বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর হিসেবে পরিচয় পাওয়ার পরও দিল্লির পরিস্থিতি উন্নয়নে কর্তৃপক্ষ ও সরকারের নজরদারি নেই বলে অভিযোগ ভারতের পরিবেশবাদীদের।
Published : 07 Dec 2018, 03:15 PM
২০১৩ সালে দেশটির ন্যাশনাল গ্রিন টাইব্যুনাল (এনজিটি) পলিথিনপণ্য পোড়ানো বন্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছিল। দিল্লি সরকার সেই নির্দেশও কার্যকর করতে পারেনি।
পরিবেশবিষয়ক ওই ট্রাইব্যুনাল চত্বর থেকে পশ্চিম দিল্লির দূরত্ব মাত্র ৩০ কিলোমিটার, জানিয়েছে এনডিটিভি।
পলিথিন পোড়ানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি না হওয়ায় গত সপ্তাহের সোমবার এনজিটি দিল্লি সরকারকে ২৫ কোটি রুপি জরিমানাও করে।
অথচ এর কয়েকদিন পর নিলওয়াল এলাকার জনগণকে পলিথিন ও পলিথিনজাত বস্তু পোড়াতে দেখা গেছে।
সোমবারের নির্দেশে এনজিটি যতদিন পর্যন্ত দিল্লি সরকার নিষেধাজ্ঞা জারি না করবে, ততদিন পর্যন্ত তাদেরকে প্রতি মাসে অতিরিক্ত ১০ কোটি রূপি করে জরিমানাও দিতে বলেছে।
জরিমানার সঙ্গে নিরাপত্তা আমানত হিসেবেও অতিরিক্ত ২৫ কোটি রুপি দিতে হচ্ছে দিল্লি সরকারকে।
এনজিটি বলেছে, জরিমানার টাকা কাদের কাছ থেকে নেবে সে বিষয়ে সরকারের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে। তারা চাইলে দূষণকারী কিংবা যেসব কর্মকর্তা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হবে তাদের কাছ থেকেও ক্ষতিপূরণবাবদ এ অর্থ তুলতে পারবে।
শুক্রবারও দিল্লির বাতাসের মান ‘খুবই বাজে’ ছিল বলে জানিয়েছে এনডিটিভি। বাতাসের গতি কম এবং প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে শহরটির অন্তত ৭টি এলাকার বাতাসের পরিস্থিতি ‘মারাত্মক’।
ভারতের কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড দিল্লির শুক্রবারের সামগ্রিক বাতাসের মান ৩৫৫ বলে জানিয়েছে।
এর মধ্যেই এনডিটিভির প্রতিবেদক নিলওয়াল এলাকায় গিয়ে পলিথিন পোড়াতে দেখেন। এলাকাটিতে প্রতিদিনই এ কর্মযজ্ঞ চলে বলে জানান এনজিটিতে মামলা করা মহাভির সিং।
এলাকাটিতে পথচারীরা তাদের হাতে থাকা পলিথিনের ব্যাগ খুব সাধারণভাবেই রাস্তার পাশে ছুঁড়ে ফেলেন; পরে যেগুলো অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করা হয়।
আবর্জনা ও রাস্তার ময়লা সরানোর জন্য শত শত ট্রাক থাকার পরও নিলওয়ালে এ দৃশ্য খু্বই স্বাভাবিক, বলেন মহাভির।
পলিথিন পোড়ানো ওই আগুনের উপর কালো ধোঁয়ার আস্তরণও দেখেছেন এনডিটিভির প্রতিনিধি। সেসময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি ট্রাক দেখা গেলেও, পুলিশ সদস্যদের মধ্যেও এ নিয়ে কোনো ভাবান্তর দেখা যায়নি।
“কেউই এনজিটির আদেশকে গুরুত্ব দেয় না। ওই আদেশে ২০১৩ সালেই পলিথিন পোড়ানোয় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু এখানকার জনগণের ওপর তার কোনো প্রভাবই পড়ে নি,” বলেন মহাভির।
তার এ অভিযোগ মানতে নারাজ পলিথিনপণ্য গুদামের মালিকেরা। তাদের মতে, পলিথিন পোড়ানোর ঘটনা ঘটে কালেভদ্রে, এর ফলে পরিবেশের তেমন ক্ষতিও হয় না।
স্থানীয় দমকল বিভাগের নথি অবশ্য গুদামমালিকদের এ দাবিকে সমর্থন করছে না।
“এমন দিন নেই যেদিন মানুষ পলিথিন ও বর্জ্য পোড়ানোর অভিযোগ করে না। আমরা সারাদিনই রাস্তায় রাস্তায় ঘুরি, যেখানেই আগুন দেখি, তা নিভিয়ে ফেলি,” বলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দমকল কর্মী।
“পুলিশ সবই জানে। কিন্তু তারা কিছুই করে না,” বলেন স্থানীয় পিভিসি মার্কেটের ফায়ার অপারেটর ত্রিলোক শর্মাও।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দূষণজনিত কারণে স্থানীয় অনেক বাসিন্দার মৃত্যু হয়েছে বলেও দাবি মনোহরের।
দিল্লি সরকারের কোনো কর্মকর্তাই এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি বলে এনডিটিভি জানিয়েছে। সরকার এখনো এনজিটির আদেশ পর্যালোচনা করছে, ভাষ্য নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তার।