আইএসের ভিডিওতে শ্রীলঙ্কা হামলার ‘হোতা’ জাহরান

দেয়ালে টানানো ইসলামিক স্টেটের (আইএস) কালো পতাকা; সামনে দাঁড়িয়ে আটজন হাতে হাত রেখে আইএস নেতা আবু বকর আল-বাগদাদির নামে শপথ করছেন। এমন এক ভিডিও প্রকাশ করে আইএস দাবি করেছে, ভিডিওর ওই ব্যক্তিরাই শ্রীলঙ্কায় হামলা চালিছেন।

>>রয়টার্স
Published : 24 April 2019, 04:12 PM
Updated : 25 April 2019, 01:30 PM

গত রোববার ইস্টার সানডের দিন কয়েকটি গির্জা ও হোটেলে একযোগে চালানো ওই হামলায় নিহতের সংখ্যা ইতোমধ্যে সাড়ে তিনশ ছাড়িয়ে গেছে। নিহতদের মধ্যে অন্তত ৩৯ জন বিদেশি নাগরিক বলে শ্রীলঙ্কা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গি দল আইএসের মুখপত্র ‘আমাক’ নিউজ এজেন্সিতে মঙ্গলবার হামলার দায় স্বীকার করে একটি বার্তা আসে। পরে ওই ভিডিও প্রকাশ করা হয়, যেখানে আটজনকে একসঙ্গে বলতে শোনা যায়, “আমরা আনুগত্য স্বীকার করছি… সহজ হোক বা কঠিন, আমরা তার সব নির্দেশ মেনে চলব।”

ভিডিওতে আট জনের মধ্যে সাত জনের মুখ ছিল ঢাকা। যে ব্যক্তির মুখ খোলা ছিল তার নাম মোহাম্মদ জাহরান। তিনিই শ্রীলঙ্কায় হামলার হোতা বলে ধারণা দেশটির গোয়েন্দা সংস্থার। ভিডিওতে জাহরান বাকিদের শপথ পড়াচ্ছিলেন।

 

হামলার পর শ্রীলঙ্কার টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী হরিণ ফার্নান্দো টুইটারে একটি চিঠি প্রকাশ করেন, যেটা সপ্তাহ দুই আগে শ্রীলঙ্কা পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) হাতে এসেছিল বিদেশি একটি গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে।

ওই নথিতে বলা হয়, ন্যাশনাল তাওহীদ জামাত (এনটিজে) নামে একটি উগ্রপন্থি ইসলামী সংগঠন বিভিন্ন গির্জা ও ভারতীয় হাই কমিশনে হামলার পরিকল্পনা করছে। এনটিজের নেতা জাহরানের নামও ছিল সেখানে।

জাহরানের বিষয়ে সতর্ক করে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, শ্রীলঙ্কার পূর্বাঞ্চলে মুসলমান অধ্যুষিত কাত্তানকুডি শহরে তার ঘাঁটি।

শ্রীলঙ্কার পূর্বাঞ্চলের বাসিন্দা তামিলভাষী জাহরান গত কয়েক বছর ধরে কট্টর শরিয়া আইনের প্রচার করে আসছিলেন; যে কারণে স্থানীয়রা তাকে ভালোভাবেই চেনেন বলে জানান দেশটির ধর্মীয় নেতারা।

শ্রীলঙ্কার তিনজন মুসলিম নেতা বলেছেন, তারা জাহরানকে নিয়ে গত তিন বছরে কয়েকবার প্রতিরক্ষা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। 

জাহরান ২০১৬ সাল থেকে তার ফেইসবুক অ্যাকাউন্টে ধর্মীয় উসকানিমূলক বিভিন্ন ভিডিও পোস্ট করে আসছিলেন। ফেইসবুকে তার দুইশর মত অনুসারী আছে, যাদের কাছে তিনি রীতিমত তারকা। 

ফেইসবুক কর্তৃপক্ষ ‘জাহরান মৌলভী’ নামের ওই একাউন্ট থেকে পোস্ট করা ভিডিওগুলো এখন মুছে দিয়েছে।

শ্রীলঙ্কার মুসলমানদের দল ‘সিলন তাওহীদ জামাত’ এর সাধারণ সম্পাদক আর. আব্দুল রাজ্জাক রয়টার্সকে জাহরানের একটি ভিডিও দিয়েছেন।

সেখানে জাহরানকে সাধারণ মানুষের উপর আত্মঘাতী গাড়ি বোমা হামলা চালানোর হুমকি দিতে শোনা যায়।

রাজ্জাক বলেন, তারা ২০১৬ সালে সন্ত্রাস-দমন কর্মকর্তাদের টেলিফোন করে জাহরানের বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন।

“তারা এলটিটিই কে ধ্বংস করেছে, কিন্তু কেন জাহরানকে ছেড়ে দিল তা আমি জানি না।”

শ্রীলঙ্কায় ‍মুসলমানদের আরেকটি দল অল সিলন জমিয়াতুল ওলামার (এসিজেইউ) উপ ব্যবস্থাপক ফারহান ফারিস বলেন, গত দুই বছর ধরে তার দল নিয়মিত শ্রীলঙ্কার প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে জঙ্গিদের বিষয়ে আলোচনা করেছে। বৈঠকে অনেকবার জাহরানকে নিয়েও কথা হয়েছে।

সর্বশেষ গত ২ জানুয়ারি এসিজেইউর একটি প্রতিনিধি দল স্বরাষ্ট্র সচিব হেমাসিরি ফার্নান্দোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বলেও জানান ফারহান।

তিনি বলেন, ওই সাক্ষতে এসিজেইউর প্রতিনিধিরা জাহরানের চরমপন্থি মনোভাব ও কর্মকাণ্ডের বিষয়ে আবারও সতর্ক করেছিলেন।

“আমরা তাদের বলেছিলাম, জাহরান সত্যিই খুব বিপদজনক ব্যক্তি। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল, এখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।”

এ বিষয়ে হেমাসিরি ফার্নান্দোর বক্তব্য জানা যায়নি।

মুসলিম কাউন্সিল অব শ্রীলঙ্কার ভাইস প্রেসিডেন্ট হিলমি আহমেদও জাহরানের বিষয়ে সরকারের কর্মকর্তাদের সতর্ক করেছিলেন বলে জানান।

হিলমি বলেন, “গত ডিসেম্বরে শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধমূর্তি ভাংচুরের ঘটনায় জাহরান জড়িত থাকতে পারে বলে আমরা কর্মকর্তাদের সতর্ক করেছিলাম। আমরা বলেছিলাম, এক মুলসমান ব্যক্তি ঘৃণা ছড়াচ্ছে; তাকে গ্রেপ্তার করুন।”