Published : 30 Sep 2013, 02:40 PM
মুখে যাই বলুক না কেন, বিএনপি কিন্তু আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে মোটামুটিভাবে তাদের দলের নির্বাচনী কৌশল ঠিক করে ফেলেছে। তারা সবাইকে সঙ্গে রাখতে চায়। পাশে পেতে চায়। সবার সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় যেতে চায়। বাছবিচারহীন গুরুচণ্ডাল মিশেলে তারা যে রাজনীতির 'পাচন' তৈরি করে ক্ষমতায় যেতে চায়– এর নাম দেওয়া হয়েছে 'নতুন ধারার রাজনীতি'।
এই রাজনীতিতে সবাইকে স্থান করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি আছে। ইতোমধ্যে বিএনপির ভবিষ্যৎ নেতা তারেক রহমান বিদেশে বসে এই 'নতুন ধারার রাজনীতি'র তত্ত্ব উপহার দিয়েছেন। বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াও বিভিন্ন জনসভায় এই তত্ত্বের পক্ষে বক্তব্য রাখছেন। তত্ত্বটির ব্যাখ্যা দিচ্ছেন।
বিএনপির এই 'নতুন ধারার রাজনীতি'তে একটি জিনিস পরিষ্কার, তা হল: মত-পথ, আদর্শ, মূল্যবোধ সবকিছু বাদ দিয়ে আওয়ামীবিরোধীদের নিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার একটা প্লাটফর্ম বা জোট গঠন করা। এই জোটে নীতি-আদর্শের কোনো বালাই থাকবে না। থাকবে শুধু যে কোনো মূল্যে ক্ষমতায় যাওয়া। আওয়ামী লীগকে ক্ষমতার ভরকেন্দ্র থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া, মসনদ থেকে উচ্ছেদ।
বিএনপির এই আকাঙ্ক্ষার মধ্যে কোনো ফাঁক নেই। নেই কোনো ফাঁকি। তাদের এই 'নতুন ধারার রাজনীতি'র জোটে যেমন থাকবে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ববিরোধী অপশক্তি, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত দল জামায়াত, উগ্র ধর্মীয় সংগঠন হেফাজত, স্বৈরাচার-খ্যাত এরশাদের দল জাতীয় পার্টি, ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন ছোট ছোট রাজনৈতিক দল, বিএনপি থেকে একদা দলত্যাগী সুবিধাবাদী গোষ্ঠী (নাজমুল হুদা, অলি আহমদ, বি চৌধুরী অ্যান্ড সন্স প্রমুখ), ক্ষমতার স্বাদ নিতে মুখিয়ে থাকা বিভিন্ন দলে সুবিধা করতে না পারা 'বসন্তের কোকিলগণ', আওয়ামী পরিবারে কোনঠাসা অথচ উচ্চাভিলাষী ক্ষমতালোলুপ বিভিন্ন নেতা।
অখ্যাত-বিখ্যাত-কুখ্যাত সবার জন্যই বিএনপির দরজা খোলা রাখা হয়েছে। বিএনপির এই 'ঔদার্য' ও 'নতুন ধারার রাজনীতি' জাতির ভবিষ্যতের জন্য কতটা সুফল বয়ে আনবে, আর কতটা সর্বনাশের 'বিষফল' হয়ে দেখা দেবে– সে জন্য অপেক্ষা করাই ভালো।
আগামী জাতীয় নির্বাচন যদিও 'সংশয়াচ্ছন্ন', তারপরও এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ সংক্রান্ত বিএনপির কৌশল এবং অবস্থান মোটামুটি স্পষ্ট। সে তুলনায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অবস্থান ও কৌশল একেবারেই অস্পষ্ট।
এটা মনে করার কোনো কারণ নেই যে, আওয়ামী লীগ অত্যন্ত 'সাধু চরিত্রের' একটা দল। তারা নিয়মনীতির বাইরে ক্ষমতায় যেতে চায় না, আদর্শের সঙ্গে বনিবনা না হলে ক্ষমতায় থাকার ব্যাপারেও তাদের অনাগ্রহ আছে। বরং বলা ভালো, তারাও যে কোনো মূল্যে ক্ষমতায় থাকতে চায়, ক্ষমতায় যেতে চায়। ক্ষমতা হারালে প্রতিপক্ষের হাতে 'পিঠের চামড়া' হারানোর ভয় অন্য যে কারও চেয়ে তাদের বেশি!
