মূলত Rule by Law, যেখানে আইন বানানো হয় শাসন করার জন্য, শাসককে টিকিয়ে রাখার জন্য। স্বাধীন বাংলাদেশে এখন বহিঃশত্রুর ভয় নেই, আছে নিজেদেরই ক্ষমতাবান লোকদের ভয়।
বিচারহীনতার সংস্কৃতি বলে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থাকে ব্যাখ্যা করা হয়। সংস্কৃতি কোনটা? যা যাপনের অনুষঙ্গ হয়ে উঠে, স্বাভাবিক হয়ে ওঠে মননে মগজে। অন্যায়ের বিচারহীনতাও মানুষ আজকাল মেনে নিয়েছে, না মেনে তো উপায় নেই। যেসকল প্রতিষ্ঠান সমাজে নির্মাণ করা হয়েছে জনগণকে রাষ্ট্রীয় সেবা প্রদানের জন্য, সেসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই যখন অন্যায় পুষ্টতা পায়, তখন গণমানুষের সম্মিলিত আন্দোলন, প্রতিরোধ দরকার পড়ে। কিন্তু যখন কিনা শ্রেণি প্রশ্ন আসছে, এর ফলে মানুষের মধ্যে সুযোগ-সুবিধাজনিত কারণে চিন্তায় ও কাজে বিভক্তি তৈরি হচ্ছে। এই বিভাজনের রাজনীতিতে অন্যায়, অবিচার, অনাচার সংস্কৃতি হয়ে উঠে। এমন পরিবেশে একজন ব্যক্তির নৈতিকভাবে বাঁচতে চাওয়ার ইচ্ছা ও অবস্থান হুমকির মুখে পড়ে। অন্যায়ের সংস্কৃতিতে ব্যক্তিকে দ্বিমুখী অবস্থার সম্মুখীন হয়ে হয়। হয় তাকে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করে নিতে হয়, না হয় কোনো প্রতিকার না পেয়ে সেই সমাজ থেকে নিজেকে বিচ্যুত করে ফেলতে হয়।
ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা সেটাই করেছেন। খুব কম ব্যক্তিই আত্মহননের পথ বেছে নেয়ার সাহস করেন। বেশিরভাগই আপস করে নেন কাঠামোর সঙ্গে। একারণে, আত্মহত্যা একটি একক সিদ্ধান্ত হলেও, আত্মহত্যার পেছনের কারণ সামাজিক ও রাজনৈতিক। কারা আত্মহত্যা করেন এটা নিয়ে গবেষণায় দেখা যায়, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা কাঠামোর মধ্যে যদি সম্পদ ও সুযোগের অসম বণ্টনের ব্যবস্থা থাকে তবে তা সমাজের মধ্যে বৈষম্য তৈরি করে। শুধু শ্রেণিবৈষম্যই নয়, লৈঙ্গিক পরিচয়সহ আরও নানান ধরনের পরিচয়, বিশ্বাস ও অবস্থানজনিত কারণেও বঞ্চনার শিকার হতে হয়। এরূপ সামাজিক সাংস্কৃতিক ডাইমেনশনে আত্মহত্যার ক্ষেত্র তৈরি হয়।
একেকটি আত্মহত্যার পরে জনমানসে শোক ও দুঃখবোধ তৈরি হলেও, আত্মহত্যার পেছনে দায়ী এসকল রাজনৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠে না তেমন। ঠিক তেমনিভাবে প্রশ্ন ওঠে না ঠিক কী ধরনের আর্থ-সামাজিক সাংস্কৃতিক পরিস্থিতিতে একটি আত্মহত্যা কাঠামোগতভাবে অপর আরেকটি আত্মহত্যা থেকে ভিন্ন হয়। তাই মানুষ যেন মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকতে পারে তার জন্য সামষ্টিক ও প্রাতিষ্ঠানিক যেসব প্রশ্ন উত্থাপিত হতে পারত এবং এর মধ্য দিয়ে একটা অর্থপূর্ণ ও টেকসই সমাজ তৈরি হতে পারত, সেসবের অনুপস্থিতিতে আত্মহত্যা একটি 'নীরব সমাধান' হিসাবে বিবেচিত হয়ে ওঠে।
কথা হলো, এই রাষ্ট্র, আইন ব্যবস্থাপনা, ক্ষমতাতন্ত্র সবকিছু এমনভাবে অন্যায্যতাকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়ে দিয়েছে যে, এখন এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-আন্দোলন জারি রাখার পাশাপাশি আমাদের মনোযোগও দেয়া উচিত আমরা কীভাবে একে অপরের দেখভাল করতে পারি। আধুনিক সমাজে ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে ওঠার প্রক্রিয়ার মধ্যেও কীভাবে আমাদের মধ্যে সম্পর্কের নয়াসেতু রচিত হতে পারে যেখানে কেউ এমন কোনো অসহায় পরিস্থিতিতে যাবে না যার জন্য আত্মহনন হয়ে ওঠে একমাত্র সমাধান?
