শ্রীলঙ্কা হামলা: কারা এই ন্যাশনাল তাওহীদ জামায়াত

ইস্টার সানডের প্রার্থনার মধ্যে শ্রীলঙ্কায় আট জায়গায় আত্মঘাতী বোমা হামলা চালিয়ে ২৯০ জনকে হত্যার ঘটনায় দায়ী করা হচ্ছে ‘ন্যাশনাল তাওহীদ জামাত’ নামের প্রায় অপরিচিত একটি উগ্রপন্থি সংগঠনকে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 April 2019, 04:22 PM
Updated : 22 April 2019, 04:22 PM

তবে হামলার পর এক দিন পেরিয়ে গেলেও ন্যাশনাল তাওহীদ জামাত-এনটিজে বা অন্য কোনো সংগঠন এ হামলার দায় স্বীকার করেনি। 

কারা এই ন্যাশনাল তাওহীদ জামাত? এ প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টা করেছে বিবিসি।

উৎপত্তি

শ্রীলঙ্কা সরকারের মুখপাত্র সোমবার এক বিবৃতিতে হামলার জন্য এনটিজেকে দায়ী করার আগ পর্যন্ত কম মানুষই এ সংগঠনের নাম শুনেছে। 

ধারণা করা হয়, স্থানীয় কট্টর ইসলামিক সংগঠন শ্রীলঙ্কা তাওহীদ জামাত (এসএলটিজে) ভেঙে ন্যাশনাল তাওহীদ জামাতের উৎপত্তি।

এসএলটিজে নিজেও খুব বেশি পরিচিত সংগঠন নয়। তবে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম তুলনামূলকভাবে বেশি দিনের।

এ সংগঠনের মহাসচিব আবদুল রাজ্জাক ২০১৬ সালে বৌদ্ধদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। পরে তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করেন।  

গত বছর শ্রীলঙ্কার মাভানেল্লা এলাকার একটি বৌদ্ধ মন্দির গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় এনটিজের নাম আসে।

দুই কোটি ১০ লাখ মানুষের দেশ শ্রীলংকায় মুসলমানদের হার মাত্র ৯.৭ শতাংশ। ফলে ধর্মীয়ভাবে সংখ্যালঘু এ সম্প্রায়ের মধ্যে আরও ক্ষুদ্র পরিসরে উগ্রপন্থি সংগঠন এনটিজের তৎপরতা সীমাবদ্ধ।

সামাজিক যোগাযাগের মাধ্যমেও এ সংগঠনের তৎপরতা সীমিত। ফেইসবুকে এনটিজের একটি পেইজ আছে। তবে তাতে পোস্ট আসে খুবই কম। তাদের টুইটার পেইজ ২০১৮ সালের মার্চের পর আর আপডেট হয়নি।

তবে ইউটিউবে এনটিজে-মিডিয়া ইউনিট শ্রীলঙ্কা নামে একটি চ্যানেল রয়েছে, যেখানে সিনহলা ভাষায় বেশ কিছু বক্তৃতার ভিডিও রয়েছে দেখা যায়।

এই গ্রুপের ওয়েবসাইটও এখন খোলা যাচ্ছে না। তবে রোববারের হামলার আগে বা পরে সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে কি না- তা স্পষ্ট নয়।

 

যোগসূত্র

শ্রীলঙ্কা সরকারের মুখপাত্র স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাজিথা সেনারত্নে সোমবার কলম্বোতে সাংবাদিকদের বলেন, বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো একাধিকবার সন্ত্রাসী হামলার শঙ্কা জানিয়ে সতর্ক করেছিল।  

দেশটির টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী হরিণ ফার্নান্দো টুইটারে একটি নথি প্রকাশ করেছেন, যেটা সপ্তাহ দুই আগে শ্রীলঙ্কার পুলিশ প্রধান সরকারকে পাঠিয়েছিলেন। 

ওই নথিতে স্পষ্টভাবে ন্যাশনাল তাওহীদ জামাতের নাম উল্লেখ করে বলা হয়েছে, উগ্রপন্থিত ওই সংগঠনটি শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন গির্জা ও ভারতীয় হাই কমিশনে হামলার পরিকল্পনা করছে।

এনটিজের নেতা মোহাম্মদ জাহরানের নামও সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের শ্রীলঙ্কা শাখার পরিচালক অ্যালান কিনান বিবিসি ফাইভ লাইভে বলেন, মাভানেল্লায় বৌদ্ধ মন্দিরে ভাঙচুরের জন্য যে সংগঠনটিকে দায়ী করা হচ্ছিল সেটা এই এনটিজে।

“ওই সময় একদল তরুণকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল। বলা হচ্ছিল, তারা এক ইমামের শিষ্য, সেই লোকের নামই এবার গোয়েন্দা নথিতে দেখা যাচ্ছে।”   

শ্রীলঙ্কা সরকারের ধারণা, কেবল এনটিজে ওই হামলার ঘটনা ঘটায়নি। 

রাজিথা সেনারত্নে বলেন, “এ দেশের ছোট একটা দল এত বড় একটা ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছে- এটা আমরা মনে করতে পারছি না। দেশের বাইরে থেকে কারা তাদের সহযোগিতা করেছে সেটা আমরা এখন তদন্ত করে দেখছি।

“পাশাপাশি আর কার কার সাথে তাদের যোগাযোগ আছে, কীভাবে তারা এখানে এরকম বোমা বানালো, কীভাবে এরকম আত্মঘাতী বোমারু তৈরি করল-সেটাও খতিয়ে দেখছি। ”

এনটিজের নাম সরাসরি না বললেও শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের দপ্তরও ওই সংগঠনের দিকেই ইংগিত করেছে।

প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনার দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “শ্রীলঙ্কার যে সংগঠনই হামলা চালিয়ে থাকুক, তারা অবশ্যই বিদেশ থেকে সহযোগিতা পেয়েছে। তাদের চিহ্নিত করতে শ্রীলঙ্কার পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চাওয়া হবে।”