কিন্তু বাস্তবতা হল, আগামী নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার ব্যাপারে আওয়ামী লীগের আদৌ কোনো নীতি, কৌশল বা আকাঙ্ক্ষা আছে কিনা তা নিয়ে ঘোরতর সন্দেহ দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন দল ও গোষ্ঠীর সঙ্গে মৈত্রীবন্ধনের চেষ্টা তো নেই-ই, উলটো যারা বন্ধুভাবাপন্ন, পুরোনো বন্ধু কিংবা বন্ধু হওয়ার যোগ্য তাদেরও শত্রুর দলে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে তেল-গ্যাস ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আন্দোলনের কথাই ধরা যাক। আমরা জানি, এই আন্দোলনের সঙ্গে দেশের প্রগতিশীল বাম ঘরানার কর্মী-সমর্থকরাই যুক্ত। রামপালে কয়লাভিত্তক বিদ্যুৎ প্রকল্পের নামে 'সুন্দরবন ধ্বংসের' পাঁয়তারা রুখে দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে এই কমিটি ২৪ থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন জেলায় লংমার্চ করেছে।
এই আন্দোলনকারীদের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আচরণ মোটেও শোভন ছিল না। আন্দোলনকারীদের নানাভাবে কটাক্ষ করা হয়েছে। এটা 'বিদেশিদের টাকায় পরিচালিত এনজিওদের আন্দোলন', 'লংমার্চের নামে পিকনিক করা হচ্ছে'– এমনি সব অর্বাচীন মন্তব্য করা হয়েছে। এমনকি আন্দোলনকারীদের 'দেশপ্রেম' নিয়েও কটাক্ষ করা হয়েছে।
অথচ সচেতন ব্যক্তিমাত্রই জানেন, এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের সততা ও দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তোলাটা কত বড় আহাম্মকি! এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত আছেন প্রকৌশলী শেখ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ, বাসদের সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান, শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট আবুল মকসুদ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশের ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাজেকুজ্জামান রতনসহ অসংখ্য বামপন্থী নেতাকর্মী ও সংস্কৃতিসেবী।
দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার জন্য তারা দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালনা করে আসছেন। সরকারি দলের নেতারা আন্দোলনকারীদের বক্তব্যকে সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করা, তাদের দাবির কোনো অংশ যদি অযৌক্তিক হয়ে থাকে তবে সেই অংশের যথাযথ ব্যাখ্যা প্রদান, নিজেদের মতের পক্ষে যুক্তি-তর্ক উপস্থাপনের মাধ্যমে ইস্যুটির যৌক্তিক পরিণতি টানতে পারতেন।
কিন্তু তারা যুক্তির জোর নয়, জোরের যুক্তি খাটিয়ে আন্দোলনকারীদের ভিলেনে পরিণত করার নীতি গ্রহণ করে দেশের প্রগতিশীল একটি অংশকে বৈরী অবস্থানে ঠেলে দিয়েছেন। অপমান আর অপবাদ পাওয়া আন্দোলনকারীরা ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধাচরণ করলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে কি?
প্রগতিশীলদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের অপরিণামদর্শী নেতাকর্মীদের বৈরী আচরণ অবশ্য ধারাবাহিকভাবেই চলছে। মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে সিলেটে সিপিবি-বাসদের জনসভায় ছাত্রলীগ নামধারীরা যেভাবে হামলা করেছে, তাতে সুস্থ ও বিবেকবান মানুষ মাত্রই স্তম্ভিত হয়েছেন।
সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও বাসদ সভাপতি খালেকুজ্জামানের মতো জাতীয় নেতাদের যেভাবে মঞ্চে উঠে চেয়ার-লাঠি উঁচিয়ে তাড়া করা হয়েছে তাতে আদিম হিংস্র গুহামানবদের কথাই মনে হয়েছে! কর্মীরা 'মানববর্ম' রচনা না করলে সেদিন হয়তো তাদের থেতলে দেওয়া হত!
বাম-প্রগতিশীলদের প্রতি আওয়ামী লীগের এই ভূমিকায় সচেতন মহলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, তাহলে আওয়ামী লীগের বন্ধু কে? রাজনীতিতে তাদের কি বন্ধুর দরকার নেই?
এটাকে বিশ্লষকরা 'অহমিকা' হিসেবে দেখছেন। আর অহংকার যে পতনকেই কেবল ত্বরান্বিত করে তা কে না জানে?
