শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলায় নিহত যারা

এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় ‘সন্ত্রাসী’ হামলার পর শোকের সাগরে ভাসছে শ্রীলঙ্কা। রোববারের সিরিজ বোমা হামলা কেড়ে নিয়েছে ২৯০ জনের প্রাণ।

নিউজডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 April 2019, 11:33 AM
Updated : 22 April 2019, 11:36 AM

শ্রীলঙ্কানদের পাশাপাশি ৩২ বিদেশি হামলায় নিহত হয়েছে। যাদের মধ্যে যুক্তরাজ্য, ভারত, ডেনমার্ক, বাংলাদেশ, চীনসহ আরো কয়েকটি দেশের নাগরিকরা আছেন।

হামলার পর গুজব রোধে শ্রীলঙ্কা সরকার দেশটিতে ফেইসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপের মত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। যে কারণে হতাহতদের সম্পর্কে তেমন তথ্য এখনো পাওয়া যাচ্ছে না।

বিবিসি হামলায় নিহত কয়েকজনের পরিচয় জানতে পেরেছে।

শান্তা মায়াদুন্নে:

শ্রীলঙ্কার জনপ্রিয় শেফ শান্তা মায়াদুন্নে। হামলার পর রোববার রাতে যে অল্প কয়েকজন নিহতের পরিচয় জানা গেছে তাদের একজন শান্তা।

শাংরি লা হোটেলে হামলার ঠিক কিছুক্ষণ আগে তার মেয়ে নিসানগা মায়াদুন্নে নিজের ফেইসবুক একাউন্টে একটি পারিবারিক ছবি পোস্ট করেছিলেন। যেখানে একটি টেবিলের চারপাশে বসে সাত জনকে হাসিমুখে খাবার খেতে এবং ছবির জন্য পোজ দিতে দেখা যায়।

পরে মানিক মায়াদুন্নে নামে তাদের এক স্বজন ওই ছবিটি ফেইসবুকে পোস্ট করে শান্তা ও নিসানগার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন।

ডেনিশ ধনকুবেরের তিন সন্তান:

অনলাইন খুচরা পণ্য বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান এএসওএস’র সবচেয়ে বড় অংশীদার এবং ক্লথিং চেইন ‘বেস্টসেলার’ এর মালিক ডেনমার্কের ধনকুবের অ্যান্ডারস হচ পভ্লসেনের তিন সন্তান শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলায় মারা গেছেন।

তার এক মুখপাত্র বিবিসিকে এ খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি এ বিষয়ে আর কোনো তথ্য দেননি। শোকের এ সময়ে পভ্লসেন পরিবারের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার প্রতি সম্মান জানাতে অনুরোধও করেছেন তিনি।

ডেনিশ সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, পভ্লসেন পরিবার ছুটি কাটাতে শ্রীলঙ্কা গিয়েছিলেন।

চারদিন আগে তাদের এক সন্তান ইনস্টাগ্রামে শ্রীলঙ্কায় ছুটি কাটানোর একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন।

ডেনমার্কের ধনকুবের অ্যান্ডারস হচ পভ্লসেনের এক সন্তান চারদিন আগে ইনস্টাগ্রামে এই ছবিটি পোস্ট করেছিলেন।

রাসিনা:

ভারতের কেরালা রাজ্যের রাসিনা (যাকে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে রাজিনা বলা হয়েছে) স্বামীর সঙ্গে দুবাইয়ে বসবাস করেন। স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে এ দম্পতি কলম্বো গিয়েছিলেন।

রোববার সকালে রাসিনার স্বামী দুবাই চলে যান। ৫৮ বছরের রাসিনার রাতের ফ্লাইটে কলম্বো ছাড়ার কথা ছিল। শাংরি লা হোটেল থেকে তিনি চেক-আউটও করেছিলেন।

পরে তার এক স্বজন তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন।

ভারতের দুই রাজনীতিক:

নিহতদের মধ্যে ভারতের কর্নাটকের দল জনতা দল পার্টির (জেডিপি) দুই সদস্য কে জি হনুমানথারাইয়াপ্পা ও এম রণগাপ্পা রয়েছেন।

এক টুইটে কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী তাদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন, তিনি ব্যক্তিগত ভাবে দুই রাজনীতিককে চিনতেন।

আরো তিন ভারতীয়:

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ আরো তিন ভারতীয়র মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। তারা হলেন: লক্ষ্মী, নারায়ণ চন্দ্রশেখর ও রমেশ। নাম ছাড়া তাদের সম্পর্কে আর কিছু এখনো জানানো হয়নি।

তুরস্কের দুই প্রকৌশলী:

নিহতদের মধ্যে তুরস্কের দুই নাগরিক আছেন বলে খবর দিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আনাদলু।

তাদের মধ্যে প্রকৌশলী সেরহান সেকুক নারিচি ২০১৭ সালের মার্চ থেকে কলম্বোতে বসবাস করছেন, তার ফেইসবুক প্রফাইল সেই কথা বলছে।

সেরহান তড়িৎ প্রকৌশলী ছিলেন বলে জানান তার বাবা। যিনি শ্রীলঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসেও কাজ করেছেন।

তার বাবা বলেন, “আজ ভোর ৫টায় সে আমাকে হোয়াটসঅ্যাপে শুভ সকাল জানিয়েছে। আমাকে বলা এটাই তার শেষ কথা।”

নিহত ইজিত আলি কাভুসও একজন প্রকৌশলী।

এক পরিবারের দুই অস্ট্রেলীয়:

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন তার দেশের দুই নাগরিকের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।

তারা একই পরিবারের এবং বর্তমানে শ্রীলঙ্কায় বসবাস করছিলেন। এ বিষয়ে আর কোনো তথ্য তিনি দেননি।

বাংলাদেশের রাজনীতিক শেখ ফজলুল করিম সেলিমের নাতি:

বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিমের নাতি আট বছরের জায়ান চৌধুরী হামলায় নিহত হয়েছে।

শিশুটির বাবা হামলায় আহত হয়েছেন বলে জানায় দেশটির অনলাইন সংবাদপত্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

জায়ানের বাবা মশিউল হক চৌধুরী প্রিন্স কলম্বোর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাংসদ শেখ সেলিম বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুপাতো ভাই।

সিনামন গ্র্যান্ড হোটেলের চার কর্মী:

পাঁচ তারকা এ হোটেলের পক্ষ থেকে হামলায় তাদের রেস্তোরাঁর চার কর্মী নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করা হয়েছে।

হোটেলের মুখপাত্র বলেন, “ব্যস্ত সকাল ছিল। রোববার সকালে রেস্তোরাঁয় বুফে ব্রেকফাস্ট চলার সময় আমরা সবচেয়ে ব্যস্ত থাকি।”