গোয়েন্দা সতর্কবার্তা নিয়ে বিতর্কের প্রেক্ষাপটে প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা তার দেশের পুলিশ প্রধান ও প্রতিরক্ষা সচিবকে পদ ছাড়ার নির্দেশ দেওয়ার পরদিন হেমাসিরি ফার্নান্দোর ইস্তফা দেওয়ার এই খবর দিল বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ফার্নান্দো রয়টার্সকে বলেছেন, রোববারের ওই হামলার ঘটনায় তার দিক থেকে কোনো ব্যর্থতা ‘না থাকলেও’ তার অধীন বাহিনী ও সংস্থাগুলোর ব্যর্থতার দায় তিনি নিজের ঘাড়ে নিচ্ছেন।
“যে গোয়েন্দা তথ্য আমাদের হাতে এসেছিল, সেগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছিলাম, আমাদের সবগুলো সংস্থাই কাজ করছিল।”
হামলার পর শ্রীলঙ্কার টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী হরিণ ফার্নান্দো টুইটারে একটি চিঠি প্রকাশ করেন, যেটা সপ্তাহ দুই আগে শ্রীলঙ্কা পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) হাতে এসেছিল।
ওই নথিতে বলা হয়, ন্যাশনাল তাওহীদ জামাত (এনটিজে) নামে একটি উগ্রপন্থি ইসলামী সংগঠন বিভিন্ন গির্জা ও ভারতীয় হাই কমিশনে হামলার পরিকল্পনা করছে। এনটিজের নেতা মোহাম্মদ জাহরানের নামও সেখানে উল্লেখ করা হয়।
সরকারের মুখপাত্র স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাজিথা সেনারত্নে পরদিন কলম্বোতে সাংবাদিকদের বলেন, বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো একাধিকবার সন্ত্রাসী হামলার শঙ্কা জানিয়ে সতর্ক করেছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে বা সরকারের মন্ত্রীদের হাতে ওই সতর্কবার্তা পৌঁছায়নি।
সরকারের তরফ থেকে এমন অভিযোগ আসার পর শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রেসিডেন্টের দ্বন্দ্বের বিষয়টি আবারও সামনে চলে আসে।
প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা কিছুদিন আগে বিক্রমাসিংহেকে সরিয়ে অন্য একজনকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছিলেন। পরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তিনি বিক্রমাসিংহেকে আবার প্রধানমন্ত্রী করলেও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সিকিউরিটি ব্রিফিং প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া হাচ্ছিল না।
এই অবস্থায় প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা মঙ্গলবার রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে এসে বলেন, বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে আসা ওই সতর্কবার্তা এমনকি তাকেও দেখানো হয়নি।
বিবিসি লিখেছে, রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে গোয়েন্দা ব্যর্থতার এই স্বীকারোক্তি ছিল প্রেসিডেন্ট সিরিসেনার জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর একটি বিষয়।
এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, যে কর্মকর্তারা ওই তথ্য গোপন করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে তিনি ‘কঠোর পদক্ষেপ’ নেবেন।
“পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে আমি ঢেলে সাজাবো। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোর প্রধানদের পরিবর্তন করতে চাই।”
এরপর বুধবার তিনি প্রতিরক্ষা সচিব হেমাসিরি ফার্নান্দো এবং আইজিপি পুজিথ জয়াসুন্দরাকে পদ ছাড়ার নির্দেশ দেন বলে খবর দেয় রয়টার্স।
শ্রীলঙ্কার সরকারি প্রতিষ্ঠান বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী লক্ষণ কিরিয়েলা বুধবার পার্লামেন্টে বলেন, “জ্যেষ্ঠ কয়েকজন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে ওই গোয়েন্দা তথ্য গোপন করে গেছেন। হাতে তথ্য থাকার পরও নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত শীর্ষ কর্মকর্তারা যথাযথ ব্যবস্থা নেননি।”
তিনি বলেন, ভারতীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে ওই সতর্কবার্তা এসেছিল গত ৪ এপ্রিল। এর তিন দিন পর ৭ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনার সভাপতিত্বে জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের একটি বৈঠকও হয়েছিল। কিন্তু ওই তথ্য চেপে যাওয়া হয়েছে।
“ওই শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের কেউ একজন নিয়ন্ত্রণ করছে। জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল রাজনীতি করছে। আমাদের এটা তদন্ত করা দরকার।”
আরও পড়ুন