রাজনীতিতে কিছু সাধারণ জ্ঞান আছে। কাকে সঙ্গে নেব, কাকে নেব না সে হিসেবটা থাকা দরকার। কে বন্ধু, কে শত্রু, কে প্রতিদ্বন্দ্বী, কাকে সমীহ করব, কাকে ভালোবাসব, কাকে সঙ্গে নিলে লাভ, কাকে নিলে ক্ষতি– এসব হিসেবও রাখতে হয়। যদি শক্তিপ্রয়োগের কথাই ধরি, তবুও বিবেচনা থাকা উচিত কাকে মারব, কাকে ভয় দেখাব বা কাকে প্রতিরোধ করব।
সবার সঙ্গে একই রকম আচরণ করলে বন্ধু কে হবে? বন্ধু ছাড়া কি এগিয়ে চলা সম্ভব?
বড় দলের অহমিকা থেকে কেউ কেউ বলে থাকেন, সিপিবি বা বামপন্থীদের আর কয়টা ভোট! ওদের মারলে কী আর পেটালেই-বা কী!
নীতি-নৈতিকতার প্রসঙ্গ না হয় বাদই দিলাম, ভোটের হিসেবেও কিন্তু এই মানসিকতা ভালো নয়। বিন্দু বিন্দু জল নিয়েই সিন্ধু তৈরি হয়। একটু একটু সমর্থন নিয়েই গড়ে উঠে ব্যাপক সমর্থন। আবার একটু একটু নিন্দা এবং ঘৃণা থেকেই তৈরি হয় নিন্দা-ঘৃণার প্রবল ঢেউ। বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যার বহিঃপ্রকাশ লক্ষ্য করা গেছে!
দল যতই ভাঙ্গাচোরা হোক না কেন, সাবেক কিংবা বর্তমান কমিউনিস্টদের আমাদের সমাজে একটা আলাদা মর্যাদা আছে। মানুষ তাদের সম্মান করে। তাদের কথা অনেকেই মনোযোগ দিয়ে শোনে। জনমত তৈরিতে তারা এখনও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এই শক্তির দিক উপেক্ষা করা হলে এ জন্য ভবিষ্যতে মূল্য গুনতে হতে পারে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের বুঝতে হবে, এখনও সিপিবিসহ বামপন্থী পরিবারগুলোর শক্তি সমাজকে নাড়া দিতে পারে। সচেতন ব্যক্তিমাত্রই জানেন, গত ফেব্রুয়ারি মাসে সারাদেশে যে গণজাগরণ মঞ্চ গড়ে উঠেছিল, তার নেপথ্যে ছিল বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সিপিবির কর্মী-সমর্থকরা। এই গণজাগরণ মঞ্চের সুফল এককভাবে আওয়ামী লীগই সবচেয়ে বেশি ভোগ করছে এবং করবে।
যুক্তির নিরিখে বিচার করলে দেখা যায়, ছাত্র ইউনিয়ন, কমিউনিস্ট পার্টি, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী শক্তিশালী হলে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগেরই উপকার হয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও প্রগতিশীলতার চর্চাকারী মানুষের সংখ্যা বাড়লে এর সুফল কোনোদিন জামায়াত-বিএনপি পায় না, হয়তো পাবেও না।
কিন্তু নির্মম পরিহাস হচ্ছে, বামপন্থীরা যত না হেনস্থা হয় জামায়াত-বিএনপির সমর্থকদের দ্বারা, তার চেয়ে বেশি নিগৃহীত হয় আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের দ্বারা।
ফলে সমাজ জীবনে আওয়ামী লীগের প্রতি একটি খারাপ ধারণা নিয়ে বামপন্থীরা বেড়ে উঠে। আওয়ামী লীগের অজনপ্রিয় হওয়ার ক্ষেত্রে যা সহায়ক ভূমিকা পালন করে। অথচ বামপন্থীরা আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় বন্ধু হওয়ার কথা ছিল!
