প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ দুটি সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স বুধবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
শ্রীলঙ্কার পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নেতৃত্বে যে পরিবর্তন আসছে, সে ঘোষণা মঙ্গলবারই দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা।
জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেছিলেন, “নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বিদেশি একটি রাষ্ট্রের কাজ থেকে গোয়েন্দা প্রতিবেদন পাওয়ার পরও সেটি আমাকে জানাননি। এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
গত রোববার ইস্টার সানডের দিন কয়েকটি গির্জা ও হোটেলে একযোগে চালানো ওই হামলায় নিহতের সংখ্যা ইতোমধ্যে সাড়ে তিনশ ছাড়িয়ে গেছে। নিহতদের মধ্যে অন্তত ৩৯ জন বিদেশি নাগরিক বলে শ্রীলঙ্কা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
হামলার পর শ্রীলঙ্কার টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী হরিণ ফার্নান্দো টুইটারে একটি চিঠি প্রকাশ করেন, যেটা সপ্তাহ দুই আগে শ্রীলঙ্কা পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) হাতে এসেছিল।
ওই নথিতে বলা হয়, ন্যাশনাল তাওহীদ জামাত (এনটিজে) নামে একটি উগ্রপন্থি ইসলামী সংগঠন বিভিন্ন গির্জা ও ভারতীয় হাই কমিশনে হামলার পরিকল্পনা করছে। এনটিজের নেতা মোহাম্মদ জাহরানের নামও সেখানে উল্লেখ করা হয়।
সরকারের মুখপাত্র স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাজিথা সেনারত্নে পরদিন কলম্বোতে সাংবাদিকদের বলেন, বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো একাধিকবার সন্ত্রাসী হামলার শঙ্কা জানিয়ে সতর্ক করেছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে বা সরকারের মন্ত্রীদের হাতে ওই সতর্কবার্তা পৌঁছায়নি।
সরকারের তরফ থেকে এমন অভিযোগ আসার পর শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রেসিডেন্টের দ্বন্দ্বের বিষয়টি আবারও সামনে চলে আসে।
প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা কিছুদিন আগে বিক্রমাসিংহেকে সরিয়ে অন্য একজনকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছিলেন। পরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তিনি বিক্রমাসিংহেকে আবার প্রধানমন্ত্রী করলেও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সিকিউরিটি ব্রিফিং প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া হাচ্ছিল না।
এই অবস্থায় প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা মঙ্গলবার রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে এসে বলেন, বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে আসা ওই সতর্কবার্তা এমনকি তাকেও দেখানো হয়নি।
নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বে থাকা যে কর্মকর্তারা ওই তথ্য গোপন করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ‘কঠোর পদক্ষেপ’ নেওয়ার অঙ্গীকার জানিয়ে তিনি বলেন, “পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে আমি ঢেলে সাজাবো। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোর প্রধানদের পরিবর্তন করতে চাই।”
দেশটির সরকারি প্রতিষ্ঠান বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী লক্ষণ কিরিয়েলা বুধবার পার্লামেন্টে বলেন, “জ্যেষ্ঠ কয়েকজন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে ওই গোয়েন্দা তথ্য গোপন করে গেছেন। হাতে তথ্য থাকার পরও নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত শীর্ষ কর্মকর্তারা যথাযথ ব্যবস্থা নেননি।”
তিনি বলেন, ভারতীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে ওই সতর্কবার্তা এসেছিল গত ৪ এপ্রিল। এর তিন দিন পর ৭ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনার সভাপতিত্বে জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের একটি বৈঠকও হয়েছিল। কিন্তু ওই তথ্য চেপে যাওয়া হয়েছে।
“ওই শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের কেউ একজন নিয়ন্ত্রণ করছে। জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল রাজনীতি করছে। আমাদের এটা তদন্ত করা দরকার।”
শ্রীলঙ্কার প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী রাভন বিজয়বর্ধনে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, রোববারের আত্মঘাতী হামলায় মোট নয় জন অংশ নিয়েছিল, যাদের মধ্যে একজন নারীও ছিল। তাদের মধ্যে আট জনকে শনাক্ত করা হয়েছে।
“হামলায় যারা অংশ নিয়েছে, তাদের বেশিরভাগিই উচ্চ শিক্ষিত, তারা এসেছে স্বচ্ছল পরিবার থেকে। কেউ কেউ বিদেশে গিয়ে লেখাপড়া করে এসেছে। একজন প্রথমে যুক্তরাজ্য এবং পরে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে আইন পড়েছে।”
বিজয়বর্ধনে মঙ্গলবার পার্লামেন্টে বলেছিলেন, শ্রীলঙ্কার দুটো উগ্রপন্থি ইসলামী সংগঠন ন্যাশনাল তাওহীদ জামাত এবং জমিয়াতুল মিল্লাতু ইব্রাহিম-জেএমআই রোববারের হামলার সঙ্গে জড়িত বলে তদন্তকারীরা ধারণা করছেন।
আর বুধবার তিনি বলেন, ওই দুই সংগঠনের মধ্যে একটির শীর্ষ নেতা নিজেই কলম্বোর পাঁচতারা হোটেল শাংরি-লায় আত্মঘাতী হামলায় অংশ নেন।
এদিকে দুই দিন পর ওই হামলার দায় স্বীকার করার পাশাপাশি একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)।সেখানে দাবি করা হয়েছে, ভিডিওতে যে আটজনকে দেখা গেছে, তারাই রোববারের ওই আত্মঘাতী হামলা চালিয়েছে।
ওই ভিডিওতে আইএস এর কালো পতাকার সামনে যে আটজনকে এই জঙ্গি দলের বিশ্বাসের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে দেখা গেছে, তাদের মধ্যে কেবল একজনের মুখ ছিল অনাবৃত। বলা হচ্ছে, তিনিই ন্যাশনাল তাওহীদ জামাতের (এনটিজে) নেতা জাহরান।
শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী বিক্রমাসিংহেও বলেছেন, হামলার ধরন দেখে তাদের মনে হয়েছে, এর পেছনে বাইরের কোনো সংগঠনও জড়িত। তার ধারণা আইএসও হামলায় জড়িত থাকতে পারে।