সাদি মহম্মদ, ফাইরুজ অবন্তিকাসহ প্রত্যেকের আত্মহত্যার পরে পরিচিতদের কাছ থেকে যে বিবৃতি পাওয়া গেছে, তাতে একই রকম ধরন দেখতে পাওয়া যায় এবং তা হলো 'আত্মহত্যাকারীর বিচ্ছিন্নতা'। সমাজ থেকে, চারপাশ থেকে ধীরে ধীরে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে সকল যাতনার ভার একা বয়ে নিজেকে মেরে ফেলার দায় সাধারণত 'বিষণ্ণতা'-'মানসিক সমস্যা' বলে ভিক্টিম ব্যক্তির ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়। অথচ গভীরে গিয়ে দেখলে দেখতে পাবো ভিক্টিমের পরিচিত সকলেই আসলে তার আত্মহননের পেছনে কোনো না কোনোভাবে ভূমিকা রেখেছেন। কেউ নীরবতা দিয়ে, কেউ এড়িয়ে যাওয়া দিয়ে, কেউ তাচ্ছিল্য করে, কেউ পালটা দোষ চাপিয়ে নানানভাবে তাকে উসকে দিয়েছেন শেষ মুহূর্তের পর্দাটা টেনে দিতে। বলা হয়ে থাকে, যে নিজেকে মেরে ফেলে সে আসলে বহু আগে থেকেই মরে যেতে শুরু করে।
সাদি মহম্মদের মতো গুণী শিল্পীর কত অগণিত ভক্ত-প্রিয়জন, তারপরও তার চারপাশে তিনি শূন্যতা অনুভব করছিলেন। প্রাণোচ্ছল, বন্ধুপ্রিয় অবন্তিকার কত বন্ধু, তারপরও তার বিপদে তেমন কেউ ছিল না পাশে, একা একা লড়তে লড়তে ভীত-সন্ত্রস্ত মেয়েটা মৃত্যুকেই শেষপর্যন্ত বেছে নেয়ার দুঃসাহস করল। তাদের মৃত্যু ভাবতে বাধ্য করছে আমাদের চারপাশে থাকা পরিবার-পরিজন, বন্ধুদের দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়ে, যে সমাজ সমাজ-সমাজ করে সকাল-বিকাল গর্ববোধ করি আমরা সেই সমাজের কার্যকারিতা নিয়ে।
আমরা এমন একটা সমাজ বানিয়েছি যা মানুষের আবেগ বোঝে না। আমরা জানি না কেউ যখন তার প্রিয় মানুষকে হারান, তাকে কী বলতে হয়। আমরা চাই, যে মানুষটি আজকে যাকে হারিয়েছে, ঠিক তার পরদিনই সে স্বাভাবিক ব্যবহার করবে, প্রতিদিনকার মতো কাজে যাবে। আমরা জানিই না কীভাবে প্রতারণা, দুঃখবোধ, শোক, কষ্টের সঙ্গে মোলাকাত করতে হয়। কীভাবে এই ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে হয়। আমরা জানি না 'কেমন আছো'র বাইরে আর কীভাবে যত্নের, মমতার, দরদের শ্রদ্ধাপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করতে হয়। আমরা কেবল উপরটুকুই দেখছি আর বলছি, আজকাল মানুষ খুব উদ্বিগ্ন, ক্লান্ত, একাকী।
মানসিক স্বাস্থ্য শব্দটা আজকাল শোনা যায়, কিন্তু সমাজে এর গ্রহণযোগ্যতা কতটা? বিষণ্নতায় ভোগা ব্যক্তিকে যেভাবে সমাজে নেতিবাচকভাবে দেখা হয়, তা ব্যক্তিকে বিষণ্নতা প্রকাশ করতে উৎসাহিত করে কি? মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে যে সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি সবকিছু জড়িত এ সম্পর্কে কতটা বোঝাপড়া তৈরি হয়েছে সমাজে? এমনকি মানসিক স্বাস্থ্য সেবাদানকারী যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আছে তারা কতটা এসব ক্ষেত্রকে স্বীকার করছেন? পরিচিতদের অনেককেই পেশাদার সাইকিয়াট্রিস্ট, থেরাপিস্টের কাছে সেবা নেয়ার অভিজ্ঞতা শুনে অবাক হয়েছি। আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রাখুন, বিয়ে করে ফেলুন, সন্তান নিয়ে নিন— এ ধরনের সামাজিক সংস্কার যদি পেশাদার ব্যক্তিরাও প্রদান করে থাকেন, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।
অড্রে লর্ডের একটা কথা আছে যার কথাটা বাংলায় বলা চলে, তোমার শেকল আমার শেকলের চেয়ে ভিন্ন হলেও, যতক্ষণ না তোমার মুক্তি হচ্ছে ততক্ষণ আমার মুক্তি হচ্ছে না। এক অবন্তিকার আত্মহনন আমাদেরকে শঙ্কিত করে তুলেছে। অবন্তিকার জায়গায় আমরা নিজেদের দাঁড় করিয়ে বিপন্ন বোধ করছি। কিন্তু যতদিন পাশেরজনের বিপন্নতাকেও অনুধাবন করতে না পারছি, ততদিন আসলে মরে গিয়ে কেউ বেঁচে যায় না।