দেশের সার্বিক পরিস্থিতি এমনিতেই ভালো নয়। জনমত এমন কথা বলে না যে, আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে চোখ বন্ধ করে বিজয়ী হয়ে যাবে। গত পাঁচ বছরে ভালো কাজের জন্য আওয়ামী লীগ যতটা প্রশংসিত হয়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি নিন্দিত হয়েছে খারাপ কাজের জন্য। এত কলঙ্কের বোঝা কাঁধে নিয়ে আগামী দিনের ভোটভিক্ষা যখন তাদের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ, তখন পরীক্ষিত বন্ধুকে শত্রুর কাতারে নিক্ষেপ করাটা শুধু আত্মঘাতী নয়, অত্যন্ত অপরিণামদর্শীও বটে।
বলা হচ্ছে, এবার যদি জামায়াত-বিএনপি জোট ক্ষমতায় ফিরে আসে তাহলে দেশে রক্তগঙ্গা বইবে, যুদ্ধাপরাধীরা রেহাই পাবে, জঙ্গীবাদ ফিরে আসবে, সাম্প্রদায়িক হানাহানি বাড়বে, বাংলাদেশ হবে তালেবান, এখানে প্রগতিশীলতার কবর রচনা হবে। ২০০১-এর নির্বাচনের পর দেশে যে রাজনৈতিক প্রতিশোধস্পৃহা ও উন্মত্ত হিংসায় আগুনে মানবতার অনুভূতি পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল, তার চেয়েও অনেক বেশি হিংসার উন্মত্ত দাউ দাউ আগুনে দেশে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি জ্বলেপুড়ে ছাড়-খার হয়ে যাবে।
এই কথাগুলো কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই বেশি বেশি প্রচার করছেন। এই প্রচারণার মধ্যে সত্য আছে হয়তো, কিন্তু তার প্রস্তুতি কি সিপিবি-বাসদসহ বামপন্থী দলগুলোর প্রতি বৈরী আচরণ? নিরীহ সমাবেশে কাপুরুষোচিত হামলা? তাদের দেশপ্রেম নিয়ে কটাক্ষ করা?
আগামী দিনে কী হবে আমরা জানি না, কিন্তু দেশে যে শান্তির সুবাতাস বইবে না, এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। গত পাঁচ বছরে বিএনপি-জামায়াত-শিবির-হেফাজত কর্মীরা যেখানে যতটুকু 'অনাকাঙ্ক্ষিত' পরিস্থিতির শিকার হয়েছে, সুযোগ পেলে তারা যে কড়ায় গণ্ডায় তা ওসুল করে নিবে, তা বলার জন্য গণক হতে হয় না।
আমাদের দেশের মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতাই হচ্ছে, সুযোগের অপেক্ষায় থাকা এবং সময় বুঝে প্রতিশোধ নেওয়া। রাজশাহীসহ বিভিন্ন জনপদে ইতোমধ্যেই তার মহড়া শুরু হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতি থেকে দেশকে পরিত্রাণ দিতে হলে জামায়াত-বিএনপি ও তাদের দোসরদের অবশ্যই প্রত্যাখ্যান করতে হবে। পরীক্ষিত বন্ধুদের মেরে-পিটিয়ে-অপমান করে প্রতিপক্ষ শিবিরে ঠেলে দেওয়া– এসব কি সেই প্রত্যাখ্যানের প্রস্তুতি?
নিজেদের কৃতকর্মের কারণে শাসক দল এমনিতেই এখন বন্ধুহীন। নানা সময়ে যারা আওয়ামী লীগের পক্ষে কথার খই ফুটিয়েছেন, তাদের এখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না। দলের দায়িত্বশীল ভূমিকায় যারা রয়েছেন, তারাও অনেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখছেন, পালিয়ে থাকার চেষ্টা করছেন। দল এবং সরকারের যাবতীয় 'অপকর্মের' দায় নিতে তাদের অনেকেই কুণ্ঠিত, লজ্জিত।
এ অবস্থায় যারা অন্তত আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে খড়গহস্ত হবেন না, যৌক্তিক সমালোচনার বাইরে কোনো রকম ষড়যন্ত্র করবেন না, এমন লোকদেরও যদি খেপিয়ে তোলা হয়, তাহলে তারা ভরাডুবি এড়াবেন কীভাবে? পিঠেরই বা চামড়া বাঁচাবেন কী করে?
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের মনে রাখা উচিত, তাদের জন্য আগামী দিনগুলো মোটেও কুসুমের শয্যা হবে না।। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠী, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ববিরোধী মৌলবাদী অপশক্তি তৎপর রয়েছে আওয়ামীবধের মন্ত্র নিয়ে।
আওয়ামী-শাসন নিয়ে দেশের মানুষও যে খুব স্বস্তিতে রয়েছে, তাও বলা যাবে না। গত পাঁচ বছরে সরকার নানা কেলেঙ্কারির জন্ম দিয়েছে। এর সঙ্গে রয়েছে শাসকদলের নেতাকর্মীদের আস্ফালন, বাড়াবাড়ি। এক ছাত্রলীগ-যুবলীগের অপতৎরতা ঢাকতেই অনেক 'ঘি-চন্দন জ্বালানো'র দরকার হবে। সেখানে আবার নতুন করে সিপিবি-বাসদসহ বামপন্থীদের মতো 'নিরীহ' গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ আওয়ামী লীগকে বন্ধুহীন করে তুলতে পারে।
আওয়ামী লীগ কি তবে বন্ধুহীন হওয়ার আত্মঘাতী কৌশল গ্রহণ করেছে?
চিররঞ্জন সরকার : কলামিস্ট।