বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের করা বিতর্কিত তিনটি কৃষি সংস্কার আইন বাতিলসহ বেশ কিছু দাবিতে দিল্লি-জয়পুর মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে ভারতের হাজার হাজার কৃষক।
Published : 13 Dec 2020, 03:11 PM
সরকারের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পর কৃষক সংগঠনগুলো আন্দোলন আরও তীব্রতর করার ঘোষণা দিয়েছিল; তারই ধারাবাহিকতায় রোববার আন্দোলনের ১৮তম দিনে এ মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।
অবরোধ ঠেকাতে শনিবার গুরগাঁও ও হরিয়ানায় ৪ হাজারের বেশি পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
কৃষকরা সোমবার ভারতজুড়ে অনশন ও জেলা সদর দপ্তর অভিমুখে বিক্ষোভের কর্মসূচিও দিয়েছেন বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম।
শনিবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, নতুন এ কৃষি সংস্কার আইনগুলো কৃষকদের আয় বাড়াবে ও তাদের উপকৃত করবে।
এর আগে তার সরকারের পক্ষ থেকে তিনটি আইনের সংশোধন এবং সরকারের কৃষিপণ্য কেনার বাধ্যবাধকতা বহাল রাখাসহ বেশ কিছু সংস্কার প্রস্তাব দেওয়া হলেও আন্দোলনরত কৃষকরা তা প্রত্যাখ্যান করেন।
শনিবার কৃষি আইন নিয়ে মোদীর বক্তব্যকেও অনেকে ওই আশ্বাসের প্রতিধ্বনি হিসেবেই দেখছেন। মোদীর আশ্বাস সত্ত্বেও তারা আন্দোলনের প্রশ্নে অটল রয়েছেন।
আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, কৃষকরা বিভিন্ন জাতীয় সড়ক অবরোধ করবে এমন ধারণা থেকে দিল্লি-জয়পুর মহাসড়ক অবরোধের আগের দিন থেকেই বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন করেছিল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কৃষক সংগঠনগুলি তাদের কর্মসূচি অনুযায়ী পাঞ্জাব, হরিয়ানা থেকে তেলঙ্গানা, উড়িষ্যার মতো বিভিন্ন রাজ্যের টোল প্লাজা দখল করে টোল আদায় বন্ধ করে দেয়। আম্বানি-আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভের কর্মসূচি মেনে অনেক জায়গায় রিলায়েন্সের পেট্রল পাম্পের সামনেও অবরোধ হয়।
এদিন হঠাৎ করেই হরিয়ানার উপ মুখ্যমন্ত্রী দুষ্মন্ত চৌতালা পরবর্তী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কৃষি সংস্কার আইন নিয়ে সরকার ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে অচলাবস্থার অবসান হতে পারে বলে জানান।
“কেন্দ্রীয় সরকার ও কৃষকদের মধ্যে তখন আলোচনা ফলপ্রসূ হবে বলেই আমি আশাবাদী। আশা করছি, আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই চূড়ান্ত রাউন্ডের আলোচনা শুরু হবে যেখানে উভয় পক্ষই একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারবে,” বিজেপির মিত্র দল জননায়ক জনতা দলের এ নেতা এমনটাই বলেছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএনআই।
শনিবার ২৯টি কৃষক সংগঠন কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমারের সঙ্গে দেখা করে নতুন আইনগুলোর জন্য ধন্যবাদ দিয়েছেন বলে জানিয়েছে ভারতের কৃষি মন্ত্রণালয়। যদিও দিল্লির সীমানায় আন্দোলনরত কৃষকরা একে ‘বিজেপির সাজানো নাটক’ বলে অ্যাখ্যা দিয়েছেন।
কৃষকদের আন্দোলন সংশ্লিষ্ট তিনটি পিটিশন নিয়ে বুধবার ভারতের সুপ্রিম কোর্টে শুনানি হবে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
কৃষকরা বলছেন, আইন তিনটি বাতিল ছাড়া অন্য কিছুই মেনে নেবেন না তারা।
আইনগুলো বাতিল চেয়ে শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন দাখিল করেছে ভারতীয় কিষান ইউনিয়ন। সর্বোচ্চ এ আদালত অবশ্য এর মধ্যেই আইনগুলোকে চ্যালেঞ্জ করে হওয়া বেশ কয়েকটি পিটিশনের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় সরকারকে নোটিস দিয়েছে।
বিতর্কিত এ কৃষি আইনগুলো বাতিল চেয়ে নভেম্বরের শেষদিক থেকেই দিল্লির উপকণ্ঠে অবস্থান নিয়েছে হাজার হাজার কৃষক। তাদের ভাষ্য, বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের করা নতুন এ আইনগুলো তাদের জীবন-জীবিকাকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে।
অন্যদিকে সরকার বলছে, মান্ধাতার আমলের বিপণন পদ্ধতি সংস্কারের লক্ষ্যেই নতুন এ আইনগুলো করা হয়েছে।
কৃষকদের এ আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে ভারতের সরকারবিরোধী বিভিন্ন দল দেশজুড়ে নানান কর্মসূচিও পালন করেছে; আইনগুলো যত দ্রুত সম্ভব বাতিলের দাবিও জানিয়েছে তারা।